আজ থেকে সাত বছর আগেকার কথা। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম প্রথমবারের মতো সন্ধান পায় তাদের তৎকালীন নেতা কিম জং-ইলের সন্তান কিম জং-উনের। বাবার সাথে তার উপস্থিতির ধরন দেখেই দেশটির জনগণ বুঝতে পেরেছিলো তাদের ভবিষ্যত নেতা কে হতে যাচ্ছে। এক বছর পর যখন কিম জং-ইল মারা যান, তার অল্প কিছুদিন পরই দেশটির সুপ্রিম লিডার হিসেবে ঘোষণা করা হয় কিম জং-উনের নাম।
সেই সময়কার নানা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কিম জং-উনকে চার তারকা জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টি তাকে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে। এর আগপর্যন্ত কেউই জানতো না যে, তিনিই হতে যাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী শাসক। এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তিনি আসলে দেখতে কেমন হয়েছেন, সেই সম্পর্কে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষেরই বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না।
এবার তাহলে একটু অতীত থেকেই ঘুরে আসা যাক। কিম জং-উনের বাবা কিম জং-ইলের তিনজন স্ত্রী ছিল বলে জানা যায়। সেই তিন ঘরে তার মোট ছয় সন্তান জন্ম নিয়েছিলো। কিম জং-ইলের প্রথম স্ত্রী ১৯৭১ সালে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে স্বামীর সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। নির্বাসনে থাকাবস্থায় মস্কোতে তার মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে কোনো পুত্রের জন্ম হয় নি, সেখানে জন্ম হয় দুই কন্যা সন্তানের। জং-ইলের তৃতীয় স্ত্রী কো ইয়ং-হোই ছিলেন জাপানী বংশোদ্ভূত এক গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী। এ ঘরে কিম জং-চল ও কিম জং-উন নামক দুই পুত্র এবং কিম ইয়ো-জং নামক এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
সবচেয়ে বড় ছেলে (প্রথম ঘরের সন্তান) কিম জং-ন্যাম তার বাবার সাথেই থেকে গিয়েছিলো। ২০০১ সালের আগপর্যন্ত তাকেই বাবার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হতো। কিন্তু ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে টোকিওর ডিজনিল্যান্ডে যেতে গিয়ে ধরা পড়ে যান তিনি। এ ঘটনাই তাকে বাবার সুনজর থেকে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয় ম্যাকাওয়ে। অবশেষে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়াতে গুপ্তঘাতকদের হাতে প্রাণ হারান তিনি।
জ্যেষ্ঠতার দিক দিয়ে এরপর আসে কিম জং-চলের নাম। ২০১৫ সালে এরিক ক্ল্যাপটনের এক কনসার্টে লন্ডনে তাকে সর্বশেষ তাকে দেখা গিয়েছিলো। এরপর থেকে তিনি কোথায় আছেন সেই সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। আর কেনইবা তাকে বাদ দিয়ে কিম জং-ইল কনিষ্ঠ পুত্র কিম জং-উনকে উত্তরাধিকার হিসেবে মনোনীত করে গেলেন সেই ব্যাপারটি পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে এ সংক্রান্ত জল্পনা-কল্পনার কিছুটা সমাধান মেলে ২০০৩ সালে কিম পরিবারের সাবেক বাবুর্চি কেনজি ফুজিমোতোর প্রকাশিত আত্মজীবনী থেকে। ফুজিমোতো ২০০১ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। তার ভাষ্যমতে, মেঝ এই ছেলেটির মাঝে কিছুটা মেয়েলি স্বভাব ছিলো, যা জং-ইল মেনে নিতে পারেন নি। তাই স্বদেশের নেতৃত্বের জন্যও তিনি তাকে যোগ্য মনে করেন নি।
তৃতীয় পুত্র কিম জং-উন ছোটবেলা থেকেই ছিলো বাবার নয়নের মণি। মজার ব্যাপার হলো, কিম জং-উনের প্রকৃত বয়স যে কত তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর মতভেদ। উত্তর ও দক্ষিণ কোরীয় রেকর্ড অনুসারে তার বয়স যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৪ বছর। ওদিকে আমেরিকান ও সুইস রেকর্ড অনুযায়ী তার বয়স ৩৩ বছর। শৈশব থেকেই জং-উনের মাঝে এক ধরনের প্রাধান্য বিস্তারকারী মনোভাব ছিলো, ছিলো নেতৃত্ব দেয়ার গুণও। এসব বিষয় জং-ইলের নজর এড়ায় নি।
দুই ভাইয়ের মাঝে পার্থক্য বোঝাতে দুটি ঘটনার কথাই তুলে ধরা যাক। যখন কোনো বাস্কেটবল খেলা শেষ হতো, তখন জং-চল নীরবে কোর্ট থেকে বেরিয়ে যেতেন। অন্যদিকে জং-উন থেকে যেতেন, সতীর্থদের সাথে সেদিনের খেলার ভুল-ত্রুটিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করতেন, যেন সামনের দিনগুলোতে সেই ভুলগুলো আর না হয়। জং-উন কখনো হারতে পছন্দ করেন না। এর ছাপ ফুটে উঠেছিলো তার শৈশবেই। যদি কোনো বোর্ড গেমে তিনি হেরে যেতে থাকতেন, তাহলেই রাগের চোটে সব গুটি ছুড়ে মারতেন জং-চলের দিকে!
