Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হাউজবোটে আবিষ্কার করুন ভারতের সেরা ৬টি দর্শনীয় স্থান

হাউজবোট পর্যটনের খুব বেশি প্রচলন বাংলাদেশে নেই। সুন্দরবন ও হাওর এলাকায় স্বল্প পরিসরে কিছুটা সুযোগ থাকলেও হাউজবোট ভ্রমণের তুখোড় নেশা যাদের, এতটুকুতে তাদের না পোষাবারই কথা। তাদের জন্য পাশের দেশ ভারতেই রয়েছে বেশ কিছু অসাধারণ জায়গা, যেগুলোর কয়েকটির তো বিশ্বজোড়া নাম! ইতালির ভেনিসে হাউজবোটে চড়ে দু’চোখ ভরে শহরের সৌন্দর্য অবলকন করা যাদের স্বপ্ন, তারাও কিন্তু একটু ওপারের স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন। তাতে তিনটি সুবিধা- সহজ ভ্রমণ, স্বল্প খরচ, দৃষ্টিনন্দন জায়গা দেখার সু্যোগ। যা-ই হোক, কথা না বাড়িয়ে হাউজবোটে ঘোরার মতো ভারতের সেরা ৬ গন্তব্যের কথায় আসছি।

১) ডাল লেক, কাশ্মীর

“আগার ফেরদৌস বে-রোহী যামীঁ আস্ত, হামীঁ আস্ত, হামীঁ আস্ত, হামীঁ আস্ত”, অর্থাৎ,

“পৃথিবীতে যদি স্বর্গ থেকে থাকে, তবে তা এখানে, এখানে, এখানে।”

কাশ্মীর নিয়ে এভাবেই বলেছিলেন মোঘল সম্রাট আকবর। সেই স্বর্গের এক অদ্ভুত সুন্দর জলধারা হচ্ছে ডাল লেক। পর্যটকদের কাছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশের রাজধানী শ্রীনগর মানেই হচ্ছে এই লেক। শ্রীনগর নেমে লাল চক বা ঘন্টা ঘর গেলেই পায়ে হাঁটা দূরত্বে পড়বে বুলভার্ড স্ট্রিট। স্ট্রিটের পাশেই ডাল লেকের ধারে সারিসারি হাউজবোট দেখতে পাবেন। কী বিচিত্র সব নাম, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউজিল্যান্ড! স্বয়ংসম্পূর্ণ সে হাউজবোটের থাকা-খাওয়ার বেশ আলিশান সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। রাতটা হাউজবোটে কাটিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখতে পারেন। আলিশান সোনারঙা হাউজবোটের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে লেকের হিমশীতল স্বচ্ছ পানিতে প্রতিফলিত স্বর্ণ দেখবেন, কিংবা চোখে পড়তে পারে কুয়াশাচ্ছন্ন বরফে মোড়া পীর পঞ্জলি পর্বতমালা।

ডাল লেকের হাউজবোট; Source: yataindia.com

আপনার ভোরটা শুরু হতে হবে শিকারা নামক ছোট তরীতে চেপে। সুসজ্জিত এ নৌকায় একসাথে চাপতে পারেন ৪ জন। চাইলে মাঝির কাছ থেকে পানপাতা আকারের বৈঠা নিয়ে নিজেই কতক্ষণ নৌকা বাইতে পারেন। লেকে কিছুক্ষণ ভেসে বেড়িয়েই অদূরে দেখা পাবেন ভাসমান ফুল, ফল ও সবজি বাজারের। এ যেন নদীর ওপর কচুরিপানার মতো ভেসে থাকা বাগান! শুধু ভেসে থাকা বাগান নয়, আছে ভাসমান ফটো স্টুডিও-ও। সেখানে ক্যাটালগ দেখে পছন্দমতো কাশ্মীরি পোশাক বেছে নিয়ে সেটি গায়ে ছবিও তুলতে পারবেন।

