মোসাদের প্রয়োগ করা বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবে জর্ডানের একটি হাসপাতালে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্থিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের তৎকালীন রাজনৈতিক প্রধান খালেদ মেশাল। তাকে বাঁচাতে যে প্রতিষেধক দরকার তা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন কেবল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু! কিন্তু তা করে সম্ভব? মেশালকে রাসায়নিক প্রয়োগে হত্যার নির্দেশও যে তারই দেওয়া!
ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নির্দেশে দুনিয়া জুড়ে সুপরিকল্পিত ও নৃশংস গুপ্তহত্যার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ১৯৯৭ সালে প্রচেষ্টা চালায় হামাসের তৎকালীন রাজনৈতিক প্রধান খালেদ মেশালকে হত্যার। যদিও মোসাদ দীর্ঘকাল থেকেই তাদের সম্ভাব্য শত্রুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত গুপ্তহত্যা চালিয়ে আসছে কোনোরকম মানবিকতা, কূটনৈতিক রীতিনীতি, আন্তর্জাতিক আইন কিংবা চুক্তির তোয়াক্কা না করেই। তবে মেশালকে হত্যার এই অভিযানে মোসাদ শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা মোসাদ এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফেলে দেয় ভয়াবহ রকমের ভাবমূর্তি সংকটে। শেষমেষ তাকে বাঁচাতে প্রতিষেধক নিয়ে ছুটে যেতে হয় খোদ মোসাদ প্রধান ড্যানি ইয়াতোমকে! ব্যর্থতার দায় নিয়ে পরে পদও ছাড়তে হয় তাকে।
খালেদ মেশাল ও তাকে হত্যার পরিকল্পনা
খালেদ মেশাল তখন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান। সেসময়টাতে হামাস জেরুজালেম ও ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে বেশ কিছু আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলা চালায়। ইসরাইল এতে ভয়াবহ রকমের ক্রুদ্ধ হয়। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী। তিনি এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলের বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন।
ইসরাইলি সাংবাদিক রনেন বার্গম্যানের মতে, নেতানিয়াহু প্রথমে হামাস নেতা মুসা আবু মারজুককে হত্যার আদেশ দিলে আপত্তি জানায় মোসাদ। মুসা আবু মারজুক আমেরিকার নাগরিক হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মোসাদ খালেদ মেশালকেই বেছে নিতে বলে, কারণ মেশাল সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য তাদের কাছে ছিল। অতঃপর বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মেশালকে নিঃশব্দে হত্যার।
মেশাল তখন থাকতেন জর্ডানের আম্মানে। মেশালকে হত্যার দায়িত্ব পড়ে মোসাদের উপরই। সিদ্ধান্ত হয় আম্মানে গিয়েই তাকে হত্যা করা হবে এবং হত্যার জন্য গুলি, বোমা নয়, বরং ব্যবহার করা হবে বিশেষ ধরনের বিষাক্ত স্প্রে, যাতে হত্যার কোনো ধরনের প্রমাণ না থাকে। কারণ সে সময় জর্ডানের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন বাদশাহ হোসেন এবং তার সাথে ইসরাইলের সুসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ১৯৯৪ সালে জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়, যাতে দুটি দেশই একে অপরের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার বিষয়ে একমত হয়েছিল।
জর্ডানে হত্যাচেষ্টা
পরিকল্পনা মোতাবেক ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি মোসাদের ছ’জন এজেন্ট কানাডার জাল পাসপোর্টে রানী আলিয়া বিমানবন্দর দিয়ে আম্মান পৌঁছায়। আম্মানে খালেদ মেশালের কার্যালয়ের সামনে ১৯৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মেশালকে হত্যার জন্য তার উপর রাসায়নিক প্রয়োগের প্রচেষ্টা চালায় মোসাদ।
