ক্রেমলিন রিডলস (পর্ব–১): ২০২১ সালে রুশ পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে?

ব্রিটিশ রাষ্ট্রনায়ক উইনস্টন চার্চিল রুশ পররাষ্ট্রনীতিকে ‘ধাঁধা’ (riddle) হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। অবশ্য শুধু রাশিয়া কেন, যেকোনো রাষ্ট্রেরই ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, সেটি আন্দাজ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বরাবরই নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, এবং এর ফলে রাষ্ট্রগুলোকে তাদের পূর্বপরিকল্পিত নীতিতে অন্তত আংশিকভাবে হলেও পরিবর্তন আনতে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রগুলো সাধারণত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নিজস্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট সাধারণ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে নেয় এবং সেই মোতাবেক পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়াবলি পরিচালনা করার চেষ্টা করে। অবশ্যই কোনো রাষ্ট্রের সরকার নিকট ভবিষ্যতে তাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, সেটি সরাসরি প্রকাশ করে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে বা হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করে থাকেন।

২০২১ সালের দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়েছে, এবং এই বছরে রুশ পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত, সেটি নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর ‘রুশ আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পরিষদ’-এর মহাপরিচালক আন্দ্রেই কোর্তুনভ এই বিষয়টি নিয়ে ‘Russia’s Foreign Policy in 2021: Fourteen Practical Tasks’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন, এবং এই নিবন্ধটিতে তিনি ২০২১ সালে রুশ পররাষ্ট্রনীতির জন্য তার দৃষ্টিকোণ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি লক্ষ্যবস্তু উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘রুশ আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পরিষদ’ (Russian International Affairs Council/Российский совет по международным делам) রুশ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, এবং ২০১১ সালে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রুশ শিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়, রুশ বিজ্ঞান একাডেমি, রুশ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ইউনিয়ন এবং রুশ তথ্য সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের যৌথ উদ্যোগে এটি গঠিত হয়েছে। স্বভাবতই এই থিঙ্ক ট্যাঙ্কে প্রকাশিত মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়ে থাকে।

(১) ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির মেয়াদ বর্ধিতকরণ

২০০৯ সালে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ (New Strategic Arms Reduction Treaty, ‘New START’) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, এবং এর মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ তাদের বিদ্যমান কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্র লঞ্চারের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সম্মত হয়। এর পাশাপাশি উভয় পক্ষ চুক্তিটির শর্তাবলি মেনে চলছে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য উভয় রাষ্ট্র একে অপরের মাটিতে পরিদর্শক দল প্রেরণের সুযোগ লাভ করে। এটি ছিল বিশ্বের দুই সর্ববৃহৎ পারমাণবিক শক্তির মধ্যে নতুন একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা রোধের জন্য গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে চুক্তিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে।

কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিটি নবায়নের বিরুদ্ধে ছিলেন, এবং এর ফলে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে নতুন একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা আরম্ভ হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে আগ্রহী নয়, কারণ রুশ অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরিবর্তে আর্থ–সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পিছনে অর্থ ব্যয় করতে রুশ সরকার বর্তমানে বেশি আগ্রহী। উল্লেখ্য, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের একটি অন্যতম প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক সঙ্কট, এবং স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে মস্কো যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিল, সেটি ছিল এই অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়ার নানা কারণের মধ্যে একটি।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এবং রুশ রাষ্ট্রপতি দিমিত্রি মেদভেদেভ ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন; Source: Russia Matters

রাশিয়া এই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে ইচ্ছুক নয়, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের যে অংশ রুশবিরোধী, তারা রাশিয়াকে নতুন একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করতে ইচ্ছুক। তাদের ধারণা, এর ফলে রাশিয়া সামরিক ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি করতে বাধ্য হবে এবং স্বভাবতই রাশিয়ার আর্থ–সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। ফলশ্রুতিতে রুশ জনসাধারণ বর্তমান রুশ সরকারের ওপর ক্ষিপ্ত হবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পতন ঘটাবে। রুশ সরকারের জন্য এটি একটি বড় হুমকি, এবং এজন্য আন্দ্রেই কোর্তুনভের মতে, শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত একটি সমঝোতায় পৌঁছানো রাশিয়ার জন্য জরুরি।

কিন্তু নিউ স্টার্ট চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র সপ্তাহ তিনেক বাকি। এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্বের মেয়াদ শেষ হবে, এবং ডেমোক্র‍্যাটিক দলীয় জোসেফ বাইডেন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন। বাইডেন নিউ স্টার্ট চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক, কিন্তু তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর তার প্রশাসন এই চুক্তি নবায়ন সম্পর্কে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য খুব অল্প সময় পাবে। এই পরিস্থিতিতে আদৌ বাইডেন প্রশাসন চুক্তিটি নবায়ন করতে সক্ষম হবে কিনা, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। তদুপরি, ‘কার্নেগি মস্কো সেন্টারে’র পরিচালক দিমিত্রি ত্রেনিনের মতে, সম্ভাব্য বাইডেন প্রশাসন তীব্র রুশবিরোধী এবং নিউ স্টার্ট চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিনিময়ে তারা রাশিয়ার ওপরে নতুন কিছু পূর্বশর্ত আরোপ করতে পারে। সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষের জন্য চুক্তিটির বিষয়ে একমত হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

(২) ইউরোপে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ

২০১৯ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএনএফ চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ‘আইএনএফ চুক্তি’ (Intermediate-range Nuclear Forces Treaty, ‘INF Treaty’) ১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়, এবং চুক্তি অনুযায়ী উভয়পক্ষ ৫০০-৫,৫০০ কি.মি. পাল্লাবিশিষ্ট ভূমিভিত্তিক সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সম্মত হয়। এর পাশাপাশি ইউরোপের ভূমিতে অনুরূপ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও উভয় পক্ষ একমত হয়। কিন্তু রাশিয়া এই চুক্তির মেয়াদ লঙ্ঘন করছে এবং চীন এই চুক্তি দ্বারা আবদ্ধ না হওয়ার সুযোগে তাদের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করছে, এই অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

মার্কিন–নির্মিত ‘ঈজিস অ্যাশোর’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন নিয়ে রাশিয়া উদ্বিগ্ন; Source: Missile Threat

এর ফলে ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে নতুন করে একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়ে গেছে। কিন্তু ইতিপূর্বে যেরকম বলা হয়েছে, নতুন একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা রাশিয়ার জন্য মোটেই লাভজনক নয়, বরং মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর। সুতরাং আন্দ্রেই কোর্তুনভের মতে, ২০২১ সালে রুশ পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত ইউরোপে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো। একই সঙ্গে রুশ–নির্মিত ‘৯এম৭২৯’ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং মার্কিন–নির্মিত ‘ঈজিস অ্যাশোর’ ভূমিভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ‘মার্ক–১৯’ ভার্টিকাল লঞ্চিং সিস্টেমের ব্যাপারে রাশিয়ার যে উদ্বেগ রয়েছে, সেটি দূর করার জন্যও উভয় পক্ষের সক্রিয় হওয়া উচিত বলে কোর্তুনভ মনে করেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যেসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১,০০০ কি.মি.–এর চেয়ে কম, সেগুলোকে স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বলা হয়, এবং যেসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১,০০০-৩,০০০ কি.মি.–এর মধ্যে, সেগুলোকে মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বলা হয়। রুশ–নির্মিত ‘৯এম৭২৯’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৪৮০-৫,৫০০ কি.মি.–এর মধ্যে, এবং রুশরা এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘৯কে৭২০ ইস্কান্দার’ গতিশীল স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। রাশিয়া এটি তাদের মধ্য ইউরোপীয় ভূখণ্ড কালিনিনগ্রাদে মোতায়েন করেছে, এবং এই ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, ‘ঈজিস অ্যাশোর’ হচ্ছে মার্কিন–নির্মিত ‘ঈজিস’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভূমিভিত্তিক সংস্করণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যবস্থাটি মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে মোতায়েন করেছে, এবং এটি নিয়ে রাশিয়া উদ্বিগ্ন।

কিন্তু বিশ্লেষকদের ধারণা, বাইডেন প্রশাসন কঠোর রুশবিরোধী নীতি গ্রহণ করবে, এবং রাশিয়ার ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে ২০২১ সালে রাশিয়া আদৌ এই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে কিনা, সেটি নিশ্চিত নয়।

(৩) ‘পি৫’ সামিট আয়োজন

২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব হলোকাস্ট ফোরামে বক্তব্য প্রদানকালে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন প্রস্তাব করেন, ২০২০ সালে ‘পি৫’ রাষ্ট্রগুলোর একটি সামিট আয়োজন করা উচিত। কিন্তু বিগত বছরে অনুরূপ কোনো সামিট আয়োজিত হয়নি। আন্দ্রেই কোর্তুনভের মতে, ২০২১ সালে রুশ পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম একটি লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত একটি ‘পি৫’ সামিটের আয়োজন করা। উল্লেখ্য, ‘পি৫’ (Permanent Five, ‘P5’) বলতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বোঝানো হয়, এবং এই রাষ্ট্রগুলো নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত যেকোনো প্রস্তাবকে বাতিল করে দিতে পারে। রাষ্ট্রগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন এবং রাশিয়া।

মানচিত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র এবং যেসব জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তারা অংশগ্রহণ করছে; Source: StepMap

বস্তুত ১৯৯৮ সালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভগেনি প্রিমাকভের সময় থেকে রুশ পররাষ্ট্রনীতির একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন–কর্তৃত্বাধীন একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থাকে একটি বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে একটি হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করে, কারণ এই প্লাটফর্মে স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মর্যাদা সমান এবং এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের সুযোগ নেই। অবশ্য রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার সাধনের পক্ষপাতী, কিন্তু এরপরেও রাশিয়া সংস্থাটিকে নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচনা করে।

আন্দ্রেই কোর্তুনভের মতে, ২০২১ সালে একটি পি৫ সামিটের মাধ্যমে বৃহৎ পঞ্চশক্তি বৈশ্বিক কৌশলগত স্থিতিশীলতা এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সঙ্কটের বিষয়ে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিগত বছরে ফ্রান্স ও চীন অনুরূপ একটি সামিটের ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সুতরাং বর্তমান বছরে এই সামিট আয়োজন করা সম্ভব হবে কিনা, কিংবা হলেও সেটি কতটুকু সাফল্য অর্জন করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে।

(৪) ‘ন্যাটো–রাশিয়া পরিষদে’র সামরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন

২০১৪ সালে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল এবং পূর্ব ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রুশপন্থী মিলিশিয়াদের প্রতি রুশ সহায়তার প্রেক্ষাপটে ন্যাটো–রাশিয়া পরিষদের সামরিক সংক্রান্ত কার্যক্রম ন্যাটোর পক্ষ থেকে স্থগিত রাখা হয়। উল্লেখ্য, ‘ন্যাটো–রাশিয়া পরিষদ’ (NATO-Russia Council) হচ্ছে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন ইউরো–আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটো ও রাশিয়ার সমন্বয়ে গঠিত একটি সংস্থা। ২০০২ সালে এই সংস্থাটি গঠিত হয়, এবং সংস্থাটির মাধ্যমে ন্যাটো ও রাশিয়া বিভিন্ন নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করে থাকে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবাদ, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার, শান্তিরক্ষা, ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা, আকাশসীমা ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন বেসামরিক জরুরি পরিস্থিতি এবং শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা।

২০০৮ সালে রুমানিয়ার বুখারেস্টে ন্যাটো–রাশিয়া পরিষদের একটি বৈঠক; Source: Wikimedia Commons

২০১৪ সালের পর থেকে সংস্থাটির সামরিক সংক্রান্ত কার্যক্রম ন্যাটোর পক্ষ থেকে স্থগিত করা হয়েছে, এবং এরপর থেকে প্রতি বছর গড়ে দুই/তিন বারের বেশি উভয় পক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এর ফলে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতামূলক কার্যক্রম হ্রাস পেয়েছে, এবং ভ্রান্তিবশত উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সংস্থাটির সামরিক সংক্রান্ত সহযোগিতামূলক কার্যক্রম পুনরায় আরম্ভ করা উভয় পক্ষের জন্য প্রয়োজনীয়।

কিন্তু যে কারণে ন্যাটো সংস্থাটির সামরিক সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল, সেটি দূর হয়নি। রাশিয়া ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের কাছে প্রত্যর্পণ করেনি, কিংবা পূর্ব ইউক্রেনীয় মিলিশিয়াদের সহায়তা প্রদানও বন্ধ করেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুটির কোনো একটি করার ইচ্ছে রুশ সরকারের আছে বলেও মনে হচ্ছে না। অন্যদিকে, ন্যাটো কার্যত একটি রুশবিরোধী সামরিক সংস্থা, এবং ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলোও (বিস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এই কার্যক্রম পুনরায় চালু কর‍তে বিশেষ আগ্রহী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এজন্য ২০২১ সালে রাশিয়ার পক্ষে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা, সেটি অনিশ্চিত।

(৫) ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘গ্রিন ডিলে’ রুশ অংশগ্রহণ

২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী বিভাগ ইউরোপীয় কমিশন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, এবং এটি ‘ইউরোপীয় গ্রিন ডিল’ (European Green Deal) হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সম্পূর্ণ ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ একটি অঞ্চলে পরিণত করা। উল্লেখ্য, ‘কার্বন নিরপেক্ষতা’ (Carbon Neutrality) বলতে বোঝায় কোনো অঞ্চলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। আন্দ্রেই কোর্তুনভের মতে, ২০২১ সালে রাশিয়ার উচিত ইউরোপীয় গ্রিন ডিলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

সাম্প্রতিক সময়ে রুশ তরুণ–তরুণীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে; Source: Fridays for Future Russia/Twitter via The Moscow Times

বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সহযোগিতার অবকাশ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, কিন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এজন্য কোর্তুনভ মন্তব্য করেছেন, জ্বালানি সংরক্ষণ, বিকল্প জ্বালানি সংক্রান্ত গবেষণা, বর্জ্য পরিশোধন প্রভৃতি বিষয়ে রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে।

অবশ্য রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় একটি অংশ হচ্ছে হাইড্রোকার্বন (প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল) রপ্তানি। ২০২০ সালে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ার জাতীয় আয়ের প্রায় ৩০% আসে অনবায়নযোগ্য জ্বালানি রপ্তানির মাধ্যমে। এজন্য রাশিয়ার পক্ষে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্য স্থির করা এই মুহূর্তে কতটুকু বাস্তবসম্মত, সেটি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যেই রাশিয়ায় দেখা যাচ্ছে, এবং এটি রাশিয়ার জন্য স্বল্পমেয়াদী লাভ এনে দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে রাশিয়ার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় গ্রিন ডিলে অংশগ্রহণ রাশিয়ার জন্য লাভজনক হতে পারে।

(৬) বেলারুশে নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক পরিবর্তন নিশ্চিতকরণ

২০২০ সালের আগস্টে রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র বেলারুশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এবং বেলারুশীয় সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৯৪ সাল থেকে ক্ষমতাসীন বেলারুশীয় রাষ্ট্রপতি আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কো এই নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী সভেৎলানা তিখোনভস্কায়া এই ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বেলারুশে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে তীব্র আন্দোলন দেখা দিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্র পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়া, তিখোনভস্কায়ার পক্ষ অবলম্বন করেছে, এবং বেলারুশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে। এমতাবস্থায় লুকাশেঙ্কো সহায়তার জন্য রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

রুশ ও বেলারুশীয় উভয় জাতিই পূর্ব স্লাভ ভাষাগোষ্ঠীর অংশ, এবং রুশ সাম্রাজ্যের আমলে উভয় জাতিকে একই জাতি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বেলারুশীয় জাতিকে একটি স্বতন্ত্র জাতিতে পরিণত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও বেলারুশকে রাশিয়া ‘রুশ বিশ্বে’র অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। বেলারুশ রুশ–নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা’, অর্থনৈতিক জোট ‘ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন’ এবং কনফেডারেশন ‘ইউনিয়ন রাষ্ট্রে’র সদস্য। অবশ্য লুকাশেঙ্কো প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে মস্কোর সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন, এজন্য মস্কো যে তাকে খুব সুনজরে দেখে এমন নয়। কিন্তু রুশ সীমান্তের দোরগোড়ায় আরেকটি পশ্চিমাপন্থী রাষ্ট্র (এবং প্রচ্ছন্ন ন্যাটো সদস্য) রাশিয়ার কাম্য নয়, এজন্য রাশিয়া লুকাশেঙ্কোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার সোচিতে বেলারুশীয় রাষ্ট্রপতি আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কো ও রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়; Source: Kremlin Handout/EPA vis The Conversation

বেলারুশে চলমান সঙ্কট মোকাবেলার জন্য রাশিয়া বেলারুশীয় সরকারকে বিরাট অঙ্কের একটি ঋণ প্রদান করেছে, এবং বিক্ষোভ দমনের ক্ষেত্রে বেলারুশীয় সরকারকে সহায়তা করার জন্য রাশিয়া বেলারুশে একদল নিরাপত্তারক্ষী প্রেরণের প্রস্তুতিও নিয়েছিল, কিন্তু বেলারুশীয় সরকারকে তুলনামূলক স্থিতিশীল বলে মনে হওয়ায় মস্কো এই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন করেনি। অবশ্য পরবর্তীতে লুকাশেঙ্কো জানিয়েছেন যে, তিনি বেলারুশের জন্য নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করবেন, এবং এরপর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। অর্থাৎ, লুকাশেঙ্কো বেলারুশে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন চান না, বরং তিনি চান একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবর্তন।

আন্দ্রেই কোর্তুনভের মতে, ২০২১ সালে রাশিয়ার উচিত হবে বেলারুশের ক্ষমতার পরিবর্তন যাতে নিয়ন্ত্রিত থাকে, সেটি নিশ্চিত করা। অর্থাৎ, মস্কোর উচিত মিনস্কে এমন কাউকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা, যে বর্তমানে বিদ্যমান রুশ–বেলারুশীয় মৈত্রী বজায় রাখবে এবং রুশবিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। অবশ্য এখন পর্যন্ত বেলারুশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অবসান ঘটেনি, এবং শেষ পর্যন্ত বেলারুশে ক্ষমতার ‘নিয়ন্ত্রিত পরিবর্তন’ ঘটবে কিনা, সেটি দেখার বিষয়।

(৭) দনবাসে নতুন সংঘাত রোধ

২০১৩–১৪ সালে রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনে পশ্চিমা–সমর্থিত ইউরোমাইদান বিপ্লবের ফলে ইউক্রেনের নির্বাচিত রুশপন্থী রাষ্ট্রপতি ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন, এবং একটি উগ্র পশ্চিমাপন্থী ও রুশবিরোধী সরকার ইউক্রেনের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। প্রত্যুত্তরে রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়, এবং পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে রুশপন্থীরা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী দনেৎস্ক’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্ক’ নামক দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে। তারা রুশ সমর্থনপুষ্ট হয়ে ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনীকে পরাজিত ও বিতাড়িত করে, এবং অঞ্চলদ্বয় কার্যত স্বাধীন হয়ে পড়ে। এই সঙ্কট নিরসনের জন্য রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ‘মিনস্ক–১’ ও ‘মিনস্ক–২’ নামক দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, কিন্তু ইউক্রেনীয় সঙ্কটের কোনো সুরাহা হয়নি। বর্তমানে ইউক্রেন এবং দনেৎস্ক ও লুহানস্কের মধ্যে একটি অস্থিতিশীল যুদ্ধবিরতি বিরাজ করছে।

দনবাসে রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিদ্যমান সেটি বজায় রাখা। যতদিন এই সমস্যা বিদ্যমান থাকবে, ততদিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোর পক্ষে ইউক্রেনকে নিজেদের অঙ্গীভূত করে নেয়া সম্ভব হবে না, কারণ সেক্ষেত্রে তাদেরকে ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। এমতাবস্থায় পশ্চিমা বিশ্বের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউক্রেন যাতে নিজস্ব সামরিক শক্তিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রজাতন্ত্র দুটিকে পুনর্দখল করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। সেক্ষেত্রে তাদেরকে ইউক্রেনের হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করতে হবে না।

২০১৮ সালের আগস্টে ইউক্রেনের কিয়েভে অনুষ্ঠিত একটি সামরিক প্যারেডে একজন ইউক্রেনীয় সৈন্য একটি মার্কিন–নির্মিত ‘জ্যাভেলিন’ ট্যাঙ্ক–বিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্র বহন করছে; Source: Stepan Franko/EPA-EFE vis Radio Free Europe/Radio Liberty

দনবাসে নতুন করে একটি যুদ্ধ শুরু হলে রাশিয়াকে দনেৎস্ক ও লুহানস্ককে সহায়তা করতে হবে, এবং তাদেরকে রক্ষার জন্য সরাসরি রুশ সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে (যার ফলে রাশিয়াকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে)। কারণ, ইউক্রেনীয় আক্রমণের ক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্র দুইটিকে সহায়তা না করলে একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে রাশিয়ার মর্যাদা লোপ পাবে এবং রুশ জনসাধারণের মধ্যেও তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। এর মধ্যে কোনোটিই রাশিয়ার কাম্য নয়, এবং এজন্য আন্দ্রেই কোর্তুনভের মতে, ২০২১ সালে দনবাসে নতুন কোনো সংঘাত রোধ করা রুশ পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম লক্ষ্যবস্তু।

অবশ্য ইউক্রেনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সরকার দনবাস সমস্যার সমাধান, কোভিড–১৯ মহামারী মোকাবেলা এবং ইউক্রেনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং জনসমর্থন ধরে রাখার জন্য তিনি দনবাসে নতুন একটি যুদ্ধ শুরু করতে পারেন। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নানাবিধ ভারী অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করছে, এবং সাম্প্রতিক নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধে তুর্কি–নির্মিত ড্রোনের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ইউক্রেন তুর্কি ড্রোন ক্রয় ও সামগ্রিকভাবে তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে। এগুলোকে অনেকেই ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে নতুন একটি যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন। এমতাবস্থায় রুশরা দনবাসে নতুন যুদ্ধের বিস্তার রোধ করতে পারবে কিনা, সেটি সংশয়ের বিষয়।

[আন্দ্রেই কোর্তুনভ ২০২১ সালে রুশ পররাষ্ট্রনীতির যে ১৪টি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুর কথা উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে ৭টি নিয়ে এই নিবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৭টি লক্ষ্যবস্তু নিয়ে পরবর্তী নিবন্ধে আলোচনা করা হবে]

This is a Bengali article about the possible direction of Russian foreign policy in 2021. This article is primarily based on an English-language article titled 'Russia's Foreign Policy in 2021: Fourteen Practical Tasks", written by Andrey Kortunov, the Director General of the Russian International Affairs Council.

Sources:
1. Andrey Kortunov. "Russia's Foreign Policy in 2021: Fourteen Practical Tasks." Russian International Affairs Council, December 21, 2020.

2. Dmitri Trenin. "Joe Biden's Foreign Policy and Russia." Carnegie Moscow Center, November 19, 2020.

Source of the featured image: Anti-Empire

Related Articles

Exit mobile version