Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আলমাতি থেকে নূর–সুলতান: কাজাখস্তানের রাজধানী পরিবর্তনের অন্তর্নিহিত কারণ

১৯৯৭ সালের ১০ ডিসেম্বর মধ‍্য এশিয়ার সদ‍্য-স্বাধীন রাষ্ট্র কাজাখস্তানের সরকার দেশটির রাজধানী ‘আলমাতি’ শহর থেকে ‘আকমোলা’ শহরে স্থানান্তরিত করে। ১৯৯৮ সালে শহরটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘আস্তানা’ (কাজাখ ভাষায় ‘আস্তানা’ শব্দটির অর্থ রাজধানী)। ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ কাজাখস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি নূরসুলতান নাজারবায়েভের নামানুসারে শহরটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘নূর–সুলতান’। শহরটিতে রাজধানী স্থানান্তরের পর থেকে এখন পর্যন্ত শহরটির উন্নয়নের জন‍্য কাজাখস্তান সরকার ব‍্যয় করেছে ১,০০০ কোটি থেকে ৩,০০০ কোটি মার্কিন ডলার! প্রশ্ন উঠতেই পারে, ঠিক কী কারণে কাজাখস্তান সরকার রাজধানী স্থানান্তরের মতো এত বড় ব‍্যয়বহুল একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল?

মধ‍্য এশিয়ায় অবস্থিত কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্র (Qazaqstan Respýblıkasy) আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। ২৭,২৪,৩০০ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই রাষ্ট্রটি আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম এবং মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র। অষ্টাদশ শতাব্দীতে কাজাখ খানাতের পতনের পর রুশ সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে অঞ্চলটি দখল করে নেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মস্কো জাতিগত কাজাখদের জন‍্য প্রথমে সোভিয়েত রাশিয়ার অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র গঠন করে, যেটি ১৯৩৬ সালের ৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত রাশিয়া থেকে পৃথক হয়ে একটি স্বতন্ত্র প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রজাতন্ত্রটি পতনোম্মুখ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

স্বাধীন কাজাখস্তানের প্রথম রাজধানী ছিল ‘আলমা–আতা’। স্বাধীনতা লাভের পর কাজাখস্তান সরকার শহরটির নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘আলমাতি’। ১৯৯৪ সালের ৬ জুলাই কাজাখস্তানের কেন্দ্রীয় পরিষদ “কাজাখস্তানের রাজধানী স্থানান্তর সম্পর্কে” অধ‍্যাদেশ জারি করে। ১৯৯৭ সালের ১০ ডিসেম্বরে আস্তানা শহরে রাজধানী স্থানান্তরিত হয় এবং ১৯৯৮ সালের ১০ জুন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শহরটিকে কাজাখস্তানের রাজধানী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। বর্তমানে শহরটির নাম নূর–সুলতান।

নূর–সুলতান শহরে অবস্থিত কাজাখ ন‍্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ আর্টস; Source: Getty Images

আলমাতি থেকে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হলেও শহরটি এখনো কাজাখস্তানের বৃহত্তম, সবচেয়ে উন্নত এবং জাতিগত ও সংস্কৃতিগতভাবে সবচেয়ে বিচিত্র শহর। তাহলে শহরটি থেকে কেন রাজধানী সরিয়ে নেয়া হলো? কাজাখস্তান সরকার এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়েছিল।

প্রথমত, আলমাতি শহরটি যে অঞ্চলে অবস্থিত সেটি অত‍্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ। ১৮৮৭ এবং ১৯১১ সালে ভূমিকম্পে শহরটির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ১৯৯০-এর দশকেও শহরটিতে বেশ কয়েকবার মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। কাজাখস্তান সরকারের ভাষ‍্যমতে, ভবিষ্যতে বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্পে শহরটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বা শহরটির বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। রাজধানী শহরে এরকম বিপর্যয় দেখা দিলে সেটি রাষ্ট্রের জন‍্য বড় একটি হুমকি হয়ে দাঁড়াত।

দ্বিতীয়ত, আলমাতি শহরটির পরিবেশগত পরিস্থিতি ইতিবাচক ছিল না। অতিরিক্ত ঘনবসতি এবং শিল্পকারখানা ও যানবাহনের বিষাক্ত গ‍্যাস ও ধোঁয়ার কারণে শহরটি ক্রমশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছিল।

১৯৯৭ সালে আলমাতি থেকে নূর–সুলতানে রাজধানী স্থানান্তরের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন‍্য কাজাখস্তান সরকার এই দুটি যুক্তি দেখায়। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রই সাধারণত কেবল ভূকম্পপ্রবণতা বা পরিবেশগত কারণে হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করে রাজধানী স্থানান্তর করে না। যদি কেবল এই দুটি কারণেই আলমাতি থেকে রাজধানী সরানোর প্রয়োজন ছিল, তাহলে আশেপাশের কোনো প্রতিষ্ঠিত শহরে রাজধানী সরিয়ে নিলেই তো হতো। এছাড়া নূর–সুলতান শহরটি প্রায় মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে প্রায়ই ধূলিঝড় হতো এবং সেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব ছিল। এমতাবস্থায় আলমাতি থেকে প্রায় ১,০০০ কি.মি. দূরে অবস্থিত নূর–সুলতানে কেন রাজধানী সরানো হলো?

বস্তুত কাজাখস্তান একমাত্র প্রাক্তন–সোভিয়েত রাষ্ট্র, যেটি তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেছে। কাজাখস্তান সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে আলমাতির ভূকম্পপ্রবণতা বা পরিবেশগত অবস্থা দায়ী ছিল না। এই সিদ্ধান্তের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল কাজাখস্তানের অভ‍্যন্তরীণ ও বৈদেশিক রাজনীতি এবং রাষ্ট্রগঠন ও জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত বিচার–বিবেচনা।

এশিয়ার মানচিত্রে কাজাখস্তান; কাজাখস্তানের প্রাক্তন রাজধানী আলমাতি দেশটির দক্ষিণ–পূর্ব কোণে চীন সীমান্তের কাছে অবস্থিত; Source: Wikimedia Commons

প্রথমত, আলমাতি কাজাখস্তানের দক্ষিণ–পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। চীন ও কিরগিজস্তানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত আলমাতি রণকৌশলগত দিক থেকে দুর্বল অবস্থানে ছিল। চীনের সঙ্গে কাজাখস্তানের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ ছিল এবং রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল কিরগিজস্তান থেকে জাতিগত সমস্যা কাজাখস্তানেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। এমতাবস্থায় কাজাখস্তান সরকার রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিল। আলমাতি থেকে কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকের দূরত্ব ১৯০ কি.মি. মাত্র, যেখানে বর্তমান রাজধানী নূর–সুলতানের অবস্থান আলমাতি থেকে প্রায় ১,০০০ কি.মি. দূরে। নূর–সুলতান শহরটির অবস্থান কাজাখস্তানের মধ‍্যাঞ্চলে এবং চীন সীমান্ত থেকে তুলনামূলক দূরে।

দ্বিতীয়ত, আলমাতি কাজাখস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত আর নূর–সুলতানের অবস্থান কাজাখস্তানের উত্তরাঞ্চলে। কাজাখস্তান একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র। ১৯৯১ সালে কাজাখস্তান যখন স্বাধীনতা লাভ করে, তখন কাজাখস্তানের জনসংখ্যার ৪০% ছিল জাতিগত কাজাখ এবং ৩৭% ছিল জাতিগত রুশ। কাজাখস্তানের বর্তমান ভূমি রুশ সাম্রাজ্যের অংশ হওয়ার পর জাতিগত রুশরা সেখানে বসতি স্থাপন শুরু করে এবং সোভিয়েত আমলে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনায় প্রচুর জাতিগত রুশ কাজাখস্তানে আসে।

কিন্তু কাজাখস্তানের জাতিগত কাজাখ ও রুশ জনসংখ্যা দেশটি জুড়ে সুষমভাবে বণ্টিত নয়। কাজাখস্তান স্বাধীন হওয়ার সময় দক্ষিণ কাজাখস্তানে জাতিগত কাজাখরা সংখ‍্যাগুরু ছিল, কিন্তু উত্তর কাজাখস্তানে সংখ‍্যাগুরু ছিল জাতিগত রুশরা। উত্তর কাজাখস্তানে বসবাসরত জাতিগত কাজাখদেরও বড় একটি অংশ কাজাখ ভাষা ও সংস্কৃতিকে ত‍্যাগ করে রুশ সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে নিয়েছিল। উত্তর কাজাখস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার ৬,৮৪৬ কি.মি. বিস্তৃত সীমান্ত রয়েছে, যেটি বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সীমান্ত। কাজাখস্তান সরকারের আশঙ্কা ছিল, ভবিষ্যতে উত্তর কাজাখস্তানের জাতিগত রুশরা মস্কোর প্ররোচনায় বা নিজস্ব উদ‍্যোগে কাজাখস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে কাজাখস্তান বিপুল পরিমাণ ভূমি হারাতো। এমতাবস্থায় দক্ষিণ কাজাখস্তানে অবস্থিত আলমাতি থেকে উত্তর কাজাখস্তানে অবস্থিত নূর–সুলতানে রাজধানী স্থানান্তরের লক্ষ্য ছিল ঐ অঞ্চলের জাতিগত রুশদের ওপর কার্যকরীভাবে নজরদারি করা। তাছাড়া, উত্তর কাজাখস্তানে নতুন রাজধানী স্থাপিত হলে সেখানে দক্ষিণ কাজাখস্তান থেকে জাতিগত কাজাখরা ভাগ‍্যোন্নয়নের জন‍্য দলে দলে আসতে থাকবে এবং এর ফলে ঐ অঞ্চলে রুশরা সংখ‍্যাগুরু থেকে সংখ‍্যালঘুতে পরিণত হবে, এই চিন্তাও কাজাখস্তান সরকারের মাথায় ছিল।

কাজাখস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতিগত রুশদের অবস্থানের আনুপাতিক মানচিত্র; Source: Wikimedia Commons

পরিসংখ্যানগত দিক থেকে বিচার করলে কাজাখস্তান সরকারের এই উদ্দেশ‍্য বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৯১ সালে নূর–সুলতানের জনসংখ‍্যার মাত্র ১৭% ছিল জাতিগত কাজাখ, আর বর্তমানে শহরটির জনসংখ্যার ৭৮%–ই জাতিগত কাজাখ। এভাবে রাজধানী স্থানান্তরের মাধ‍্যমে কাজাখস্তান সরকার শান্তিপূর্ণভাবে উত্তর কাজাখস্তানের জাতিগত বিন‍্যাস পাল্টে দিচ্ছে। তবে উত্তর কাজাখস্তানে এখনো প্রচুর রুশ বসবাস করে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর কাজাখস্তানের উস্ত–কামেনোগরস্ক শহরের জনসংখ্যার ৬৭% এবং রিদ্দার শহরের জনসংখ্যার ৮৫% জাতিগত রুশ। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কাজাখস্তানে জাতিগত রুশদের সংখ‍্যা ৪০% থেকে ১৯%–এ নেমে এসেছে এবং ভবিষ্যতে আরো হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়।

তৃতীয়ত, আলমাতি শহরটি রুশরা নির্মাণ করে এবং শহরটি সোভিয়েত আমলে এর বর্তমান রূপ লাভ করে। বর্তমান আলমাতি শহরটির সঙ্গে রাশিয়ার যেকোনো প্রাদেশিক শহরের সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাবে। এটি কাজাখ জাতীয়তাবাদীদের জন্য স্বস্তিকর ছিল না। কাজাখস্তানের শাসকগোষ্ঠী সদ‍্যস্বাধীন কাজাখস্তানের জন্য নতুন একটি রাজধানী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্বাতন্ত্র‍্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। কাজাখস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি নূরসুলতান নাজারবায়েভের ভাষায়, নতুন রাজধানী শহরটি কাজাখস্তানের ‘রাষ্ট্রত্বের প্রতীক’। বস্তুত, বিচিত্র স্থাপত‍্যকীর্তিতে পরিপূর্ণ নূর–সুলতান শহরটির সঙ্গে অন্য কোনো শহরের সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া আসলেই কঠিন।

চতুর্থত, কাজাখস্তান স্বাধীন হওয়ার পর কাজাখস্তান সরকার রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে ‘ইউরেশীয়বাদ’কে (Eurasianism) প্রচার করতে থাকে। ইউরেশীয়বাদ মূলত রুশ সাম্রাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কার একটি মতবাদ, যার বক্তব্য ছিল যে রুশ (পরবর্তীতে সোভিয়েত) রাষ্ট্র ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত এবং দুই মহাদেশের মধ‍্যে সেতুবন্ধন। নৃতাত্ত্বিক, ধর্মগত ও ভাষাগত বৈচিত্র‍্যে পরিপূর্ণ রুশ এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য এই আদর্শকে সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হতো।

কাজাখস্তানও একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র এবং ১৩০টিরও বেশি জাতিসত্তার মানুষ দেশটিতে বসবাস করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে কাজাখস্তান সরকারও তাই ‘ইউরেশীয়বাদ’কে সরকারিভাবে উৎসাহিত করেছে এবং এর অংশ হিসেবে কাজাখস্তানকে ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থল হিসেবে বর্ণনা করেছে। চীন–সীমান্তে অবস্থিত আলমাতি থেকে উত্তর কাজাখস্তানে অবস্থিত নূর–সুলতান রাজধানী শহর হিসেবে এই বর্ণনার সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। কাজাখস্তান যে ‘পশ্চাৎপদ’ এশীয় রাষ্ট্র নয়, বরং সভ‍্যতার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি ইউরেশীয় রাষ্ট্র, এই ভাবমূর্তি গঠনের আকাঙ্ক্ষা কাজাখস্তান সরকারের নূর–সুলতানে রাজধানী স্থানান্তরের একটি অন‍্যতম কারণ ছিল।

নূর–সুলতানে অবস্থিত ‘শান্তি ও সমঝোতা পিরামিড’, যেটি কাজাখস্তানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক; Source: Shutterstock

পঞ্চমত, কাজাখস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি নূরসুলতান নাজারবায়েভ নিজের ক্ষমতা সুসংহত করার জন‍্য সোভিয়েত আমলে সৃষ্ট অভিজাত সম্প্রদায়ের প্রভাব খর্ব করে স্বাধীন কাজাখস্তান সৃষ্ট নতুন একটি অনুগত অভিজাত সম্প্রদায় সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক ছিলেন। কাজাখস্তানের সোভিয়েত আমলের অভিজাতদের ঘাঁটি ছিল আলমাতি। ক্ষমতার কেন্দ্র সেখান থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে নাজারবায়েভ তাঁর ক্ষমতার ভিত্তি শক্ত করেন এবং নূর–সুলতান শহরকে কেন্দ্র করে নতুন একটি অভিজাত সম্প্রদায় গড়ে ওঠে।

ষষ্ঠত, জাতিগত কাজাখরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত। এই গোত্রগুলোকে তিনটি গ্রুপে বিন‍্যাস্ত করা হয় – ‘Uly júz’ (বৃহৎ হোর্ড), ‘Orta júz’ (মধ‍্যম হোর্ড) এবং ‘Kishi júz’ (ক্ষুদ্র হোর্ড)। বৃহৎ হোর্ডের অন্তর্গত গোত্রগুলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব কাজাখস্তানে, মধ‍্যম হোর্ডের গোত্রগুলো মধ‍্য ও পূর্ব কাজাখস্তানে এবং ক্ষুদ্র হোর্ডের গোত্রগুলো পশ্চিম কাজাখস্তানে বসবাস করে। কাজাখস্তানের প্রাক্তন রাজধানী আলমাতি বৃহৎ হোর্ড অঞ্চলে অবস্থিত এবং নূরসুলতান নাজারবায়েভও বৃহৎ হোর্ডের একটি গোত্রের সদস‍্য। স্বাধীনতার পর কাজাখস্তান গোত্রের ভিত্তিতে তিন টুকরো হয়ে যাওয়ার একটি সম্ভাবনাও ছিল। মধ‍্যম ও ক্ষুদ্র হোর্ডের গোত্রগুলোর আবাসস্থল উত্তর কাজাখস্তানে। এই গোত্রগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা ছিল আলমাতি থেকে নূর–সুলতানে রাজধানী স্থানান্তরের পিছনে কাজাখস্তান সরকারের অন‍্যতম উদ্দেশ্য।

তদুপরি, কাজাখস্তান একটি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র। এ ধরনের রাষ্ট্রে যেকোনো বড় প্রকল্পে দুর্নীতি হওয়াটা স্বাভাবিক। নূর–সুলতানকে রাজধানী শহর হিসেবে গড়ে তুলতে যে শত শত কোটি ডলার ব‍্যয় হয়েছে, তার একাংশ যে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটস্থ হয়েছে, সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশকিছু প্রতিবেদন এসেছে। সুতরাং আলমাতি থেকে নূর–সুলতান শহরে রাজধানী স্থানান্তরিত করার প্রকল্পে যে কাজাখস্তানের কিছু কিছু শ্রেণীর ব‍্যক্তিগত স্বার্থও দায়ী ছিল, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বস্তুত নূরসুলতান নাজারবায়েভ এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও প্রচুর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

নূর–সুলতানে অবস্থিত ইতালীয় স্থপতি মানফ্রেদি নিকোলেত্তির নকশায় নির্মিত কাজাখস্তান কেন্দ্রীয় কনসার্ট হল; Source: Getty Images

পরিশেষে বলা যায়, ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, অভ‍্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সদ‍্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের স্বাতন্ত্র‍্য প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার প্রচেষ্টা, এবং সর্বোপরি কাজাখ জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আর কাজাখস্তান সরকারের নিজস্ব স্বার্থ– এই সবগুলো কারণই আলমাতি থেকে আস্তানায় (বর্তমান নূর–সুলতান) কাজাখস্তানের রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য দায়ী। তবে এসব কিছুর ফলে একটি বিচিত্র ও দৃষ্টিনন্দন শহর হিসেবে নূর–সুলতান শহরটি গড়ে উঠেছে, এটিই কাজাখস্তানের জনসাধারণের জন‍্য একটি সামগ্রিক অর্জন।

This is a bengali article detailing why the capital city of Kazakhsthan was replaced.

References:

1. Mehmet Arslan, "The significance of shifting capital of Kazakhstan from Almaty to Astana," Social and Behavioral Sciences, 2014, Vol. 120, p. 98–109.

2. Joanna Lillis, "Kazakhstan's Astana turns 20: A tale of two capitals," EurasiaNet, July 9, 2018. 

3. Diana Kopbayiva, "Is Astana a nationalistic project?" 1st Annual International Interdisciplinary Conference, April 24–26, 2013, Azores, Portugal.

Feature Image: Modern Diplomacy

Related Articles