একা একা কখনো কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়েছে কি? যদি না গিয়ে থাকেন, তাহলে একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গাগুলো থেকে। সুন্দর পরিবেশে নিজের সাথে সময় কাটানোর আনন্দটাই যে অন্যরকম!
কিউবা
ক্যারিবিয় এই দ্বীপদেশটিতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে একা একা ঘুরে বাড়ানোর মজাই আলাদা। ভিলা ক্লারা রাজ্যের সাদা-বালির সমুদ্র সৈকতগুলোর পানির উপরের সরু পথ যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। সেখানে একা বসে আপনি পাবেন প্রশান্ত মনের অনুভূতি। এছাড়াও রয়েছে মাইলের পর পর মাইল সমুদ্র সৈকত নিয়ে বানানো জনপ্রিয় রিসোর্ট-জারডাইন্স ডেল রে। এর মধ্যে রয়েছে প্লায়া পিলার, যার সবচাইতে বড় প্রবালপ্রাচীর ও ঘুড়ি উড়ানোর জায়গা আপনাকে বিমোহিত করবে। আরও আছে মুসেও প্রেসিডিও মোডেলো। এটি হলো সেই বিচ্ছিন্ন কারাগার, যেখানে ফিদেল কাস্ত্রো ও তার বাহিনীকে কারাবন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছিলো। ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিম কিউবার শহর ভিনালেস্ থেকে। সেখানকার প্রধান সড়কগুলোতে রয়েছে সারি সারি রঙিন কাঠের ঘর ও পৌর জাদুঘর। আর এই ঘরগুলো মূলত ঔপনিবেশিক যুগের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ড্রুবোভনিক, ক্রোয়েশিয়া
নীল পানির গভীর সমুদ্র অ্যাড্রিয়াটিকে ঐতিহাসিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই শহরটি একাকী পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় না থেকে পারে না। তবে সেখানে যাওয়ার সবচাইতে উপযুক্ত সময় হলো এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর মাস। কারণ এই সময়টাতে ড্রুবোভনিকের পরিবেশ উষ্ণ থাকে এবং বিশেষ করে সে সময়টাতেই কিছু ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে। এই শহরে ঘুরে বেড়াতে পারেন ঐতিহাসিক প্রাচীরে, ফেরিতে করে ঘুরে দেখতে পারেন পুরো দ্বীপটি। এছাড়াও কায়াকে (এক ধরনের নৌকা) করে উপভোগ করতে পারেন উপসাগরের অনিন্দ্য সৌন্দর্য।
রাজস্থান, ভারত
ভারতের এই রাজ্যে একা ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে কিন্তু মন্দ হবে না একেবারেই! রাজাদের এই ভূমিতে প্রাসাদ ও দুর্গের কোনো কমতি নেই। সেখানকার প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরতে পারবেন খুব সহজেই। যেমন- উদয়পুর, জয়পুর, যোধপুর ও জয়সালমের। মজার বিষয় হলো, এই জায়গাগুলোতে খাবার ও থাকার ব্যবস্থা একদমই সাধ্যের মধ্যে এবং পরিবেশও বেশ ভালো। উটের পিঠে চড়ে দেখতে পারেন মরুভূমির সৌন্দর্য। তবে অবশ্যই অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পুষ্করে হওয়া উটের মেলা দেখে আসতে ভুলবেন না!
