১ বিলিয়নের ঘরে ইনফিনিটি ওয়ার

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে সুপারহিরো ও কমিকপ্রেমীদের বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘অ্যাভেঞ্জারস: ইনফিনিটি ওয়ার’। মুক্তির পর থেকেই একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছে চলচ্চিত্রটি। প্রথম সপ্তাহে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ২৫ কোটি ও বিশ্বব্যাপী ৩৮ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি আয় করেছে এই চলচ্চিত্র। সব মিলিয়ে প্রথম সপ্তাহ শেষে ৬৩ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি আয় করায়, মুক্তির শুরুতে সবচেয়ে বেশি আয় করা চলচ্চিত্র হিসেবে রেকর্ড গড়ে ফেলেছে এটি। এছাড়াও এর ঝুলিতে রয়েছে আরও বেশ কিছু রেকর্ড।

এন্থনি ও জো রুসো ভাতৃদ্বয় পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি ‘মার্ভেল সিনেমাটিক ওয়ার্ল্ড’ এর ১৯তম চলচ্চিত্র। ১০ বছর আগে মার্ভেলের ‘আয়রনম্যান’ দিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়। ১০ বছর পরে ১৮টি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কাহিনীর মাঝে যোগসূত্র ধরে নতুন চলচ্চিত্র এই ইনফিনিটি ওয়ার, যেখানে মার্ভেলের বেশিরভাগ সুপারহিরোদের উপস্থিতি লক্ষণীয়।

Source: Polygon

আয়রনম্যান, স্পাইডারম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, থর, স্কারলেট উইচ, ব্যাল্ক উইডো, ব্ল্যাক প্যান্থার, ডক্টর ট্রেঞ্জসহ আরও কিছু সুপারহিরোর সাথে রয়েছে গার্ডিয়ানস অব গ্যালাক্সির স্টার লর্ড, গ্যামোরা, রকেট ও সবার পছন্দের গ্রুট। আর আছে পরাক্রমশালী খলনায়ক থানোস, যাকে পরাজিত করতে একই সাথে এতসব সুপারহিরোর সমাগম।

অভিনয়ে রয়েছেন মার্ভেলের পূর্ববর্তী চলচ্চিত্রগুলোয় অভিনয় করা রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, ক্রিস হেমসওর্থ, মার্ক রুফালো, ক্রিস ইভানস, স্কার্লেট জোহ্যানসন, টম হল্যান্ড, চ্যাডউইক বোসম্যান, এলিজাবেথ ওলসেন, সেবাস্টিয়ান স্ট্যান, ক্রিস প্যাটের মতো অভিনেতারা। একসাথে একেবারে এতগুলো সুপারহিরোর উপস্থিতি এই চলচ্চিত্রের অন্যতম আকর্ষণ। হয়তো এ কারণেই এ চলচ্চিত্রের এ রেকর্ড গড়ার ইতিহাস চলছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন দিক থেকে রেকর্ড গড়েছে এটি।

১০০ কোটির দৌড়ে ‘স্টার ওয়ার্স: দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেনস’কে পেছনে ফেলার পথে

মুক্তির ৯ম দিনে এর মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৯০.৫১ কোটি মার্কিন ডলার, যার মাঝে শুধু উত্তর আমেরিকায় ৩৩.৮ কোটি এবং বিশ্বব্যাপী ৫৬.৬১ কোটি। শুধু ভারতেই এর আয় ৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে! এখন দেখার বিষয়, ১০০ কোটি ডলার আয় করতে চলচ্চিত্রটির কতদিন সময়ের প্রয়োজন। মুক্তির ১০ম অথবা ১১তম দিনেও ১০০ কোটি আয় করলে তা ‘স্টার ওয়ার্স: দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেনস’কে পরাজিত করবে। ১০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করতে ‘দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেনস’ এর প্রয়োজন হয়েছে ১২ দিনের। সুতরাং তা জানতে মার্ভেল সুপারহিরো ও খলনায়কদেরকে রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মুক্তির শুরুতেই নিজ দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়

এই সিনেমাটি প্রথম সপ্তাহ শেষেই ২৫.৮২ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে উদ্বোধনের শুরুতেই নিজ দেশে আয় করা সর্বোচ্চ আয়ের চলচ্চিত্রের রেকর্ড গড়ে। এর আগে তা ছিল ২৪.৮ কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে ‘স্টার ওয়ার্স:দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেনস ’এর দখলে।

 

মুক্তির শুরুতেই বিশ্বব্যাপী সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়

