ক্যামোফ্লাজ একটি বিশেষ টার্ম, যা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বিশ্বের বিভিন্ন সামরিক বাহিনীতে। বলতে গেলে, ইংরেজি অভিধানের বিশেষ এই শব্দ শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীগুলোর ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। যদিও এই শব্দ আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই প্রয়োগ করে থাকি।
ক্যামোফ্লাজ কী?
উইকিপিডিয়া বলছে, যেকোনো কিছুর রঙিন বর্ণের ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো পশু, পাখি অথবা কোনো বস্তুকে ভিন্ন রুপ দিয়ে আড়াল করে রাখা বা থাকার ব্যাপারটাই ক্যামোফ্লাজ। তবে গোপনীয়তা রক্ষার্থে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্যই নাকি এই ক্যামোফ্লাজ টার্মের উৎপত্তি।
আর অভিধান বলছে, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হঠাৎ করে লুকিয়ে যাওয়া, আশেপাশে যা কিছু আছে তার সাথেই মিলিয়ে যাওয়া, অস্ত্রগুলো হুটহাট লুকিয়ে ফেলা বা যেকোনো উপায়েই নিজেদের স্বাভাবিক দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়াটাই ক্যামোফ্লাজ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই মিলিটারি ক্যামোফ্লাজের কৌশল খুব রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
বিজ্ঞান কী বলে?
হ্যারি পটার এন্ড দ্য প্রিজনার অব আজকাবান মুভিটা দেখার দেখার পর অনেকেরই চাদর গায়ে অদৃশ্য হয়ে যাবার অদ্ভূতুড়ে ইচ্ছা জাগতেই পারে। কিন্তু বিজ্ঞান কি এমন কোনো পোশাক কিংবা এমন কিছু এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পেরেছে, যা মানুষ পরলে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে?
চীনারা নাকি এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করেছে, যেটা দিয়ে যুদ্ধবিমান ঢেকে দিলে সেটা অদৃশ্য হয়ে যাবে। তারা জিনিসটার নাম দিয়েছে সুপার ম্যাটেরিয়াল।
শোনা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্পেশাল ফোর্সের জন্যে নাকি এমন অদৃশ্য পোশাক তৈরির গবেষণা চলছে এবং তারা নাকি সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে! ইউএস স্পেশাল ওয়েপন লিস্টে এই বিশেষ পোশাকের নাম তালিকাভুক্ত করা আছে। এত তাড়াতাড়ি তা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে নারাজ আমেরিকা। তবে তারা বলছে যে, সঠিক সময়ে এর সঠিক প্রয়োগ করা হবে।
ক্যামোফ্লাজ ও আলোর ব্যবহার
ইল্যুশন তৈরিতে নাকি বর্ণান্ধতা কিংবা আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণের মতো সহজ সূত্রগুলো ব্যবহৃত হয়। হতে পারে আলোর সংকট কোণ এই অদৃশ্য হয়ে যাবার জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে আলোর প্রতিসরণ সহায়ক। সংকট কোনও উপযোগী।
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়! যদিও বা সম্পূর্ণভাবে সংকট কোণ সৃষ্টিকারী পোশাক আপনি পরেন, তবুও পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি সাপেক্ষে বিভিন্ন কোণে আলো বিভিন্নভাবে প্রতিসরিত হবে। অর্থাৎ, আপনি সম্পূর্ণ অদৃশ্য না-ও হতে পারেন।
হয় আপনাকে কোনো কিছুর সাথে মিলিয়ে যেতে হবে, নয়ত এমন কালো কিছু তৈরি করতে হবে যা সবটুকু আলোই শোষণ করে নিতে পারবে। অনেকটা ব্ল্যাক হোল বানানোর মতো। কিন্তু তাহলে অদৃশ্য হলো কী করে? আশপাশের দৃশ্যমান জায়গার মাঝে কালো (অদৃশ্য) জিনিসটা ধরা পড়বে। তবে এমন কিছু তৈরি করতে হবে, যা পরিবেশের সাথে রঙ বদলে দেয়। সব আলো শোষণ করে ফেলা মানেই অন্ধকার দেখা। অর্থাৎ কালো রং। আশপাশের সব রঙের মাঝে যখন পোশাক আকৃতির কালো কিছু (শূন্যস্থান) থাকবে, তখন সেটা মানুষ বুঝতে পারবে। হতে পারে আলোর সংকট কোণও এই অদৃশ্য হয়ে যাবার জন্য দায়ী হতে পারে।
তবে এমন কিছু কি আসলেই সম্ভব? হ্যাঁ, হয়তো সম্ভব। কারণ, কোনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে, যার ফলে আমরা উক্ত বস্তু দেখি। যদি কোনোভাবে আলোকরশ্মিগুলোকে পোশাকের একপাশ থেকে বিপরীত পাশে আনার ব্যবস্থা করা হয়, তবে উক্ত পোশাক অদৃশ্য হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পোশাক ঠিকই অদৃশ্য হলো, কিন্তু মানুষের কী হবে? মানুষ তো ঠিকই দেখা যাবে, বরঞ্চ উলঙ্গ অবস্থায়।
কেমন হয়ে গেল না ব্যাপারটা! আসল কাহিনী এটা না। আলো কখনোই ওই পোশাককে স্পর্শ করবে না। বরং ওই পোশাকের পাশ দিয়ে অন্য পাশে চলে যাবে। এটা আপনি যে এঙ্গেলেই দেখেন না কেন, আপনি ওই পোশাক এবং এর ভিতরের কিছুই দেখতে পারবেন না। কারণ, আলো ওই পোশাককে স্পর্শ করে প্রতিফলিত হয়ে আর আপনার চোখে আসছে না। তাহলে কীভাবে দেখবেন সেখানে কেউ আছে কি না?
কিছু কিছু মুভিতে দেখবেন গাড়ি অদৃশ্য হয়ে যায়, ওটা রেটরো রিফ্লেকশন (ক্যামোফ্ল্যাস) টেকনোলজি হলোগ্রাম প্রজেক্টর দিয়ে আগের ছবি পিছে দেখানো। যেটা বাস্তবেই আছে। তবে ওটা শুধু জামাতে লাগাতে হবে আর কী!
হতে পারে এসব কিছু নিছকই আমাদের নিজস্ব কল্পনা বা অসম্ভব কিছু। হয়তো বা মার্কিন সেনাবাহিনীর কিংবা চীনাদের স্নায়ুযুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের জন্য রটানো কোনো গুজব। আবার হয়তো সত্যিই এমন কিছু আছে, যা আমাদের জানাশোনার বাইরে।