অষ্টম জন্মদিনের সময় কিম জং-উনকে উপহার হিসেবে আর্মি জেনারেলদের একটি ইউনিফর্ম দেয়া হয়েছিলো। এরপর থেকেই দেশটির সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা ছোট জং-উনের সামনে মাথা নত করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতো।
অবশ্য কিম জং-উনের শৈশব নিয়ে উত্তর কোরিয়ায় যত কাহিনী প্রচলিত আছে, তার কতগুলো যে সত্য সেই সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন অনেকেই। তাদের মতে এগুলো অতিরঞ্জিত করা। উত্তর কোরিয়ার মিডিয়ার মতে, তাদের নেতা শৈশবে চমৎকার লক্ষ্যভেদ করতে পারতেন, তিনি ছিলেন ‘জিনিয়াসদের জিনিয়াস’! ষোল বছর বয়সে কোরিয়ান যুদ্ধে দাদা কিম ইল-সুংয়ের বীরত্বের উপর তিনি একটি গবেষণাপত্রও রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়।
এবার আসা যাক শিক্ষাজীবনের কথায়। ধারণা করা হয়, ১৯৯৬ সাল থেকে কমপক্ষে ২০০০ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন কিম জং-উন। তবে সেখানে নিজের পরিচয় গোপন রেখেই পড়াশোনার কাজ সারতে হয়েছিলো তাকে। সবাই তাকে তখন চিনতো উত্তর কোরীয় এক কূটনীতিকের সন্তান হিসেবে। সহপাঠীদের কাছ থেকে তার সম্পর্কে পাওয়া যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জোয়াও মাইকেলো ও আরো কিছু সহপাঠীর মতে, জং-উন জেমস বন্ডের সিনেমা আর বাস্কেটবল খুব পছন্দ করতেন। দামি স্নিকার ও নানা ধরনের গ্যাজেট ব্যবহার করতেন বলে অন্যদের থেকে তাকে খুব সহজেই আলাদা করে চোখে পড়তো। তার জন্য একজন করে বাবুর্চি, গাড়ির ড্রাইভার এবং প্রাইভেট টিউটরও নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো সে সময়।
কিম জং-উনের বেশ কয়েকজন সহপাঠী জানিয়েছেন, ছাত্রজীবনে তিনি বেশ রসিক ছিলেন। সবার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো তার, এমনকি উত্তর কোরিয়ার ‘শত্রু’ দেশগুলো থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সাথেও ছাত্রজীবনে সুসম্পর্ক ছিলো কিমের। তবে মাঝে মাঝে মেজাজ হারিয়ে ফেলার মতো ঘটনাও আছে, যা কমবেশি সব মানুষের বেলাতেই ঘটে। ২০১০ সালে প্রকাশিত মার্কো ইমহফ নামে জং-উনের এক সহপাঠীর সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, একবার ঠান্ডা স্প্যাগেটি দেয়ায় রেস্টুরেন্টের ওয়েটারকে আচ্ছামতো বকাঝকা করেছিলেন কিম, যা ঠিক তার সাথে যেত না।
কেনজি ফুজিমোতো জানান, ইউরোপে কৈশোর কাটিয়ে বাড়িতে ফেরার পর স্বদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যত এ সুপ্রিম লিডার, বিমোহিত ছিলেন বাইরের দেশগুলোর অত্যাধুনিক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো নিয়ে। নিজের দেশের স্টোরগুলোর করুণ অবস্থা নির্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, “জাপান আমেরিকার কাছে পরাজিত হয়েছিলো, কিন্তু তারপরও তারা তাদের দেশকে পুনরায় গড়ে তুলেছে। তাদের স্টোরগুলো মালপত্রে বোঝাই ছিলো। তাহলে আমাদের দেশের এমন অবস্থা কেন?”
এই অংশ পর্যন্ত পড়ে আর আট-দশজন কিশোরের সাথে কিমের মিল খুঁজে পাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু ব্যতিক্রম ব্যাপারগুলো ঘটা শুরু করে তিনি দেশে ফিরে আসার পরই। ইউরোপে স্কুল-কলেজ জীবনের শিক্ষা লাভ করলেও কিম গ্র্যাজুয়েশন করেন নিজ দেশে এসেই। ২০০৬ সালে কিম ইল-সুং মিলিটারি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ইতি টানেন তিনি। এরপর সামরিক বাহিনীতে তার উত্থান হতে থাকে দ্রুতই। বিভিন্ন ফুটেজে দেখা যায়, গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবার পরপরই বিভিন্ন মিলিটারি ইউনিট পরিদর্শন করছেন তিনি।
২০১১ সালে বাবা কিম জং-ইলের মৃত্যুর পর কিম জং-উনের উত্থান যেন ছিলো অনেকটা গল্পের মতো। মাত্র বছর পাঁচেক আগেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছিলেন তিনি, আশেপাশে অভিজ্ঞ সামরিক নেতারও অভাব ছিলো না। তবু দেশটির নেতার আসনে গিয়ে বসলেন তিনিই। বসার পরে অনেকে ভেবেছিলো কিম শুধু নামেই সুপ্রিম লিডার থাকবেন, প্রকৃত ক্ষমতা থাকবে তার আঙ্কেল ও রাজপ্রতিভূ জ্যাং সং-থায়েকের হাতে।
কিম জং-উনের সবচেয়ে কাছের পরামর্শক ছিলেন জ্যাং সং-থায়েক এবং তার স্ত্রী কিম কিয়ং-হুই। কিম জং-ইল তাদের দুজনকেই বলে গিয়েছিলেন যেন তার মৃত্যুর পর তারা দেশটির সামরিক বাহিনীর দেখাশোনা করেন এবং কিম জং-উনকে তার ক্ষমতা সুদৃঢ় করতে সাহায্য করেন। এ দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করছিলেন তারা। অন্যদিকে কিমের অবস্থান সুদৃঢ় করতে দেশটির অনেক ক্ষমতাধর জেনারেল ও আমলাকেও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিলো বলে জানান দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তাগণ।
মাত্র দু’বছর পরই অবশ্য মুদ্রার অপর পিঠ দেখে ফেলেন সং-থায়েক। সামরিক বিদ্রোহ করে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগেই প্রাণ যায় তার। তবে এটা ছিলো কেবল শুরু। এরপর কিম জং-উনের নজর পড়ে সং-থায়েকের অনুগতদের দিকে। তাদের অনেককেই চাকরিচ্যুত করা হয়, অনেককে এন্টিএয়ারক্রাফট মেশিনগান দিয়ে পরপারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর এ ঘটনা থেকে যেন অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে, সেজন্য ট্রাক ভর্তি করে দেশটির উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গকে ধরে আনা হয়েছিলো। এভাবে এখন পর্যন্ত ৩৪০ জনের কাছাকাছি ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে বলা জানা যায় সিএনএন-এর এক রিপোর্টে। তাদের মাঝে রয়েছেন জেনারেল হিয়ন ইয়ং-চল (মিনিস্টার অফ আর্মড ফোর্সেস), চো ইয়ং-গন (ভাইস প্রিমিয়ার), কিম ইয়ং-জিন (ডেপুটি প্রিমিয়ার ফর এডুকেশন), জেনারেল কিম ওন-হং (হেড অফ সিক্রেট পুলিশ) প্রমুখ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশে ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন কিম জং-উন, একে ব্যবহার করছেন তার ক্ষমতার মূল হাতিয়ার হিসেবে। এখানেই বাবার সাথে অন্যতম বড় পার্থক্য বর্তমান কিমের। কারণ তার বাবা এসব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকেই বেশি প্রাধান্য দিতেন, পার্টির সভা আহ্বান করতেন খুব কম, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নিতেন গোপনে। জনগণের কাছেও নিজের ইমেজ উপরে তুলতে কিম জং-উনের প্রচেষ্টার কমতি নেই। বিভিন্ন ছবিতেই তাকে দেখা গেছে কোনো সৈনিকের কাঁধে হাত রেখে হাসতে হাসতে কথা বলছেন, কোনো শ্রমিকের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছেন কিংবা হাসপাতালে বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করছেন।
