স্লোভেনিয়ার দার্শনিক স্লাভয় জিজেক সাংবাদিক চার্লি ন্যাশের সাথে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অংশ নেন, যেটি গত ১৪ মার্চ প্রকাশিত হয় স্পেক্টেটর ইউএসএ পত্রিকায়। সেখানে জিজেক করোনাভাইরাস, বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জনতোষণবাদী রাজনীতি, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। চার্লি ন্যাশের লেখা এবং সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করা হলো রোর বাংলার পাঠকদের জন্য।
“হ্যাঁ, আলাপটা আমি করতে পারি, কিন্তু আমি অসুস্থ। (ভাইরাসের কারণে না)”
এই কথার মধ্য দিয়েই শুরু হলো স্লাভয় জিজেকের সাথে ফোনকলে এক ঘণ্টা ব্যাপী সাক্ষাৎকারটি।
যখন আমি জিজেককে তার সময়টুকু দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিলাম, তার কথায় মনে হলো বেশ ধকলের মধ্যে আছেন। তিনি বললেন, “বেশি কিছু আশা করবেন না। আমার শরীরটা এমনিতেই খারাপ। এটা এই ভাইরাসটা নয়, যদিও যে উপসর্গগুলো এখন আছে তার মধ্যে অনেকগুলো এই ভাইরাস সংক্রমণেরই উপসর্গ। আপনি জানেন, এমনিতেই হাঁচি-কাশি এসব অনেক বছর ধরে আমার লেগেই আছে।”
কথা ছিল, আমাদের আলাপ হবে কিছুদিনের মধ্যেই বের হতে যাওয়া জিজেকের বই ‘এ লেফট দ্যাট ডেয়ারস টু স্পিক ইটস নেইম’- নিয়ে। ৭০ বছর বয়সী জিজেক এই বইটিকে তার পাঁচ দশকের লেখালেখির বেশিরভাগের চেয়ে সহজে পাঠযোগ্য বই হিসেবে বলে আসছিলেন।
কিন্তু জিজেকের বেশি উৎসাহ কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস নিয়ে আলাপ করতে, আর আমাদের আলাপও সেদিকেই এগিয়ে গেল ।
তিনি বললেন, “ইউরোপ একটা পারফেক্ট স্টর্ম- এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”
এরপর আমার কাছে জানতে চাইলেন, মাছ ধরা নৌকা নিয়ে ‘স্টুপিড মুভি’টা দেখেছি কিনা!
তিনি বলে চললেন, “জর্জ ক্লুনি অভিনীত এই মুভিটির নাম ছিল ‘দ্য পারফেক্ট স্টর্ম’। আপনি Perfect Storm এর মানেটা কী জানেন? এখানে ওখানে টর্নেডো আর ঝড়ের মতো একেকটা দুর্যোগ যখন মিলিত হয় আর এরপর দুর্যোগের ভয়াবহতা গুণিতক হারে বাড়তে থাকে, সেটিই হলো পারফেক্ট স্টর্ম বা ভয়াল তুফান। আমি মনে করি ইউরোপ ভয়াল তুফানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”
জিজেকের মতে, করোনাভাইরাস হলো তেমন অনেকগুলো দুর্যোগের একটি।
“এমনকি, আমি বুঝতে পারছি না এখানে ঘটছেটা কী। সব সরকারি কিংবা দাপ্তরিক ঘোষণায় আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা বলছে, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই, আতঙ্কিত হবেন না। এরপর তারা যা বলছে, তাতে আতঙ্কিত না হয়ে আপনি পারবেন না। করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বদলটা ইউরোপকে চরম ক্ষতিগ্রস্থ করবে।”
“আপনি এর সাথে দুর্যোগের ফলস্বরূপ সম্ভাব্য শরণার্থীদের জোয়ারটা যোগ করলে, একটা ভয়াল তুফানই দেখতে পাবেন সবটা মিলে। আর আমি মনে করি, ইউরোপ এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে সমন্বিতভাবে এই দুর্যোগটা কাটিয়ে ওঠা এর পক্ষে সম্ভব হবে না। আর ঠিক এই জায়গাতেই আমি বলছি যে, করোনাভাইরাস কমিউনিজমকে একটা নতুন সুযোগ দেবে। আর এখানে পুরানো ঘরানার কমিউনিজমকে বোঝাচ্ছি না আমি। কমিউনিজম বলতে আমি বলি যে, যেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আমাদের স্বাস্থ্যখাত সহজলভ্য করতে হবে, সমন্বয় করতে হবে… ইত্যাদি ইত্যাদি, এটা সত্যিই একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি! যেমনটা তারা বলছে, অমুক দেশটা মাস্ক, শ্বাসযন্ত্রসহ এবং নানা জরুরি মেডিকেল যন্ত্রপাতির অভাবে ভুগছে। আর আমাদের এই পরিস্থিতিকে যুদ্ধাবস্থা হিসেবেই নেওয়া উচিত। আমাদের ইউরোপকে একটা পারস্পরিক সমন্বয়ের দিকে যেতে হবে। আমাদেরকে যেতে হবে ইউরোপিয়ান সংহতির দিকে যে যুদ্ধে আমরা এক হয়ে লড়ব। এটা করা সম্ভব, এমনকি এটা উৎপাদনশীলতাও বাড়াবে।”
“আমি বলতে চাই যে, প্রয়োজনীয় সামাজিক কার্যকলাপের মাধ্যমে পুঁজিবাদের যেটুকু ভালো দিক আছে সেটুকু নিয়েই এই বৃহত্তর সংহতি সম্ভব। এই সংহতি শুধু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেই নয়, এই সংহতি দরকার প্রতিবেশের সংকট, শরনার্থী সমস্যা সহ নানান ক্ষেত্রেই।”
জিজেককে জিজ্ঞেস করলাম, আটলান্টিকের অপর পাশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আপনার কী মত?
২০২০ সালের ডেমোক্রেটদের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে তিনি বললেন, “দীর্ঘসময় ধরে আমি যেসব চিন্তা ও বিশ্লেষণ করেছি সেসবের ব্যাপারে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মাধ্যমেই নিশ্চিত হলাম। ডেমোক্রেট এস্টাব্লিশমেন্ট-এর বার্তাটি আপনার কাছে পরিষ্কার নয় কি, যে, বার্নি স্যান্ডার্সের চেয়ে ট্রাম্পই ভালো?”
“আমি খেয়াল করলাম একদিক থেকে দেখলে বিষয়টা কেমন, ধরুন একে বলা যায় ‘নির্বাচনযোগ্যতার সমস্যা’। ডেমোক্রেটিক এসটাব্লিশমেন্ট একদিকে বলছে যে, বার্নি স্যান্ডার্স সবকিছু উল্টে দেবেন, তিনি চরমপন্থী ইত্যাদি আরো কত কী। কিন্তু হায় খোদা, গতবার তো ট্রাম্প এভাবেই জিতে গেল! আমি মনে করি, ‘যদি জিততে চাও মধ্যপন্থি হও, মাঝামাঝি সুবিধাজনক জায়গায় থাকো’- এই লাইনটা এখন আর কাজ করে না।”
“আমাদের একটি বিশাল সোশ্যালিস্ট ঘরানার আন্দোলন গড়ে উঠেছে যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও মূলধারার গণমাধ্যমে শক্তপোক্তভাবেই জায়গা দখল করেছে। আর এভাবে সত্যিকারের একটা বিকল্প হিসেবে মানুষের সামনে হাজির হতে পারাটা জরুরি।”
জিজেক দাবি করেন ডেমোক্রেটিক আর রিপাবলিকান পার্টির মূলধারা এখন এমন হয়ে উঠছে যে, এদের মধ্যে পার্থক্য করার কিছুই নেই। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নে ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনে বিলিয়নিয়ার ব্লুমবার্গের দাঁড়াতে পারাটা তারই একটা উদাহরণ।
“এই ডেমোক্রেটিক এস্টাবলিশমেন্টকে যদি বন্দুকের মুখে রেখে ট্রাম্প আর বার্নির মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বলা হতো, তারা হয়তো সরাসরি কোনো জবাব দিত না, কিন্তু বাস্তব কথা হলো, তারা ট্রাম্পকেই পছন্দ করতো। তাই, আমি মনে করি এটা একটা রাজনৈতিক পরিহাস।”
জিজেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনেকটা নিষ্কর্মাই মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্রকে সিরিয়া থেকে পিছু হটার সিদ্ধান্তটা ট্রাম্পের এই অসাড়তারই ফল, যেটাকে জিজেক বলছেন- ট্রাম্পের অনেক সর্বনাশা কাজের একটি।
“ট্রাম্প কুর্দিদের বলি দিয়েছে।” জিজেক বললেন, “কুর্দিরা হলো প্রধান ভুক্তভোগী। তাদের সবাই শোষণ করতে চায়। কুর্দিদের প্রতি আমার সহানুভূতি রয়েছে। ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কুর্দিদের (এরা অনেকটা রক্ষণশীল) প্রতি অবশ্য অতটা সহানুভূতি নেই, যতটা রয়েছে তুর্কির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল আর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কুর্দিদের জন্য।”
“ট্রাম্পের একতরফা ইস্তফা একটা নতুন পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে, যেখানে পুতিন আর এরদোয়ান এই দুই সহযোগীই ফায়দা তুলবে। আর তাদের উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার, ইউরোপকে ডোবানো। ইউরোপীয় সংহতি নষ্ট করা। মানুষ খেয়াল করছে না, একই কাজটা লিবিয়াতেও হচ্ছে। গৃহযুদ্ধে রাশিয়া এসে হস্তক্ষেপ করছে, একপক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে, আর তুর্কিদের সমর্থনে লড়ছে অন্যপক্ষ। এরপর এরাই আবার চুক্তি করছে।”
“আমার কাছে মনে হচ্ছে সবকিছু একযোগে চলছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা ইউরোপে নতুন শরণার্থীর জোয়ার তৈরি করবে। বামপন্থীদের কাছে আমার কথাগুলো হয়তো জঘন্য লাগতে পারে। কিন্তু ইউরোপে আবার শরণার্থীদের ঢল মানে, এটা একটা আদর্শিক আর রাজনৈতিক বিপর্যয়। আমি শরণার্থীদের ইউরোপে আসার পক্ষে, কিন্তু চার বছর আগে প্রথম যে জোয়ারটা এলো সেটা আরও গোছালোভাবে হতে পারতো। বিশৃঙ্খলভাবে যেটা হলো সেটা শুধু হাঙ্গেরির মতো মুসলিম শরণার্থীবিরোধী পপুলিস্টদের বাধার মুখেই পড়বে না, পুরো ইউরোপেই এটা ঘটবে। সামনে দেখবেন পপুলিস্টরা ইউরোপটাই দখল করে নিবে, এবং আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা এখানে কী অদ্ভুত ধরনের মিত্রতা তৈরি করছি।”
জিজেকের আশঙ্কা, ইউরোপীয় নিষ্ক্রিয়তার ফলে পুতিনের রাশিয়া আর এরদোয়ানের তুরস্ক উদ্ভূত হয়েছে একটি ‘নতুন মেরুর’ অংশ হিসেবে, যেটি এখন ইচ্ছেমতো ইউরোপকে পর্যুদস্ত করতে পারবে তেল আর শরণার্থী সংকট নিয়ে।
“আমি ইউরোপের নিষ্ক্রিয়তায় অবাক হয়েছি। আমরা তুরস্ককে ৬ বিলিয়ন ইউরো দিচ্ছি যদি তারা শরণার্থীদের সাহায্য করে। আপোষটা আমার কাছে অনেক ন্যাক্কারজনকই মনে হয়েছে যদিও। এরপর ইউরোপ যখন চারটা বছর সময় পেয়েছে, তারা এই সময়টাকে শরণার্থী বিরোধিতায় তৎপর না হয়ে বরং কাজে লাগাতে পারতো অবস্থার পরিবর্তন করতে। অবশ্যই ইউরোপের উচিৎ আরও শরণার্থী গ্রহণ করা, কিন্তু এটা তো কোনো সমাধান নয়।”
“সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী দেশগুলো কার্যত কোনো শরণার্থীই গ্রহণ করছে না। তাহলে কেন ইউরোপ? কেন সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত নয়? তাদের মতো সম্পদশালী দেশের জন্য শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়াটা অনেক সহজ ছিল।”
পপুলিস্ট বামপন্থীদের কাজের ব্যাপারে জিজেক কিছুটা সংশয়ী- তার মতে, তারা যতটা গুরুত্ব দিয়ে এই খারাপ অবস্থা কী কারণে হলো সেটা নিয়ে চাকচিক্যময় ভারী ভারী বই লিখতে আগ্রহী, ততটা গুরুত্বের সাথে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য একসাথে কাজ করাতে আগ্রহী নয়।
“বিনয়ী, বাস্তববাদী বামপন্থীদেরই এখন দরকার, যাদের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে কী করা দরকার তা নিয়ে আশাবাদী কর্মসূচি আছে। যেমনটা ধরুন, খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে – এখন পুঁজিবাদ থেকে বের হতে তো পারছি না। তাহলে কীভাবে সামলাতে হবে সেটা?” তার মতে, পপুলিস্ট বামপন্থীদের পুঁজিবাদী মেকানিজমটাকে কীভাবে নিজেদের ব্যবহার উপযোগী করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে।
জিজেকের মতে, “ট্রাম্প আর দেশে দেশে পপুলিস্ট রাজনীতির উত্থান আমাদেরকে বার্তা দেয় যে, সেকেলে উদারনৈতিক রাজনীতির পতন হয়েছে।”
“অধিকাংশ মানুষ উদারনীতিবাদ নিয়ে হতাশ এবং আমাদের আর সেপথে ফেরার উপায় নেই। সেকারণেই ইউরোপের সবখানে– ম্যারিয়ন লা পেন, অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির মতো অনেক পপুলিস্ট রাজনীতিবিদ আর দলের উত্থান দেখবেন।” সাথে তিনি যোগ করলেন, আমেরিকার রাজনীতিতে বলতে গেলে ঠিক ডানপন্থী রাজনীতিতে ট্রাম্প যা করেছে, বামপন্থীদের সেটাই করা উচিৎ।
“আমার মনে আছে ট্রাম্প যখন নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিল তখন লোকজন ভেবেছিল ট্রাম্প দেশে অতিমাত্রায় বিভাজন তৈরি করবে! আরে এটাই যে ট্রাম্পকে জিতিয়ে দিচ্ছে সেটা তারা বুঝতে পারল না। হিলারি এই খেলাটা খেলতে গিয়েই হেরেছে, মাঝে আসার কথা বলে, নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠদের সাথে মধ্যপন্থী অবস্থানে থাকার কথা বলেই হিলারি হেরেছে। বামপন্থীদের এটা বুঝে নেওয়া উচিত। ‘আমরা প্রগতিশীল, আমরা ক্ষ্যাপাটে, আমরা জনসমুক্ষে নোংরা কথা বলতে ছাড়ি না’- বামপন্থীদের এভাবে নিজেদের চেনানোটা উচিৎ হবে না। বামপন্থীদের নিজেদেরকে নতুনভাবে চেনাতে হবে। যদি পোস্টমর্ডানিজম কিংবা উত্তরাধুনিকতাবাদ বলতে অশ্লীলতা, বিদ্রুপ, অসংলগ্নতা, মিথ্যাচার… এসবকেই বুঝিয়ে থাকি, তবে ট্রাম্পই অবিসংবাদী পোস্টমডার্ন প্রেসিডেন্ট আর এখানেই আমি মনে করি যে বামদের রাখঢাক না রেখে চিৎকার শুরু করা উচিৎ, “না, আমরা কোনো ক্ষ্যাপাটে প্রান্তিক দলের প্রতিনিধিত্ব করি না, আমরা সাধারণ, বিনয়ী, দরিদ্র আর খেটে খাওয়া নিঃস্ব মানুষদের প্রতিনিধি।”
“বামপন্থীদের এলজিবিটি(লিঙ্গ বৈচিত্রগত) সংখ্যালঘু, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ এইধরনের বিষয়ে অতি মোহগ্রস্থতা কাটিয়ে উঠতে হবে। আমার মনে হয়, রাজনীতিতে নির্দিষ্ট জীবনধারা আর নির্দিষ্ট সংখ্যালঘুদের নিয়ে এই মোহটা, বলতে গেলে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমস্যা এড়ানোরই একটা কৌশল।”
“শ্রেণী সংগ্রাম আবার ফিরে আসছে। গতবছরের বিস্ময়কর সাফল্য পাওয়া ‘জোকার’ আর ‘প্যারাসাইট’ এই দুটো মুভিই শ্রেণী সংগ্রাম নিয়েই।”
ডিজিটাল যুগ কর্মীদের শ্রেণী সংগ্রামে সহায়তা করবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য জিজেক সংশয় প্রকাশ করেন।
“একদিকে ইন্টারনেট, যেটা তাৎক্ষনিক সামাজিক মেলবন্ধনের দুয়ার উন্মুক্ত করে মুহুর্তেই আপনাকে লক্ষ কোটি মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত করছে। অন্যদিকে আমি মনে করি, এখানে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কথাটিও আসবে।”
সাথে যোগ করলেন জিজেক, “ইন্টারনেট কিংবা ডিজিটাল স্পেইসকে কে কোন মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে আমরা সচেতন হতে শুরু করেছি। আজকের দিনে এটা একটা বড় লড়াই… আমি এই ডিজিটাল স্পেইসটাকে কেবল ভালো বা মন্দ এই কাতারে না ফেলে বলব এটি শ্রেণী সংগ্রামের নতুন একটি জায়গা।”
আমি জিজেকের কাছে নিক ল্যান্ড আর তার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠা অন্ধপ্রবৃদ্ধিবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। অন্ধপ্রবৃদ্ধিবাদ বা Accelerationalism এই ধারণার উপরই গড়ে উঠে যে, আমূল সামাজিক পরিবর্তনের জন্যই প্রযুক্তি আর পুঁজিবাদী কর্মকাণ্ডের গতিকে আরো বাড়াতে হবে। জিজেক নিক ল্যান্ডকে অতটা চেনেন বলে মনে হলো না। কিন্তু তিনি বললেন যে, “আমার অন্ধপ্রবৃদ্ধিবাদের এই দিকটাকেই ভালো লাগে যে এখানে এই ধারণাটা রয়েছে যে, আপনি বৈশ্বিক পুঁজিবাদকে প্রথাগত কিছু আঞ্চলিক প্রতিরোধ দিয়ে আর কোনোভাবেই হঠাতে পারবেন না। আমার কিছু ল্যাটিনো আমেরিকান বন্ধুর দাবি, আমাদেরকে প্রাচীন আদিবাসীদের প্রথায় ফিরে যাওয়া উচিৎ… বা এধরনেরই নানান কিছু। না। কিন্তু আমি এখনও মার্ক্সবাদীই আছি। আপনাকে র্যাডিকেল পুঁজিবাদের আধুনিকায়নের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এখানে পেছনে ফেরার কোনো পথ নেই।”