‘পানির দামে কেনা’ কিংবা ‘পানির মতো সোজা’- কোনো বিষয়ের সহজলভ্যতার কথা বোঝাতে এই কথাগুলো আমাদের মাঝে বহুল ব্যবহৃত। এমন বাক্য শুনতে অভ্যস্ত আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে পানির সহজলভ্যতার বিষয়ে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকে না। থাকবেই বা কেন, ভূ-পৃষ্ঠের ৭১ ভাগ জুড়ে রয়েছে আদিগন্ত বিস্তৃত সুবিশাল জলরাশি।
এই সহজলভ্য জলই আবার ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠতে পারে অমূল্য রতন। হতে পারে আমরা একটি জল থই থই নীল গ্রহের বাসিন্দা, কিন্তু আমাদের ব্যবহারযোগ্য স্বাদু পানির পরিমাণ খুব সীমিত। কারণ, আমাদের এই নীল গ্রহের মাত্র ৩ ভাগ মিঠা পানি। বাদবাকি লোনা পানি। আবার এই মিঠা পানির দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি রয়েছে সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাকি স্বাদু বা মিঠা পানির তিন-চতুর্থাংশই ভূ-গর্ভস্থ পানি। আর সামান্য কিছু মিঠা পানি রয়েছে ভূ-উপরস্থ বিভিন্ন জলাধারে।
গোটা মানবজাতি এই সুবিশাল জলরাশির মাত্র ১ ভাগেরও কম অংশের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত যেভাবে পানির ব্যবহার, দূষণ ও অপচয় বাড়ছে তাতে এই সীমিত সম্পদ অপ্রতুল সম্পদে পরিণত হচ্ছে। তাই সুপেয় পানি আর সহজলভ্য থাকছে না। দিনকে দিন পানির দাম বাড়ছে। অনেকের মতে, একবিংশ শতাব্দীতেই পানি পেট্রোলিয়ামের চেয়ে দামী হয়ে উঠবে। আমেরিকার বহুমুখী বিনিয়োগকারী ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্স (Goldman Sachs) ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছে,
পানিই হবে আগামী শতাব্দীর পেট্রোলিয়াম।
পানি পেট্রোলিয়ামের চেয়ে দামী হয়ে উঠলে, সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন হয়তো কথাচ্ছলে ‘পানির দামে কেনা’ বলতে দুষ্প্রাপ্যতা বোঝাতে হবে। পানির অধিকার মানে জীবনের অধিকার। আর পানির সংকট মানেই জীবনের সংকট। কিন্তু সেই পানি যদি অচিরেই সর্বসাধারণের নাগালের বাইরে চলে যায়, তবে কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে পানি সংকটের ভয়াবহতা- তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে তার মূল্যবৃদ্ধির একটি সাধারণ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এর অন্যতম একটি কারণ, দ্রব্যের যোগান চাহিদা বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম থাকা। ভবিষ্যতে একই বিষয় পরিলক্ষিত হতে পারে সুপেয় পানির ক্ষেত্রেও।
একদিকে, বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানির ব্যবহার বাড়ছে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে পৃথিবীতে পানযোগ্য পানির উৎস ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। আগামী এক দশকের মধ্যে পানযোগ্য পানির চাহিদা সরবরাহের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে যোগ হবে আরও ২০০ কোটি মানুষ। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে চাহিদা বাড়ছে তাতে আশংকা করা যায়, বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার বিপরীতে মিঠা পানির প্রাপ্তি যথেষ্ট নয়।
শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও সত্যি, এই বিষয় বিবেচনায় রেখে বিশ্বের অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখন থেকেই বিপুল পরিমাণ পানি মজুত করতে শুরু করেছে। তাদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে যখন পানি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ ধারণ করবে, তখন এই বিপুল পরিমাণ পানি অধিক দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যাবে। এতেএকসময়কার সহজলভ্য বিনামূল্যের পানি পরিণত হবে ব্যয়বহুল পণ্যে।
পৃথিবীর সকল দেশে পানির মজুত ও মাথাপিছু পানির পরিমাণ সমান নয়। তাই দেশে দেশে পানির মূল্যের ভিন্নতা থাকাও স্বাভাবিক। মাথাপিছু পানির পরিমাণের ভিত্তিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ দেশ কানাডা, আর সবচেয়ে সংকটে কুয়েত। কানাডাতে কুয়েতের তুলনায় ১০ হাজার গুণ বেশি পানির মজুদ রয়েছে। এ দিক থেকে বিবেচনা করলে, কুয়েতের জনগণের পানি সংকটের সম্মুখীন হওয়ার যতটা শঙ্কা রয়েছে, তা আপাতদৃষ্টে কানাডার নেই। যেহেতু পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সঞ্চিত সুপেয় পানির পরিমাণেই তারতম্য রয়েছে, সেহেতু বলা যায়, অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পানি সংকটের ভিন্ন ভিন্ন নজির মিলবে।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছিল পানির উৎসগুলোকে কেন্দ্র করে। বর্তমানেও পৃথিবীর সিংহভাগ শহরের গোড়াপত্তন ঘটেছে কোনো না কোনো পানির উৎসকে কেন্দ্র করে। স্পষ্টত, পানি জীবনের অস্তিত্বের পাশাপাশি গড়ে তুলেছে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