উত্তর কোরীয় জনগণের কাছে কিম জং-উনের দাদা কিম ইল-সুংয়ের জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী। এমন কথাও শোনা যায় যে, বর্তমান কিম চলনে-বলনে, কথাবার্তার ধরনে, এমনকি সিগারেট ধরার স্টাইলেও তার দাদার মতো হতে চাইছেন। শুধুমাত্র এজন্যই নাকি তিনি দেহের ওজন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন! বায়েক ইয়ু-মিন নামে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা এক ব্যক্তির মতে, “উত্তর কোরীয়রা যখন প্রথমবারের মতো তাকে দেখলো, তখন তারা ভেবেছিলো স্বয়ং কিম ইল-সুংয়েরই বোধহয় পুনর্জন্ম হয়েছে!”
কিম জং-উনের পারিবারিক জীবন অবশ্য ধোঁয়াশায় পরিপূর্ণ। তার স্ত্রী রি সল জু ছিলেন চিয়ারলিডার ও গায়িকা। তবে কবে তাদের বিয়ে হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় নি। এ দম্পতির সন্তান-সন্ততির সংখ্যা যে ঠিক কত সেটাও অনিশ্চয়তায় ভরা। তবে সংখ্যা দুই থেকে তিনের মাঝেই বলা অনুমান সবার।
দাদার আমলে দেশের অর্থনীতি প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে শক্তিশালী থাকলেও বর্তমানে উত্তর কোরিয়া অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিক থেকে বেশ পিছিয়ে আছে। দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে কিম জং-উনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলা যায় এটাকেই। এজন্য তিনি বেছে নিয়েছেন ‘বিয়ুংজিং’ অর্থাৎ ‘সমান্তরাল উন্নয়ন’ নীতি। তার লক্ষ্য একইসাথে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চায় এই পারমাণবিক অস্ত্রের বলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ গোটা বিশ্ব তাদেরকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিক, ঠিক যেভাবে ওয়াশিংটন একপর্যায়ে স্বীকৃতি দিয়েছিলো চীনকে। দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভালোভাবেই ঢেলে সাজাচ্ছেন তিনি।
খাদ্য ও দরকারি অন্যান্য জিনিসপত্র জনগণ যাতে আরো ভালোভাবে পেতে পারে, সেজন্যও নেয়া হয়েছে দরকারি পদক্ষেপ। সরকারিভাবে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে গড়ে উঠছে অসংখ্য ভবন, রাষ্ট্রের অনুগত নাগরিকেরাই যেখানে থাকার সুবিধা পাবে। অর্থনৈতিক নানা অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার তাদের উন্নতির গ্রাফের উর্ধ্বমুখিতাকেই নির্দেশ করে।
ডঙ্গুক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর কোহের মতে, “দশকের পর দশক ধরে শাসন করার মতোই একজন হিরো কিম জং-উন, দীর্ঘ সময়ের জন্যই খেলতে এসেছেন তিনি। তার মতে, একসময় তার দেশকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ছাড়া বিশ্বের বাকি রাষ্ট্রগুলোর আর অন্য কোনো উপায় থাকবে না।”
আসলেই কি কিম জং-উন পারবেন উত্তর কোরিয়াকে তার স্বপ্নের দেশে পরিণত করতে? সময়ের হাতে সেই প্রশ্ন তুলে দিয়ে আজকের লেখার ইতি নাহয় এখানেই টানছি!