ঢাকার ভেতরে অবস্থিত কিছু বিলাসবহুল হোটেল নিয়ে আগের পর্বে আলোচনা করা হয়েছিল। এই পর্বে ঢাকার বাইরের হোটেলগুলো তুলে ধরা হলো।
১. গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ
সিলেটের শ্রীমঙ্গল শহর ছাড়িয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দিকে যেতে গাছগাছালি ঢাকা সুন্দর আঁকাবাঁকা রাস্তা খুব সহজেই আপনার মন কেড়ে নেবে। এই রাস্তায় লাউয়াছড়া বনের ঠিক আগেই হাতের বাম পাশে মাথা উঁচু করে সগৌরবে এবং আত্ম-অহমিকায় অবস্থান করছে গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ। এই রিসোর্টের বাইরের গঠন আপনার নিঃশ্বাস কিছুক্ষণের জন্য আটকে দেবেই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। হালকা বাদামী এবং ইট রংয়ের এই রিসোর্টটির চেহারা সন্ধ্যায় বা রাতে কৃত্রিম আলোয় মুহূর্তেই বদলে সোনালী রঙ ধারণ করে।
এখানে খুব শৌখিনভাবে এবং বিলাসিতার সাথে কাটিয়ে দিতে পারেন কিছুদিন। এই রিসোর্টে ৮টি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির সর্বমোট ১৩৫টি রুম এবং স্যুইট রয়েছে। প্রতিরাতের জন্য আপনাকে ৩০০ থেকে ৯৭০ ডলার দিতে হবে হোটেল কর্তৃপক্ষকে। এর পাশাপাশি কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে আপনি পাবেন সকালের নাস্তা, সুইমিং পুল, জাকুজ্জি, ফলের একটি ঝুড়ি, লাইব্রেরি, জিমনেশিয়াম, চা-কফি, পানি, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, ফ্রি ওয়াইফাই ইত্যাদি। এখানে বিজনেস মিটিং করার সুব্যবস্থাও রয়েছে। সেজন্য অবশ্য আপনাকে তাদের হল রুম ভাড়া করতে হবে। এছাড়াও সেখানে মোটামুটি সারা বছরই বিভিন্ন প্যাকেজ, অফার এবং ছাড় লেগে থাকে। কয়েকদিন একদম নিশ্চিন্তমনে আয়েশ করে কাটিয়ে আসতেই পারেন এই পাঁচ তারা রিসোর্টে।
২. ডিভাইন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার
বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত যশোর জেলায় চৌগাছায় অবকাশ যাপনের জন্য রয়েছে ডিভাইন হোটেল অ্যান্ড কনভেশন সেন্টার। যশোর বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাদা রঙের এই হোটেলটি বাইরে থেকে দেখলেই আপনার মনে ভ্রমণের ক্লান্তি মুহূর্তে উধাও হয়ে যাবে। আপনি হয়ে উঠবেন ফুরফুরে এবং চনমনে। চব্বিশ ঘণ্টা নিরাপত্তা ক্যামেরা দ্বারা বেষ্টিত এখানে আছে কনফারেন্স রুম, হল, বিজনেস সেন্টার, ফিটনেস সেন্টার, পার্কিং, রুম সার্ভিস, রেস্তোরাঁ, ২৪ ঘন্টা জেনারেটর, ওয়াইফাই ইত্যাদি।
এখানে আপনি পাবেন বিভিন্ন মানের কামরা এবং স্যুইট। প্রতিটি কামরায় রয়েছে এসি, এলইডি টিভি, লন্ড্রি সার্ভিস, মিনি বার, ডিজিটাল লকার এবং সেফ, ইন্টারনেট কানেকশন, আধুনিক বাথরুম ইত্যাদি। অনেক অত্যাধুনিক সুবিধার পরেও এই হোটেল আসলে বিলাসী অবকাশ যাপনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাশ্রয়ী। প্রতিটি কামরার ক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৪০ থেকে ৯৫ ডলার, প্রতিটি স্যুইটের ক্ষেত্রে সেটা হবে ৯৫ থেকে ১২০ ডলার।
৩. র্যাডিসন ব্লু চিটাগং বে ভিউ
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হোটেল র্যাডিসন ব্লু চিটাগং বে ভিউ। পাঁচ তারা এ হোটেলটি থেকে একইসাথে দূরের সবুজ পাহাড়, নীল বঙ্গোপসাগর, ব্যস্ত চট্টগ্রাম নগরী দেখতে পাবেন আপনি। র্যাডিসন ব্লুতে থাকার জন্য আছে ২৪১টি অভিজাত কামরা এবং স্যুইট। প্রতি রাত এখানে কাটানোর জন্য আপনার বাজেট হতে হবে ১৪৪ থেকে ৪২৫ ডলার।
প্রতিটি কামরায় রয়েছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট, দৈনিক সংবাদপত্র, মিনিবার, রুম সার্ভিস, কমপ্লিমেন্টারি সহ আরো অনেক সুবিধা। পিক-আপ ও ড্রপ-অফের সুবিধা, স্পা, ইনফিনিটি পুল, ফিটনেস সেন্টার, বিজনেস ক্লাস লাউঞ্জ, গেস্ট সার্ভিস, তিনটি রেস্তোরাঁ, দুটি লাইসেন্সড বার, দুটি করে মিটিং রুম ও বলরুম, সর্বত্র দ্রুত গতির ইন্টারনেট, চট্টগ্রাম এবং আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখার জন্য গাড়ি এবং শাটল সার্ভিসের সুব্যবস্থা ইত্যাদি আরো অনেক কিছুই এখানে পাবেন। এখানে অবকাশযাপনের আনন্দময় অভিজ্ঞতা যেন অনেকদিন পর্যন্ত আপনার মনে গেঁথে থাকে তার সর্বোচ্চ এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা এই হোটেলের প্রতিটি পদে নিয়োজিত কর্মীরা করে থাকে।
