Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পেপসি যখন বিশ্বের ষষ্ঠ শক্তিশালী নৌবাহিনী

ধরুন, গ্রীষ্মকালের দুপুর বেলা প্রচন্ড গরম পড়েছে। আপনি দোকান থেকে একটি ঠান্ডা পেপসির বোতল কিনে ক্যাপটি খুললেন। স্বস্তির একটি শব্দ হলো। ঠান্ডা পেপসি আপনি ঢকঢক করে পান করে নিলেন। খুব সাধারণ একটি ঘটনা, তাই না? কিন্তু এর মধ্যেই যদি আপনাকে জানানো হয়- আপনার হাতে ধরে রাখা সেই পেপসি বিশ্বের ৬ষ্ঠ শক্তিশালী নৌ বাহিনীর মালিক! আপনি সম্ভবত বিষম খাবেন, ভয়ে ভয়ে পেপসির বোতলটির দিকে তাকাবেন। কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হবে। হ্যাঁ, মেনে নেয়া যেত যদি সময়টা ১৯৮৯ সাল হতো। 

কমিউনিজম বনাম ক্যাপিট্যালিজম 

বিশ্বজুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বনাম যুক্তরাষ্ট্রের তথা কমিউনিজম বনাম ক্যাপিটালিজমের একটি স্নায়ুযুদ্ধ সম্পর্কে সকলেই পরিচিত ছিল। দুই দেশ যেন একেবারে দুই ধরনের পৃথিবী। দুটি আলাদা সমাজ ব্যবস্থা, আলাদা ধরনের সংস্কৃতি। এরই মধ্যে আমেরিকা এগিয়ে এসে একটি আলাদা ধরনের কাজ করলো, ১৯৫৯ সালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে আয়োজন করল The All-American Expo। এই প্রদর্শনীর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষদের মার্কিন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। আরো ভালভাবে বলতে গেলে ক্যাপিটালিজমের সুবিধাগুলো দেখানো। আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করতে সে সময় মস্কোতে যান যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ। 

সোভিয়েত ইউনিয়নে পেপসি; Image Source : atlasobscura.com

দ্য কিচেন ডিবেট

বলা হয়ে থাকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকার এই স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা হলো এই কিচেন ডিবেট। প্রদর্শনী সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার কয়েকদিন আগে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ সরেজমিনে পরীক্ষা করতে উপস্থিত হন সেখানে। নিক্সনের সাথে সে সময় উপস্থিত ছিলেন পেপসি কর্মকর্তা ডোনাল্ড কেন্ডেল, যিনি নিক্সনের কাছে অনুরোধ করেছিলেন তিনি যেন ক্রুশ্চেভ আসার পর কোনো একপর্যায়ে পেপসি পান করার আমন্ত্রণ জানান।

কথিত আছে, প্রদর্শনী সফরের প্রায় প্রতিটি সময়েই নিক্সন এবং ক্রুশ্চেভ তর্ক করছিলেন। ক্রুশ্চেভ খেপে গিয়ে নিক্সনকে বলেই বসেন, “তোমরা কমিউনিজমের ভয় ছাড়া এ সম্পর্কে আর কিছুই জানো না।” তর্ক করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠা ক্রুশ্চেভ ঘামতে থাকেন। সে সময় গলা ভেজানোর জন্য তাকে একটি আমেরিকান সোডা ড্রিংক দেয়া হয়। হ্যাঁ, সেটিই ছিলো পেপসি।। ক্রুসেভ পেপসি পান করলেন। মজার ব্যাপার হলো, ওখানের অনেকেই পেপসিকে জুতার আঠার সাথে তুলনা করলেও এক্সিবিশনের পর সবার মুখে মুখে পেপসি কোলার নাম ছিলো।

প্রথমবারের মতো পেপসি পান করছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ; Image Source: redkalinka.com

রুবল নিয়ে গোলমাল

এরপর কেটে গেল অনেক বছর, সময় তখন ১৯৭২। কিচেন ডিবেটের সময় পেপসির বড় কর্মকর্তা ডোনাল্ড কেন্ডেল এখন পেপসির সিইও। নিক্সন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন এবং ক্রুশ্চেভ মারা গিয়েছেন। সব মিলিয়ে তখন অস্থির সময়। তবে ডোনাল্ড কেন্ডেল সোভিয়েত ইউনিয়নে পেপসির একটি অসাধারণ বাজার দেখতে পেয়েছিলেন অনেক আগেই।