কিন্তু কালের বিবর্তনে বিশ্বের বাঘা-বাঘা শহরগুলো পানির সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু শহরের তো যথারীতি পানিশূন্য হওয়ার মতো অবস্থা। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের কথাই ধরা যাক। বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম কেপ টাউনেই পানি ফুরিয়ে যাবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে এই শঙ্কা নিদারুণ বাস্তবে রূপ নেবে। এই তালিকায় রয়েছে লন্ডন, ইস্তাম্বুল, মস্কো, জাকার্তা, কায়রো, বেইজিং, ব্যাঙ্গালোর, সাও পাওলোর মতো আরও বহু শহরের নাম। কয়েক বছরের মধ্যে এই শহরগুলোতে পানি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ ধারণ করবে। এতে সংকটের মুখে পড়বে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি।
তাহলে মিঠা পানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণের উপায় কী? সুপেয় পানির ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে অনেকেই আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে, যে কারণে বিগত এক দশকে ডিস্যালাইনেশন প্রক্রিয়া (সমুদ্রের নোনা জলকে লবণমুক্ত করে তোলার প্রক্রিয়া) প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অবস্থা অব্যহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশে দেশে ডিস্যালাইনেশন প্রক্রিয়ার ব্যবহার বহু গুণে বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, কৃষি ও শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহার পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন হয় তার তুলনায় ডিস্যালাইনেশন প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত পানির যোগান যৎসামান্য। এই চাহিদার সাথে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা প্রচলিত কোনো ব্যবস্থাপনার নেই। ফলে ভবিষ্যতে পানির চাহিদা যখন তুঙ্গে থাকবে, তখন সুপেয় পানির জন্য গুনতে হবে চড়া দাম। যার প্রভাব থেকে কোনো দেশের অর্থনীতিই পুরোপুরি মুক্ত নয়। পানির এই অপ্রতুলতা কম-বেশি সবাইকে ভোগাবে। কারণ, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পানির ব্যবহার অপরিহার্য। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়বে বহুগুণ, বাড়বে জনদুর্ভোগ।
আমরা যে ধরনের অর্থনৈতিক মডেল অনুসরণ করছি তাতে শ্রেণী ব্যবধান বাড়ছে। একই বিষয় পরিলক্ষিত হবে ভবিষ্যতে পানি সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রেও। উদাহরণস্বরূপ কুয়েতের কথাই বলা যায়। কুয়েতে প্রাকৃতিক সুপেয় পানির ঘাটতি রয়েছে সত্যি। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ কুয়েত জনগণের পানির চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে ডিস্যালাইনেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তবে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় সকল দেশের পক্ষে অনুসরণ সম্ভব নয়।
সুপেয় পানি প্রাপ্তির অধিকার যেখানে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের মানবাধিকারের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, সেখানে নিরাপদ পানির অধিকার হতে বঞ্চিত বিপুল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান; এদের অধিকাংশই আবার চরম দরিদ্র। পানি ছাড়া যেহেতু জীবনধারণ সম্ভব নয়, এর ফলে বিশ্বের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ দূষিত বা ব্যবহারের অনুপযোগী পানি ব্যবহারে বাধ্য হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর বিশ্বে ৩.৪ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়। যতই দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই খারাপের দিকে এগোচ্ছে।
জলই যখন জনপদের জীবন- তাই যেখানে জল নেই, সেখানে জীবন নেই। এমন উদ্বেগজনক অবস্থায় লোকে এমন সব জনপদের দিকে ছুটবে যেখানে সুপেয় পানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে কিংবা কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে একদিকে, একসময়কার কর্মমুখর নগরগুলো ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে। আর অন্যদিকে, পানির অধিক মজুদ রয়েছে এমন অঞ্চলগুলোতে বাড়তে থাকবে অভিবাসীর সংখ্যা। ফলস্বরূপ, এসব অঞ্চলকে ঘিরে তৈরি হবে নতুন জটলা।
সুপেয় পানির পরিমাণ যেখানে অপ্রতুল, সেখানে পানির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে কলহ খুব বিচিত্র বিষয় নয়। বাসাবাড়ির ভোক্তা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল বনাম শহরাঞ্চল, দেশের অভ্যন্তরের রাজ্য বনাম রাজ্য, কৃষিখাত বনাম শিল্পখাত পর্যন্ত একাধিক পক্ষ তৈরি হয়ে নতুন রূপে শুরু হবে পানি নিয়ে কোন্দল। পানি হয়ে উঠবে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার, যা ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে।
