Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আ’হদ আল-তামিমি: ফিলিস্তিনের প্রতিবাদের এক জীবন্ত প্রতীক

তার শখ ছিল আর দশটা শিশুর মতোই স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে, অবসরে সমুদ্রের পাড়ে বেড়াতে যাবে, বার্সেলোনার ফুটবল ম্যাচগুলো উপভোগ করবে এবং জীবনে যদি কখনও সুযোগ হয়, তাহলে বার্সেলোনার সাবেক ব্রাজিলীয় ফুটবল তারকা নেইমার জুনিয়রের সাথে দেখা করবে। কিন্তু তার বসবাস দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে বেঁচে থাকতে হয় সংগ্রাম করে।

আ’হদ আল-তামিমি, ষোল বছর বয়সী যে কিশোরী মেয়েটি তার দুঃসাহসিকতার জন্য, ইসরায়েলি সেনাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এর আগেও একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল, উপাধি পেয়েছিল ‘ফিলিস্তিনের পোস্টার চাইল্ড’ হিসেবে, সাহসিকতার পুরষ্কার পেয়েছিল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কাছ থেকে, সে আবারও উঠে এসেছে আলোচনায়।

গত সোমবার দুই সশস্ত্র ইসরায়েলি যোদ্ধাকে তার চড় এবং লাথি মারার ভিডিওটি বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যাওয়ার পর গভীর রাতে ইসরায়েলি বাহিনী তাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা গ্রেপ্তার করে তার মাকেও। কিন্তু কে এই আ’হদ আল-তামিমি? নিশ্চিত গ্রেপ্তার জেনেও কেন সে ইসরায়েলি সেনাদেরকে চড় এবং লাথি দিতে গেল? বারবার অত্যাচারিত হয়েও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বের বর্বরতম সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অনুপ্রেরণা সে কোথা থেকে পাচ্ছে?

নবি সালেহ গ্রামের ফিলিস্তিনিদের আবাসভূমি; Source: msf-me.org

নবী সালেহ গ্রামের ইসরায়েলিদের অবৈধ স্থাপনা; Source: msf-me.org

জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে, দখলকৃত ফিলিস্তিনের ছোট একটি পাহাড়ি গ্রাম নবী সালেহ (النبي صالح‎)। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই গ্রামের কবরস্থানেই পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত নবী হযরত সালেহ (আ) এর সমাধি অবস্থিত। গ্রামটির অবস্থান পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, সমুদ্র সমতল থেকে ৫৭০ মিটার উপরে পাহাড়ের বুকে। গ্রামটিতে মাত্র দেড়শ’র মতো পরিবারের বসবাস। এর জনসংখ্যা প্রায় ৬০০, যাদের অধিকাংশই বৃহত্তর আল-তামিমি পরিবারের সদস্য।

হাজার হাজার বছর ধরে যে গ্রামটি ছিল স্থানীয় আরবদের সম্পত্তি, সেই নবী সালেহ গ্রামটির একাংশ দখল করে ১৯৭৭ সালে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গড়ে তোলে ইহুদিদের জন্য অবৈধ স্থাপনা ‘হালামিশ’। হালামিশের নিরাপত্তার জন্য এর পাশেই স্থাপন করে একটি সামরিক ঘাঁটি। গ্রামের প্রবেশ পথ সহ বিভিন্ন স্থানে চেক পয়েন্ট বসিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। সময়ের সাথে সাথে তাদের দখলকৃত ভূমির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্থাপনা নির্মাণের জন্য তারা দখলকৃত জমিতে অবস্থিত ফিলিস্তিনিদের শত শত জয়তুন গাছ জ্বালিয়ে দেয়

ইসরায়েলি সেনাদের সামনে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াচ্ছে আ’হদ; Source: tweetpalestine.wordpress.com