Source: beautifulword.com

ভেসে চলছে শিকারা; Source: tripdekho.com

২) আলাপ্পুরা, কেরালা

ভারতের দুটো জায়গা সম্পর্কে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ অভিধা প্রচলিত রয়েছে, প্রথমটি রাজস্থানের উদয়পুর, দ্বিতীয়টি কেরালার আলাপ্পুরা বা আলেপ্পি। তবে হাউজবোটের জন্য কেরালার আলাপ্পুরা একচেটিয়া নাম কামিয়েছে ভারত ছাড়িয়ে দুনিয়াজোড়া। ওলন্দাজ, পর্তুগীজ, ঔপনিবেশিকতার সাথে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির অসাধারণ মেলবন্ধন হলো কেরালা। মালাবার উপকূলবর্তী সেই কেরালার অন্যতম সৌন্দর্য হলো ব্যাকওয়াটার্স জলধারায় চালিত ঐতিহ্যবাহী হাউজবোট। লক্ষ্যদ্বীপ সাগরের উপকূল ঘেঁষা ঈষৎ লবণাক্ত এই জলধারার রূপ হাউজবোটে করে উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে সেই আলাপ্পুরাতে, যা কর্নাটকের মাইসোর আর গোয়ার পানাজির পর ভারতের সবথেকে পরিচ্ছন্ন শহর। ব্যাকওয়াটার্সের মধ্যে পর্যটকদের কাছে ভেম্বনদ ও অশটোমুদি হ্রদ সবচেয়ে জনপ্রিয় হাউজবোটে বিহারের জন্য।

Source: inagrum.com

হাউজবোটগুলোর নাম কেত্তুবল্লম। শোয়ার ঘর, ব্যালকনি, রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট কী নেই তাতে! খাবারের মেন্যু হিসেবে থাকবে কেরালার নিজস্ব পদ- ভাত, সম্বর (সবজি স্যুপ), আভিয়াল (সবজি, দই, নারিকেল, কারিপাতার সাথে নারিকেল তেল মেশানো এক পদ), মেঝুক্কুপুরাত্তি (ভাজা সবজির তরকারি), পাপড়, পায়াসাম (ঐতিহ্যবাহী ভাতের পুডিং), আঁচার ইত্যাদি।

দু’পাশে সবুজের ছায়াঘেরা আধা শহুরে, আধা গ্রাম্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি আপনি পাবেন কেরালার ‘ট্রেডমার্ক’ সুবিশাল সব নারিকেল আর পাম গাছ, আর বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। আলাপ্পুরা ছাড়াও কেরালার এরনাকুলাম জেলার কোচি থেকেও যাত্রা শুরু করতে পারেন। কিন্তু নৌকা শেষে ঐ এক ব্যাকওয়াটার্সেই পড়বে এবং যাত্রা শেষ হবে আলাপ্পুরাতে।

Source: bestvisitkerala.com

৩) ছাপোরা, গোয়া

গোয়া শুনেই অনেকে একটু ঘাবড়ে যেতে পারেন। পাশ্চাত্যের সৈকত শহরের মতো জাঁকজমকপূর্ণ হল্লায় মুখরিত খরুচে এক জায়গা, সাংঘাতিক বড়লোকি ব্যাপারস্যাপার! কিন্তু না, সোনালী বালির এ সৈকত কেবল গোয়ার সৌন্দর্যের একটু দিক মাত্র। গোয়ার আরেকটি পাশ, আরেকটি রূপ সে তুলনায় যেন অনেকটাই অনাদৃত। কোলাহর থেকে দূরে গিয়ে যদি মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে চান, আপনাতে বিলীন হতে চান, সেই সঙ্গে ‘একঘেয়ে’ সমুদ্র দর্শনের পর যদি রুচিবদল চান, তবে ‘মূল অংশের’ থেকে কম খরচে বিলাসের জন্য গোয়ার অপর অংশটি হতে পারে আপনার পছন্দ। মালাবার উপকূলবর্তী ব্যাকওয়াটার্স জলধারার একটি অংশ গোয়াতেও আছে। সে অংশের ছাপোরা নামক নদীতে আপনি পাবেন অসাধারণ সব হাউজবোট, যেগুলোয় চড়ে সারাদিন উপভোগ করতে পারেন গোয়ার আরেক রূপ। বার্দেজ বন্দর বা পারনেম থেকে যাত্রা শুরু করে কয়েক ঘন্টার সে বিহারে অসাধারণ সব পর্তুগীজ শৈলীর প্রাচীন চার্চ, খামার, গ্রামের সাথে বিখ্যাত ছাপোরা দুর্গও দেখতে পাবেন। বিলাসযাপনের সব উপাদানের সাথে  হাউজবোটে থাকে নাচের জলসার আয়োজন!