হামলার আগে মোসাদের দুজন এজেন্ট মেশালের গাড়িকে অনুসরণ করছিল, আর মেশালের কার্যালয়ের সামনেই দুজন অবস্থান নিয়ে প্রস্তুত ছিল। অনুসরণ করার বিষয়টি যদিও মেশালের দেহরক্ষী ও গাড়িচালক আবু মেহের আগেই টের পেয়েছিলেন, তবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি।
এ বিষয়ে মেশাল আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “যখন শামিয়া স্টিটে পৌঁছলাম তখন দেখলাম আমার অফিসের সামনে দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে যাদের চোখে ছিল কালো সানগ্লাস। আমি বুঝতে পারছিলাম কোনো গোলমাল আছে এখানে, দাঁড়িয়ে থাকা দুজনকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। আবু মেহেরও তাতে একমত হয়।”
এরপর সিদ্ধান্তের দোলাচলের মধ্যেই খালেদ মেশাল গাড়ি থেকে বের হয়ে অফিসের দিকে পা বাড়ান। মেশালের দেহরক্ষী আবু মেহের ছিলেন তার ঠিক পেছনেই। অফিসের গেটের কাছে পৌঁছানো মাত্রই অবস্থানকারী দুজন অকস্মাৎ তাদের উপর হামলা চালায়। তাদের হাতে ছিল ব্যান্ডেজ, যাতে তাদের রাসায়নিক ও তা প্রয়োগের অস্ত্র লুকানো ছিল। মোসাদের পরিকল্পনা ছিল মেশালের গলায় রাসায়নিক ছুড়ে দেওয়া, কিন্তু হামলার ঠিক আগ মুহূর্তেই মেশাল তার ছোট মেয়ের ডাকে ঘাড় ফেরালে মোসাদ সদস্যদের প্রয়োগ করা রাসায়নিক মেশালের কানে পৌঁছায়। আবু মেহের তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তারা দ্রুত সেখানে থেকে সটকে পড়ে। হামলার পরপরই আবু মেহের ও মেশাল তার সন্তানদের নিয়ে সেখান থেকে দূরে সরে যান।
হামলার মুহুর্ত নিয়ে মেশাল বলেন, “আমার শরীরে ইলেকট্রিক শকের মতো অনুভূতি হয় এবং বাম কানে উচ্চশব্দের মতো অনুভূত হয়। আমার সন্দেহ বাস্তবতায় রুপ নেয়। আমি নিশ্চিত হই এটা আমাকে হত্যার প্রচেষ্টা। কিন্তু পরক্ষণেই আমি নিজেকে অক্ষত অবস্থায় আবিস্কার করি এবং কোনো গুলির ঘটনাও ঘটেনি।”
যেভাবে ধরা পড়ে মোসাদ এজেন্টরা
কাকতলীয়ভাবে, ঠিক হামলার সময়টাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন খালেদ মেশালের আরেকজন দেহরক্ষী মুহাম্মদ আবু সাইফ। তিনি যখন গাড়ি পার্কিং করছিলেন তখনই হামলার বিষয়টি তার নজরে আসে। তিনি দ্রুত নেমে এসে হামলাকারীদের ধাওয়া করেন। কিন্তু মোসাদ এজেন্টরা সেখান থেকে সরে পড়তে সমর্থ হয়। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র শত মিটার দূরেই তাদের জন্য আগে থেকে গাড়ি অপেক্ষা করছিল। তারা তাতে উঠে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে।
কিন্তু মুহাম্মদ আবু সাইফ সেখানেই হাল ছাড়েননি। তিনি দ্রুত রাস্তায় চলমান একটি গাড়ি থামিয়ে মোসাদের গাড়িটিকে অনুসরণ করতে অনুরোধ করেন এবং তাদের পেছনে ছুটতে থাকেন।
আম্মানের মদিনা স্ট্রিটের কাছে এসে মোসাদ এজেন্টরা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। কেউ তাদের অনুসরণ করছে সে বিষয়ে তারা ছিল অসতর্ক। হঠাৎই রাস্তা পার হওয়ার সময় আবু সাইফকে দেখতে পেয়ে তার ভড়কে যায় এবং সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। আবু সাইফ তাদেরকে ধাওয়া করে একপর্যায়ে তাদের ধরতে সমর্থ হন, কিন্তু একা থাকায় তাদের দুজনের সাথে পেরে উঠছিলেন না। তারা দুজনে মিলে আবু সাইফকে মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়।
এ সময় রাস্তার পাশে উৎসাহী জনতার ভিড় জমে। তবে কেউ জানত না কী বিষয়ে কিংবা কাদের সাথে সেখানে লড়াই চলছে।কাকতালীয়ভাবে ঠিক এ সময়ই ট্যাক্সিতে করে সে পথে যাচ্ছিলেন ফিলিস্তিনের আরেকটি স্বাধীনতাকামী সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মির অফিসার সাদ আল খতিব। তিনি ভিড় দেখে ট্যাক্সি থেকে নেমে এগিয়ে যান। আবু সাইফ তখন চিৎকার করে সাহায্য চাইছিলেন আর বলছিলেন, “এরা মোসাদ এজেন্ট, খালেদ মেশালকে এরা হত্যা করেছে।”
