Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কোনিয়া: রুমির ভালোবাসার মায়ায়, ইতিহাসের ছায়ায় ঘেরা তুরস্কের শহর

মুসলিম কিংবদন্তী বলে, দুজন দরবেশ আকাশে উড়ে উড়ে দূরের কোনো দেশ থেকে পশ্চিমে যাচ্ছিলেন। আনাতোলিয়ার মাঝামাঝি এসে একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলেন, “এখানে কি নামবো?” আরেকজন জবাব দিলেন, “নিশ্চয়ই, নামো। “(kon ya!)” এই দরবেশের চয়ন করা বাক্য থেকে শহরের নাম হয়েছে কোনিয়া।

রোমান কিংবদন্তী অনুসারে, শহরের মানুষেরা এক রাক্ষসের ভয়ে-অত্যাচারে তটস্থ ছিল। বীরযোদ্ধা পার্সিয়াস এই রাক্ষসকে হত্যা করে নগরবাসীকে মুক্তি দেন। তখন তার সম্মানে এক স্মারক নির্মাণ করা হয়, যাতে তার ছবি (Icon) খোদিত ছিল। সেখান থেকে শহরের নাম হয়েছে আইকনিয়াম।

কিংবদন্তী যা-ই হোক, নামটি হোক কোনিয়া বা আইকনিয়াম, বাস্তবে শুধু রোমান বা মুসলিম নয়, ঐতিহাসিক অনেক সভ্যতার স্মৃতিচিহ্নই ধারণ করে আছে তুরস্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই শহর। কোনিয়াকে আপনি খুঁজে পেতে পারেন জালালুদ্দিন রুমির ভালোবাসায়, নাসিরুদ্দীন হোজ্জার বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকে বা ইউনুস এমরের শান্তি ও মানবতার বাণীতে।

আনাতোলিয়ার মধ্যভাগে অবস্থিত এই শহর ভৌগলিকভাবে মালভূমি এবং নিম্ন সমভূমি দিয়ে গঠিত। দক্ষিণ অংশ পর্বতময়, টরাস পর্বতে ঘেরা।

ভালোবাসার শহরের পর্যটকদের সাথে কথা হয় হৃদয়ে-হৃদয়ে; Image Source: Names.network

 

ইতিহাসে কোনিয়ার উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব সাত হাজার বছর আগে, নিওলিথিক যুগে। এশিয়া মাইনরের এই অঞ্চলেই প্রথম কৃষিকাজ ও আগুনের ব্যবহার শুরু হয়। মানুষ সমাজবদ্ধ জীবনযাপন শুরু করে। তারপর একে একে হিট্টি, ফ্রাইজিয়ানদের হাত ধরে সভ্যতার নবসূচনা ঘটে এখানে। পার্সিয়ানদের হাত গড়িয়ে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়া কোনিয়ার। রোমান রাজা ক্লডিয়াসের সময় রোমানদের অধীনে কনিয়া ছিল Claudioconium হিসেবে। খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসেও কোনিয়া গুরুত্বপূর্ণ। যীশুর শিষ্য সেইন্ট পল এই এলাকায় খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেছিলেন। কোনিয়া দশম শতাব্দীর দিকে তুর্কি অভিযানের আগপর্যন্ত বাইজেন্টাইনদের অধীনেই ছিল।

সুলতান আলপ আরসালানের ভাস্কর্য; Image Source: Daily sabah

১০৭১ সালে মানজিকার্টের যুদ্ধে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের শোচনীয় পরাজয়ের পর আনাতোলিয়া হয়ে যায় সেলজুক সুলতান আলপ আরসালানের, আর কোনিয়া তুর্কিদের। আনাতোলিয়ায় সেলজুক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ১০৭৪ সালে, ইজনিক ছিল তার রাজধানী। প্রথম ক্রুসেডেে ইজনিক হারিয়ে সেলজুকরা কোনিয়াকে তাদের নতুন রাজধানী করে নেয়। পরের দু’শো বছর প্রতাপশালী সেলজুকদের সাম্রাজ্যের যোগ্য রাজধানী ছিল কোনিয়া।

সুলতান আলাউদ্দীন কায়কোবাদের সময়ে বিজ্ঞান ও শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে শহরটি। সেই বারো শতক ছিল কোনিয়ার স্বর্ণযুগ। সেলজুক আমলের স্থাপনাগুলোতে সেই সোনালি ঐতিহ্যের ছাপ এখনো স্পষ্ট। সেলজুক শাসনের অবসান হলো, কোনিয়া চলে গেল কারামানিদের হাতে। তবে বেশিদিনের জন্য নয়।

উসমানিদের কাছে কোনিয়া ছেড়ে দিতে হয় কারামানিদের। তবে কারামানিরা এত সহজে কোনিয়ার মায়া ত্যাগ করেনি। উসমানিদের জ্বালিয়ে গেছে প্রতিনিয়ত। ফলাফল হিসেবে কোনিয়া সীমান্তে কারামানি-উসমানি যুদ্ধ লেগেই থাকত। পরে সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহর হাতে কারামানি রাজবংশের পতনের পর অবশ্য কোনিয়া পুরোপুরি উসমানিদের হয়।

উসমানিদের আমলেও কোনিয়া সেজেছে বিচিত্রভাবে- মসজিদ, হাসপাতাল, খানকাহ, ব্রীজসহ আরও অনেক কিছুর দ্বারা। ১৯ শতকে কোনিয়া তার সব জৌলুস হারিয়ে মৃতপ্রায় এক শহরে পরিণত হয়। সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সময়ে কোনিয়া আবার জেগে ওঠে, শিক্ষা ও যাতায়াত ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ও বহু পুর্নর্নির্মাণ কাজের মাধ্যমে। আর আজকের আধুনিক কোনিয়া তুরস্কের কোনিয়া প্রদেশের রাজধানী, তুরস্কের সপ্তম বৃহত্তম শহর। জালালুদ্দিন রুমির মাজার, তার সুফি জীবনাদর্শ ও অসংখ্য মসজিদে ঘেরা কোনিয়া তুরস্কের সবচেয়ে রক্ষণশীল ও ধর্মীয় মেজাজের শহরও বটে। কোনিয়ার রাস্তায় হেঁটে গেলে পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদ-মাদ্রাসার শোভা, আজানের সুর, পথচারীদের পোশাক বা আচরণের রক্ষণশীলতা ছুঁয়ে শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাস ফিসফিস করে আপনার কানে এই কথাই বলে যাবে, “তুমি এখন কোনিয়ায়।

প্রিয় পাঠক, চলুন আজ জেনে আসা যাক কোনিয়ার কোন কোন পর্যটন আকর্ষণ ঘুরে দেখলে আপনি কোনিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সবচেয়ে কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। কোনিয়াযাত্রায় স্বাগতম!

মেভলানা মিউজিয়াম

“Come, whoever you are.
Wanderer, worshiper, lover of leaving.
It doesn’t matter.
Ours is not a caravan of despair.
Come, even if you have broken your vows a thousand times.
Come, yet again , come , come.

রুমির কবিতায় মর্ত্যের সকল মতের, সকল ধর্মের মানুষকে একই ভালোবাসার ছায়াতলে আশ্রয় দেয়ার বাণী প্রতিধ্বনিত হয়েছে তার মৃত্যুর পরের সাতশ বছর ধরে। রুমির সেই স্বর্গীয় ভালোবাসায় এখনও সিক্ত পৃথিবীর মানুষেরা। রুমির বাবা, বিখ্যাত আলেম বাহাউদ্দীন ওলাদ এসেছিলেন বালখ থেকে। সুলতান আলাউদ্দীন কায়কোবাদ তাকে রাজধানী কোনিয়ার মাদ্রাসার প্রধানের সম্মানিত দায়িত্ব প্রদান করেন।

