দিন দিন মানুষ যত বেশি ভ্রমণপ্রেমী হচ্ছে, টিকেটসহ পর্যটন এলাকায় থাকা-খাওয়া সবকিছুর দামও যেন সেভাবেই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা দেশের সম্পদের দেখভাল, কারণ যা-ই হোক না কেন, এভাবে খরচ বাড়তে থাকা কারোই কাম্য নয়। সে কারণেই হয়তো ভ্রমণের পরিমাণ কমে যায়নি এখনও।
এই ভ্রমণপিয়াসী মানুষদের কথা ভেবে আমরা আজ আলোচনা করবো কিছু ট্রাভেল কোম্পানি নিয়ে। এগুলো আপনার ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলবে এবং বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে আপনার খরচও কমে যাবে অনেকটাই।
এই ট্রাভেল কোম্পানিগুলো আপনার টিকেট বুক করা থেকে শুরু করে থাকবার জন্য আপনার পছন্দের হোটেল, খাওয়াদাওয়া, ঘোরাফেরা ও নিরিবিলি বা স্পোর্টস টাইম যেটাই চান না কেন সব কিছু নির্ধারণ করে দেয়ার দায়িত্ব নেবে। এতে করে আপনার মাথার উপর বাড়তি কোনো দুশ্চিন্তা থাকছে না। পুরোটা সময় ধরে আপনি থাকবেন অনেক বেশি নিশ্চিন্ত।
১. কায়াক
কায়াক বেছে বেছে সবচেয়ে স্বল্পমূল্যের এয়ার টিকেট প্রদানকারী কোম্পানিগুলো নিজেদের লিস্টে রাখে। আপনি যত ধীরে-সুস্থে সময় নিয়ে বুকিং দেবেন, ততই সহজে স্বল্পমূল্যের টিকেটগুলো পেয়ে যাবেন। অন্তত তিন দিন আগে থেকে বুকিং দেয়া শুরু করলে ভালো হয়। পারলে এক সপ্তাহ আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন এবং রিটার্ন টিকেটও করে নিন। এটি দেশ এবং এয়ারপোর্ট ভিত্তিক টিকেট ভাগ করে রেখেছে এবং আপনার দেশ থেকে আপনি কত জায়গায় যেতে পারবেন তার একটি তালিকা করে রেখেছে। তারপর সেখানে ক্লিক করলে আপনি দেখতে পাবেন যেখানে যেতে চান সেখানে কয়টা পর্যন্ত ফ্লাইট রয়েছে এবং কোন কোন কোম্পানি থেকে আপনি এয়ার টিকেট কত টাকায় কিনতে পারছেন। সাথে করে আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার অবসর সময়ের খেলাগুলোও (যেমন- বেসবল, গলফ, স্কি ইত্যাদি)।
এর প্রাইস প্রেডিকটর অপশনে গেলে আপনি সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন ফ্লাইট টিকেটের দামগুলো দেখে নিতে পারবেন। আপনাকে শুধু আপনার গন্তব্যস্থলের নামটি লিখতে হবে। বাকি সবকিছু গুছিয়ে আপনার সামনে হাজির করার দায়িত্ব কায়াকের।
২. ওয়াচডগ
ওয়াচডগ নিঃসন্দেহে আরেকটি জনপ্রিয় নাম। এটি সাইন আপ করার সাথে সাথে টুকটাক কিছু অফার এবং ডিসকাউন্ট দেয় বলে অনেকের কাছেই এটি আকর্ষণীয়। বড় বড় ফ্লাইটগুলো ছাড়াও কিছু ছোট ফ্লাইটের লিস্টও আছে ওয়াচডগে, যা সাধারণত অন্যান্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না।
ওয়াচডগের দুটি ওয়েবসাইট রয়েছে। একটি এয়ার ওয়াচডগ এবং অপরটি হোটেল ওয়াচডগ। এয়ার ওয়াচডগে টিকেট বুক করার পর আপনি হোটেল ওয়াচডগে ঢুঁ মেরে দেখে আসতে পারেন ঐ জায়গার বিভিন্ন হোটেলের নাম ও অবস্থান। নিজের বাজেটের সাথে সমন্বয় করে এখান থেকে কিছু হোটেল বেছে নিতে পারেন, যা তুলনামূলক সস্তা এবং ট্রিপ অ্যাডভাইজর দ্বারাও প্রস্তাবিত।
