Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.
খ্রিষ্টীয় ২০২০ সাল। স্থবিরতার প্রতিশব্দ বললে ভুল হবে না। সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে জাগতিক সব রীতিনীতিই যেন বদলে গেল নিমেষে। মানুষ স্তব্ধ হয়ে শুধু মৃত্যুর মিছিল দেখে গেল। অসুস্থতা, মৃত্যু, আপনজন হারানোর শোক, প্রিয়জনের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে না পারার বেদনা ইত্যাদিতে ভরপুর একটি বছর ছিল ২০২০। ফ্রেমে ফ্রেমে বিগত বছরটির খেরোখাতার হিসাব কেমন ছিল তা নিয়েই এই আয়োজন।
সদ্য প্রয়াত কন্যা সন্তানের কফিনের সামনে দাঁড়ানো শোকস্তব্ধ, হতবিহ্বল একজন মা। ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে চলে যাওয়া সন্তানের জন্য একটি ফুল ধরে আছেন একজন মা যার দুই হাতে হাতকড়া পরানো। হতভাগ্য এই মায়ের নাম রেইনা মে নাসিনো, যিনি একজন ফিলিপিনো অ্যাক্টিভিস্ট। কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন করার পরও তার হাত দু’টোকে মুক্ত করা হয়নি। ভাগ্যের কতটা নির্মম পরিহাস হলে, একজন কারাবন্দী মা তার ছোট্ট সন্তানের শেষকৃত্যে আসতে পেরেও তবু তাকে শেষবারের মতো নিজের বাহুতে স্থান দিতে অপারগ হন। ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর ছবিটি ফিলিপাইনের ম্যানিলা নর্থ সিমেট্রিতে তোলা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আলোকচিত্রী তার ওই মুহূর্তের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, এটি ছিল সম্পূর্ণ নীরব অথচ নিবিড় ও প্রগাঢ় এক অনুভূতির সংবেদনশীল উপস্থিতি। জগতের যাবতীয় রাজনীতি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভকে দেরাজে তুলে সন্তান হারানোর শোকে মূহ্যমান একজন মা মাতৃত্বের চিরকালীন সংজ্ঞাটুকুকে তুলে ধরেছেন উপস্থিত সকলের সামনে; Image Source: theatlantic.com/Eloisa Lopez২০২০ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত এক কনফারেন্সে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা অ্যার্ডেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। দেশটিতে করোনা মহামারি সফলতার সাথে নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি বিশ্বের সকলের বাহবা কুড়িয়েছেন; Image Source: bloomberg.com/Mark Mitchellছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন কর্মীকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত করতে। অথচ কারখানাটি ছিল ফোর পিলারস জিন ডিস্টিলারি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের যারা জিন (এক ধরনের মদ্য পানীয়) বাজারজাত করে থাকে। বিভিন্ন দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের স্বল্পতার কারণে অনেক কারখানাই মূল ব্যবসা থেকে সরে এসে নিজস্ব লোকবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে স্যানিটাইজার প্রস্তুতে সক্রিয় হয়েছিল; Image Source: Carla Gottgens/Bloomberg২০২০ সালের মে মাসের ২৮ তারিখ। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর তৃতীয় দিনের বিক্ষোভ সমাবেশে বিক্ষুব্ধ জনতা একটি দোকানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। মিনিয়েপোলিসে পুলিশি হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েড মারা যান এই ছবিটি তোলার তিন দিন আগে। পুলিশ সদস্য ডেরেক শভিন টানা আট মিনিট ফ্লয়েডের কাঁধে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন। ডেরেক ও তার দুই সহকর্মী সেকেন্ড ডিগ্রী আনইন্টেনশনাল মার্ডারের অভিযোগে চলতি বছরের মার্চ মাসে আদালতের সামনে হাজির হবেন; Image Source: Jordan Strowder / Anadolu Agency / Gettyহাঙ্গেরির বুদাপেস্টের নিকটবর্তী একটি এয়ারফিল্ডে অলস পড়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রেইলারের সারি; Image Source: Akos Stiler/Bloomberg২০২০ সালের ৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতের একটি গুদামঘরে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হয়ে, মজুদকৃত প্রায় ২৭০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ২০০ এবং আহত হয় প্রায় ৬০০০; Image Source: Anwar Amro/ theatlantic.comছবিটি তোলা হয়েছিল গেল বছরের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে ক্যামেরার কারসাজিতে ছবিটি তোলা হয়েছে। কোনো