৬৪ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে ‘ফেইট অব দ্য ফিউরিয়াস’ কে পেছনে ফেলে উদ্বোধনের শুরুতে সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়ের চলচ্চিত্রের রেকর্ড গড়েছে এটি। ‘ফেইট অব দ্য ফিউরিয়াস’ ৫৪.১৯ কোটি ডলার আয় করেছিল। সেক্ষেত্রে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার’ ১০ কোটি মার্কিন ডলার বেশি আয় করে। অবশ্য আন্তর্জাতিক উদ্বোধনের ক্ষেত্রে ‘ফেইট অব দ্য ফিউরিয়াস’ এখনও সর্বোচ্চ ৪৪.৩২ মার্কিন ডলার আয় নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে। সেখানে ইনফিনিটি ওয়ার রয়েছে ২য় স্থানে। উল্লেখ্য, ইনফিনিটি ওয়ার এখনও চীনে মুক্তি পায়নি। চীনে এটি ১১ মের আগে মুক্তি পাবে না। চীনের বিশাল বাজার ছাড়াই এই রেকর্ড পরিমাণ আয় করেছে ইনফিনিটি ওয়ার।

 

৩ দিনেই ৬টি মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স চলচ্চিত্রের সবসময়ের আয়ের অধিক আয়

ইনফিনিটি ওয়ার মুক্তির প্রথম তিন দিনেই এর বিশ্বব্যাপী আয় মার্ভেলের আয়রনম্যান ২ (৬২.৩৯ কোটি), আয়রনম্যান (৫৮.৫২ কোটি), অ্যান্টম্যান (৫১.৯৩ কোটি), থর (৪৪.৯৩ কোটি), ক্যাপ্টেন আমেরিকা: দ্য ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জার (৩৭.০৬ কোটি) এবং দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক (২৬.৩৪ কোটি)- এই সবগুলো চলচ্চিত্রের এ পর্যন্ত মোট আয়কে পেছনে ফেলে দেয়।

বিভিন্ন দেশে মুক্তির শুরুতেই সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড

এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু দেশে মুক্তির শুরুতেই সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড গড়েছে এটি। দক্ষিণ কোরিয়া (৩.৯২ কোটি), ব্রাজিল (২.৫১ কোটি), মেক্সিকো (১.৮৮ কোটি), ফিলিপাইন (১.২৫ কোটি), থাইল্যান্ড (১ কোটি), ইন্দোনেশিয়া (০.৯৬ কোটি) ও মালয়শিয়ায় (০.৮৪ কোটি) মুক্তির প্রথম সপ্তাহ শেষে সে দেশগুলোর জন্য সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড গড়েছে। এছাড়া এটি প্রথম সপ্তাহে ভারতে প্রথম হলিউডি চলচ্চিত্র হিসেবে ১.৮৬ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের রেকর্ড করেছে এবং এ পর্যন্ত ২০১৮ সালের চলচ্চিত্রের মাঝে মুক্তির প্রথম সপ্তাহ শেষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড করেছে।

Source: CNET

উত্তর আমেরিকায় শনি ও রবিবারের সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড

মুক্তির পরে প্রথম শনিবারে এটি আয় করে ৮৩ লক্ষ মার্কিন ডলার। এটিই উত্তর আমেরিকায় কোনো চলচ্চিত্রের শনিবারের সর্বোচ্চ আয়। এর আগে প্রায় ৬৯ লক্ষ মার্কিন ডলারের কিছু বেশি আয় নিয়ে এই রেকর্ডটি ছিল ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ এর দখলে।

উত্তর আমেরিকার রবিবারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ডটিও ৬৯ মার্কিন ডলারের কিছু বেশি আয় করে ইনফিনিটি ওয়ারই নিজের ঝুলিতে ভরেছে। এক্ষেত্রে এটি পেছনে ফেলেছে ‘স্টার ওয়ার্স: ফোর্স অ্যাওয়েকেনিংস’ কে, যা ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার নিয়ে এ স্থানটি ধরে রেখেছিল

Source: GameSpot

চলচ্চিত্রটির এই ব্যাপক ব্যবসায়িক সাফল্যের পেছনে মার্ভেলের অন্যান্য চলচ্চিত্রের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। বিগত ১০ বছর ধরেই আগের চলচ্চিত্রগুলো কাহিনীকে একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, যা অবশেষে এই ইনফিনিটি ওয়ারে দেখা যায়। প্রায় ১২ সপ্তাহ আগে মুক্তি পাওয়া ব্ল্যাক প্যান্থারও হয়েছে ব্যাপক ব্যবসাসফল

তবে মুক্তির প্রায় ১০-১১ দিনেই যদি ইনফিনিটি ওয়ার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করতে সক্ষম হয়, তাহলে এটি ‘অ্যাভাটার’ এর রেকর্ড ভেঙে ফেলার কোনো সুযোগ রয়েছে কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়ের চলচ্চিত্র হিসেবে রেকর্ডটি অ্যাভাটারের দখলেই রয়েছে, যা প্রায় ২৭৮ কোটি মার্কিন ডলারেরও কিছু বেশি। তাহলে ‘অ্যাভেঞ্জারস: ইনফিনিটি ওয়ার’ কি পারবে সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় করা চলিচ্চত্রের রেকর্ড গড়তে?

আপডেট: ইনফিনিটি ওয়ার মুক্তির ১১ দিনেই ১০০ কোটি মার্কিন ডলা আয় করে ‘স্টার ওয়ার্স: দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেনস’-কে পেছনে ফেলে রেকর্ড গড়েছে

Featured Image Source: Marvel Studios

Related Articles

Exit mobile version