ٍমিছিলে ইসরায়েলি সেনাদের মুখোমুখি আ’হদ; Source: Twitter

ভৌগলিক দিক থেকে গ্রামটি দু্ই অংশে বিভক্ত। একপাশে বসবাস স্থানীয় ফিলিস্তিনি মুসলমানদের, অন্যপাশে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান ইহুদিদের স্থাপনা হালামিশের, আর এই দুইয়ের মাঝখানে আছে একটি উপত্যকা। এই উপত্যকাতেই অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক সুপেয় পানির ঝর্ণা, যা স্থানীয়দের কাছে আইন আল-কোস নামে পরিচিত। শত শত বছর ধরে এই ঝর্ণা এবং এর চারপাশের জমির মালিক ছিল স্থানীয় বশির তামিমির পরিবার, যদিও ঝর্ণার পানি ছিল গ্রামবাসীর জন্য উন্মুক্ত।

২০০৮ সাল থেকে হালামিশের অধিবাসীরা ঝর্ণাটির আশেপাশের এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। তারা নিজেদের ব্যবহারের জন্য ঝর্ণার পাশে একাধিক পুষ্করিণী তৈরি করে এবং বেঞ্চ ও ছাউনি স্থাপন করে। ২০০৯ সালে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ঝর্ণাটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তারা নিজেরা ২৪ ঘন্টা এর পানি ব্যবহার করতে শুরু করে, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য সপ্তাহে মাত্র ১২ ঘন্টা পানি সরবরাহ করতে থাকে। ফিলিস্তিনিরা যখন পাশের শস্য ক্ষেতে ব্যবহারের জন্য ঝর্ণার পানি ব্যবহার করতে যায়, তখন ইসরায়েলিরা তাদেরকে বাধা দিতে শুরু করে।

ইসরায়েলিদের ক্রমাগত ভূমি দখলের প্রতিবাদ করার জন্য নবী সালেহ গ্রামের ফিলিস্তিনিরা ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে শুরু করে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তারা তাদের প্রথম মিছিলের আয়োজন করে। এর পর থেকে তারা প্রতি শুক্রবার মিছিলের আয়োজন করে আসছে– শুধু ঝর্ণার জন্য না, বরং পুরো ইসরায়েলি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য, নিজেদের জীবনের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার জন্য, নিজেদের স্বাধীনতার জন্য।

এই নবী সালেহ গ্রামেরই এক ঐতিহ্যবাহী সংগ্রামী পরিবারের সন্তান আ’হদ আল-তামিমি। ছোটবেলা থেকেই সে বেড়ে উঠেছে এমন এক পরিবারে, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কখনো মাথা নত করতে শেখেনি। নবী সালেহ গ্রামের প্রতিবাদ-মিছিলগুলোর প্রধান সংগঠক ছিল আ’হদের বাবা বাসেম আল-তামিমি। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তিনি অন্তত ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে একবার তাকে সম্পূর্ণ বিনা অভিযোগে তিন বছর পর্যন্ত বন্দী থাকতে হয়েছিল।

আগস্ট, ২০১২তে মা’কে গ্রেপ্তারের সময় আ’হদ আল-তামিমি; Source: Abbas Momani @ Getty Images

২০১২ সালে মাহমুদ আব্বাসের সাথে আ’হদ (ডানে); Source: nabisalehsolidarity.wordpress.com

আ’হদের মা নারিমান তামিমিও গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৫ বার। ইসরায়েলি পুলিশের গুলি খেয়ে বরণ করেছেন পঙ্গুত্ব। তার এক চাচা মোস্তফা তামিমি ছিলেন নবী সালেহ গ্রামের প্রথম শহীদ, যিনি ইসরায়েলি সেনাদের সাথে সংঘর্ষের ফলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরের ১১ তারিখে মিছিল চলাকালীন সংঘর্ষে ইসরায়েলি সৈন্যরা তার মুখের উপর টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে তার মৃত্যু ঘটে। তার ভাইরাও একাধিকবার জেল খেটেছে। তার বড় ভাই ওয়ায়েদ অন্তত দুবার জেল খেটেছে, যার মধ্যে একবার বিনা বিচারে ১০ মাস বন্দী ছিল।

২০১০ সালে, আন্দোলন সংগঠিত করার কয়েক মাসের মাথায়ই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আ’হদদের বাড়িটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। ধারণা করা হয়, তাদেরকে আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত করার জন্যই ঐ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েলি সেনারা এ পর্যন্ত অন্তত দেড়শ বার আ’হদদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে, কিন্তু তাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রত শিশু আ’হদ আল-তামিমি; Source: Activestills.org

ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত শিশু আ’হদ আল-তামিমি; Source: Daily Sabah

আ’হদের বয়স যখন মাত্র ৯ বছর, তখন থেকেই পরিবার এবং গ্রামবাসীর সাথে মিছিলে যোগ দিতে শুরু করে এবং প্রায় সময়ই ইসরায়েলি সেনাদের সাথে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে থাকে। আ’হদ প্রথম আলোচনায় আসে ২০১২ সালের আগস্টে, যখন এক মিছিল থেকে ইসরায়েলি সেনারা তার মাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় সে বাধা দিতে গেলে এক ইসরায়েলি সেনা তার দুহাত পেছন দিকে মুচড়ে ধরে। ক্রন্দনরত আ’হদের সেই ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়লে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তাকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠান এবং তার প্রশংসা করেন।

পরবর্তীতে একই বছরের নভেম্বরে শুক্রবারের এক মিছিলে আ’হদকে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। সশস্ত্র সেনাদের সামনে দাঁড়িয়ে নির্ভীকভাবে তীব্র স্বরে এবং তর্জনী ও মুষ্ঠি উঁচু করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ভিডিওটি সে সময় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে সে সময় তাকে তুরস্কে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িব এরদোয়ান তাকে ‘হান্দালা’ নামক সাহসিকতার পুরস্কার প্রদান করেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে আ’হদ আল-তামিমি; Source: RAUF MALTAS @ ANADOLU AJANSI

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে আ’হদ আল-তামিমি; Source: basaksehir.bel.tr

আ’হদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পায় ২০১৫ সালে, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। সে বছর আগস্টের ২৮ তারিখে শুক্রবারের সাপ্তাহিক মিছিলে ইসরায়েলি পুলিশ তার ১১ বছর বয়সী ভাই মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে চাইলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আ’হদ। সে এবং তার মা ও চাচী মিলে পুলিশদের হাত থেকে মোহাম্মদকে ছুটানোর জন্য পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। এক পর্যায়ে আ’হদ তার ছোট ভাইকে মুক্ত করার জন্য পুলিশের হাতে কামড়ে দেয়। সে সময় ভিডিওটি বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। ইহুদিবাদী ব্লগাররা তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে, তাকে হত্যার দাবি তোলে, কিন্তু বিশ্বব্যাপী সে পরিচিতি পায় চাইল্ড অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে।

তবে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি পেলেও ঐ ভিডিও প্রকাশের পর থেকে নবী সালেহ গ্রামে আ’হদের জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিবাদ মিছিলগুলোতে আ’হদকে দেখামাত্রই ইসরায়েলি অবৈধ অধিবাসীরা এবং পুলিশরা তাকে নাম ধরে গালাগালি করতে থাকে এবং হত্যার হুমকি দিতে থাকে। ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরায়েলি পুলিশ আ’হদের বড় ভাই ওয়ায়েদকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আ’হদ যখন তার মায়ের সাথে জেরুজালেম কারাগারে ভাইকে দেখতে যায়, তখন ইসরায়েলি পুলিশ বাস থেকে তাকে নামিয়ে রেখে দেয়। অন্য সবাইকে জেরুজালেমে প্রবেশ করতে দিলেও আ’হদকে তারা প্রবেশ করতে দেয়নি। ইসরায়েলিদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে আ’হদকে কিছুদিন নবী সালেহ ছেড়ে রামাল্লাতে তার কাজিনদের বাসায়ও থাকতে থাকতে হয়েছিল।

আগস্ট ২০১৫-তে ইসরায়েলি সেনার হাত থেকে ভাইকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে আ’হদ; Source: AP

আগস্ট ২০১৫-তে ভাইকে রক্ষা করার জন্য ইসরায়েলি সেনার হাত কামড়ে ধরেছে আ’হদ; Source: Abbas Nomani @ AFP

আ’হদ সর্বশেষ গণমাধ্যমের আলোচনায় আসে গত সোমবার। ২০১৬ সালের এক মিছিলে ইসরায়েলিদের সাথে সংঘর্ষে নবী সালেহ গ্রামের ৩৫০ অধিবাসী আহত হওয়ার পর থেকে গ্রামবাসীরা শুক্রবারের নিয়মিত মিছিল বন্ধ করে দিয়েছিল। এর পরিবর্তে তারা হঠাৎ হঠাৎ ঝটিকা মিছিল বের করতে শুরু করে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর ফিলিস্তিনের অন্যান্য শহরের মতো নবী সালেহ গ্রামের অধিবাসীরাও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে।

এরকম একটি মিছিল চলাকালে গত শুক্রবার ইসরায়েলি সেনারা পাথর নিক্ষেপের অভিযোগে আ’হদের ১৪ বছর বয়সী কাজিন মোহাম্মদের মুখে একেবারে কাছ থেকে রাবার বুলেট দিয়ে গুলি করে। এর পরপরই যখন তারা আ’হদদের বাসার ভেতরে প্রবেশ করে, তখন আ’হদ চিৎকার করে তাদেরকে বের হওয়ার জন্য বলতে থাকে। কিন্তু তারা কর্ণপাত না করায় একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় এবং ধৈর্য্যহারা হয়ে আ’হদ দুই সেনাকে একাধিকবার চড় এবং লাথি মারে।

কোর্টে হাজির করার সময় হাসিমুখে নির্ভীক আ’হদ; Source: Ahmad-Gharabli @ AFP

সৈন্যরা সেই মুহূর্তে কিছু না করে ফিরে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে গত সোমবার যখন ইন্টারনেটে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ আ’হদের প্রশংসা করতে থাকে, তখন রাত তিনটার দিকে প্রায় ৩০ জন সৈন্য ও বর্ডার পুলিশ আ’হদদের বাসায় অভিযান চালায় এবং আ’হদকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার আ’হদের মা তার সাথে দেখা করার জন্য পুলিশ স্টেশনে গেলে পুলিশ তাকেও গ্রেপ্তার করে। বুধবারে আ’হদকে কোর্টে হাজির করা হয় এবং কোর্ট তাকে আরো অন্তত পাঁচদিন আটক রাখার নির্দেশ দেয়। আ’হদের বাবার বিরুদ্ধেও পুলিশ নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে এবং তার বিরুদ্ধে আবারও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে বলে জানানো হয়।

আ’হদের জীবন ফিলিস্তিনের হাজারও প্রতিবাদী নারীর জীবনের একটি মাত্র উদাহরণ। অন্যরা আ’হদকে হিরো হিসেবে দেখলেও সে নিজেকে সাধারণ এক কিশোরী হিসেবেই দাবি করে। তার ইসরায়েলি সৈন্যকে কামড়ে দেওয়ার ভিডিওর পরে এনবিসি নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সে বলেছিল, অনেক ফিলিস্তিনি শিশু আছে, যারা একইরকম অথবা এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে, কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে ভিডিও ধারণ করার জন্য কোনো ক্যামেরা ছিল না।

আ’হদ হয়তো গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু কোর্টে তোলার পর বন্দী অবস্থায়ও তার কঠোর সংকল্পবদ্ধ চেহারা দেখেই বোঝা যায়, সে থেমে যাওয়ার পাত্রী না। আজ হোক, কাল হোক, সে আবারও মুক্তি পাবে এবং নবী সালেহকে দখলদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। আর তার এই আন্দোলন অনুপ্রেরণা যোগাবে ফিলিস্তিনের আরো হাজার হাজার আন্দোলনকর্মীকে। বাইরের সাহায্য না আসলেও একদিন হয়তো এই আ’হদরাই পারবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। কারণ আ’হদ নিজেই বিশ্বাস করে, কোনো একদিন সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর মতো কেউ একজন এসে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করে দিবে, এই আশায় বসে থাকলে ফিলিস্তিনিদের চলবে না। তাদেরকে নিজেদের মধ্য থেকেই আইয়ুবী তৈরি করে নিজেদেরকে স্বাধীন করতে হবে।

ফিচার ইমেজ- dangerouswomenproject.org

Related Articles