“হয়ে গেছে? এর মধ্যেই? কিন্তু আমার বই তো এখনো শেষই হয়নি!”
কথাগুলো চোখভর্তি বিস্ময় নিয়ে বলেছিলেন বিয়াট্রিজ গুহা থেকে বেরোনোর পরই। কিছু তো একটা গোলমাল হচ্ছে। এতগুলো সময় কখন পার হয়ে গেল বুঝে উঠতেই পারেননি তিনি!
বলছিলাম ৪৮ বছর বয়সী স্পেনের বাসিন্দা পর্বতারোহী বিয়াট্রিজ ফ্লামিনির কথা। হঠাৎ একদিন ইচ্ছে হলো তার গুহাবাসী হওয়ার। খুঁজে বের করা হলো গ্রানাডার মাটির ২৩০ ফুট নিচের একটি গুহা। বই, আঁকাআঁকির জিনিসপ্ত্র, দুটো গোপ্রো ক্যামেরা- সবকিছু নিয়ে গুহায় যাওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত তখন বিয়াট্রিজ। গুহায় রাখা হলো প্যানিক বাটন। কে জানে, যদি আর ভালো না লাগে বিয়াট্রিজের সেখানে থাকতে!
কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। সময় যেন থেমে গিয়েছিল বিয়াট্রিজের জন্য। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে গুহায় প্রবেশের পর ২০২৩ সালের এপ্রিলে সেখান থেকে অবশেষে বের হন তিনি। বেরিয়েই অবশ্য গোসল করার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা বাদ দিলে বাইরে আসার ইচ্ছা? সেটা একেবারেই ছিল না বিয়াট্রিজের।
“সত্যি বলতে আমি বের হতেই চাইনি।” বলেন বিয়াট্রিজ। আর চাইবেনই বা কেন? গুহায় একা একা বই পড়ে, ছবি এঁকে নিজের মতো করে দারুণ সময় কাটিয়েছেন এই নারী। সব মিলিয়ে ১৬০-১৭০ দিন থেকেছেন গুহায়- এমনটাই মনে হয়েছে তার। যদিও দিনের সংখ্যাটা ছিলো ৫০০!
আদতে দুই মাস হিসেবে রাখার পর আর হিসেব করতেও চাননি তিনি। যাক না, ভালোই তো দিন যাচ্ছে! এমনকি ৪৮ বছরের বিয়াট্রিজের বয়স এখন ৫০ হলেও তিনি মানসিকভাবে ২০২১ সালের ওই নভেম্বর মাসেই পড়ে আছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন গোলযোগ, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর কিছুই জানা নেই বিয়াট্রিজের। অনেকটা যেন টাইম ক্যাপসুলের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন বিয়াট্রিজ।
পুরোটা সময় তার সাথে ছিলো ইউনিভার্সিটি অব আলমেরিয়ার বিজ্ঞানীদের যোগাযোগ করার খুব সামান্য একটি উপায়। সেটাও ব্যবহার হয়েছে একেবারেই কম। প্রতিদিন বিয়াট্রিজের খাবার আর মলমূত্রের ব্যাপারটা গুহার নির্দিষ্ট অংশে দিয়ে ও নিয়ে যাওয়ার জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। তবে বিয়াট্রিজ নিজেই খুব করে মানা করে দিয়েছিলেন সবাইকে যেন কোনো কারণেই তার সাথে বাইরে থেকে যোগাযোগ করা না হয়। এমনকি পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলেও!
বর্তমানে বিয়াট্রিজের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা। বিয়াট্রিজেরও কোনো সমস্যা নেই এতে। ‘টাইমকেভ’ নামের এমন এক্সপেরিমেন্টে গিয়ে দারুণ খুশি এই নারী। জীবনে এমন একটা কিছু করার স্বপ্ন ছিল বিয়াট্রিজের সবসময়। আর সেটাই করেছেন তিনি। তবে হ্যাঁ, শুধু স্বপ্ন পূরণই হয়নি, গুহায় বসে এই ৫০৯ দিনে ৬০টি বইও পড়ে শেষ করে ফেলেছেন বিয়াট্রিজ!