জর্ডান
জর্ডানে এসে মৃত সাগরের সৌন্দর্যে আপন মনে হারিয়ে যাওয়ার মাঝে রয়েছে অন্যরকম এক পাওয়ার আনন্দ। এখানে আপনি দেখতে পাবেন পৃথিবীর নিম্নতম প্রান্ত থেকে সূর্যাস্তের এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। আর ডেড সীর লবণাক্ত পানির ঘনত্বের কারণে আপনি পানির উপরেই ভেসে থাকবেন। সেখানে আরও একটি সুন্দর জায়গার নাম দানা। খাড়া বাঁধ ও বালুময় মরুভূমির এক অপূর্ব মেলবন্ধন এই জায়গাটি। দানার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিস্তব্ধতা আপনাকে আশ্চর্য এক মায়ায় সেখানে আটকে রাখবে। এছাড়াও ঘুরে দেখার মতো আরও কিছু জায়গা হলো ওয়াদি রাম, আম্মান, ব্যাপ্টিজম সাইট, আজ্রাক ওয়েটল্যান্ডস, পেট্রা, মাউন্ট নেবো, মাদাবা, দ্য কিংস হাইওয়ে, উম কাইস, দ্য ডেজার্ট ক্যাসেলস, ওয়াদি মুজিব জেরাশ ও আজলোউন।
হোক্কাইডো, জাপান
জাপানের সবচাইতে উত্তরে অবস্থিত এই দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নানা রকম খাবারের বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। এই দ্বীপটির আবহাওয়া বেশ শীতল হওয়ায় শীতকালে সেখানকার তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। অনেক সময় তুষারপাতও হয়। এজন্যই শীতকালে হোক্কাইডোতে বিভিন্ন রকম স্নো-স্পোর্টস এর আয়োজন করা হয়। জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়েও দ্বীপটি অনেক বিখ্যাত। সেখানে ঘুরে আপনি দেখতে পারেন উঁচু পাহাড়-পর্বত, যা এ এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল আকর্ষণ।
নেপাল
নেপালের কথা বলার আগে এর নামের অর্থ না বললেই নয়! এই নামের উৎপত্তি দুটি শব্দ থেকে। ‘নে’ অর্থাৎ পবিত্র এবং ‘পাল’ অর্থ গুহা। তাই ‘নেপাল’ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ‘পবিত্র গুহা’। নামের মতোই দেশটি অনিন্দ্য সুন্দর এবং শান্তিময়। বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূ-প্রকৃতির কারণে সেখানে গিয়ে পর্বত,পাহাড়ি উঁচু-নিচু সমতল ভূমির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। নেপালে গিয়ে পাহাড়ে উঠবেন না, তা তো একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার! পর্বতারোহণের অভিজ্ঞতা না থাকলে ছোটখাটো পাহাড়ে যাওয়াই ভালো। তবে সতর্কতাস্বরূপ আরোহণের সময় নেপালের স্থানীয় কোনো ব্যক্তি বা গাইড সঙ্গে রাখলে ভালো। যাওয়ার আগে নেপালে পবর্ত আরোহণের কোনো সংস্থার সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন। পাহাড়ে ওঠার সময় পাহাড়ি মানুষের খুব কাছাকাছি চলে যেতে পারবেন। আরোহণের মাঝে বিরতিতে চায়ের দোকানগুলোতে বসে বিশ্রামও নেয়া যেতে পারে।
মাউন্ট এভারেস্টকে একদম কাছে থেকে দেখার জন্য কিছু বিমান ভাড়া দেয়া হয়। ছোটখাটো এই বিমানগুলো ভাড়া করতে পারেন কাঠমুন্ডু থেকে। কিন্তু আরোহণ করতে হলে আপনাকে আগে থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এছাড়াও নাগরকোটে গিয়ে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া দেখতে পারেন।
কেনিয়া
‘বিগ ফাইভ’ হিসেবে খ্যাত এই দেশটি শিকার অভিযানের জন্যও বেশ জনপ্রিয়। ‘বিগ ফাইভ’ বলতে আসলে বোঝায়- হাতি, কালো গণ্ডার, মহিষ, সিংহ ও চিতা বাঘকে। তাই এসব প্রাণী দেখার জন্য কেনিয়াতে গিয়ে কোনো গাইডের সাহায্য নিয়ে বনে-জঙ্গলে ঘুরে আসতে পারেন বা যোগ দিতে পারেন বড় কোনো দলের সাথে। দেশটিতে সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন থাকার জায়গা। কারণ সেখানকার ব্যবস্থা ও কাঠামো একেবারেই পর্যটকদের আওতার বাইরে নয়। আর কেনিয়ার বাসিন্দাদের আতিথেয়তার বদৌলতে আপনি কয়েকজনের বাসায় নিমন্ত্রণও পেয়ে যাবেন।
কেনিয়ার বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল পার্ক, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যরা এবং অসম্ভব সুন্দর সমুদ্রসৈকত আপনার মন কেড়ে নিবে। উপকূল অঞ্চলে যাওয়া হলে ডাবের সুমিষ্ট পানি পান করে নিতে অবশ্যই ভুলবেন না! এছাড়াও কেনিয়াতে ঘুরে দেখতে পারেন লেক নাইভাশা, ডেজার্ট লেক, লেক ভিক্টোরিয়া, নাইরোবি ন্যাশনাল পার্ক, লামু, লেক বারিঙ্গো, লামু, থিমিলিচ ওহিঙ্গা ও মাউন্ট কেনিয়া। ঐতিহ্যবাহী গান আর নাচে স্থানীয়রা মেতে ওঠে লেক টুরকানা কালচারাল ফেস্টিভ্যালে। তিন দিন ব্যাপী হওয়া এই আয়োজন আপনাকে দেবে একেবারেই ভিন্ন এক আনন্দের স্বাদ।
গুয়াতেমালা
মধ্য ও পশ্চিম আমেরিকার মধ্যে একাকী ঘুরে বেড়াতে চাইলে গুয়াতেমালায় ঘুরে আসতে পারেন। প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রাচুর্যে ভরপুর একটি দেশ এটি। সেখানে প্রথমেই ঘুরে দেখতে পারেন দেশটির প্রাক্তন শহর অ্যান্টিগুয়া। এখানকার ঔপনিবেশিক যুগের স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন আপনাকে বিমোহিত করবে। স্প্যানিশ ভাষা শেখার খুব আগ্রহ থাকলে, গুয়াতেমালায় এসে আপনার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন খুব সহজেই। ভাষা শিক্ষার অনেক স্কুল রয়েছে যেগুলো আপনাকে একাই আলাদাভাবে স্প্যানিশ ভাষা সেখাবে, তা-ও আবার একদম নামমাত্র খরচে। নৌকা ভ্রমণে যেতে পারেন ‘রিও ডলসি’ নামের মিঠা পুকুরের নদীতে। নদীর চারপাশ গাছপালায় ঘেরা। আর পাখির কিচিরমিচির আপনার মনকে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া। স্মারক জাতীয় কিছু সংগ্রহ করতে চাইলে যেতে পারেন পার্বত্য অঞ্চলের চিচিকাসেনানগো বাজারে। অতুলনীয় এই বাজারটি সপ্তাহে মাত্র দু’বারই বসে। এছাড়াও ঘুরে দেখার মতো কিছু জায়গা হলো ন্যাশনাল আর্কিওলোজিক্যাল মিউজিয়াম, ভোলক্যান ডি প্যাকায়া, লিভিংস্টন, সেমুক চাম্পে, লাগো দ্য আতিত্লান ও ইয়াকশা।
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
চারিদিকে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা আর হ্রদ দিয়ে বিভক্ত এই শহরটিতে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবেন পায়ে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে। শহরটির পথ-ঘাটে চলতে গিয়ে বেশিরভাগই চোখে পড়বে পথচারী ও সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়ানো লোকজন। সেখানকার ক্যাফে সংস্কৃতি, উৎকৃষ্ট মানের জাদুঘর ও প্রাণবন্ত সরাসরি সঙ্গীতের আসর একজন পর্যটক হিসেবে আপনাকে নিরাশ করবে না। এই শহরের কিছু উৎসব; যেমন- ডিস্টরশন (জুন মাসে হয়) ও জ্যায্ ফেস্টিভ্যাল (জুলাই মাসে হয়) একেবারেই না দেখে আসার মতো নয়!