নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা ও অনন্য পরিবেশই যেন একটি দেশকে বসবাসের উপযোগী করে তোলে। আর সেখানকার ব্যবস্থা ও সুযোগগুলো যদি হয় প্রয়োজন বা চাওয়ার চাইতেও অনেক বেশি কিছু, তাহলে তো কোনো কথাই নেই! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা এমন সব সুযোগ সুবিধার কথাই চলুন এখন জেনে নেয়া যাক।
চীন
স্কাই ট্রেন
চীনে স্কাই ট্রেন নামে নতুন একটি রেল স্টেশন নির্মাণ করতে মাত্র চার মাস সময় লেগেছিলো। চাংডু পান্ডার মতো দেখতে এই ট্রেনটি দেশের দ্রুতগতির ঝুলন্ত রেললাইনের দিয়ে চলাচল করবে। এই ট্রেনটিতে মোট ২৩০ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারে এবং এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৭ মাইল। এটি ছোট শহরের জন্য নকশা করা হয়েছিলো।
যেখানে সেখানে ঘুমানো
আহা! এমনটি কে না চায়? আমাদের দেশে এরকম ব্যবস্থা থাকলে কেমন হতো একবার ভেবে দেখুন তো। চীনে যেখানে সেখানে ঘুমানোর ব্যবস্থার এই বিষয়টি সারা বিশ্বে ইতিমধ্যে বেশ আলোড়ন তুলেছে। এমনকি সেখানে “স্লিপিং চাইনিজ” নামে একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে। সেখানে আপনি বিভিন্ন তারকাদের এরকম শুয়ে থাকার ছবি দেখতে পাবেন।
আবর্জনা ও বর্জ্যের যথাযথ ব্যবহার, সুইজারল্যান্ড
৪৩ শতাংশ আবর্জনা জুরিখে (সুইজারল্যান্ডের সবচাইতে বড় শহর) রিসাইকেল করা হয়। কাগজ, ধাতু ও কাঁচের জন্য আলাদা আলাদা বাক্স দেয়া রয়েছে পুরো শহর জুড়ে। এছাড়াও রয়েছে বিশেষ ধরনের ভূগর্ভস্থ বর্জ্য খাদ। অন্যান্য আবর্জনা ফেলা হয় বিশেষ রকমের একটি সাদা রঙের প্লাস্টিক ব্যাগে, যার প্রতিটির মূল্য ১.৫০ ইউরো।
সবার মাঝে একটি উদ্দেশ্য কাজ করে যে, কীভাবে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার যথাসম্ভব কম করা যায়। তাই সেখানকার মানুষ খুব বুঝে-শুনে আবর্জনাগুলো বাছাই করে রাখে। আবর্জনাগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং এর থেকে নির্গত শক্তি দিয়ে ১,৭০,০০০ ঘরবাড়ির জ্বালানির চাহিদা মেটানো হয়, যার কারণে ধোঁয়া খুব সহজেই পাইপ দিয়ে কোনো রকম ক্ষতি করা ছাড়াই বেরিয়ে পড়ে। এই ছাই শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তারা সেগুলো থেকে বিভিন্ন রকম ধাতু, যেমন- সোনা নিষ্কাশন করে। আবর্জনা ফেলার বাক্সগুলোতে সবার জন্য একটি বার্তা থাকে। এর মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়, কাচ, ধাতব আবর্জনাগুলো সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফেলা যাবে। আর ছুটির দিনগুলোতে এ ধরনের আবর্জনা সেখানে ফেলা নিষেধ। আশেপাশের প্রতিবেশীদের যেন কোনো সমস্যা না হয় তাই এ ধরনের নির্দেশিকাগুলো দেয়া হয়েছে সেখানে।
উন্নত পরিবহন ও পরিষেবা ব্যবস্থা, জাপান
বুলেট ট্রেন
১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিকে সর্বপ্রথম ‘দ্য বুলেট ট্রেন’ সবাইকে বিস্ময়ে তাক লাগিয়ে দেয়। প্রতি ঘণ্টায় ১৩০ মাইল বেগে পথ অতিক্রম করতো সেই ট্রেনটি। আজকের সময়ে নতুন শিনকানসেন ট্রেনটি পরীক্ষামূলকভাবে চলাকালে প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৭৫ মাইল বেগে ছুটে পূর্বের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। জেপি সেন্ট্রাল (জাপানের একটি রেলওয়ে কোম্পানি) ২০২৭ সালের মধ্যে এই ট্রেনটি বের করবে বলে পরিকল্পনা করেছেন। এর মাধ্যমে ৪০ মিনিট বা তার চেয়েও কম সময়ে ১৭৪ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব।
রোবট
