কার বুদ্ধির জোর কতখানি সেটা জানতে হলে তার আইকিউ জানতে হবে। আইকিউর মান দিয়েই জানা যায় তার প্রতিভা কতখানি। এখন যদি আপনার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাধর মানুষটির নাম কী? তাহলে বেশিরভাগ মানুষই যে উত্তরটা দেবেন তা হলো আলবার্ট আইনস্টাইন কিংবা হাল আমলের স্টিফেন হকিং। যদি আপনার ধারণা এমনটাই হয়ে থাকে, তবে সেটাতে একটু ভুল আছে।
আইনস্টাইন কিংবা স্টিফেন হকিং খুবই প্রতিভাধর এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাদেরকেও বুদ্ধিতে ছাড়িয়ে গেছেন এমন মানুষও কিন্তু আছেন! আর মজার ব্যাপার হলো এরা খুব বড় কোনো মানুষ নন। নেহায়েত কিশোর-কিশোরী! তাদের মস্তিষ্কটি আকার কিংবা বয়সে ছোট হলেও বুদ্ধির বেলায় যে সবার সেরা সে কথা স্বীকার করতে কারোরই দ্বিধা নেই।
বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, আইনস্টাইন বেঁচে থাকলে তার আইকিউ হতো ১৬০। হাল আমলের বিল গেটস আর স্টিফেন হকিংয়ের আই কিউও ১৬০। কিন্তু কিছু কিশোর-কিশোরী, যারা বুদ্ধির পরীক্ষায় ছাড়িয়ে গিয়েছিলো আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং আর বিল গেটসের মতো প্রতিভাধর মানুষদের, তাদেরকে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
উচ্চ আইকিউ সম্পন্ন কিশোর কিশোরীদের কথা বলতে গেলে প্রথমেই যে নামটি মাথায় আসে তা হলো মেনসা। না, মেনসা কোনো কিশোরীর নাম নয়। মেনসা উচ্চ আইকিউসম্পন্ন ব্যক্তিদের একটি ফোরাম। সারা পৃথিবীর একশ’রও বেশি দেশের সদস্য নিয়ে ফোরামটি গঠিত। ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ডে ফোরামটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ল্যানচেলট লিওনেল ওয়ারে নামের একজন বিজ্ঞানী ও আইনজীবী এবং রোনাল্ড ব্যারিল নামের একজন অস্ট্রেলীয় ব্যারিস্টার এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রমের সূচনা করেন। পরবর্তীতে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী এর বিস্তার ঘটে। মেনসা বিশেষ পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করে থাকে এবং বলাই বাহুল্য যে, উচ্চ প্রতিভাধর অর্থাৎ উচ্চ আইকিউসম্পন্ন ব্যক্তিরাই এই সংস্থার সদস্যপদ লাভ করতে পারেন। সারা বিশ্বে মেনসার সদস্য সংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি। আর ইংল্যান্ডে মেনসার সদস্যসংখ্যা প্রায় ২০,০০০। মজার ব্যাপার হলো এদের ৮% এর বয়সই ১৬ এর নিচে, আর ৩৫% সদস্য নারী।
এসেক্সের নিকোলা বার
নিকোলা বারের দেশ ইংল্যান্ড। সেখানেই এসেক্সের হার্লোতে বাবা মায়ের সাথে থাকে ১২ বছরের মেয়েটি। কিন্তু বয়স ১২ হলে কী হবে? বুদ্ধির পরীক্ষায় নিকোলা ছাড়িয়ে গেছে মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকেও। মেনসার পরীক্ষায় তার স্কোর ১৬২! মেনসার মতে, সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের গড় আইকিউ স্কোর ১০০। কারো আইকিউ স্কোর যদি ১৪০ এর বেশি হয় তবে সে জিনিয়াস বা প্রতিভাধর। মেনসার একজন মুখপাত্র আনা ক্লার্কসন জানান, নিকোলা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাধর ১% মানুষের একজন।
নিকোলার বাবা জেমস একজন সাধারণ পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আর মা ডলি বাকল্যান্ড। নিকোলা হার্লোতেই বার্ন্ট মিল একাডেমি নামের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। পড়াশোনার বাইরে নিকোলা গান ও নাটক বেশ পছন্দ করে। নিকোলার মা ডলি জানান, নিকোলা খুবই কঠোর পরিশ্রমী মেয়ে। নিকোলা বড় হয়ে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হতে চায়। নিকোলার কাছে এই স্কোর অর্জনের পর তার অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে সে বলেছিলো, “এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।”
১১ বছরের কিশোর অওম আমিন