৩. দ্য ফ্লাইট ডিল
ফ্লাইট ডিলও অনেকটা ওয়াচডগের মতোই কাজ করে। কোনো কারণে ফ্লাইট পরিবর্তন করা হলে বা কোনো সমস্যা হলে এটি আপনাকে সাথে সাথেই ইমেইলে জানিয়ে দেবে এবং কাছাকাছি সম্ভাব্য তারিখ ও টিকেটের দামও জানিয়ে দেবে, যেন আপনার যাওয়া বাতিল না করতে হয়।
৪. গুগল ফ্লাইটস
গুগল ফ্লাইটকে এয়ার টিকেটের সমাহার বলা চলে। ম্যাপসহ আপনাকে আপনার গন্তব্যস্থল এবং সেখানে সমস্ত ফ্লাইটের সময় ও দাম এক নজরেই পেয়ে যাবেন এখানে। পাশাপাশি আপনি ক্যালেন্ডারও দেখতে পাবেন, যেটি হয়তো আপনাকে আপনার ছুটির দিনগুলো দেখে নিতে সহায়তা করবে।
ওয়েবসাইটে ঢোকার পর আপনাকে আপনার বর্তমান অবস্থান জানাতে হবে। তারপরেই একে একে প্রতিটি অপশন পেয়ে যাবেন আপনি। এর সাদামাটা হোমপেজ দেখে সাধারণ মনে হলেও এটি সত্যিকার অর্থে অনেকগুলো ফ্লাইটের সুড়ঙ্গের মতো। এটি এখনও বাংলাদেশে এর সেবা প্রদান করা শুরু করেনি।
৫. হুইচবাজেট
হুইচবাজেট আপনাকে সহজ একটি বাজেট তৈরিতে সহায়তা করবে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণে টিকেটের পেছনে কম ব্যয় করার জন্য হুইচবাজেট হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। আপনার বর্তমান অবস্থান থেকে যেখানে আপনি যেতে চান- এই বিষয় দুটি নির্বাচন করার পর আপনি অনেকগুলো অপশন পেয়ে যাবেন, যা হয়তো আপনি ভেবেও দেখেননি।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ব্যাংকক থেকে বেইজিংয়ে যেতে চান, তাহলে আপনি চায়না ইস্টার্ন বা হাইনান এয়ারলাইনসের মতো জায়গা থেকেও ফ্লাইট টিকেট কেনার অপশন পাবেন।
৬. ইয়াপটা
অনেকগুলো বড় বড় এয়ারলাইন, যেমন- আমেরিকান, এয়ারট্রান ও জেটব্লু ইত্যাদিতে আপনি ছোটোখাট কিছু মানি রিফান্ড পেয়ে যেতেও পারেন। যদি এমন হয় যে আপনি কোনো টিকেট বুক করার পর দুদিন পর (অর্থাৎ অবশ্যই আপনার ফ্লাইটের আগে) কোনো কারণে এর টিকেটে ডিসকাউন্ট চলছে, তাহলে আপনি শীঘ্রই একটি মেইল বা টুইট পেয়ে যাবেন, যেটিতে উল্লেখ করা থাকবে মানি রিফান্ড গ্রহণ করার নিয়মটি।
ইয়াপটা আপনার জন্য হোমপেইজে সকল অফার দিয়ে রাখে আগে থেকেই। এতে করে ফেরার পথে প্রিয়জনের জন্য বাড়তি কিছু নেয়ার বাজেটটাও আপনি সহজেই গুছিয়ে নিতে পারেন।
৭. হোটেলস ডট কম (Hotels.com)
হাজার হাজার থাকার হোটেলের মধ্যে আপনার পছন্দের হোটেলটি বুক করার জন্য হোটেলস ডট কম হতে পারে একটি ভালো অপশন। একদম শেষ মুহূর্তের অফার বা বিভিন্ন ডিসকাউন্টগুলো পেতে আপনি চোখ রাখতে পারেন হোটেলস ডট কমে। এটি প্রতি ঘণ্টায় আপডেট করা হয় বলে সর্বশেষ অফারগুলো আপনি পাচ্ছেন এখানেই। যারা অহরহই এখান থেকে হোটেল বুক করেন তাদের জন্য আলাদা করে অফার থাকে এই ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে।