ফিল্টার বা নির্দিষ্ট মোডে তোলা ছবিই তো সাধারণত এরকম হয়ে থাকে। তবে ছবিটির মূল কাহিনী সম্পূর্ণ অবাক করার মতো। সেই সময় অস্ট্রেলিয়াতে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল। ছবিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধাটি ন্যান্সি অ্যালেন এবং দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি তার স্বামী ব্রায়ান অ্যালেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আলোকচিত্রী ট্রেসি নিয়ারমি ছবিটি তোলার সময় ন্যান্সিকে বলেন যে অস্ট্রেলিয়া সরকার ঘোষিত নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের দ্রুত চলে যাওয়া উচিত। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল ন্যান্সির অসহায়ত্ব তার নিরুত্তর চেয়ে থাকাতেই সুস্পষ্ট; Image Source: theatlantic.com/Tracey Nearmyমার্চ ১৮, ২০২০। স্যান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্রিট এলাকা থেকে তোলা। স্বাভাবিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই এলাকাটির সার্বক্ষণিক চিত্র হলো ক্যাবল-কারের যাতায়াত। অথচ স্থানীয় সরকার করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধকল্পে লক ডাউন জারি করলে অত্যন্ত ব্যস্ত এই সড়কটি একেবারেই নীরব ও জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে; Image Source: theatlantic.com/Josh Edelsonপৃথিবী বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড গেল বছরের ২৪ মার্চ জার্মানিতে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে জার্মানির কোলনে অবস্থিত ফোর্ডের কারখানার বন্ধ প্রবেশ পথ; Image Source: Wolfram Schroll/Bloombergভেনিসের দারুণ জনপ্রিয় গন্ডোলাগুলো সারি বেঁধে অলস বসে আছে; Image Source: Andrea Merola/Bloomberg যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পদপ্রার্থী জো বাইডেন এবং তার রানিং মেইট ক্যামালা হ্যারিসকে দেখা যাচ্ছে একসাথে। ২০২০ সালের ১২ আগস্ট ডেলওয়ারের উইলমিংটনে অ্যালেক্সিস ডি পন্ট হাই স্কুলে তারা ভাষণ দিতে এলে তখন ছবিটি তোলা হয়; Image Source: theatlantic.com/Carolyn Kaster২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টে রুথকে স্যালুট দিচ্ছে সুপারগার্লের বেশে আবির্ভূত হওয়া এই ছোট্ট মেয়েটি; Image Source: theatlantic.com/Alex Brandon
প্রতি বছরের মতো ঘটনাবহুল ছিল ২০২০ সালও। তবে সহস্রাব্দ প্রজন্মের জন্য বছরটি ছিল এক অবিস্মরণীয় সময়। বিশ্ববাসী দেখেছে আধুনিক গতিময় পৃথিবীর স্থবিরতা। পড়ালেখা, গবেষণা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সবকিছুই থমকে যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হচ্ছিল। কখনও কখনও মৃত্যু সত্যিই কেবল একটা সংখ্যার সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাথমিক শোকের ধাক্কা কাটিয়ে উঠার পর মানুষ যেন কষ্ট পেতেও ভুলে গিয়েছিল। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে করোনা ভাইরাসে কেউ না কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন, কেউ না কেউ ভেন্টিলেটরের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কেউ না কেউ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেউ না কেউ হাসপাতালের খরচ মেটাতে নিঃস্ব হয়ে পথে বসছেন। তবুও মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জীবনের তাগিদে আবার সভ্যতার চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। অধিকাংশ দেশেই করোনা ভাইরাস এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এত নেতিবাচকতার ভিড়েও এটুকু সত্য আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে মানবজাতির ইতিহাসে এত স্বল্প সময়ে কোনো ভ্যাক্সিন তৈরি হয়নি। এক বছরের কম সময়েই বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান গবেষকদের ঐকান্তিক পরিশ্রমে একাধিক ভ্যাক্সিন চলে এসেছে। বর্তমানে ফাইজার, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রস্তুতকৃত ভ্যাক্সিন বাজারে অনুমোদন পেয়েছে। গত বছর আমরা যাদের হারিয়েছি, এই মহামারিতে তাদের প্রতি থাকবে বিনম্র শ্রদ্ধা আর আমাদের সকলকে ভালো রাখতে যে সকল সম্মুখ যোদ্ধারা নিজেদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গেছেন নিরলস, তাদের প্রতি নতজানু অভিবাদন।