কাতারের কূটনৈতিক সংকটের আদ্যোপান্ত এবং বাংলাদেশ

মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ কাতার হঠাৎ এক কূটনৈতিক সঙ্কটে টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে। উপসাগরীয় জোটের প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের এই হঠাৎ সৃষ্ট কূটনৈতিক অচলাবস্থা নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এয়ারলাইন্স কোম্পানীর ফ্লাইট নিয়ে সংশয়, ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজনের অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হওয়ার ভয়, মধ্যপ্রাচ্যের পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা কিংবা অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স আয় নিয়ে দুশ্চিন্তা সারা পৃথিবীর মানুষকে বাধ্য করেছে পারস্য উপসাগরের পাড়ের এই ছোট্ট দেশটি নিয়ে মাথা ঘামাতে। বাংলাদেশের কয়েক লাখ শ্রমিক এই দেশটিতে কাজ করে এবং বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের একটা বড় অংশ আসে কাতার থেকে। আর তাই বিশ্ব মিডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেও আলোচিত হচ্ছে কাতারের এই কূটনৈতিক সংকট।

বিশ্ব মানচিত্রে কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েতের অবস্থান; Source- Google Maps

সংকট চিত্র

কাতারের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মূলটা অনেক দিনের পুরনো হলেও এবারের সংকটটি সৃষ্টি হয়েছে কিছুটা আকষ্মিকভাবেই। কোনো ধরনের প্রাথমিক পূর্বাভাস ছাড়াই গত ৫ জুন সোমবার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ-সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন এবং আফ্রিকার মুসলিম দেশ মিসর কাতারের সঙ্গে সব ধরনের কূটিনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। এরপরই বিশ্বজুড়ে শুরু হয় হৈচৈ। এই পাঁচটি দেশের সঙ্গে পরে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপও যোগ দিয়েছে। ফলে বর্তমানে ছয়টি দেশের সঙ্গে কাতারের প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ রয়েছে।

সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলো শুধূ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেই বসে নেই, মঙ্গলবার দিনভরই কাতারের জন্য একটার পর একটা দুঃসংবাদ আসছিল বিশ্ব মিডিয়ায়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী কাতারের সঙ্গে স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করেছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। ফলে দেশটিতে স্থলপথে খাদ্য ও নির্মাণসামগ্রী আমদানি আপাতত বন্ধ রয়েছে। কাতার এয়ারওয়েজও সমস্যায় পড়েছে। সৌদি আরব ইতোমধ্যেই দেশটিতে কাতার এয়ারওয়েজের ব্যবসা করার লাইসেন্স বাতিল করেছে এবং সব অফিস বন্ধ করার আদেশ দিয়েছে। এই ছয়টি দেশ কাতারি বিমানকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতেও নিষেধ করেছে। ফলে দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের বিমানগুলোকে অনেক ঘুরপথে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদের সময় এবং ভোগান্তি বাড়ছে, যার ফলে ব্যবসা কমে যাচ্ছে কাতার এয়ারওয়েজের। এছাড়াও আঞ্চলিক পর্যায়ে এই বিচ্ছিন্নতা কাতারের বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতসব ধরনের স্বার্থকেই বিঘ্নিত করছে।

কাতার এয়ারওয়েজের বিমান -qatar airways.com

সংকটের কারণ

গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সদস্য হলেও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের কিছু ইস্যুতে বড় রকমের দ্বিমত রয়েছে। পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া মতাবলম্বী শক্তি ইরানের সমর্থক। এছাড়া মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কাজ করা রাজনৈতিক শক্তি মুসলিম ব্রাদারহুড এবং ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে সমর্থন করে কাতার। এমনকি কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের রাজনৈতিক অফিসও রয়েছে। দোহায় একই রকম রাজনৈতিক অফিস রয়েছে আফগান তালেবানেরও। আর এই বিষয়টি নিয়ে দোহার শাসকদের কোনো রাখঢাক নেই। তারা বেশ খোলাখুলিই তাদের সমর্থনের কথা প্রচার করেন। আর এখানেই আপত্তি সৌদি আরবসহ বাকি দেশগুলোর। তারা সব সময় ব্রাদারহুডের মতো রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের ভয়ে ভীত থাকে। আর ইরান মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের অন্যতম রাজনৈতিক এবং সামরিক প্রতিপক্ষ। আর তাই ইরানের প্রতি কাতারের সমর্থন মেনে নিতে পারে না রিয়াদ। ২০১৪ সাল থেকেই কাতারকে এই কার্যক্রম থেকে নিরস্ত করতে চেষ্টা করে আসছে সৌদি আরব। তখনও একবার কূটিনৈতিক প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটলেও পরে তা আলোচনার ভিত্তিতে প্রশমিত হয়। কিন্তু কাতার তার নীতি থেকে সরে আসেনি।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, হামাসের সাবে প্রধান খালেদ মিশাল এর সঙ্গে ২০১২ সালে দোহায় এক অনুষ্ঠানে কাতারের সাবেক আমির হাম্মাদ বিন খালিফা আল থানি al-monitor.com

