ধরুন, আপনি পৃথিবীর কোনো স্বাধীন ভূখণ্ডের ঐতিহাসিক শহর ভ্রমণে বেরিয়েছেন। যে শহরটি প্রায় ৯,০০০ বছর পুরনো, আর যেটি বানানো হয়েছে পাহাড়ের বিশাল গিরিখাত কেটে কেটে। শহরের ঠিক মধ্যখানে প্রাচীন আমলের মতোই মেইন স্কয়ার। তার পাশ দিয়ে পাথরের একটা প্যাঁচানো সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের শহরের দিকে। আপনি নামছেন সে সিঁড়ি বেয়ে, হাতের স্পর্শে অনুভব করছেন সেসব আদিম মানবদের; যাদের পদচারণায় একসময় মুখরিত ছিল এই শহরটা। নিচের শহরের নামার মুখেই পেলেন একটা গুহাঘর।
যে ঘরটা এতগুলো বছর ধরে পরিত্যক্ত হওয়া সত্ত্বেও ঘরের আসবাবপত্রগুলো এখনো ঠিক একইরকমভাবে সাজানো-গোছানো। যেন এই মাত্র ঘরের সব বাসিন্দারা কোথায় বেরিয়েছে, কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই আবার ফিরে আসবে। শুধু তা-ই নয়, আপনি চাইলেই সেসব গুহাঘরগুলোর যেকোনো একটিতে রাত কাটাতে পারবেন। কেমন রোমাঞ্চকর একটা অনুভূতি, তা-ই না? গুহাঘরে একরাত আমাদের আদি মানুষদের মতো জীবনযাপন। নাহ, কাল্পনিক রূপকথা নয়। বলছিলাম ইতালির এক পরিত্যক্ত শহরের কথা। আর আজকের আয়োজনে থাকছে মাতেরা নামক সেই গুহা শহরের গল্প।
গুহামানবদের দিয়েই পৃথিবীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তারপর মিশরীয়, মেসোপটেমিয়া, চৈনিক, সিন্ধু সভ্যতা সহ কত শত সভ্যতা কালের বিবর্তনে এসেছে আর সেসব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে, তা আমরা বলতেও পারব না। শত্রুর আক্রমণ কিংবা নির্বাসন অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-যেভাবেই হোক না কেন, সভ্যতাগুলো বিলীন হয়ে গেছে কালের অতল গহ্বরে। নদীর এপার ভেঙে ওপার গড়ে-মতবাদের মতোই সেসব সভ্যতা হয়তো অন্য কোথাও গিয়ে নিজেদের খুঁটি গেড়েছিল। ইতিহাসের এই যে কালের বিবর্তন, এই যে ভাঙা-গড়ার খেলা, এসবের মাঝেও টিকে আছে নয় হাজার বছর পুরনো এক বসতি। শুধু তা-ইই নয়, সেই যে নয় হাজার বছর আগে লোকজন এখানে বসতি গড়েছিল তার ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
গুহার কথা উঠলেই সবার প্রথম আমাদের মাথায় আসে, আমাদের দেশের বান্দরবান জেলার আলীকদম গুহার কথা, কিংবা পাশের দেশ ভারতের অজন্তা এবং ইলোরা গুহা; অথবা মিশরের আবু সিম্বেল আর নয়তো জর্ডানের পেত্রা। আরো এমন কত গুহা আছে যেগুলোর নামও হয়তো আমাদের স্মরণে নেই কিংবা জানাও নেই। তবে এসবের মধ্যে ইতালির সাসি ডি মাতেরা হচ্ছে বর্তমান সময়ে ভ্রমণের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এক নাম। কারণ, উপরোক্ত গুহাবাসীরা হাজার বছর আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল সভ্যতার বিবর্তনে; তবে মাতেরাতে গুহাবাসীদের বসবাস ছিল হয়তো সেটারও একশো বছর পূরণ হয়নি এখনো।
ইতালিয়ান ভাষায় সাসি শব্দের অর্থ হচ্ছে পাথর, আর সাসি ডি মাতেরা মানে হচ্ছে মাতেরার পাথর। এই মাতেরার গুহাবাসীসের বসবাস খুব বেশিদিনের পুরনো নয়; এমনকি তা বহাল ছিল ১৯৫০ সাল অবধি। মাতেরা হচ্ছে দক্ষিণ ইতালির বাসিলিকাতা অঞ্চলের আওতাধীন এক প্রত্যন্ত অঞ্চল। দক্ষিণ ইতালির প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই শহরটা অনন্য আর প্রসিদ্ধ পাথরের খাঁড়া খাদ আর গুহাগুলোকে সুন্দর করে খোদাই করে বানানো ঘরগুলোর জন্য।
প্রাচীন মাতেরা দু’টি ভাগে বিভক্ত ছিল- স্যাসো বারিস্যানো এবং স্যাসো ক্যাভোসো। আর এই দুই ভাগের সংযোগস্থলে মাতেরা সবচাইতে সুদর্শন ড্যুয়েমো (ক্যাথেড্রাল) সদম্ভে নিজের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। ইতালির বিচ্ছিন্ন, ভুলে যাওয়া এক অংশে পরিণত হয়েছিল মাতেরা, লোকজন নেই বললেই চলে আর ভ্রমণকারীর সংখ্যাও ছিল অতি নগণ্য। তবে উনিশ শতকের শুরুর দিকে কিছু দুঃসাহসিক অভিযাত্রী মাতেরার এই শুকনো, রুক্ষ, খাড়া, বিপদসংকুল পাহাড়ের খাদ পেরিয়ে মাতেরা সৌন্দর্য উপভোগ করেছিল। তাদের সেই দুঃসাহসিক আর বিরল ভ্রমণযাত্রা থেকে এটাই আবিষ্কৃত হয় যে, সেই উঁচু আর বিপদসংকুল পাহাড়ের চূড়ার প্রায় ১৬,০০০ মানুষের বসবাস। যেখানে গুহাঘরগুলোর সাথে প্যালাজ্জি আর চ্যাপেল মিলেমিশে একাকার; আর যেখানে মূলত গির্জার ছাদেই সমাধিস্থান নির্মাণ করা হয়।
একটা সময় এককক্ষ বিশিষ্ট এই গুহাঘরগুলোর এমন ভয়াবহ দরিদ্র আর অভাবনীয় জীবনযাপনের মান ছিল যে, ১৯৫০ এর দশকে মাতেরাকে ইতালির লজ্জা বলে রাষ্ট্রীয় নিন্দার শিকার হতে হয়েছিল। এরপর থেকেই সরকারের নির্দেশে সাসির বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যেতে শুরু করে। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই শহরটা ভূতেদের শহর নামে পরিচিতি পায়। কেননা, বাড়িঘর সব থাকলেও থাকার মতো কোনো লোক আর অবশিষ্ট ছিল না সেখানে। পরবর্তী দশকগুলোতে সাসির সংস্কারের কারণে এর সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আর তারই ফলে ২০১৯ সালের ইউরোপীয় সংস্কৃতির রাজধানী বলে স্বীকৃতি দেয়া হয় মাতেরাকে।
মাতেরার আকাশে এমনকি দিনে-দুপুরেও যে ঘন কালো মেঘ ঝুলে থাকতো সর্বদা, তা সরিয়ে পরিষ্কার সূর্যের আলো আনতে সক্ষম হয়েছিলেন ইতালিয়ান শিল্পী ও লেখক কার্লো লেভি (১৯০২-১৯৭৫)। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও কার্লো লেভি ছিলেন চিত্রশিল্পী, লেখক-সাহিত্যিক এবং সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। বিশেষ করে স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদের বিরোধী ছিলেন তিনি। তার এই রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং ভূমিকার জন্য ফ্যাসিবাদী ইতালিয়ান মুসোলিনি সরকার তাকে নির্বাসনে পাঠায়। ১৯৩৫ সালে মুসোলিনি সরকারের আদেশে ইতালির দক্ষিণে লুসানিয়া নামক অঞ্চলে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে আসেন কার্লো লেভি।
