চলমান রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধের ডামাডোলের অন্তরালে প্রাক্তন সোভিয়েত ভূখণ্ডের প্রান্তিক অঞ্চলে নতুন করে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা আবির্ভূত হয়েছে। এই সংঘাতের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে দক্ষিণ ককেশাস, এবং আরো স্পষ্টরূপে বলতে গেলে, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্ত। আর্মেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, ১৩ সেপ্টেম্বর ০০:০৫ মিনিটে ঐতিহাসিকভাবে শত্রুভাবাপন্ন দক্ষিণ ককেশিয়ান রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে নতুন করে সামরিক সংঘাত আরম্ভ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে: আর্মেনীয়–আজারবাইজানি দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আর্তসাখ (আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, আজারবাইজানি ভূখণ্ড, কিন্তু কার্যত একটি আর্মেনীয়–অধ্যুষিত স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র ও রুশ ‘প্রোটেক্টরেট’), কিন্তু চলমান সংঘাতটি আর্তসাখ অঞ্চলে সংঘটিত হচ্ছে না, বরং আর্মেনিয়ার মূল ভূখণ্ডে সংঘটিত হচ্ছে।
সংঘাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
আজারবাইজানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুসারে, ১২ সেপ্টেম্বর রাতে আর্মেনীয় সৈন্যরা আজারবাইজানের দাশকাসান, কালবাজার ও লাচিন জেলা অভিমুখে বৃহৎ মাত্রায় ‘উস্কানিমূলক আক্রমণ’ পরিচালনা করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, আর্মেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, ১২ সেপ্টেম্বর রাতে আজারবাইজানি সৈন্যরা আর্মেনিয়ার গেঘারকুনিক, সিউনিক ও ভায়োৎস দজোর প্রদেশের ওপর বৃহৎ মাত্রায় আক্রমণ চালায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, আর্মেনিয়া নয়, আজারবাইজান এই সংঘাত শুরুর পশ্চাতে মূল ভূমিকা পালন করেছে। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত আজারবাইজান ও আর্তসাখের মধ্যবর্তী সীমান্ত তুলনামূলকভাবে শান্ত রয়েছে।
এখন পর্যন্ত আজারবাইজানি সৈন্যরা আর্মেনিয়ার যেসব অঞ্চলের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: সিউনিক প্রদেশের গোরিস ও কাপান শহর এবং তাতেভ, ইশখানাসার ও নেরকিন হান্দ গ্রাম, গেঘারকুনিক প্রদেশের ভারদেনিস ও মারতুনি শহর এবং সোৎক, কুৎ, নোরাবাক, আরতানিশ ও ভেরিন শোরঝা গ্রাম এবং ভায়োৎস দজোর প্রদেশের জেরমুক শহর। আজারবাইজানি সৈন্যরা এই আক্রমণ পরিচালনার জন্য সোভিয়েত–নির্মিত ‘বিএম–২১ গ্রাদ’ মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস), তুর্কি–নির্মিত ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ স্ট্রাইক ড্রোন, ইসরায়েলি–নির্মিত ‘আইএআই হারোপ’ সুইসাইড ড্রোন/লয়টারিং মিউনিশন্স, মর্টার ও অন্যান্য ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে।
উল্লেখ্য, আজারবাইজানি সৈন্যরা আর্মেনিয়ার সামরিক ও বেসামরিক উভয় ধরনের লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ পরিচালনা করছে। আর্মেনীয় প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের ভাষ্য অনুসারে, আজারবাইজানি আক্রমণের ফলে অন্তত ৪৯ জন আর্মেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছে, এবং এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, এই সংঘর্ষের ফলে অন্তত ১৭ জন আজারবাইজানি সৈন্য নিহত হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আজারবাইজানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কেবল ৮ জন সৈন্যের নিহত হওয়ার সংবাদ নিশ্চিত করেছে। তদুপরি, আজারবাইজানি আক্রমণের ফলে কিছু সংখ্যক বেসামরিক আর্মেনীয় (যাদের মধ্যে একজন ডাক্তারও রয়েছে) হতাহত হয়েছে।
সংঘাতের সম্ভাব্য কারণসমূহ
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাত শুরুর পশ্চাতে বেশ কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রেখেছে।
প্রথমত, ২০২০ সালের আর্মেনীয়–আজারবাইজানি যুদ্ধে আর্মেনিয়া ও আর্তসাখের পরাজয়ের পর আর্মেনীয় সরকার আর্মেনিয়ার সিউনিক প্রদেশের মধ্য দিয়ে আজারবাইজানি মূল ভূখণ্ড ও নাখচিভানের (আজারবাইজানের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র) মধ্যে একটি করিডোর স্থাপন করতে সম্মত হয়েছিল। এই করিডোর স্থাপিত হলে আজারবাইজানি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে নাখচিভান ও তুরস্কের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে এবং তুরস্ক কাস্পিয়ান সাগর হয়ে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশাধিকার লাভ করবে। কিন্তু আর্মেনীয় জনমত আজারবাইজানকে উক্ত করিডোর প্রদানের তীব্র বিরোধী এবং এজন্য এখন পর্যন্ত আর্মেনিয়া উক্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমতাবস্থায় আজারবাইজান ২০২১ সাল থেকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উক্ত ভূখণ্ড দখল করে কিংবা আর্মেনীয় সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে উক্ত করিডোর স্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, ২০২০ সালের আর্মেনীয়–আজারবাইজানি যুদ্ধের ফলে আজারবাইজান আর্তসাখ–নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের বৃহদাংশ অধিকার করেছে, কিন্তু সম্পূর্ণ আর্তসাখ অধিকার করতে পারেনি। এই ফলাফল নিয়ে আজারবাইজান সন্তুষ্ট নয়। তারা আর্তসাখের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী এবং এজন্য তারা আর্তসাখ ও আর্মেনিয়া উভয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের আগস্টে আজারবাইজান আর্তসাখের ওপর আক্রমণ চালিয়ে কতিপয় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চভূমি অধিকার করেছে। আর্মেনিয়ার ওপর তাদের সাম্প্রতিক আক্রমণও এই প্রক্রিয়ারই অংশ।
তৃতীয়ত, আর্মেনিয়ার প্রধান সামরিক মিত্র রাশিয়া এখন রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত এবং এমতাবস্থায় রাশিয়া আর্মেনিয়াকে রক্ষা করার জন্য সৈন্য মোতায়েন করবে, এই সম্ভাবনা সীমিত। তদুপরি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের চলমান জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলার জন্য আজারবাইজান থেকে জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে এবং এই অবস্থায় তারা আজারবাইজানের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইবে না। অন্যদিকে, তুরস্ক আজারবাইজানকে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। সুতরাং আজারবাইজান এই সময়টিকে আর্মেনিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করেছে।
চতুর্থত, আর্মেনিয়া অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক। ২০২০ সালের যুদ্ধে আর্মেনিয়ার পরাজয়ের পর থেকে আর্মেনীয় বিরোধী দলগুলো আর্মেনীয় সরকারের সঙ্গে একটি তিক্ত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত। আজকেও ২০২০ সালের যুদ্ধে নিহত আর্মেনীয় সৈন্যদের আত্মীয়স্বজন আর্মেনীয় আইনসভার সামনে বিক্ষোভ করেছে এবং আর্মেনীয় প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ানের পদত্যাগ দাবি করেছে। সুতরাং আর্মেনিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রাষ্ট্রটিকে আজারবাইজানের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে রূপান্তরিত করেছে।
পঞ্চমত, সম্প্রতি আজারবাইজানের অর্থনীতি নেতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আজারবাইজানি বিরোধী দলগুলো আজারবাইজানি সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। আজারবাইজানি রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভের ক্ষমতায় টিকে থাকার অন্যতম একটি পন্থা হচ্ছে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্য, কারণ আজারবাইজানি জনমত তীব্রভাবে আর্মেনীয়বিরোধী। সুতরাং এই সংঘাত আজারবাইজানের অভ্যন্তরে আলিয়েভের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।
সর্বোপরি, ২০২০ সালের যুদ্ধে এবং ২০২১ সাল থেকে চলমান সীমান্ত সংঘাতে আর্মেনিয়ার সামরিক দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে, কিন্তু এরপরেও আর্মেনীয় সরকার তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য বিস্তৃত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে, আজারবাইজান ক্রমাগত নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে এবং কয়েকদিন আগেও তুরস্ক ও বেলারুশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র বহনকারী বিমান আজারবাইজানে অবতরণ করেছে। যেহেতু সামরিক ভারসাম্য আজারবাইজানের পক্ষে, আজারবাইজান এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে।
সংঘাতের প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আর্মেনীয় প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাখোঁ, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, ইরানি রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি ও জর্জীয় প্রধানমন্ত্রী ইরাক্লি গারিবাশভিলির সঙ্গে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন এবং ‘আজারবাইজানি আগ্রাসন’ সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেছেন। অনুরূপভাবে, আর্মেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরারাৎ মির্জোইয়ান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, রুশ–নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘সিএসটিও’র উপ–মহাসচিব ভালেরি সেমেরিকভ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি জোসেফ বোরেলের সঙ্গে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন এবং ‘ওএসসিই মিনস্ক গ্রুপে’র রুশ সহ–সভাপতি ইগর খোভায়েভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অন্যদিকে, সংঘাত শুরুর পর আজারবাইজানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেয়হুন বায়রামভ তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুৎ চাভুসোলুর সঙ্গে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন এবং ‘আর্মেনীয় উস্কানিমূলক আক্রমণ’ সম্পর্কে তাকে অবহিত করেছেন।
সংঘাত শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আর্মেনিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আজারবাইজানি আক্রমণ বন্ধ করার জন্য রাশিয়া, সিএসটিও এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সহায়তা প্রার্থনা করেছে। আর্মেনিয়ার উদ্যোগে সিএসটিও স্থায়ী পরিষদের একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া বর্তমানে রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত এবং এমতাবস্থায় রাশিয়ার পক্ষে সরাসরি আর্মেনিয়াকে সামরিক সমর্থন প্রদান করা কঠিন। তদুপরি, ২০২১ সালের মে থেকে আর্মেনীয়–আজারবাইজানি সীমান্তে বিচ্ছিন্ন সংঘাত চলছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত রাশিয়া এই সংঘাতে সরাসরি আর্মেনিয়ার পক্ষে হস্তক্ষেপ করেনি। সর্বোপরি, সিএসটিওর অন্যান্য সদস্যরা আর্মেনীয়–আজারবাইজানি দ্বন্দ্বে সরাসরি আর্মেনিয়ার পক্ষ অবলম্বন করতে প্রস্তুত নয়, কারণ এই দ্বন্দ্বে তাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ জড়িত নয়, আজারবাইজান বেলারুশীয় অস্ত্রশস্ত্রের অন্যতম ক্রেতা এবং ‘বৃহত্তর তুর্কি’ জাতিভুক্ত ও মুসলিম–অধ্যুষিত কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তান সমজাতীয় ও স্বধর্মী আজারবাইজানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতে আগ্রহী নয়। সুতরাং, এই যুদ্ধে রাশিয়া বা সিএসটিও কর্তৃক আর্মেনিয়ার পক্ষে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা সীমিত।
রাশিয়া আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং আর্মেনিয়া কর্তৃক সহায়তা প্রার্থনার পর সিএসটিও সচিবালয় ও সিএসটিও যৌথ সদর দপ্তর সম্মিলিতভাবে উক্ত সঙ্কটটি নিরসনের চেষ্টা করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের প্রচেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত হয়নি। আর্মেনীয়–আজারবাইজানি দ্বন্দ্বে ফ্রান্স আর্মেনিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল এবং এই সংঘাত শুরুর পর ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক আহ্বান করেছে, কিন্তু এই সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটি অনিশ্চিত। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে যে, তারা এই সঙ্কট নিরসনের জন্য একজন বিশেষ প্রতিনিধি প্রেরণ করবে। কিন্তু সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর তাদের জ্বালানি নির্ভরতা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে আজারবাইজান থেকে জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সুতরাং তারা আজারবাইজানের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক বলে প্রতীয়মান হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মূলত উভয় পক্ষকে শান্তি স্থাপনের জন্য আহ্বান জানানোর মধ্যেই তাদের প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ রেখেছে।
এই সংঘাত শুরুর পর ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ইরান আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যেকার সীমান্তে কোনো ধরনের পরিবর্তন সমর্থন করবে না। এর মধ্য দিয়ে ইরান পরোক্ষভাবে আর্মেনিয়ার প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। অবশ্য ইরান একই সময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব করেছে। এদিকে ইরানি টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোর প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ইরান ইরানি–আজারবাইজানি সীমান্তের দিকে সামরিক সরঞ্জাম প্রেরণ করছে, যেটিকে আজারবাইজানের ওপর চাপ প্রয়োগের একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যদিকে, তুরস্ক এই সংঘাতের বিষয়ে আজারবাইজানের অবস্থানকে সমর্থন করেছে এবং ‘উস্কানিমূলক কার্যক্রম’ বন্ধ করে শান্তির পথ বেছে নিতে আর্মেনিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, দক্ষিণ ককেশাসে নতুন করে একটি বিস্তৃত মাত্রার আন্তঃরাষ্ট্রীয় যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন এই যুদ্ধটি পূর্ণ রূপ ধারণ করবে, নাকি কূটনীতির মাধ্যমে সাময়িকভাবে নিবারিত হবে, সেটি দেখার বিষয়।