এই সংকটের আগুণে ঘি ঢালে কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানির গত মে মাসে করা এক মন্তব্য। এক ভাষণে তিনি আমেরিকার সমালোচনা করেন এবং ইরানকে সহায়তার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি হামাস ও মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি ইসরাইলের সঙ্গে কাতারের ‘সুসম্পর্ক’ আছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি এই মন্তব্য এমন সময় করেন যখন সৌদি আরব সফর করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির উত্তেজনা চলছিল। তার মাঝেই এই মন্তব্য উস্কানী হিসেবে কাজ করে।

এরই মধ্যে পরিস্তিতি আরো খারাপ করে, কাতারের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার প্রচারিত একটি খবর। এতে বলা হয়, সৌদি আরব, বাহরাইন, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে কাতার। কারণ হিসিবে বলা হয়, দোহার কাছে খবর এসেছে, এসব দেশ কাতারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। পরে এই খবর নিয়ে আলোচনা শুরু হলে কাতারের কর্মকর্তারা এই খবরের সত্যতা অস্বীকার করেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেছে। সৌদি আরব এবং তার মিত্ররা কাতারের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। যার বাস্তবায়ন ঘটে ৫ জুনের ঘোষণার মাধ্যমে। দেশগুলো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ হিসেবে কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে অব্যাহতভাবে সমর্থন যোগানোর এনেছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে তাণ্ডব চালানো জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে সহায়তা করারও অবিযোগ উঠেছে কাতারের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয় কোনোটিই প্রমাণিত নয়। সৌদি আরব এক বিবৃতিতে বলেছে, কাতার তাদের সম্পদ, মিডিয়া এবং রাষ্ট্রীয় কূটনীতির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন যোগাচ্ছে।

একঘরে কাতার

সৌদির এই ঘোষণার পর থেকে আঞ্চলিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে কাতার। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের নাগরিকদের তাদের দেশ ছেড়ে যাবার জন্য সাত দিন সময় বেধে দিয়েছে। কাতারের সব ধরনের নৌযান এবং জাহাজকেও সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোনো বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। সৌদি আরবে কাতার ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল-জাজিরার অফিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, শেয়ার বাজার, আন্তর্জাতিক যোগাযোগও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে কাতারের। ইয়েমেনে হৌথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান অভিযানেও কাতারের অংশগ্রহণ আপাতত স্থগিত হয়ে গেছে।

তবে এই সংকটে রাজনৈতিকভাবে আমেরিকা কাতারের বিরুদ্ধে থাকলেও কাতারের সঙ্গে সামরিক সহযোগীতার কোনো হেরফের হচ্ছে না বলে জানিয়েছে। আমেরিকার সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, কাতারের বিমানঘাঁটি থেকে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকান বিমানগুলো। আর এই সংকটে কাতারের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক উদীয়মান শক্তি ইরান। দোহার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করায় দেশগুলোর সমালোচনা করেছে তেহরান। এছাড়া কাতারে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্থলপথে বন্ধকরে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান জানিয়েছে, ১২ ঘন্টার মধ্যেই ইরানি জাহাজ খাবার নিয়ে দোহায় নোঙর করতে প্রস্তুত রয়েছে। কাতার যদি ইরানের কাছে খাদ্য সরবরাহ পায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে এটি নতুন একটি অবস্থা সৃষ্টি করবে এবং ইরান-সৌদি আরো বেশি মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাবে।