Source: championsyachtclub.com

৪) দিন্দা, অন্ধ্র প্রদেশ

অন্ধ্র প্রদেশের পূর্ব গোদাবরি বা কোনাসীমা জেলা। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে জায়গাটির বিখ্যাত গোদাবরি নদীর তীরে অবস্থিত। বাংলাদেশের নদীগুলোর মতো এই গোদাবরি নদীও মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। এই গোদাবরি নদীর পাশের এক সবুজ শহরতলী, নাম তার দিন্দি। সাধারণের মাঝে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই গ্রামটি বিখ্যাত হচ্ছে অসাধারণ স্থাপত্য নকশাবিশিষ্ট হাউজবোটের কারণে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সুযোগ সুবিধাসম্বলিত এই বোটগুলো দিন্দির পাশের শহর রাজোলু বা নারসাপুরের বিভিন্ন ঘাট বা রিসোর্ট থেকে ছাড়ে।

এই হাউজবোটগুলো আপনাকে দ্রাক্ষারমম, কাকিন্দা সমুদ্র সৈকত, রাজাহমুন্দ্রি গোদাবরি ঘাট, অন্তর্বেদী মন্দির সহ অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মোটামুটি অনেক বিখ্যাত স্থান ঘুরিয়ে দেখাবে। বুকিং বা ভাড়া করবার আগে সাইট সিয়িং এর প্যাকেজটি দেখে নেবেন। সারাদিনের নৌবিহার শেষে হাউজবোটেও রাত কাটাতে পারেন, আবার চাইলে তারা আপনাকে নিয়ে যাবে তাদের নিজস্ব রিসোর্টে।

Source: konaseematourism.com

৫) তারকারলি, মহারাষ্ট্র

তারকারলির কারলি নদীতে আগে থেকেই প্রমোদতরীর আনাগোনা ছিল। মহারাষ্ট্রের সরকারী পর্যটন দপ্তরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সেখানে স্থায়ী পর্যটনকে উৎসাহিত করতে চালু হয়েছে হাউজবোট সার্ভিস। ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরি এসব হাউজবোটের নামও সুন্দর- হীরণ্যকেশী, সাবিত্রী, সিন্ধুকানি, কারলি ইত্যাদি। উল্লেখ্য, তারকালির এই কারলি নদীটিও কিন্তু বিখ্যাত ব্যাকওয়াটার্স জলধারার অংশ। ব্যাকওয়াটার্সের নিজস্ব সৌন্দর্যের সাথে মারাঠী সংস্কৃতির সৌরভ মিলিয়ে হাউজবোটের যাত্রাটি আপনার ভালোই কাটবে, তা বলাই বাহুল্য।

Source: walkthroughindia.com

৬) উড়ুপি, কর্নাটক

কর্নাটক প্রদেশের উপকূলীয় একটি জেলা হচ্ছে এই উড়ুপি বা ওড়িপু। হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র পরশুরামের ক্ষেত্র হিসেবে এই স্থান বিখ্যাত। তুলু অষ্টমাতা কৃষ্ণ মন্দিরের সাথে এই উড়ুপির অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে সেখানকার খাবার! এত কিছু বলছি, আসল জিনিসটিকে আরেকটু জমিয়ে তোলার আয়োজন হিসেবেই। আসল জিনিসটি কী? হ্যাঁ, হাউজবোট। উড়ুপির স্বর্ণ নামক নদীর চলা এই হাউজবোটগুলো খানিকটা কেরালা রীতিতে বানানো হলেও এগুলো আকারে হয় তার থেকে বেশ বড়। আর বোট যেমনই হোক, কেরালা আর কর্নাটকে নিশ্চয়ই পুরো মিলবে না। তার মানে কর্নাটকের নিজস্ব বৈচিত্র্যের স্বাদ নিতে হলেও আপনাকে যেতে হবে উড়ুপিতে। উড়ুপি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কল্যাণপুরা ঘাট থেকে চড়তে হবে হাউজবোটে।

Source: baravanige.com

ফিচার ইমেজ:jtdytravels.com

Related Articles