আপনি যদি হোটেলস ডট কম থেকে সব মিলিয়ে দশ রাত থাকার মতো অপশন বেছে নেন, সেটি নির্দিষ্ট একটি দেশেও হতে পারে আবার বিভিন্ন দেশেও হতে পারে, আবার একটি হোটেলেও হতে পারে অথবা বিভিন্ন হোটেলেও হতে পারে, তাহলে এর পক্ষ থেকে আপনি পাচ্ছেন একদিন বাড়তি থাকার সুযোগ একদম ফ্রি।
৮. প্রাইসলাইন
প্রাইসলাইন একটি আদর্শ ট্রাভেল এজেন্সি বলা যায়। এটি আপনাকে হোটেলের দাম খুঁজে দেখার ঝামেলা থেকে মুক্ত করবে। আপনি কেমন হোটেল চান, আপনার গন্তব্যস্থল, সম্ভাব্য থাকার সময়টি নির্বাচন করুন। এখানে আপনি প্রায় ৬০% পর্যন্ত ছাড়ে অনেক হোটেলে থাকতে পারবেন এবং শেষ মুহূর্তের বিভিন্ন অফার সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
তবে এখানে একটি ছোট বিষয় না বললেই নয়। আপনি মূল্য পরিশোধ করার আগপর্যন্ত জানতে পারবেন না আপনাকে কোন হোটেলে জায়গা দেয়া হচ্ছে। অপরিচিত জায়গা হলে এমন ‘’ব্লাইন্ড বুকিং’ আপনার জন্য কিছুটা সমস্যার উদ্রেক করতে পারে।
৯. রুমার এবং ক্যান্সেলঅন
কোনো কারণে যাত্রা বাতিল হয়ে গেলে আপনি বুক করা হোটেলের রিজার্ভেশন বাতিল করবেন এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য ছেড়ে আসতে হয় যা অনেক সময় খুব কষ্টকর। অকারণেই এতগুলো টাকা জলাঞ্জলি দিতে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।
এসব ক্ষেত্রে রুমার এবং ক্যান্সেলঅন আপনার কিছুটা সুবিধা দেবে। রুমারে আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন যে আপনি কতটুকু ছাড় দিতে চান। সর্বনিম্ন ছাড়ের পরিমাণ ২০% হতে হবে। সেই ছাড় থেকে রুমার নিজের জন্য কিছু রেখে বাকিটা উক্ত হোটেলের সাথে নিজে থেকেই ঠিক করে নেয়।
এছাড়াও রুমার এবং ক্যান্সেলঅন হোটেল খুঁজে দেবার জন্য আপনার পাশে তো আছেই!
১০. ট্রিপ অ্যাডভাইজর
ট্রিপ অ্যাডভাইজার সবচেয়ে জনপ্রিয় হোটেল-রিভিউ সাইট। দেশ-বিদেশে কয়েক লাখ বিখ্যাত বা নতুন হোটেল পর্যালোচনার একটি বিস্তর তালিকা পাবেন এখানেই। সাইটে গিয়ে আপনার গন্তব্য অনুসন্ধান করুন, এরপর এই সাইট হোটেল, সেটির বিছানা, সকালের নাস্তা, রুমের ছবি, অবকাশ সময় কাটানোর ভাড়া এবং অন্যান্য বিকল্পসহ বিস্তারিত তালিকা দেখাবে। আপনি পরিবার, ব্যবসা, রোমান্স বা বিলাসিতার জন্য সেরা হোটেল খুঁজে পেতে ফলাফলে ‘ফিল্টার’ ব্যবহার করতে পারেন।
এই সাইটে অনেকেই মিথ্যা নাম-পরিচয় দিয়ে নিজেদের হোটেলের জন্য উচ্চমানের রেটিং ও ভালো রিভিউ দিয়ে থাকে। সন্দেহজনক এসব কমেন্টে ফ্ল্যাগ দেয়া থাকে। তাছাড়া এগুলো খুব ভালো রেটিং এর আওতাভুক্তও হয় না। হোটেল বাছাই করার সময় এদিকটা লক্ষ্য রাখুন।
তাহলে আর দেরি কেন? বাক্সপেটরা বেঁধে বেরিয়ে পড়ুন নতুন কোনো অভিযানে। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে আপনার ভ্রমণও না হয় হোক একটু আধুনিক। হোটেল বা টিকেট বুকিংয়ের সময় বাঁচিয়ে আরও যত্ন নিয়ে আপনার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিন।