অনেকদিন ধরে চলতে থাকা ব্যস্ততা, হঠাৎ বেড়ে যাওয়া অফিসের চাপ, শারীরিক অসুস্থতা অথবা কাছের মানুষের সাথে মনোমালিন্য- এসব যদি চলতেই থাকে মাসজুড়ে, তখন মনকে একটু শান্তি দেওয়ার কোনো উপায় আছে? প্রথমের মাথায় আসবে, “কোথাও ঘুরে আসা যাক!” কিন্তু ঘুরতে যাওয়া মানে নিশ্চয়ই কোনো আত্মীয়ের বাসা হবে না। একা নিরিবিলি সময় চাইলে সেটা বন্ধু-বান্ধবের বাসাও হতে পারে না। তখন আমাদের শরণাপন্ন হতে হয় হোটেলের।
যখন তখন ভালো হোটেল খুঁজে বের করাও মুশকিল। আবার যদি বা ভাগ্য জোরে কেউ তথ্য দেয়ও তবুও দেখা যায় খুঁজতে খুঁজতে হোটেলের কামরাগুলো বুক হয়ে গিয়েছে। মন ভালো করতে গিয়ে উলটো মন খারাপের আরও একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজকের এই আয়োজনে চেষ্টা করা হবে যেন আপনাকে আর কষ্ট করে হোটেল খুঁজে বের না করতে হয়, বরং এখান থেকেই জেনে নিন বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর এবং বিলাসবহুল কিছু হোটেল বা রিসোর্টের ঠিকানা এবং খরচসহ আরও কিছু তথ্য।
১. প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও
ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে অবস্থিত হোটেলটি বাংলাদেশের পাঁচ তারা হোটেলগুলোর মাঝে অন্যতম। আভিজাত্য এবং জাঁকজমকের নিদর্শন এই হোটেলটিতে আপনি খুব বিলাসিতায় অবস্থান করা এবং চড়া দামে সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি আরো পাবেন মিটিং করার জন্য বিজনেস সেন্টার, হেলথ ক্লাব, সুইমিং পুল, বিউটি স্যালুন, শপিং আর্কেড, ঢাকা শহরে ঘোরাঘুরি করার জন্য ব্যবস্থা এবং উচ্চমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখানে বিভিন্ন মানের রুম থেকে শুরু করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানের স্যুইট আছে যেখানে ২৪ ঘণ্টা খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
প্রতি রাত কাটানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার রুমের ক্ষেত্রে আপনার গুনতে হবে ১৫৫ ডলার থেকে ২২০ ডলার, স্যুইটের জন্য ২৭০ ডলার থেকে ৬২০ ডলার। প্রতিটি রুমেই নিরাপত্তার জন্য সেফ, কাজের জন্য টেবিল, উচ্চগতির ইন্টারনেট, বিনোদনের জন্য টেলিভিশন, মিনিবার, দৈনিক খবরের কাগজ ইত্যাদি সকল ব্যবস্থা আছে।
২. ফোর পয়েন্টস বাই শেরাটন
ঢাকার গুলশান ২ নং এ অবস্থিত এই হোটেলটির কথা না বললেই নয়। চার তারা এবং বহুতল বিশিষ্ট এই হোটেলে আপনি পাবেন ঢাকা শহরের এক মনোরম দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ। এখানে রয়েছে অভিজাত ১৪৯টি কামরা এবং ৩১টি স্যুইট। প্রতিটি রুমেই রয়েছে বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সেফ ডিপোজিট বক্স, রুমেই খাবারের ব্যবস্থা এবং পার্কিং, এয়ারপোর্ট পিক-আপ ও ড্রপ-অফের সুযোগ। এই আবাসিক হোটেলে আপনি আরো পাবেন অসাধারণ স্বাদের সব খাবার, বিভিন্ন বিজনেস সার্ভিস, বিনোদনের জন্য রুফ-টপ পুল, স্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়ামাগার, পার্সোনাল ট্রেইনার ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এখানে প্রতি রাত কাটানোর জন্য আপনাকে নূন্যতম ১৩৭ ডলার গুণতে হবে, যা রুমের মানের সাথে সাথে বাড়তে পারে।
৩. দ্য ওয়েস্টিন
অভিজাত এলাকা গুলশানে অবস্থিত এই পাঁচ তারা হোটেলটি বাহির থেকে দেখতে যেমন আলিশান, ভেতরে তেমনি হুলস্থূল অবস্থা! ২৩৫টি বিভিন্ন মানের কামরা ও ২৪টি স্যুইট বিশিষ্ট এই হোটেলে আপনি থাকার পাশাপাশি আরো পাবেন ঢাকা শহরের এবং গুলশান লেকের এক অদ্ভুত মনোরম দৃশ্য, যা কোনো বহুতল ভবন থেকে সচরাচর দেখতে পাবেন না। প্রতিটি কামরায় রয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট, এলসিডি টেলিভিশন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অভিজাত ডিজাইনের বাথরুম ইত্যাদি। এখানে থাকতে গেলে প্রতি রাতের জন্য আপনাকে গুনতে হবে কমপক্ষে ২৬৫ ডলার, যা রুমের মানের অনুপাতের সাথে বাড়বে। এখানে আরো আছে ৫টি রেস্তোরাঁ যার প্রতিটি খাবারের মেন্যুর দিক দিয়ে স্বতন্ত্র। আপনি এই হোটেলে আরো পাবেন পুল, স্পা, ফিটনেস সেন্টার, এয়ারপোর্ট পিক-আপ এবং ড্রপ-অফ, পার্কিং ইত্যাদি সুবিধা।
৪. সিক্স সিজনস হোটেল
ঢাকায় অবস্থিত পাঁচ তারা একটি হোটেল হলো সিক্স সিজনস হোটেল। গুলশান ২ এ অবস্থিত এই হোটেলটি এককথায় আভিজাত্যে ভরপুর। সুইমিং পুল, ফিটনেস সেন্টার, স্পা, বুফে রেস্টুরেন্টসহ এখানে রাত্রি যাপনকারী মেহমানদের জন্য রয়েছে অনেক সুযোগ সুবিধা। বিলাসবহুল এবং বিনোদনপ্রেমী যে কেউ এই হোটেলে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসলে, দেখবেন মন একদম ফুরফুরে হয়ে গেছে। এখানে প্রতিটি রুমে রয়েছে এলইডি টিভি, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ সেফ সহ আরও অন্যান্য নানান সুবিধা। এই বিলাসবহুল হোটেলে থাকার জন্য আপনাকে প্রতিদিন গুনতে হবে সর্বনিম্ন ৩৪০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১৪০০ ডলার।
৫. লেকশোর হোটেল অ্যান্ড অ্যাপার্টমেন্টস
গুলশান ২ লেকের পাড়ে অবস্থিত এই বিলাসবহুল হোটেল বাহির থেকে দেখতে অনেক বেশি জমকালো। একদম গুলশান লেকের পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় এই হোটেল আভিজাত্য একটি অনন্য মাত্রা পেয়েছে। এই হোটেলে রয়েছে গ্র্যান্ড সিটিং রুম, ৬০টি গেস্টরুম, রেস্তোরাঁ, বার, আউটডোর পুল, হেলথ ক্লাব, এয়ারপোর্ট পিক-আপ ড্রপ-অফ, পার্কিং, ফ্রি ইন্টারনেট, বুফে নাস্তা ইত্যাদি অনেক সুবিধা। প্রতিটি গেস্টরুমই সুসজ্জিত এবং পরিবারবান্ধব। এখানে থাকার জন্য প্রতি রাতে আপনার গুনতে হবে ১৫০ ডলারের মতো, যা রুমের মানের সাথে একই অনুপাতে বাড়তে পারে। এখানে খাবার খুবই উন্নত এবং সুস্বাদু যা আপনি ইচ্ছা করলে বিভিন্ন ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের সাহায্যে চেখে দেখতে পারেন। কিন্তু এর জন্যও আপনাকে উচ্চমূল্য গুনতে হবে!
৬. র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন
সর্বমোট ৭ একর জমির উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই পাঁচ তারা হোটেলটিতে নির্বিঘ্নে থাকাটা শহরের যান্ত্রিকতা দূর করার খুব কার্যকর একটি উপায়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট রোডের পাশে অবস্থিত এই হোটেলটির বাহিরের আভিজাত্যময় গঠন যে কারো মন ছুঁয়ে দিতে সক্ষম!
কী নেই এই হোটেলে? সর্বমোট ২০০টি বিলাসী রুম ও স্যুইট, ৪টি রেস্তোরাঁর সুস্বাদু খাবার, বার, স্পা, হেলথ ক্লাব, একাধিক পুল, বিজনেস লাউঞ্জ ইত্যাদি এই হোটেলটিকে বিলাসিতার উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছে। এখানে প্রতিরাত থাকার জন্য আপনাকে নিজের পকেট থেকে কমপক্ষে ২০৩ ডলার গুনতে হবে। আর উচ্চমানের রুমে থাকলে তো কথাই নেই!
৭. লা মেরিডিয়ান
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রোডের উপরে খিলক্ষেত নিকুঞ্জ ২ এ অবস্থিত লা মেরিডিয়ান হোটেল ঢাকায় উচ্চমানের আরেকটি নিদর্শন। এখানে ৩০৪টি রুম এবং ২৫টি স্যুইট রয়েছে যা অত্যন্ত শৌখিন এবং বিলাসী। এখানে রাত কাটানোর জন্য আপনার কোনো কিছুর অভাববোধ হবে এমন পরিস্থিতি হোটেল কর্তৃপক্ষ রাখেনি। প্রতি রাত এখানে কাটানোর জন্য আপনাকে কমপক্ষে ২৪১ ডলার গুনে হোটেল কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। আরো উচ্চমানের রুম বা স্যুইটের জন্য আরো বেশি খরচ পড়বে। এখানে আরো রয়েছে রুফ-টপ সুইমিং পুল যা ব্যবহারের কোনো সময়সীমা নেই, ৬টি রেস্তোরাঁর রুচিশীল সুস্বাদু খাবার, ফিটনেস সেন্টার, বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জ, বাচ্চাদের জন্য সুব্যবস্থা, বিজনেস সেন্টার, স্পা, মেরিডিয়ান ক্লাব লাউঞ্জ ইত্যাদি। শুধু থাকার ব্যবস্থা নয়, বরং আপনি এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনও করতে পারেন।
ঘুরে আসুন আপনার সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয়ে দেশের বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেল থেকে। শুধু বিদেশেই নয়, বরং আমাদের দেশেও রয়েছে নজরকাড়া, জাঁকজমকপূর্ণ এমন অনেক হোটেল।
ফিচার ইমেজ সোর্স: InterContinental Hotel Dhaka