নির্বাসিত দিনযাপনের অভ্যস্ততায় সেখানকার আদিবাসীরাই মূলত কার্লো লেভির আপনজনে পরিণত হয়। আর লেভিও মিশে যান তাদের ভোলাভালা আন্তরিকতায়। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন তাদের নিত্যদিনের চরম দুর্দশা। নির্বাসন থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথমে প্যারিসে চলে যান লেভি; কিন্তু দেশে ফেরা মাত্রই আবারো সরকারের রোষানলের স্বীকার হন তিনি। আর সেই সময় কারারুদ্ধ অবস্থায় জেলে বসে লিখে ফেলেন তার জগদ্বিখ্যাত বই ক্রিস্তো সি অ্যা ফেরমোতি অ্যা এবোলি, যার ইংলিশ নাম ছিল ক্রাইস্ট স্টপড অ্যাট ইবোলি, আর বঙ্গানুবাদে আসে ইবোলিতে থেমে ছিলেন যিশুখ্রিস্ট। এক বাক্যে বলতে গেলে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঈশ্বর থাকেন ঐ ভদ্রপল্লীতে’ উক্তিটির সাথে এই বইটির নামের মিল রূপক অর্থে পাওয়া যায়।
লুসানিয়া অভিমুখী সড়ক আর রেল যোগাযোগ ইবোলি পর্যন্ত এসে শাখাপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন পথে চলে গেছে। লুসানিয়ার অধিবাসীরা এগুলোকেই তাদের দুর্দশার কারণ বলে প্রকাশ করতো। তাদের বিশ্বাস মতে, খ্রিস্টধর্ম ও তার নিয়মনীতি বিশ্বের সর্বক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত হলেও কেবল তাদেরকেই উপেক্ষা করে গেছে। যার ফলে মানব সমাজে থেকেও পরিপূর্ণ মানুষ হবার স্বাদ পায়নি লুসানিয়ার অধিবাসীরা। আর সে প্রসঙ্গে কার্লো লেভি বলেছেন,
“যিশুখ্রিস্ট এতদূর অবধি আসেননি কখনোই, আসেনি সময়, মানুষের আত্মা আসেনি, আশা আসেনি, কার্যকারণ সম্পর্কও আসেনি, আসেনি কোন ইতিহাস; কেবল শত্রু, বিজেতা এবং অনুভূতিহীন কিছু আগন্তুক ছাড়া আর কারোরই পা পড়েনি এখানটায়।”
মাতেরা এবং তৎসংলগ্ন এই বিশাল অবহেলিত জনপদের বিস্তারিত জীবন প্রনালী বর্ণনা করে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস রচনা করেন কার্লো লেভি। ১৯৪৫ সালে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ পেলে বিশ্ববাসীর কাছে চরম লজ্জা আর কেলেঙ্কারির মুখে পড়ে ইতালিয়ান সরকার। অবস্থা এতটাই বেগতিক হয় যে, সরকার বাধ্য হয়ে ১৯৫০ সালের দিকে এখানকার প্রায় হাজার বিশেক অধিবাসীকে জোর করে অন্যত্র স্থানান্তরিত করে। তবে, নিজেদের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে নারাজ অধিবাসীদের কারণে অবস্থা খুব একটা সুবিধা করা যায়নি। ফলে ১৯৬০ সালে ইতালিয়ান সরকার এসব গুহাতে বসবাস করা অবৈধ বলে ঘোষণা দেয়। ফলে অধিবাসীরা বাধ্য হয় সরে যেতে।
শুধু তা-ই নয়, বরঞ্চ কার্লো লেভির নেতৃত্বে একদল সুশীল সরকারের কাছে এই দাবিও পেশ করে যে, কেবল পরিত্যক্ত নয় বরঞ্চ হাজার বছরের এই নৃতাত্ত্বিক আর ঐতিহাসিক গুহাস্থাপত্যকে সংস্কারের মাধ্যমে দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করতে। ফলে ভূতেদের শহর বা মৃতদের শহর আবারো প্রাণচাঞ্চল্যে পূর্ণ হতে শুরু করে। প্রাক্তন বাসিন্দাদের মধ্যে ধনীরা নিজেদের গুহাঘরের পাশাপাশি সরকারের বরাদ্দ করা গুহাঘর কিনে নিয়ে সংস্কার করে। পরবর্তীতে সেই গুহাঘরগুলোই আবাসিক হোটেল আর রেস্তোরাঁর জন্য ভাড়া করা হয়েছিল। সরকারের নির্দেশেই পৌর কর্তৃপক্ষ এখানে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ থেকে শুরু করে আধুনিক জীবনযাত্রার সব ধরনের সুবিধাদির ব্যবস্থা করে। ফলে একসময়ের অবহেলিত আর পরিত্যক্ত মাতেরা হয়ে উঠে ইতালির দর্শনীয় স্থানসমূহের অন্যতম একটি।
১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর মর্যাদা লাভ করে মাতেরা শহর। ইতালিয়ান সরকার ছাড়াও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং হলিউডের যৌথ উদ্যোগে মাতেরাকে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পর্যটকদের উপযোগী করে গড়ে তুলা হয়। সাসির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় তিন থেকে চার হাজারের মধ্যে। বর্তমানে বেশ কিছু গুহাঘরের সংস্কারের কাজ চলছে। সেগুলো সম্পূর্ণরূপে উপযোগী হলে সেখানে থাকতে পারবে প্রায় সাত হাজার লোক।
গুহাঘরগুলোর বাসিন্দারা ঘরটাকে যেভাবে ছেড়ে চলে গিয়েছিল এখনো সেগুলো ঠিক একইভাবে রাখা আছে। গুহাঘরে প্রবেশ করলেই দেখতে পাবেন ঘরের তৈজসপত্র আর আসবাবপত্র কখনো এদিক সেদিক ছড়ানো, কিংবা কখনো দেয়ালে ঝুলানো, অথবা দেয়াল কেটে বানানো তাকে নিবদ্ধ। গুহাঘরের মধ্যেই রান্নাঘর ছিল; তাছাড়া আস্তাবলও ঘরের ভিতরেও জায়গা করে বানানো হতো। জল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতো চৌবাচ্চা। কার্লো লেভি তার বইতে লিখেছেন,
এই গুহাঘরগুলো গভীর গিরিখাতের শক্ত মাটি খুঁড়ে বানানো হয়েছিল। সাধারণত পুরো পরিবারের জন্য একটাই গুহাঘর হতো। আর সেটার মেঝেতে বয়োজৈষ্ঠ্য থেকে শুরু করে বাচ্চা আর পোষা প্রাণী সবই একসাথে ঘুমাতো।
এই পাহাড়ি উপত্যকা অধ্যুষিত অঞ্চল অনেকাংশেই জেরুজালেমের সমতুল্য হবার ফলে অনেক চলচ্চিত্রের শ্যুটিং এখানে হয়েছে। যিশু খ্রিস্টকে নিয়ে বানানো মেল গিবসনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র দ্য প্যাশন অফ দ্য ক্রাইস্ট এর শুটিংও এই মাতেরাতেই করা। মাতেরাতে যে কেবলই গুহাঘর আছে এমনটা কিন্তু নয়। যাদুঘর, পাবলিক স্কয়ার, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, আকর্ষণীয় চ্যাপেল আর গির্জা, পাহাড় কেটে বানানো চলাচলের পেঁচানো সিঁড়ি ইত্যাদিসহ আরো নানান দর্শনীয় আর আকর্ষণীয় স্থান।
এছাড়া আছে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাথেড্রাল কিংবা লুক আউট পয়েন্টে দাঁড়িয়ে পুরো শহরটিকে উপভোগের সুযোগ। পাশাপাশি মাতেরার পাহাড়গুলোতে পর্যটকদের ডাকে তার উপর চড়ার জন্য। আর থাকার জন্য আছে ভালোমানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। আবার চাইলেই উচ্চ মূল্য দিয়ে থাকতে পারেন গুহাঘরের আদলে বানানো হোটেলগুলোতে। খাওয়াদাওয়া নিয়ে পর্যটকদের তাই কোনো ভোগান্তি হবে না।
তাই, আপনিও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন মাতেরা থেকে। যেখানে গুহামানবদের উত্তরসূরিরা বসবাস করতো এই মাত্র ৫০ বছর আগেও। যেই শহরটির গোড়াপত্তন হয়েছিল আজ থেকে নয় হাজার বছর আগে। যে শহরের পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে অপূর্ব সুন্দর সব ঘর আর চলাচলের রাস্তা।
ভ্রমণ সংক্রান্ত চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/