তাকে বসবাসের জন্য দেয়া হয় সেলজুক প্রাসাদের গোলাপ বাগানের অংশটি। ১২৩১ সালে মৃত্যুর পর এই গোলাপ বাগানেই তাকে সমাহিত করা হয়। রুমির বাবার ছাত্ররা মৃত্যুর পর তার মাজার বানাতে চাইলে রুমি নিষেধ করেন। তবে ১২৭৩ সালে রুমির মৃত্যুর পর তার ছেলে বাবার মাজার বানানোর অনুমতি দেন। মাজারের স্থপতি ছিলেন তাব্রিজের বেদরেদ্দীন। এখানে শুধু রুমিই নন, সমাধিস্থ আছেন রুমির স্ত্রী কারা খাতুন, মেয়ে মালিকে খাতুন ও ছেলে মুজাফফরউদ্দীন চেলেবি। 

রুমির সমাধি এখানে, মেভলানা মিউজিয়ামের গম্বুজে ছাওয়া ভবনটিতে; Image Source: Pixels

মাজারটি মিউজিয়াম হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯২৬ সালে। মাজারের প্রবেশপথ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে চমৎকার গোলাপ বাগানটি। বাগান সবসময় মুখরিত থাকে ঝরণার গানে, সবুজের প্রাণে। মিউজিয়াম চত্বরের দু’পাশে লম্বা বোর্ডিং হাউজে সুফিরা থাকেন। গোলাপ বাগানের পাশে, মিউজিয়ামের চত্বরে গরমকালে প্রতি সপ্তাহে ঘূর্ণায়মান দরবেশদের বড় অনুষ্ঠান হয়। মিউজিয়ামের প্রদর্শনী অংশে রুমির ব্যবহৃত কার্পেট, বই, নানা ধাতব ও কাঠের বস্তু সংরক্ষিত আছে। আছে লাইব্রেরিও, যাতে ‘মসনভি’ ও ‘দিওয়ান-ই-তাবরিজ’-এর সবচেয়ে পুরনো কপির দেখা মিলবে।

গোলাপ বাগান, মিউজিয়াম, রুমির বাজার- সবগুলো স্থাপনার মিলিত জায়গাটি মূলত মেভলেভি সুফিদের আবাসস্থল। এই সুফিদের আধ্যাত্মিক কর্মকান্ড আবর্তিত হয় এই জায়গাকে কেন্দ্র করে। রুমির ভক্ত বা সাধারণ দর্শনার্থী- এখানে এলে সবাই অবশ্যই কোনিয়ার আধ্যাত্মিক কেন্দ্র মেভলানা মিউজিয়ামে বেড়াতে আসেন।

কোনিয়ার আকাশসীমায় তাকালেও মিউজিয়ামের দৃষ্টিনন্দন সবুজ গম্বুজ চোখে পড়বেই। আপনি রুমিভক্ত না হলেও এমন সুন্দর মিনার দেখেই আপনার স্থাপনাটি দেখার ইচ্ছে হতে পারে!

আলাউদ্দীন হিল

কোনিয়া প্রদেশের কেন্দ্রে কারাতয় জেলায় অবস্থিত ২০ মিটার উঁচু এই কৃত্রিম পাহাড়। সুলতান আলাউদ্দীন কায়কোবাদ শহরের ঠিক মাঝখানে এই পাহাড় নির্মাণ করেন, অনেকটা পার্কের মতো করে। এখনও জায়গাটি ঐতিহাসিক নিদর্শনসমৃদ্ধ একটি বিনোদনকেন্দ্র। বর্তমানে টিকে থাকা ভবনগুলোর মাঝে আছে ১২২০ সালে নির্মিত আলাউদ্দীন মসজিদ।