সাদ আল খতিব তখন সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান। দুজনে মিলে মোসাদ এজেন্টদের ধরাশায়ী করতে সমর্থ হন। তাদেরকে পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হত্যাচেষ্টা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
দুজন এজেন্ট ধরা পড়ার পরই এই ঘটনায় মোসাদের যোগসূত্র ফাঁস হয়ে যায়। হামলার শিকার হওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যেই মেশাল অসুস্থ হয়ে পড়েন ও ধীরে ধীরে কোমায় চলে যান।
এ ঘটনায় বাদশাহ হোসেন বেজায় ক্রুদ্ধ হন। মেজর জেনারেল আলী শুকরি, যিনি বাদশাহ হোসেনের অফিস প্রধান হিসাবে কাজ করতেন, এই ঘটনা সম্পর্কে অাল জাজিরাকে বলেন, “বাদশাহ হোসেন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে ফোন করে জানান এখানে কী ঘটেছে। ক্লিনটন ঘটনা শুনে নিজেও বিস্মিত হন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে এটা ঘটতে পারে। শেষে ক্লিনটন রাগান্বিত হয়ে নেতানিয়াহুকে নিয়ে মন্তব্য করেন “এই লোকটাকে সহ্য করা কঠিন”।”
এরপরই বাদশাহ হোসেন, বিল ক্লিনটন ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে শুরু হয় তৎপরতা। বাদশাহ হোসেন ক্লিনটনের কাছে জর্ডানের দাবি জানিয়ে দেন। প্রথমত, মেশালকে সুস্থ করতে তাকে প্রয়োগ করা রাসায়নিকের প্রতিষেধক প্রদান করতে হবে এবং হামলায় কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ করতে হবে। সেই সাথে জানিয়ে দেন মেশালের মৃত্যু ঘটলে তার সাথে জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তিচুক্তিরও মৃত্যু ঘটবে।
বাদশাহ হোসেনের অফিস থেকে জর্ডানের দাবিগুলো মেনে নিতে রাজি না হলে ইসরাইলের দূতাবাসে অভিযান চালানোরও হুমকি দেওয়া হয়। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তাদের প্রয়োগ করা রাসায়নিকের প্রতিষেধক সরবরাহ করতে রাজি হলেও কী ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে তা প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। শেষমেষ ক্লিনটন হস্তক্ষেপ করেন যাতে এই রাসায়নিকের বিষয়ে জর্ডানকে জানতে দেওয়া হয়।
শেষমেষ ঘটনা এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায় যে, স্বয়ং নেতানিয়াহু ক্ষমাপ্রার্থনা করার জন্য জর্ডানে উড়ে আসেন। কিন্তু বাদশাহ হোসাইন নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ করতেও অস্বীকৃতি জানিয়ে তার ভাই হাসানকে দেখা করতে পাঠান।
মোসাদের প্রতিষেধক ও মেশালের সুস্থ হয়ে ওঠা
মেশালকে জর্ডানের মেডিকেল সিটিতে নেওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা বুঝতে পারছিলেন না তাকে কী ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় তাকে অবসন্ন ও নেশাগ্রস্থের মতো মনে হচ্ছিল। তিনি ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছিলেন না। ডা. সামি রাবাবা, যিনি মেডিকেল সিটিতে অ্যানেসথেসিস্ট হিসেবে ছিলেন, তিনি আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “পরীক্ষার সময় মনে হচ্ছিল তাকে হয়তো কোনো ধরনের চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয়েছে, যা মস্তিষ্কের শ্বাস–প্রশ্বাস কেন্দ্রকে কাজ করতে বাধা প্রদান করছে। তিনি ঘুমিয়ে যেতে চাইছিলেন, কিন্তু আমরা তাকে জাগিয়ে রাখতে চাচ্ছিলাম, কারণ ঘুমের মধ্যে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা ছিল।”
সেখানকার ডাক্তাররা আশংকা করছিলেন, উচ্চমাত্রার নেশাজাতীয় দ্রব্য মেশালের শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে। যখন তার শ্বাসকেন্দ্র আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছিল, তখন ডাক্তাররা তাকে জাগিয়ে না রেখে ঘুমাতে দেন ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করেন। তারা অনুমান করছিলেন, প্রয়োগ করা রাসায়নিকটি মরফিন জাতীয় কিছু হবে। তাই তারা মরফিনের প্রতিষেধকও প্রদান করেন। মেশালের অবস্থার এতে উন্নতি ঘটে।