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে পেপসি বাজারজাত শুরু করলো। আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। দুই পক্ষেরই একটি ইন্টারন্যাশনাল ভ্যালু কারেন্সি থাকতে হয়। তবে সে সময় রুবলের সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোথাও তেমন কোনো দাম ছিলো না। তাই তারা ঠিক করল পেপসি তারা ঠিকই আমদানি করবে, তবে তার বদলে রুবল নয়, বিনিময় হবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় ভদকা। বিশ্বের সেরা ভদকা তখন সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি হতো। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলো Stolichnaya, যার রেসিপি বানিয়েছিলেন স্বয়ং পর্যায় সারণির জনক দিমিত্রি মেন্ডেলিভ।

সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম পুঁজিবাদী পণ্য হিসেবে পেপসি বেশ নামডাক করলো। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন পেপসির বোতল বিক্রি হচ্ছিলো বলে জানা যায়! অপরদিকে পেপসিকো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে ভদকা বাজারজাত করার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। মার্কিনীরা রাশিয়ান ভদকাকে খুব একটা আপন করে নিতে পারেনি। মুদ্রাস্ফীতি বন্ধের জন্য তখনও সোভিয়েত ইউনিয়নে রুবল ছাড়া অন্য কোনো মুদ্রা চলেও না। ডোনাল্ড কেন্ডেল খুঁজতে শুরু করলেন নতুন পন্থা। পেপসির বদলে আর কী বিনিময় করা যেতে পারে?

পেপসির সিইও ডোনাল্ড কেন্ডেল ভদকা এবং পেপসি হাতে; Image Source: majorium.wordpress.com

শতকের সেরা বিনিময়!

১৯৮৯ সালের গ্রীষ্মের একটি ব্রেকিং নিউজ সবার টনক নাড়িয়ে দিলো। “Pepsi Will Be Bartered for Ships And Vodka in Deal With Soviets”। অর্থাৎ পেপসির বদলে সোভিয়েত ইউনিয়ন পেপসিকো কোম্পানির সাথে ১৭টি ডিজেলচালিত সাবমেরিন, ১টি ড্রেস্টয়ার, ১টি ক্রুজার এবং ১টি ফ্রিগেট বিনিময় করলো, যা রাতারাতি পেপসিকো কোম্পানিকে বানিয়ে দিলো বিশ্বের ৬ষ্ঠ শক্তিশালী নৌ বাহিনীর মালিক! সে সময়ের মিডিয়া এই বিনিময়কে ‘ডিল অফ দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। পরের বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন ১০টি তেলবাহী জাহাজ বিনিময় করে ১ বিলিয়ন পেপসির বদলে। পেপসি তাদের এই নৌবহর বিভিন্ন দেশের কাছে ভাড়া নিয়ে ব্যাপক লাভ করছিলো। তবে সেরকম সুখ বেশি দিন রইলো না।

Image source: dylandubeau.com

সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন, কোকাকোলার মহাকাশ ভ্রমণ

১৯৯১ সালে এসে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলো। পেপসিকে তখন রাশিয়াসহ আরো ১৫টি দেশের সাথে চুক্তি করতে হতো পেপসির সেই জমজমাট বাজার ধরে রাখতে। তবে অনেক দেশেই পেপসির সাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালীন বন্ধুত্বপূর্ণ সেই আচরণটি করলো না। যেমন- পেপসির জন্য জাহাজ বানানো হতো যে অঞ্চলে, সেটি ছিলো ইউক্রেনে এবং প্লাস্টিক আসতো বেলারুশ থেকে। সব মিলিয়ে একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

পেপসির এই দুঃসময়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করলো কোকাকোলা। তারা বেশ শক্তভাবেই তখন রাশিয়ার বাজারে ঢুকতে পেরেছিলো। বিজ্ঞাপন হিসেবে তারা রাশিয়ার স্পেস সেন্টারে কোকাকোলার বিশেষ ক্যান পর্যন্ত পাঠায়। ১৯৯৬ সালের মধ্যে কোকাকোলা রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সোডা হয়ে ওঠে। তবে পেপসি এরপর অনেকদিন ৬ষ্ঠ শক্তিশালী নৌবহরের গৌরব ধরে রাখে। শেষমেশ জাহাজগুলো অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয় তারা।

This is a bengali article discussing the moment in history when Pepsi became the 6th largest naval power in the world. Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image Source: Ja San Miguel

Related Articles