কাতারি বিমান এখন চলছে এই পরিবর্তীত গতিপথে Source-BBC

বাংলাদেশে প্রভাব

কাতারের এই সংকটে নজর রাখছে বাংলাদেশও। কারণ, কাতারে বিপুল পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানী করে বাংলাদেশ। সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট জনশক্তি রপ্তানির ২২ শতাংশের গন্তব্যস্থল ছিল কাতার। এ অবস্থায় কাতারের কূটনৈতিক সংকট আমাদের দেশে কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে উদ্বেগ্ন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মনে করেন আপাতত কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে ভবিষ্যতে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি দুটি বিষয় তুলে ধরেন। প্রথমত, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে এই উত্তেজনা দীর্ঘমেয়াদি হলে আমাদের দেশের শ্রমিকদের ওপর প্রভাব পড়বে। সৌদি আরব ও কাতারে নির্মাণ খাতে আমাদের অনেক শ্রমিক কাজ করেন। এখন কাতারে যদি নির্মাণ ব্যয় বাড়ে বা বিনিয়োগ কমে, স্বভাবতই শ্রমবাজারে তার প্রভাব পড়বে। আর এতে বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে।

কাতারের প্রতি বছর কাজ করতে যান বহু বাংলাদেশি শ্রমিক-thedailystar

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে বহু নির্মাণকাজ হচ্ছে কাতারে। আমাদের শ্রমিকেরাও যাচ্ছেন সেখানে। সেই কাজে স্থবিরতা আসতে পারে। দ্বিতীয়ত, এখনো এটা বলা যাচ্ছে না কাতারের ওপর সৌদি আরব আরও চাপ বাড়াবে কিনা। যদি বাড়াতে চায় তাহলে ইসলামিক সামরিক জোটের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সমর্থনও তারা চাইতে পারে। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক সংঘাতের মধ্যে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। তবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এখনই ভয়ের কিছু নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক রাখতে হবে। পরবর্তী সময়ে আমরা কোনদিকে যাব তার বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

সমাধানচেষ্টা

অবশ্য কাতারের এই কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টির পর থেকেই সংকট সমাধানের প্রচেষ্টাও শুরু হয়েছে। সংকটের শুরু থেকেই কাতার প্রতিবেশি দেশগুলোকে উস্কানীমূলক আচরণ থেকে বিরত থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এই সংকটের সময় নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে এই অঞ্চলের আরেকটি ক্ষুদ্ররাষ্ট্র কুয়েত। জিসিসি জোটের এই দেশটি কাতারের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর আলোচনায় মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। কাতার তাৎক্ষণিকভাবে কুয়েতের এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জানিয়েছে, দোহা আলোচনার মাধ্যমে সব ধরনের সমস্যা সমাধানে বিশ্বাস করে এবং তারা যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে। তবে কুয়েতের প্রস্তাবে এখনো পর্যন্ত সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া আসেনি। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি তুরস্কও দুই পক্ষকে শান্ত থেকে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান; Source-hurriyetdailynews

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান মঙ্গলবার সকালে টেলিফোনে কথা বলেন কাতারের আমিরের সঙ্গে। একই সঙ্গে তিনি সৌদি বাদশাহ, রুশ প্রেসিডেন্ট এবং কুয়েতের আমিরের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এই টেলিফোন আলাপে সংকট সমাধান এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেন এরদোগান। এরদোগানের এই টেলিফোন আলাপের সংবাদে দুটি বিষয় পরিস্কার হয়েছে; এক, কাতারের সংকটটি আন্তর্জাতিক রুপ নিয়েছে; দুই, মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো সংকটে এখন রাশিয়ার একটা ভূমিকা থাকেছেই। এরদাগোন এই সংকট সমাধানে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাসহ যে কোনো ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।

সংকট সমাধানে অবশ্য সবচেয়ে বড় উদ্যোগটি কাতার নিজেরাই নিয়েছে। এই সংকটে বিপরীত পক্ষের সবচেয়ে বড় শক্তি সৌদি আরবের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে চলেছে তারা। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন মঙ্গলবার রাতেই সৃষ্ট সংকট সমাধানের ব্যাপারে আলোচনার জন্য রিয়াদে উড়ে যাচ্ছেন কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানি। সেখানে তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুলাজিজ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানি Source-bbc

কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরাহমান আল থানি বলেছেন, কাতার সৌদি আরবের সঙ্গে এ ব্যাপারে ‘খোলাখুলি এবং সততার’ ভিত্তিতে আলোচনায় আগ্রহী। তারা আশা করছেন, মঙ্গলবার রাতের আলোচনা থেকে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতোই বিশ্ববাসীরও প্রত্যাশা এই সংকট সমাধানের একটি সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসুক যত দ্রুত সম্ভব। আর তা না হলে মধ্যপ্রাচ্যে আরো একটি নতুন সংকট যোগ হবে, যার ফল হতে পারে ভয়াবহ।

Related Articles

Exit mobile version