আলাউদ্দীন মসজিদ; Image Source: muslim mosque/wordpress

মসজিদের পাশে ঝর্ণা ও পানির ট্যাংক দাঁড়ানো, যা কোনিয়ার গভর্নর ফেরিত পাশা নির্মাণ করেছিলেন। আরেক সেলজুক সুলতান কিলিক আরসালানের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষও চোখে পড়ে এখানে। পাহাড়ের দক্ষিণ অংশে গ্রিক ও আর্মেনীয়দের বসতি ছিল। তাদের ব্যবহৃত চার্চগুলো এখন আর নেই। তবে সেইন্ট পল ক্যাথলিক চার্চ এখনো আছে। সেইন্ট পলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত চার্চটি একসময় ইতালীয় রেলকর্মীদের ধর্মীয় আবেগ প্রকাশের জায়গা ছিল। আলাউদ্দীন পাহাড়ের পার্ক অংশে সবুজের রাজত্ব।

রাতের বেলায় পার্কটি বিচিত্র আলোকসজ্জায় সজ্জিত থাকে। আলোকজ্জ্বল পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে কানে ভেসে আসে এশার আজান। নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নেয়া সতেজ বাতাস, আজানের সুমধুর সুর আর পার্কের আলো-সবুজ; সব মিলিয়ে নির্মল আনন্দময় কিছু মুহূর্ত অনায়াসে কাটিয়ে যেতে পারবেন এখানে।

সেলিমিয়ে মসজিদ

উসমানি আমলে নির্মিত সেলিমিয়ে মসজিদ; Image Source: structurea.net 

কোনিয়া শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্রে অবস্থিত এই মসজিদটি নির্মিত হয় মিমার সিনান অটোমান সাম্রাজ্যের প্রধান স্থপতি থাকাকালে। সুলতান দ্বিতীয় সেলিম যখন শাহজাদা, তখন শুরু হয় মসজিদের নির্মাণকাজ। শেষ হয় তিনি সুলতান হওয়ার পর! ষোল-সতের শতকের অন্যান্য উসমানি মসজিদের মতোই এর স্থাপত্যশৈলী। দুটি বড় গম্বুজ ছাদে, আশেপাশে ছোট ছোট সাতটি গম্বুজ। মিহরাবে রয়েছে মার্বেলের কারুকাজ। ইটে তৈরি নিখুঁত ঘনকাকার এই মসজিদের বহির্ভাগের সোনালি নকশাও দেখার মতো। উসমানি আমলে যে শিল্পসৌন্দর্য্যের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছিল, এই মসজিদটি তারই প্রমাণ বহন করে।

আজিজিয়ে মসজিদ

ব্যস্ত শহরে শান্ত আজিজিয়ে মসজিদ; Image Source: eskiturkiye.com

সতের শতকে নির্মিত এই মসজিদে উসমানি ও বারোক স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটেছে। মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন সুলতান চতুর্থ মুহাম্মাদের জামাতা মোস্তফা পাশা, সতের শতকে। উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে আগুন লেগে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুর্নর্নির্মাণ করেন সুলতান আব্দুল আজিজ। আজিজিয়ে নামটি আব্দুল আজিজ থেকেই এসেছে। কোনিয়ার একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মসজিদটি সেলিমিয়ে মসজিদ ও মেভলানা মিউজিয়ামের পাশেই অবস্থিত।

টাইল মিউজিয়াম

এই ভবনের যাত্রা শুরু হয়ে মাদ্রাসা হিসেবে, ১২৫১ সালে, সেলজুক আমলে। নির্মাণ করেন জালালুদ্দিন কারাতেয়। উসমানি আমলেও মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এটি। তবে একসময় পরিত্যক্ত হয়। বিশ শতকের মাঝামাঝি ভবনটি মেরামত করে বানানো হয়েছে জাদুঘর। জাদুঘরে সাধারণত জিনিসপত্র কাচের বাক্সে ভরে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়। তবে এই ভবনে সবকিছু উন্মুক্ত!

টাইলসের প্যাটার্নটি সত্যিই অভিনব; Image Source: Dreamstime.com

ভেতরের দেয়ালে ও গম্বুজাকার ছাদে টাইলসের চোখধাঁধানো কারুকাজ এই জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ। নীল, সবুজ, কালোর মিশেলের নান্দনিক এই নকশা দেখলে রীতিমতো বিস্মিত হতে হয়।

ইনজে মিনারে মাদ্রাসা (মিউজিয়াম অব স্টোন এন্ড উড কার্ভিংস)

সেলজুক স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম সেরা নিদর্শন এই ভবনটি। একসময় মাদ্রাসা ছিল, এখন মিউজিয়াম। মাদ্রাসার মিনার একসময় অনেক উঁচু ছিল। উপরের অংশ ধসে পড়ার পর অবশিষ্ট মিনারটি ছোটখাট, জীর্ণপ্রায়। প্রবেশপথ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে গম্বুজাকৃতির ছাদে ঢাকা অভ্যন্তরভাগ।

সরু মিনার মাদ্রাসার বাইরের ভারী শিল্পকর্ম; Image Source: Gezicini

ভেতরের দেয়ালে রয়েছে টাইলের কারুকাজ। সেলজুক আমলের কাঠের ও পাথরের দ্রব্যাদির সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা এটি। বের হওয়ার সময় প্রবেশপথের দিকে আরেকবার মনোযোগ দিয়ে তাকাবেন। দেখবেন খিলানাকৃতির প্রবেশপথের উপরের অংশের ভারী কাঠের কারুকাজ সেলজুকদের স্থাপত্যে শ্রেষ্ঠত্বের কথাই আরেকবার আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

চাটালওইউক

পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক্সক্যাভেশন সাইট চাটালওইউক পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো জনবসতিগুলোর একটি। নয় হাজার বছর আগে নব্যপ্রস্তর যুগে এখানে মানুষ বাস করতে শুরু করে। মানুষের যাযাবর জীবন ছেড়ে কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা প্রত্যক্ষ করেছে আনাতোলিয়ার এই এলাকা।

চাটালওইউকের প্রাগৈতিহাসিক জনবসতির বর্তমান অবস্থা; Image Source: Go turkey

তখনকার মানুষ বাস করত মাটির তৈরি চারকোণা ঘরে। ঘরে প্রবেশ করতে হতো ছাদে তৈরি গর্ত (এখন যেটাকে দরজা বলি আমরা) দিয়ে। হাঁটার জন্য এখনকার মতো পথ ছিল না। হাঁটতে হতো ছাদের উপর দিয়ে। এখান থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ধারণা করা হয়, শিল্পকলার শুরু হয়েছিল সেই সময়। নানারকম দেয়ালচিত্র, বিভিন্ন মূর্তি, ভাস্কর্য থেকে সেই প্রমাণ মিলেছে।

সিলে

কোনিয়ার উপকন্ঠে অবস্থিত সিলে এলাকাটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। এখানকার কাইট হিল, চা বাগান, রেস্টুরেন্ট, সাগরের ধারের জেটি আর রাতের নৌকাভ্রমণ আপনার ছুটিকে পুরোপুরি উপভোগের ব্যবস্থা করে দেবে ভালোভাবেই।

রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে হাসিখুশি সিলে; Image Source: yonca evren/ Flickr

তবে সিলে শুধুই পিকনিক করে বিনোদিত হওয়ার জায়গা নয়, এর আছে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। পাঁচ হাজার বছর আগে প্রথম জনবসতি গড়ে উঠেছিল সিলেতে। তারপর সিলে ধারণ করেছে রোমান, বাইজেন্টাইন, সেলজুক ও অটোমান ইতিহাসের নানা স্মৃতি। সংস্কৃতিতেও বিচিত্র সিলে। তুর্কি ঐতিহ্যের সাথে ইসলামী সংস্কৃতির এক মেলবন্ধনের দেখা মেলে এখানকার বিয়ে বা ফসল কাটার মতো স্থানীয় সব অনুষ্ঠানে। সিলের খাবারে পেতে পারেন তুরস্কের সমৃদ্ধ ফুড কালচারের স্বাদ, তবে স্থানীয় ফ্লেভারে। সিলের ইতিহাসের ঘ্রাণ মিশে থাকা বাতাসে ঘোড়ায় চড়ে নিতে পারবেন রোমাঞ্চের স্বাদ।

বাটারফ্লাই মিউজিয়াম

প্রজাপতি সুন্দর; তবে ক্রান্তীয় প্রজাপতিদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ধরনের পরিবেশ। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার একটু হেরফের হলেই প্রজাপতি ভীষণ নাজুক হয়ে পড়ে। তুরস্কের মতো দেশে, যেখানে শীতে বা গরমে তাপামাত্রা একেবারে চরমে থাকে, সেখানে প্রজাপতির চাষ বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল।

রাতের চোখধাঁধানো বাটারফ্লাই মিউজিয়াম; Image Source: pinterest

তবে তুরস্কের বাটারফ্লাই মিউজিয়াম বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে তৈরি করতে পেরেছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ প্রজাপতির খামার! এখানে আছে ১৫ প্রজাতির ৬,০০০ প্রজাপতি। ৯৮ প্রজাতির ২০ হাজার গাছপালার মাঝে দিয়ে হেঁটে বেড়ানোর সময় আপনার মনে হবে আপনি আছেন গ্রীনহাউজ আমাজনে! প্রজাপতি আকৃতির ফিউচারিস্টিক ভবনের মাঝখানে আছে ইনসেক্ট অবজারভেটরি।

এখানে প্রজাপতির সম্পূর্ণ জীবনচক্র; মথ থেকে প্রজাপতিতে রুপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া কাছ থেকে দেখতে পারবেন। এছাড়া আছে পার্ক, ক্যাফে, স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি প্রভৃতি।

বেহায়ির লেক ন্যাশনাল পার্ক

এটি তুরস্কের সবচেয়ে বড় মিঠাপানির হ্রদ। হ্রদের মাঝখানের ছোট ছোট দ্বীপ, দ্বীপের সাদাবালির সৈকত, লেকের পাড়ের মুখরিত বন- সবকিছু মিলিয়ে অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার ন্যাশনাল পার্কটি। বিখ্যাত অ্যানামাস পর্বতমালার পটভূমিতে লেকটি দেখতে অপূর্ব লাগে।

লেকের বিস্তৃত জলরাশির পাশ দিয়ে রোদেলা দুপুরে হাঁটতে গেলে প্রথম দর্শনে মনে হবে যেন নীলরঙা সিল্কের একটি চাদর বিছিয়ে আছে, তাতে প্রতিফলিত হচ্ছে নীলের সবকটা শেড। নীলের এই পার্থক্যের কারণ লেকটির চুনাপাথরে গড়া তলদেশ আর গভীরতার পার্থক্য। তীরের পাহাড়ে জুনিপার আর পাইনের ঘনবন। বনে চোখে পড়ে বন্যজীবনের মুখরতা। পার্কের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সাইপ্রেসে ছাওয়া পথে পাখির কিচিরমিচির শুনতে শুনতে হেঁটে যাবেন, দুপুরের বাতাস গায়ে মাখবেন, মন জুড়িয়ে নেবেন সবুজ-নীলের আভায়।

কোনিয়ায় আকর্ষণীয় জায়গার বা মজার কাজকারবারের অভাব নেই। তুরস্কের অন্যতম প্রাচীন বেদেস্তান বাজারে ঘুরে ঘুরে স্যুভেনির কিনতে, সেলফি তুলতে যেমন পারবেন আপনি, ঠিক সেরকমই কোনিয়ার অন্যতম পুরনো রেস্টুরেন্ট ক্যারাভানসরাইয়ে বসে জিরিয়ে নিতে পারবেন, মন ভরে খেতে পারবেন কোনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার এটলি একমেক। ইতিহাসে, ঐতিহ্যে, সংস্কৃতিতে অতুলনীয় কোনিয়া তার সমস্ত সৌন্দয নিয়েই আধুনিক তুরস্কের বড় বড় শহরের মাঝেও অনন্য।

This is a Bangla article on Konya, the Historic city of Turkey. History and major attractions of konya are disscussed inside the article. All the necessary references are hyperlinked inside the article. 

Feature Image - Daily Sabah

Related Articles