কয়েক বছর আগে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাবেরি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে কর্নাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের বিবাদ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কেনিয়ায় বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের মধ্যে পানি নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। সুদানের দারফুরে গৃহযুদ্ধ শুরুর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল পানি সংকট। ভবিষ্যতে সুপেয় পানির চাহিদা যখন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে, তখন যে এ ধরনের সংকটের প্রভাব ভৌগোলিক সীমারেখা পেরিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে না, এ শঙ্কা ঝেরে ফেলা যায় না।
গত শতাব্দীতে তেল, গ্যাস, পেট্রোলিয়ামসহ অন্যান্য অপ্রতুল সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার তাগিদে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। বলা যায়, একই বিষয় খাটবে পানির বেলাতেও। আর সুপেয় পানির পরিমাণই যেখানে দিনকে দিন কমছে, সেখানে বিশ্বনেতারা এই অপ্রতুল সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় লড়বেন; সেটা তো অবশ্যম্ভাবী! তাই সামনের দিনগুলোতে পানি সম্পদের ভাগাভাগি নিয়েও আন্তর্জাতিক রাজনীতির চক্রাবর্ত সুস্পষ্ট।
বর্তমানে পৃথিবীতে ২৬০টির বেশি আন্তঃসীমান্ত নদী অববাহিকা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব নদ-নদীর কোনো কোনোটি দুই বা ততোধিক দেশের রাজনৈতিক সীমান্ত অতিক্রম করেছে। বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০ ভাগ এই নদ-নদীগুলোর ওপরে নির্ভরশীল। যে কারণে হয়েছে শত শত আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে পানি সম্পদের ওপর চাপ বাড়ছে। এই চাপ মোকাবিলায় নদী অববাহিকায় উজানের দেশসমূহ গড়ে তুলছে বিশালাকার বাঁধ বা ড্যাম।
উজানের দেশসমূহের ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের কারণে ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। যার চরম খেসারত ভাটির প্রাণ ও প্রকৃতিকে দিতে হচ্ছে। এসব নদ-নদীর পানির হিস্যা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে তৈরি হচ্ছে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সম্পর্কের অবনতি, যা দেশগুলোর মধ্যকার ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দেশগুলোর মধ্যে চলমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে শত শত আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি টিকবে কিনা, তা নিয়েও নতুন করে তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা। এর একটি জ্বলজ্বলে উদাহরণ হচ্ছে নীলনদ নিয়ে ইথিওপিয়ার রেনেসাঁ ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প। তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যকার বিবাদের আড়ালেও রয়েছে ইউফ্রেটিস নদীর পানি বন্টনজনিত সমস্যা। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বহু দেশ লড়ে যাচ্ছে পানির জন্য। বিবাদগুলো বারবার আন্তর্জাতিক মহলের নজরে এসেছে।
ভবিষ্যতে এই বর্ধিত পানি চাহিদার বিপরীতে মিঠা পানির অপ্রতুলতা সম্পর্কে কেউ কেউ বলছেন, পানি বিরোধ সমস্যার কোনো একটা মীমাংসা না করতে পারলে পানি নিয়ে বিশ্বযুদ্ধ গড়ানো কোনো বিস্ময়কর বিষয় নয়! শত্রুদেশকে দমিয়ে রাখতে তো কত অস্ত্রই ব্যবহৃত হয়েছে। কত শত কৌশল আর অপকৌশলের মাধ্যমে যে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করা যায়, ইতিহাস তার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। কোনো অপ্রতুল সম্পদকে অস্ত্র বানিয়েও যে শত্রুদেশকে দমিয়ে রাখা যায় তার দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছিল ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে। পেট্রোলিয়াম উৎপাদক ও রফতানিকারী সংস্থা ওপেকের নিষেধাজ্ঞার মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদেশগুলোতে দেখা দিয়েছিল স্মরণকালের সবচেয়ে তীব্র তেল সংকট। অনুরূপ ঝুঁকি পানির বেলায় নেই, তা-ই বা কে বলবে!
পরিবেশের ওপর পানি সংকটের প্রভাবও সুদূরপ্রসারী। পানিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রসমূহের সংঘটিত দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে— ভুক্তভোগী শুধু সাধারণ মানুষই নয়, প্রকৃতিক পরিবেশও এই ক্ষতি বহন করে। ব্যাঘাত ঘটে জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানেও।