দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইক এবং রুশ–তুর্কি সম্পর্কে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইউক্রেন কর্তৃক দনেৎস্কের ওপর আক্রমণ পরিচালনার জন্য তুর্কি–নির্মিত ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ কমব্যাট ড্রোনের ব্যবহার রুশ–ইউক্রেনীয় সম্পর্কে নতুন করে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পাশাপাশি রুশ–তুর্কি সম্পর্কেও নতুন করে একটি সূক্ষ্ম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালে ইদলিব, পশ্চিম লিবিয়া ও আর্তসাখে তুর্কি–নির্মিত ড্রোন রুশ ‘প্রক্সি’দের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে, এবং রাশিয়া দনবাসে অনুরূপ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি দেখতে আগ্রহী নয়। উল্লিখিত রুশ প্রক্সিগুলোর (সিরিয়া, ‘লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’/’এলএনএ’, আর্মেনিয়া ও আর্তসাখ) মতো দনবাসে অবস্থিত রুশ–সমর্থিত দনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্রবাহিনীদ্বয়ও প্রধানত অপেক্ষাকৃত পুরনো সোভিয়েত–নির্মিত সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে, এবং এই ধরনের সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংসের ক্ষেত্রে তুর্কি–নির্মিত ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ কমব্যাট ড্রোন বিশেষ পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। এমতাবস্থায় এই সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে যে, ইউক্রেন তুর্কি–নির্মিত কমব্যাট ড্রোন ব্যবহার করে দনেৎস্ক ও লুহানস্ককে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি করতে পারে।
রাশিয়া বরাবরই বিভিন্ন বহিঃশক্তি কর্তৃক ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র সরবরাহের বিরোধিতা করে এসেছে এবং ইতিপূর্বে তারা তুরস্ক কর্তৃক ইউক্রেনের কাছে ড্রোন বিক্রির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির তুরস্ক সফরের সময় জেলেনস্কি ও তুর্কি রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানের মধ্যে ইউক্রেনের নিকট তুর্কি সমরাস্ত্র বিক্রি সংক্রান্ত আলোচনা হয়, এবং এরদোয়ান মন্তব্য করেন যে, তুরস্ক কখনো রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া দখলকে স্বীকৃতি প্রদান করবে না। এই বিষয়টি রুশ সরকারকে ক্ষুব্ধ করে।
এর দুই দিন পর ১২ এপ্রিল রাশিয়া তুরস্ক ও তাঞ্জানিয়ার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। রুশ সরকারের ভাষ্যমতে, তুরস্ক ও তাঞ্জানিয়ায় কোভিড–১৯ মহামারী পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং এর সঙ্গে তুর্কি–ইউক্রেনীয় সম্পর্কের কোনো সংশ্রব ছিল না। কিন্তু বিশ্লেষকরা এটিকে ইউক্রেনের প্রতি তুর্কি সমর্থনের কারণে তুরস্কের প্রতি রাশিয়ার ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, কারণ তুরস্কের সঙ্গে বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বিপুল সংখ্যক রুশ পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণে যেতে পারেনি। এর ফলে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত চলমান এই পরোক্ষ রুশ ‘অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা’র ফলে তুর্কি অর্থনীতি অন্তত ২০০ কোটি (বা ২ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
২৬ অক্টোবর ইউক্রেন কর্তৃক তুর্কি–নির্মিত কমব্যাট ড্রোনের সাহায্যে দনেৎস্কের ওপর আক্রমণ পরিচালনার পর রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে নতুন করে অনুরূপ দ্বন্দ্ব সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়। রুশ রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তুরস্ক কর্তৃক ইউক্রেনের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রির সমালোচনা করেন। এসময় রুশ রাষ্ট্রীয় ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘রোসপোত্রেবনাদজর’ তুরস্ক থেকে ট্যাঞ্জেরিন বা ছোট কমলালেবু আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাদের ভাষ্যমতে, তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত ট্যাঞ্জেরিনে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্লেষকরা ধারণা করতে শুরু করেন যে, ইউক্রেন তুর্কি–নির্মিত কমব্যাট ড্রোন ব্যবহার করে দনেৎস্কের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করায় তুরস্কের ওপর ‘প্রতিশোধ’ নিতে রাশিয়া তুরস্ক থেকে ট্যাঞ্জেরিন আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
কিন্তু মস্কোভিত্তিক তুর্কি রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং রাশিয়া, ইউরেশিয়া ও রুশ–তুর্কি সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কেরিম হাসের ভাষ্যমতে, রাশিয়া কর্তৃক তুরস্ক থেকে ট্যাঞ্জেরিন আমদানি স্থগিত রাখার বিষয়টিকে ইউক্রেনীয় ইস্যুর সঙ্গে যুক্ত করা যৌক্তিক নয়, কারণ রাশিয়া তুরস্ক থেকে ট্যাঞ্জেরিন আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়নি। তারা কেবল তুরস্কের মেরসিনভিত্তিক একটি কোম্পানির কাছ থেকে ট্যাঞ্জেরিন আমদানি বন্ধ করেছে, কিন্তু অন্যান্য তুর্কি কোম্পানির কাছ থেকে ট্যাঞ্জেরিন আমদানি অব্যাহত রেখেছে। এজন্য হাসের মতে, রাশিয়া মাঝে মাঝে রাজনৈতিক কারণে তুরস্ক থেকে ফলমূল ও শাকসবজি আমদানির স্থগিত রাখে, কিন্তু সম্প্রতি তারা যে তুর্কি ট্যাঞ্জেরিন আমদানি অংশত স্থগিত রেখেছে, এটির পিছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্ক দনেৎস্কের ওপর পরিচালিত ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। ৩০ অক্টোবর ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত ‘জি–২০’ সামিটে অংশগ্রহণের ফাঁকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোলুর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চাভুসোলু মন্তব্য করেন যে, সম্প্রতি দনবাসে ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ড্রোনগুলো তুরস্কে নির্মিত হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু সেগুলোকে ইউক্রেনের কাছে বিক্রি করার পর সেগুলো কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেজন্য তুরস্ককে দায়ী করা যায় না। তার ভাষ্যমতে, এই অস্ত্রগুলো রপ্তানির পর এগুলোকে আর ‘তুর্কি অস্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করা যায় না, কারণ এগুলো তুরস্কে উৎপাদিত হলেও এগুলোর মালিকানা ইউক্রেনের।
চাভুসোলু আরো যোগ করেন, তুর্কি সশস্ত্রবাহিনী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় (অর্থাৎ তুর্কি কুর্দি মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘পিকেকে’ ও সিরীয় কুর্দি মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘ওয়াইপিজি’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়) বিভিন্ন রাষ্ট্রে নির্মিত অস্ত্রের মোকাবিলা করে, যেগুলোর মধ্যে রাশিয়ার তৈরি অস্ত্রও রয়েছে, কিন্তু তুরস্ক কখনো সেজন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করেনি। তার মতে, ইউক্রেনের উচিত তুরস্কের নাম ব্যবহার বন্ধ করা। উল্লেখ্য, দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণের পর ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা কর্তৃক লিখিত একটি নিবন্ধ মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘আটলান্টিক কাউন্সিলে’ প্রকাশিত হয়েছে এবং কুলেবা উক্ত নিবন্ধে তুরস্ক ও ইউক্রেনের সমন্বয়ে একটি রুশবিরোধী জোট গঠনের প্রস্তাব করেছেন। চাভুসোলুর মন্তব্যের ভিত্তিতে ধারণা করা যায় যে, তুরস্ক এই ধরনের আলোচনা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে আগ্রহী, কারণ রাশিয়ার সঙ্গে তাদের বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা এই সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
অবশ্য দনবাসে পরিচালিত ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণের ব্যাপারে প্রকাশ্যে তুরস্কের অবস্থান সতর্ক হলেও পর্দার অন্তরালে তাদের অবস্থান এরকম নাও হতে পারে। তুর্কি বিশ্লেষক কেরিম হাসের ভাষ্য অনুযায়ী, দনবাসে প্রথম বারের মতো তুর্কি–নির্মিত কমব্যাট ড্রোন ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে তুরস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে দর কষাকষির জন্য ইউক্রেন ইস্যুকে ব্যবহার করতে পারে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি উত্তর সিরিয়ায় মোতায়েনকৃত তুর্কি সৈন্যদের ওপর সিরীয় কুর্দি মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘ওয়াইপিজি’ কর্তৃক পরিচালিত আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর প্রত্যুত্তরে ও তুরস্কের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে তুর্কি জনসাধারণের মনোযোগ দূরে সরিয়ে রাখতে তুরস্ক উত্তর সিরিয়ায় নতুন করে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে আগ্রহী।
রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘আরআইএ নভোস্তি’র প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, তুরস্ক সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের উত্তর–পশ্চিমে তুর্কি–নিয়ন্ত্রিত মিলিট্যান্টদের সমর্থনে এবং উত্তর–পূর্ব সিরিয়ায় মার্কিন–সমর্থিত ‘ওয়াইপিজি’র বিরুদ্ধে দুইটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে ইচ্ছুক। কিন্তু এই অভিযান পরিচালনার জন্য তুর্কি সরকারের যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অনুমোদন প্রয়োজন, কারণ তাদের অনুমোদন ছাড়া উক্ত অঞ্চলগুলোতে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে তুর্কি সৈন্যদের সেখানে মোতায়েনকৃত রুশ ও মার্কিন সৈন্যদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেরিম হাসের মতে, দনবাসে বিদ্যমান সংঘাত উস্কে দেয়ার মাধ্যমে এবং এই দ্বন্দ্বে ইউক্রেনকে সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদেরকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন মিত্র ইউক্রেনের ‘সহযোগী’ হিসেবে উপস্থাপন করবে এবং বিনিময়ে উত্তর–পূর্ব সিরিয়ায় অভিযান পরিচালনার জন্য মার্কিন অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করবে। অনুরূপভাবে, তুরস্ক দনবাসের সংঘাত উস্কে দিয়ে রাশিয়াকে সেখানে ব্যতিব্যস্ত রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং দনবাসে রাশিয়াকে ছাড় প্রদানের বিনিময়ে ইদলিব ও উত্তর–পূর্ব সিরিয়ায় রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড় আদায়ের চেষ্টা করবে। অবশ্য হাস মনে করেন যে, তুরস্কের এই কৌশল তাদের নিজেদের জন্য খুবই বিপজ্জনক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, ইউক্রেন কর্তৃক তুর্কি–নির্মিত কমব্যাট ড্রোন ব্যবহার করে দনেৎস্কের ওপর আক্রমণ পরিচালনার প্রেক্ষাপটে রাশিয়া এখন পর্যন্ত তুরস্কের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এবং বস্তুত পেস্কভ ও লাভরভের বক্তব্যের মধ্যেই তাদের প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ রয়েছে। রাশিয়া তুরস্কের সঙ্গে তাদের বিদ্যমান সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী এবং বিভিন্ন অঞ্চলে উভয়ের মধ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও অঞ্চলগুলোতে তারা পরস্পরের মধ্যে যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেছে, সেটি বজায় রাখতে ইচ্ছুক। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের কাছে তুর্কি অস্ত্র রপ্তানির প্রেক্ষাপটে রাশিয়া তুরস্কের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করতে আগ্রহী নয়, এবং ন্যাটো সদস্য তুরস্কের ওপর তাদের চাপ প্রয়োগের ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে কম বলে ধারণা করা হয়।
তুরস্ক কর্তৃক ইউক্রেনের কাছে কমব্যাট ড্রোন বিক্রির ব্যাপারে রুশ প্রতিক্রিয়া মূলত বাস্তববাদী ধাঁচের, কিন্তু রাশিয়ার অভ্যন্তরে অনেকেই রুশ সরকারের এরকম মৃদু প্রতিক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। যেমন: রুশ রাজনীতিবিদ, সামরিক বিশ্লেষক ও লেখক এবং দনেৎস্কের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কর্নেল ইগর স্ত্রেলকভ রুশ পত্রিকা ‘মস্কোভস্কি কমসোমলেৎস’কে প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন যে, সিরিয়ায় মোতায়েনকৃত রুশ সৈন্যরা কার্যত তুরস্কের হাতে ‘জিম্মি’, এজন্য রাশিয়া তুরস্কের প্রতি প্রায় সকল ক্ষেত্রে নমনীয় আচরণ করছে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় মোতায়েনকৃত রুশ সৈন্যদের নৌপথে সামরিক সরঞ্জাম ও রসদপত্র সরবরাহ করার জন্য রুশদেরকে কৃষ্ণসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করতে হয়। কৃষ্ণসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের জন্য রুশ জাহাজগুলোকে বসফরাস ও দার্দানেলিস প্রণালী অতিক্রম করতে হয়, আর উক্ত প্রণালীদ্বয় তুরস্কের নিয়ন্ত্রণাধীন। অর্থাৎ, সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য রাশিয়া পরোক্ষভাবে তুর্কি সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। ১৯৩৬ সালে সম্পাদিত ‘মনথ্রো কনভেনশন’ অনুযায়ী, তুরস্কের সঙ্গে কোনো রাষ্ট্রের যুদ্ধাবস্থা দেখা দিলে তুরস্ক উক্ত রাষ্ট্রের জাহাজের জন্য উক্ত প্রণালীদ্বয় বন্ধ করে দিতে পারে। অন্যদিকে, তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে সরাসরি স্থল সীমান্ত রয়েছে, ফলে সিরিয়ায় মোতায়েনকৃত তুর্কি সৈন্যদের সামরিক সরঞ্জাম ও রসদপত্র সরবরাহ করা সহজ। এই পরিস্থিতিতে যদি রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যেকার সম্পর্কে গুরুতর অবনতি দেখা দেয় এবং তুরস্ক রুশ নৌযানের জন্য বসফরাস ও দার্দানেলিস প্রণালীদ্বয় বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটবে।
এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ২০২০ সালে ইদলিব ও পশ্চিম লিবিয়ায় তুর্কি–নির্মিত ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ কমব্যাট ড্রোন এবং আর্তসাখে তুর্কি–নির্মিত ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ কমব্যাট ড্রোন ও ইসরায়েলি–নির্মিত ‘আইএআই হারোপ’ আত্মঘাতী ড্রোন বিভিন্ন রুশ প্রক্সির বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তদুপরি, বেশ কয়েক বছর ধরে সিরিয়ায় মোতায়েনকৃত রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা–সমর্থিত ও তুর্কি–সমর্থিত মিলিট্যান্টরা এবং ইয়েমেনে সৌদি–নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে ‘আনসার আল্লাহ’ মিলিট্যান্টরা ড্রোন আক্রমণ চালিয়ে আসছে। কমব্যাট ও আত্মঘাতী ড্রোন তৈরির ক্ষেত্রে রাশিয়া তুরস্ক ও ইসরায়েলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া কমব্যাট ও আত্মঘাতী ড্রোন তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি ‘ওকেবি সোকোল’ রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘সোকোল আলতিউস’ কমব্যাট ড্রোন সরবরাহ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০২১ সালের এপ্রিলে রুশ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি ‘গ্রুপ্পা ক্রনশতাদৎ’ মস্কোর নিকটবর্তী দুবনা শহরে প্রায় ৪০০ কোটি (বা ৪ বিলিয়ন) রুবল ব্যয়ে একটি ড্রোন নির্মাণ কারখানা স্থাপন করে এবং এটি রাশিয়ায় স্থাপিত প্রথম কারখানা, যেটির একমাত্র উদ্দেশ্য ড্রোন নির্মাণ করা। ২০২১ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘মাক্স–২০২১’ সামরিক আকাশযান প্রদর্শনীতে ‘ক্রনশতাদৎ ওরিয়ন–ই’ কমব্যাট ড্রোন প্রদর্শন করে এবং সেপ্টেম্বরে রাশিয়া ও বেলারুশে অনুষ্ঠিত ‘জাপাদ–২০২১’ রুশ–বেলারুশীয় যৌথ মহড়ায় উক্ত ড্রোনটিকে সাফল্যজনকভাবে ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি ‘সুখোই এস–৭০ ওখোৎনিক–বি’সহ আরো কয়েক ধরনের কমব্যাট ড্রোন নিয়ে রুশ কোম্পানিগুলো কাজ করছে।
এমতাবস্থায় ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে তুর্কি–নির্মিত ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ কমব্যাট ড্রোনের ব্যবহার, রুশ–নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘সিএসটিও’ সদস্য কিরগিজস্তান কর্তৃক তুরস্কের কাছ থেকে ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ কমব্যাট ড্রোন ক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়া ও আরেক সিএসটিও সদস্য কাজাখস্তানের উক্ত ড্রোন ক্রয়ের সম্ভাবনা এবং মধ্য এশীয় রাষ্ট্র তুর্কমেনিস্তান কর্তৃক উক্ত ড্রোন ক্রয় প্রভৃতি কারণে রুশ সরকার রাশিয়ার ড্রোন নির্মাণ প্রকল্প আরো গতিশীল করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণের এক সপ্তাহ পর ২০২১ সালের ২ নভেম্বর রাশিয়ার সোচিতে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পুতিন রাশিয়ার ড্রোন নির্মাণ প্রকল্পের ওপর আরো জোর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, রাশিয়ার যে কোনো ধরনের ড্রোন আক্রমণ মোকাবিলার সামর্থ্য রয়েছে। পুতিনের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, রুশ সশস্ত্রবাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ২,০০০টি ড্রোন রয়েছে (অবশ্য এই ড্রোনগুলোর মধ্যে সিংহভাগ রিকনিস্যান্স ড্রোন এবং খুব কম সংখ্যক ড্রোনই কমব্যাট ড্রোন বলে মনে করা হয়)।
উল্লেখ্য, পুতিন তার বক্তব্যে ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে তুর্কি–নির্মিত ড্রোনের ব্যবহার, প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর কাছে তুর্কি–নির্মিত কমব্যাট ড্রোন বিক্রি বা অন্যান্য রুশ প্রক্সিদের বিরুদ্ধে তুর্কি–নির্মিত ড্রোন ব্যবহারের প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি। এর পরিবর্তে তিনি সিরিয়ায় মোতায়েনকৃত রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে মিলিট্যান্টদের পরিচালিত ড্রোন আক্রমণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, পশ্চিমা–সমর্থিত ও তুর্কি–সমর্থিত মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলো সিরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার হিমেইমিম বিমানঘাঁটির ওপর বহু সংখ্যক ড্রোন আক্রমণ পরিচালনা করেছে, কিন্তু রুশ সৈন্যরা প্রতিটি ড্রোন আক্রমণই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু পুতিনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, তুর্কি–নির্মিত ড্রোনের ব্যবহার ও রপ্তানিকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে যে পরোক্ষ দ্বন্দ্ব চলছে, রুশ সরকার সেটিকে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে আগ্রহী নয়, এবং এজন্য তিনি রুশ ড্রোন প্রকল্প সম্পর্কে এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে তুরস্কের প্রসঙ্গে এড়িয়ে গেছেন।
সামগ্রিকভাবে, ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে তুর্কি–নির্মিত ড্রোন ব্যবহারের ফলে রুশ–তুর্কি সম্পর্কে নতুন করে একটি সূক্ষ্ম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান বিস্তৃত রুশ–তুর্কি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে একদিকে তুরস্ক ইউক্রেনের এই ‘সাফল্য’কে নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়া তুরস্কের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকছে। অবশ্য তুর্কি সরকার এই রুশ–ইউক্রেনীয় দ্বন্দ্ব থেকে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে চাইলেও তুর্কি জাতীয়তাবাদীরা ইউক্রেন কর্তৃক তুর্কি–নির্মিত ড্রোনের সাহায্যে রুশ–সমর্থিত দনেৎস্কের ওপর পরিচালিত আক্রমণকে রাশিয়ার দোরগোড়ায় তুর্কি সামরিক হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং এটিকে রাশিয়া কর্তৃক তুরস্কের দোরগোড়ায় (অর্থাৎ সিরিয়ায়) সামরিক হস্তক্ষেপের ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে বিবেচনা করছে। কিন্তু রাশিয়া যেভাবে সিরিয়ায় সৈন্য মোতায়েন করার মাধ্যমে সিরীয় যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিচ্ছে, তুরস্ক সেভাবে দনবাসে সৈন্য মোতায়েন করে দনবাস যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করবে, এরকম সম্ভাবনা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই কম।
দনবাসে ড্রোন আক্রমণের পর ইউক্রেনীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গতিপ্রকৃতি
এদিকে দনবাসে পরিচালিত ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণের পর ইউক্রেনীয় সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ দনবাসের যুদ্ধের মাত্রা তীব্রতর হওয়ার আভাস দিচ্ছে। রুশ ও পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতামত অনুযায়ী, দনেৎস্কের ওপর ড্রোন আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেন ‘মিনস্ক প্রোটোকল’, ‘মিনস্ক ২’ চুক্তি এবং ২০২০ সালের জুলাইয়ে সম্পাদিত ‘ত্রিপক্ষীয় সংযোগ গ্রুপ’ চুক্তির লঙ্ঘন। অর্থাৎ, ইউক্রেন জেনেশুনে চুক্তি লঙ্ঘন করে দনবাসে ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে। কিছু কিছু বিশ্লেষকের মতে, ইউক্রেনীয় সরকারের এই পদক্ষেপ তাদের অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির একটি কৌশল মাত্র। কিন্তু দনবাসে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাতের মাত্রা তীব্র হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে আকস্মিকভাবে বা পরিকল্পিতভাবে ইউক্রেন কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনাকেও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এক্ষেত্রে উক্ত ড্রোন আক্রমণের পর ইউক্রেনে সংঘটিত দুইটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উক্ত আক্রমণের পর ইউক্রেনীয় আইনসভা ‘ভের্খোভনা রাদা উক্রায়নি’ (ইউক্রেনীয়: Верховна Рада України) ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আন্দ্রি তারানকে বরখাস্ত করেছে। উল্লেখ্য, দনেৎস্কের ওপর পরিচালিত ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণের পর ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে এই খবরটি অস্বীকার করে এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারান এটিকে ‘রুশ মার্সেনারিদের উস্কানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু এরপর তিনি দাবি করেন যে, তিনি কখনো এরকম কিছু বলেননি এবং যে ইউক্রেনীয় প্রচারমাধ্যমটি প্রথম তাঁর এই বক্তব্য প্রচার করেছিল, কেউ তাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করে এই ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়িয়েছিল। এই বিভ্রান্তিকর ঘটনার পরেই ইউক্রেনীয় আইনসভা তারানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করল।
তারানকে অপসারণের পর ইউক্রেনীয় আইনসভা ইউক্রেনের প্রাক্তন উপ–প্রধানমন্ত্রী এবং সাময়িকভাবে দখলকৃত ভূখণ্ডসমূহ ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বিষয়ক মন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভকে ইউক্রেনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত করেছে। দনেৎস্কের ওপর ড্রোন আক্রমণ চালানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই তারানকে কেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হলো, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। এই ঘটনার সঙ্গে দনেৎস্কে পরিচালিত ড্রোন আক্রমণের সম্ভাবনা নাও থাকতে পারে, কিন্তু এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, তারান দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণকে সমর্থন করেননি এবং এজন্য নীতিগত পার্থক্যের কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়ে থাকতে পারে। উল্লেখ্য, রেজনিকভকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ প্রদানের কারণ হিসেবে ইউক্রেনীয় সরকার মন্তব্য করেছে যে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আরেকটি ঘটনা হচ্ছে, ইউক্রেনীয় উগ্র ডানপন্থী, উগ্র জাতীয়তাবাদী ও নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল নাৎসিওনালনো–ভিজভোলনিই রুখ ‘প্রাভিই সেক্তর’/ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট ‘রাইট সেক্টর’ –এর (ইউক্রেনীয়: Національно-визвольний рух «Пра́вий се́ктор») প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন সভাপতি (এবং প্রাক্তন আইনপ্রণেতা) দিমিত্রো ইয়ারোশ ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভালেরি জালুঝনির উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছেন। ইয়ারোশ তীব্র রুশবিরোধী এবং দনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের মাত্রা তীব্র করতে আগ্রহী। সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনী দনেৎস্কের ওপর একটি ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে এবং ইউক্রেন ও দনেৎস্কের মধ্যবর্তী সংযোগ রেখার ‘ধূসর অঞ্চলে’ (Grey Zone) অবস্থিত স্তারোমারিয়েভকা গ্রাম দখল করে নিয়েছে। এমতাবস্থায় ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়কের উপদেষ্টা হিসেবে ইয়ারোশের নিয়োগপ্রাপ্তিকে দনবাসে ইউক্রেনের আক্রমণাত্মক নীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
বস্তুত ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে ড্রোন আক্রমণ পরিচালনা, ইউক্রেনীয় সৈন্যদের ইউক্রেনীয়–দনেৎস্ক সংযোগরেখায় অবস্থিত একটি গ্রাম দখল এবং ইউক্রেনীয় সরকারের অভ্যন্তরে অতি রুশবিরোধী ব্যক্তিত্বদের উত্থান – এসব কিছুই দনবাসে নতুন করে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনার প্রতি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমতাবস্থায় দনবাসে রাশিয়া এবং মার্কিন–নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে নতুন করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্সি যুদ্ধের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। অবশ্য দনবাসে নতুন করে একটি যুদ্ধ শুরু হলে রাশিয়া, দনেৎস্ক, লুহানস্ক ও ইউক্রেন সকলেরই উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং এই পরিস্থিতিতে দনবাসের ঘটনাবলি কোনদিকে মোড় নেয়, সেটি দেখার বিষয়।