এমনিতেও রোবট বিষয়টি জাপানের লোকজনের কাছে খুব সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখতে পাবেন যে, রোবট হয়তবা প্যান কেক বানাচ্ছে অথবা হোটেল রুমে বিছানার চাদর বিছিয়ে দিচ্ছে।
এক্সোস্কেলেটন
জাপানের উদ্ভাবকেরা এক্সোস্কেলেটনও তৈরি করেছেন ইতিমধ্যে। হাল (দ্য হাইব্রিড অ্যাসিসটিভ লিম্ব) এর ডেভেলপারদের ভাষ্য অনুযায়ী, “আমরা পৃথিবীকে দেখাতে চাই যে, রোবটই হচ্ছে ভবিষ্যত”। তাদের সব পরীক্ষাই সফল হয়েছে। এটি ব্যবহারের সময় কোন বোতাম চাপতে হবে না বা কিছু করতে হবে না। কারণ রোবোলেগ মানুষের মাংসপেশি থেকে তাড়না পেয়ে নিজ থেকেই চলতে সক্ষম।
ভবিষ্যতের শহর, দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে ৪০ মাইল দূরে এয়ারপোর্টের কাছে একটি যাত্রাস্থল থেকে সংডো আইবিডি নির্মাণ করা হয়েছিলো। এটি মূলত করা হয়েছে সুবিধার্থে প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য। সেখানকার প্রত্যেক বাসিন্দার কাছে রয়েছে একটি করে বিশেষ স্মার্ট কার্ড, যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন রকম সেবা ও পাবলিক পরিবহনগুলোতে বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারে। পুরো শহরটি তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে এবং সবগুলো কার্ডে আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) চিহ্ন রয়েছে, যার মাধ্যমে রাস্তাঘাট সম্পর্কে সব তথ্য জানা যায় এবং আশেপাশের বাড়িঘরের পরিস্থিতিও জানা যায়। সুউচ্চ দালানকোঠার সাথে সেখানে আরও রয়েছে খাল, প্রদর্শনী কেন্দ্র, ফোরজি ইন্টারনেট, পার্ক, সাইকেল চালানোর রাস্তা, বৈদ্যুতিক যানবাহন চার্জ দেয়ার জন্য স্টেশন এবং আরও অনেক কিছু। উপরন্তু, ৪টি শহর ব্যবস্থাপনার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে স্মার্ট পাওয়ার নেটওয়ার্ক, বেশ লাভজনক পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ইত্যাদি। শহরটিকে মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ম্যাগি ডেইলি প্লে গার্ডেন, যুক্তরাষ্ট্র
শিকাগোতে বাচ্চাদের একটি পার্ক রয়েছে যা সম্ভবত প্রতিটি বাচ্চার স্বপ্নের পার্ক। ২০ একর জমির ওপর বানানো এই পার্কে সব বয়সী বাচ্চাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকম আয়োজন। যেমন- ‘দ্য হার্বর’ এ পাওয়া যাবে স্লিপার, গুপ্তচর চশমা এবং পানি ছিটানো তিমি মাছ। পুরো পার্ক ঘিরে রয়েছে চড়ার জন্য বিশেষভাবে সজ্জিত দেয়াল এবং পাহাড় ও ঢেউ এর অবিকল অনুকরণে রাবার দিয়ে বানানো হয়েছে নিচের অংশগুলো। ‘দ্য স্লাইড ক্রাটার’ এ আছে অনেকগুলো স্লিপার ও দুর্গ যা শিকলের সাহায্যে ঝোলানো সেতুর সাথে যুক্ত রয়েছে। আরেকটি মজার জিনিস রয়েছে যা সব বাচ্চাদের খুব প্রিয়। এর নাম হলো ‘টক টিউব’, যার উপর থেকে বাচ্চারা কথা বললে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চারা তা শুনতে পায়। এছাড়াও রয়েছে মিনি গলফ ও মিরর লেবরিন্থ (আয়নার গোলকধাঁধা)। জনপ্রিয় একটি খেলার জায়গার মধ্যে রয়েছে ‘দ্য সী’। সেখানে বাচ্চারা জাহাজের ভেতর গিয়ে দড়ি, জালি, সিঁড়ি ও স্টিয়ারিং হুইল দিয়ে খেলতে পারে। ‘দ্য এনচেন্টেড ফরেস্ট’ ওলটপালট একটি গাছের ভেতর দিয়ে বাচ্চাদারে একটি টেবিল পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, যেখানে বসে তারা চা পান করতে পারে। এর নকশাকারেরা ‘এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ এবং ‘চার্লি এন্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সেখানে দারুণ এক আবহ সৃষ্টি করেছে।
Feature Image Source: maggiedaleypark.com