যেকোনো প্রতিযোগিতার সফল বাস্তবায়নের জন্য কিছু নিয়ম থাকা আবশ্যিক। এই নিয়মটা অবশ্য একদিনে নিখুঁত হয় না। সময়ের সাথে সাথে কিংবা আধুনিকতার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত যেমন নিজেকে পাল্টাতে হয়, ঠিক তেমনি কোনো প্রতিযোগিতাকেও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রতিনিয়ত নিয়মে পরিবর্তন আনতে হয়।
বর্তমান বিশ্বে ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয় চ্যাম্পিয়নস লিগকে। ১৯৫৫ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট প্রথমে পরিচিত ছিল ‘ইউরোপিয়ান কাপ’ নামে। ১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে এর নতুন নামকরণ করা হয় ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ’ নামে এবং বর্তমানে সেই নামেই পরিচিত আছে।
ইউরোপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট হচ্ছে ‘উয়েফা ইউরোপা লিগ’। ১৯৭১ সালে চালু হওয়া এই টুর্নামেন্টের আদি নাম ছিল ‘উয়েফা কাপ’, যা কিনা ২০০৯-১০ সাল থেকে ‘উয়েফা ইউরোপা লিগ’ নামে পরিচিত হয়।
এই টুর্নামেন্ট দুটি যে সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয় তার নাম ‘ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন’, বা সংক্ষেপে ‘উয়েফা’। এই উয়েফা কর্তৃক পুরনো নিয়মে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যা কিনা ২০১৮-১৯ মৌসুম থেকে কার্যকর হবে। একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক পরিবর্তনগুলোতে।
ম্যাচ শুরুর সময়ে পরিবর্তন
এতকাল ধরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ শুরু হতো বাংলাদেশ সময় ১২:৪৫ মিনিটে, আর কিছু কিছু ম্যাচ ১:৪৫ মিনিটে। কিন্তু বাংলাদেশী দর্শকদের কষ্ট করে রাত জেগে খেলা দেখার ঝামেলা শেষ হতে যাচ্ছে, ম্যাচের সময় নিয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে যে ম্যাচ শুরু হতো 12:00 CET ও 12:00 CEST-এ (CET এর মানে হচ্ছে Central European Time, আর CEST এর মানে হচ্ছে Central European Summer Time), বর্তমানে সেটা শুরু হবে 21:00 CET-এ। তবে গ্রুপ পর্বের কিছু ম্যাচ 18:55 CET-এ অনুষ্ঠিত হবে। খেলাটা এগিয়ে আনা হয়েছে টেলিভিশন দর্শকদের কথা বিবেচনা করে, বিশেষ করে এশিয়ার দর্শক।
নকআউট ম্যাচে অতিরিক্ত বদলী খেলোয়াড়
যদি নকআউট স্টেজে নির্ধারিত সময়ের মাঝে খেলা শেষ না হয়, সেই ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই একজন করে বাড়তি খেলোয়াড় বদলী হিসেবে খেলাতে পারবে। এর ফলে মূল সময়ে যে তিনজন খেলোয়াড় বদলী হিসেবে ব্যবহার করা হতো, সেটাতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। পরীক্ষামূলকভাবে অবশ্য নিয়মটা ক্লাব বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে।
ফাইনাল ম্যাচের জন্য বাড়তি বদলি খেলোয়াড়ের তালিকা
সচরাচর ম্যাচ শুরুর আগে ১৮ জন (১১ জন মূল আর ৭ জন অতিরিক্ত) খেলোয়াড়ের একটা তালিকা জমা দিতে হয়। কিন্তু পরিবর্তিত নিয়মে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল, উয়েফা ইউরোপা লিগ ফাইনাল আর উয়েফা সুপার কাপে ২৩ জন খেলোয়াড়ের তালিকাই জমা দেওয়া যাবে।
উয়েফার মতে, “এই নিয়মটা ক্লাব বিশেষ করে কোচদেরকে তাদের বদলি খেলোয়াড়ের বিষয়ে আরো নমনীয় রাখবে এবং সিজনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোর জন্য দলের পরিকল্পনায় সহায়তা করবে।”
গ্রুপ পর্যায়ের পরও বাড়তি খেলোয়াড় নিবন্ধনের সুযোগ
আগের নিয়ম অনুযায়ী, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরুর আগে প্রতিটি দলকে ২৩ জনের একটা স্কোয়াড জমা দিতে হতো উয়েফার কাছে। পুরো সিজনে এর বাইরে কোনো খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পেতেন না। কিন্তু পরিবর্তিত নিয়মে গ্রুপ স্টেজ শেষ হবার পর নতুন করে তিনজন খেলোয়াড়কে নিতে পারবে যেকোনো দল।
আগের নিয়মের কারণে এই মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিলিপ কৌতিনহোকে খেলাতে পারছে না বার্সেলোনা, কারণ এই সিজনের শুরুতেই লিভারপুলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন কৌতিনহো। ঠিক একই কারণে আর্সেনাল স্ট্রাইকার অবামেয়াং ইউরোপা লিগে গানারদের হয়ে খেলতে পারছেন না, কারণ এর আগেই তিনি বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলেছেন।
স্মারক হিসেবে জার্সিতে একাধিক বিজয়ী ব্যাজ লাগানো
যে সমস্ত দল কমপক্ষে পাঁচটি কিংবা টানা তিনবার উয়েফা ইউরোপা লিগ (অথবা উয়েফা কাপ) জিততে পেরেছে, তারা তাদের জার্সির হাতাতে ‘স্মারক’ হিসেবে একটা বিশেষ ‘মাল্টিপল-উইনার ব্যাজ’ লাগাতে পারবে। বর্তমানের দলগুলোর মাঝে কেবলমাত্র সেভিয়া এই কাজটা আগামী মৌসুম থেকে করতে পারবে। তারা উয়েফা ইউরোপা লিগ পাঁচবার জিতেছে এবং ২০১৪-১৬ পর্যন্ত টানা তিনবারও জিততে পেরেছে।
কথিত রয়েছে, যেকোনো পরিবর্তনই ভালোর জন্যে করা হয়। দেখা যাক, এই পরিবর্তনগুলো কতটা কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে টুর্নামেন্টের জন্য!
Featured photo: UEFA