এর মধ্যেই মোসাদ জর্ডানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের প্রয়োগ করা রাসায়নিকের প্রতিষেধক পৌঁছে দেয়। যদিও শিশির গায়ে লেখা ছিল তা অ্যাড্রেনালিন, কিন্তু ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখতে পান আসলে তা হচ্ছে নারকেন, যা ডাক্তারগণ অনুমানের ভিত্তিতে মেশালকে প্রয়োগ করেছিলেন।
দুদিন পর মেশাল কোমা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। তার উপর প্রয়োগ করা রাসায়নিকটি ছিল ফ্যান্টানিল, যা মরফিনের চেয়ে দু’শগুন বেশি শক্তিশালী।
ইসরাইলকে দিতে হয় চড়া মূল্য
মেশালের উপর হামলার পর বাদশাহ হোসেন ইসরাইলের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে চলে যাওয়ার কারণে এই ঘটনায় ইসরাইলকে বেশ চড়া মূল্য দিতে হয়। মোসাদের হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল হামাসকে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করা ও মেশালকে হত্যা করে ফিলিস্তিনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের উপর দায় চাপানো। কিন্তু এই হামলায় মোসাদের লেজে-গোবরে অবস্থায় তাদের পরিকল্পনা তো ভেস্তে যায়ই, সেই সাথে মোসাদ সম্পর্কে প্রচলিত মিথ ভীষণভাবে ধাক্কা খায়। মেশালও আরব বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
তৎকালীন মোসাদ প্রধান ড্যানি ইয়াতোম এ প্রসঙ্গে বলেন, “অভিযানের আগে আমি প্রার্থনা করছিলাম খালেদ মেশালের মৃত্যু চেয়ে। কিন্তু যখন অপারেশন ব্যর্থ হলো, তখন আমিই আবার প্রার্থনা করছিলাম যে মেশাল যেন কোনমতেই না মারা যায়!”
তবে বাদশাহ হোসেন পশ্চিমাপন্থী ও ইসরাইলের সাথে তার সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি তখন হামাসের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন তা নিয়ে সমালোচকেরা নানারকম বিশ্লেষণ করেন। কারো মতে, তিনি সেসময় ইসরাইলের প্রতি দুর্বলতা দেখালে তার নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার আশংকা ছিল, কারণ জর্ডানে বিশাল সংখ্যক ফিলিস্তিনির বসবাস রয়েছে। আর বাদশাহর ক্ষোভ ছিল, কারণ তিনি মনে করতেন অন্য আরব দেশগুলোর চাইতে তিনি ইসরাইলকে বেশিই দিয়েছেন।
যা-ই হোক, শেষমেষ পাঁচজন মোসাদ এজেন্টের বিনিময়ে ইসরাইল ৬১ জন জর্ডান ও ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে ছিলেন শেখ আহমদ ইয়াসিন, যাকে বলা হয় ইসরাইলের সবচেয়ে ঘৃণিত শত্রু। হামলার পাঁচদিন পর আহমদ ইয়াসিনকে জর্ডানে পৌঁছে দেওয়া হয়। বাদশাহ হোসেন নিজে তাকে হেলিকপ্টার থেকে নামিয়ে নিয়ে আসেন।
আহমদ ইয়াসিন ও আরো বেশ কিছু হামাস নেতার মুক্তির ফলে হামাস নতুন করে উজ্জীবিত হয়। সেই সাথে মেশালও হয়ে ওঠেন নতুন নায়ক। অপরদিকে মোসাদের মুখে পড়ে ব্যর্থতার চুনকালি। তবে বাদশাহ হোসেন এই ঘটনার মাত্র দু’বছর পরই মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর জর্ডান থেকে খালেদ মেশাল ও বেশ কিছু হামাস নেতাকে গ্রেফতার ও পরে বহিষ্কার করা হয়।
এই ঘটনার পরেও মোসাদ খালেদ মেশালকে হত্যা করতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালায়, কিন্তু সফলতার মুখ দেখেনি। নেতানিয়াহু এখন আবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী, আর মেশাল ও তার সংগঠন হামাস এখনো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের লড়াই। কেউ জানে না কোথায় হবে এ লড়াইয়ের শেষ।
ফিচার ইমেজ : আল জাজিরার ছবি থেকে সম্পাদিত
তথ্যসূত্র:
Kill Him Silently- Al Jazeera Documentary