৪. দুসাই রিসোর্ট অ্যাণ্ড স্পা
দুসাই রিসোর্ট অ্যাণ্ড স্পা সিলেটের মৌলভীবাজারে অবস্থিত। এ রিসোর্ট ২০১৬ সালের আগস্ট এবং অক্টোবরের ভেতরকার সৌন্দর্য এবং বাহ্যিক গঠনের জন্য তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। দুসাই রিসোর্ট প্রায় ১০০০ ফুট দীর্ঘ লেক এবং প্রচুর গাছ দ্বারা সন্নিবেশিত। প্রকৃতিপ্রেমী যে কারো জন্য এই রিসোর্টটি ছুটি কাটানোর জন্য যথার্থ স্থান। নির্মল বাতাস, বুকভরা অক্সিজেন এবং পাহাড়ের রোমাঞ্চকর অনুভূতি পেতে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন দুসাই রিসোর্ট। এই রিসোর্টে থাকার জন্য দিন প্রতি আপনার রুম ভাড়া পড়বে সর্বনিম্ন ১১৯ ডলার। দুসাই রিসোর্ট মৌলভীবাজারে নীতেশ্বর ঈদগাহ ছাড়িয়ে গিয়াসনগরে অবস্থিত।
৫. রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যাণ্ড স্পা
কক্সবাজারের উখিয়া ও ইনানিতে অবস্থিত অত্যন্ত মনোরম এবং নজরকাড়া একটি পাঁচ তারা হোটেল রয়েল টিউলিপ। এখান থেকে বঙ্গোপসাগরের কিছুটা অংশ উপভোগ করা যায়। ১৫ একরের উপর গড়ে ওঠা এই হোটেলে ৪৯৩টি কামরা রয়েছে। এখানে আরো রয়েছে সুইমিং পুল এবং জাকুজ্জি (গরম পানিবাহিত পুল), খেলাধুলার জন্য আলাদা স্থান, 3D মুভি হল, বিলিয়ার্ড খেলার সুবিধা, স্পা এবং ফিটনেস সেন্টার। এখানে থাকতে হলে প্রতি দিন রুম ভাড়া হিসাবে খরচ পড়বে প্রায় ১০০ ডলার থেকে ৩৫০ ডলার পর্যন্ত।
৬. সায়মন বিচ রিসোর্ট
বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা এবং পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে এটি অবস্থিত। কক্সবাজারের অন্যতম এবং পুরনোতম রিসোর্ট হচ্ছে সায়মন বিচ রিসোর্ট। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে এটি কক্সবাজারের কলাতলী সৈকতে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে এবং অত্যন্ত আভিজাত্যের সাথে। কক্সবাজারের ডলফিন মোড় থেকে বামে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের রোডে একটু এগোলেই হাতের ডানে সায়মন বিচ রিসোর্টের প্রবেশস্থল। এই হোটেলে ঢুকলেই আপনাকে সুদীর্ঘ হলরুমে অভ্যর্থনা জানানো হবে ওয়েলকাম ড্রিংকস দিয়ে।
এ রিসোর্টে সমুদ্র এবং পাহাড় পরিদর্শন করা যায় এমন সর্বমোট ২২৮টি গেস্ট রুম ও স্যুইট রয়েছে যার মাঝে ১৬টি ওশান স্যুইট থেকে ১৮০ ডিগ্রী কোণ করে সমুদ্রের দৃশ্য দেখা যায় এবং ৩৮টি ওশান ভিউ স্যুইট থেকে ইনফিনিটি সুইমিং পুল সহ সমুদ্রের পটভূমি দেখা যায়। আপনি এই হোটেলে চেক-ইন করে রাত কাটালে কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে পাচ্ছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরে পিক-আপ এবং ড্রপ-বাই এর শাটল সার্ভিস, ক্যাসাব্লাঙ্কা রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা, মিনারেল পানি, দৈনিক সংবাদপত্র, ফিটনেস সেন্টার, এক ঘন্টার জন্য ইনফিনিটি পুল এবং ফ্রি ওয়াইফাই।
প্রতিরাতে থাকার জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে ১০৬ ডলার থেকে ৫৪৪ ডলার পর্যন্ত। এখানে আরো রয়েছে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, ৫টি রেস্তোরাঁ ও বার, মিটিং রুম, বিজনেস রুম, বলরুম, প্রাইভেট বিচ, বিলিয়ার্ড রুম ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। একদম সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে এই রিসোর্টটি হওয়ার কারণে পর্যটকেরা এখানে থাকতে অনেক পছন্দ করে। এই রিসোর্টের কর্মকর্তা কর্মচারী সবাই সত্যিকার অর্থে আন্তরিক আতিথেয়তায় আপনার অবস্থানকে অনেক আনন্দময় করে তুলবে।
আপনার ভ্রমণ এবং অবকাশের সময়টুকু হোক আনন্দময়। জীবনে চলার পথে একটুখানি অবকাশের প্রয়োজন অনেক বেশি। মন এবং শরীরকে পরবর্তী ব্যস্ততার জন্য প্রস্তুত করতে হারিয়ে যান প্রকৃতির ভিড়ে। আনন্দ খুঁজে নিন পাহাড়ে কিংবা সমুদ্রে, আরামদায়ক কামরায় কিংবা মজাদার খাদ্যে। আপনার কাটিয়ে আসা এই দুই তিনটি দিন হোক স্মৃতিময়।
ফিচার ইমেজ সোর্স: royaltulipcoxsbazar.com