অওম আমিনএকজন ভারতীয়। তার পরিবারের আদিনিবাস ভারতের গুজরাটে। বর্তমানে সে তার পরিবারের সাথে ইংল্যান্ডেই থাকে। পড়াশোনা করে বার্নেট এর কুইন এলিজাবেথ গ্রামার স্কুলে। মেনসার পরীক্ষায় অওম এর স্কোর ১৬২ যা আইনস্টাইনের থেকে দুই পয়েন্ট বেশি। অথচ এশীয় এই কিশোরের বয়স মাত্র ১১। অওমের বাবা কার্তিক আমিন ব্রিটেনের একটি রেলওয়েতে কাজ করেন। অওমের এই সাফল্যে দারুণ খুশি তার বাবা-মা।
অওম বড় হয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র এবং প্রকৌশল নিয়ে পড়তে চায়। সার্জারিতে কাজে লাগবে এমন রোবট তৈরি করতে চায়। স্টার ওয়ার্সের দারুণ পোকা অওমের ক্রিকেট আর দাবা- দুইয়ের প্রতিই দারুণ আগ্রহ। এছাড়াও বিভিন্ন ইতিহাস নিয়েও ঘাঁটাঘাঁটি করতে পছন্দ করে সে। এই অসাধারণ সাফল্যের পর অওম জানায়, “আমি মোটেই বলবো না আইনস্টাইন কিংবা স্টিফেন হকিং থেকে আমার বুদ্ধি বেশি – যদিও আইকিউ পরীক্ষায় আমি তাদের থেকে বেশি নম্বর পেয়েছি। তাদের প্রতিভা অসাধারণ। তারা আমার নায়ক। আমি তাদের মতো হতে চাই”। মেনসার পক্ষ থেকে সদস্য হওয়ার জন্য অওমকে আমন্ত্রণ পত্রও পাঠানো হয়েছিলো।
ভারতীয় অর্নব শর্মা
ভারতের অর্নব বাস করে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের রিডিং শহরে। পড়ে শহরেরই ক্রসফিল্ড স্কুলে। মেনসার কঠিন বুদ্ধির পরীক্ষায় অর্নব বসেছিলো কোনরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই। এমনকি প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কেও জানা ছিলো না তার। কিন্তু পরীক্ষার স্কোর ছিলো তাক লাগানোর মতো। ১৬২! তখন তার বয়স ১১। আইনস্টাইন, হকিং কিংবা বিল গেটসের চেয়েও দুই বেশি!
অর্ণবের ভাষায়, “মেনসা টেস্ট বেশ কঠিন। আমি এই পরীক্ষায় পাস করার আশা করিনি। আমার পরীক্ষাটি শেষ করতে আড়াই ঘণ্টার মতো লেগেছিল। মাত্র সাত-আটজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল প্রাপ্তবয়স্ক।”
অর্ণবের মা মিশা ধামিজা শর্মা বলেন, ‘পরীক্ষার পুরোটা সময় আমি প্রার্থনা করছিলাম। কী হবে তা নিয়ে ভয়ে ছিলাম। কারণ, মেনসা টেস্টের কোনো প্রশ্নপত্র এর আগে দেখেনি ও।” তিনি আরোও জানান, মাত্র আড়াই বছর বয়সেই ছেলের প্রতিভা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন। বলেন, “তখনই একশোরও বেশি গুনতে পারত ও।” অর্নব গণিতে বেশ ভালো। এরই মধ্যে লন্ডনের ইটন কলেজ ও ওয়েস্টমিনিস্টারে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে অর্নব। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ ও গানের প্রতিও আগ্রহ আছে তার। ৮ বছর বয়সেই রিডিংয়ে আয়োজিত একটি নাচের প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে স্থান করে নিয়েছিলো সে।
অসাধারণ প্রতিভাধর লিডিয়া সেবাস্তিয়ান
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিশোরী লিডিয়া সেবাস্তিয়ান আর দশটা সাধারণ কিশোর কিশোরীর মতোই হ্যারি পটার সিরিজের দারুণ ভক্ত। নিয়মিত স্কুলে যায়, বন্ধুদের সাথে মজা করে। তবে একটু ব্যতিক্রম তো আছেই। তা না হলে তো মেনসার অমন কঠিন আইকিউ যাচাইয়ের পরীক্ষায় ১৬২ স্কোর তুলে ফেলতে পারতো না!
লিডিয়ার ভাষ্যমতে, “প্রথমদিকে আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু যখন আমি পরীক্ষাটি শুরু করি তারপর সবকিছু সহজ লাগতে শুরু করলো। ভয় অনেকটাই কেটে গিয়েছিলো”। স্কুল ছুটিতে ইন্টারনেটে ঘাঁটতে গিয়েই লিডিয়া মেনসার আইকিউ টেস্টের খোঁজ পায়। তারপর বাবাকে জানানো এবং কঠিন পরীক্ষায় বসা। বাকিটুকু ইতিহাস। লিডিয়ার স্কোরও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো আইনস্টাইনকে।
লিডিয়ার বাবা অরুণ সেবাস্তিয়ান পেশায় একজন রেডিওলজিস্ট। বাস করেন এসেক্সে। মেয়ের সাফল্যে লিডিয়ার বাবা মা অবাক হলেও দারুণ খুশি। জানালেন তাদের মেয়ে শুধু পড়াশোনা নয়, অন্যান্য বিষয়েও তার দারুণ দখল। মাত্র ৪ বছর বয়সেই শিখে গিয়েছিলো বেহালা বাজানো। লিডিয়ার বাবা মা আরও জানান, লিডিয়া মাত্র ছ’মাস বয়স থেকেই কথা বলতে শুরু করে!
ফিচার ইমেজ: CodePen