- চীনের একদল টিস্যু ইঞ্জিনিয়ার এবং প্লাস্টিক সার্জন বিশ্বে প্রথমবারের মতো রোগীর নিজ টিস্যু দিয়ে পরীক্ষাগারে নতুন কান তৈরি করেছেন।
- এই অভাবনীয় সাফল্যের ঘটনাটি বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো ঘটল।
- পাঁচ জন শিশুর থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে তৈরি কানগুলো তাদের দেহে প্রতিস্থাপন করেছেন তারা।
রোগীর ছয় বছর বয়সে প্রথম কান স্থাপনের প্রক্রিয়াটি শুরু করা হয়। বর্তমানে তার আসল কানের মতো দেখতে পূর্ণ একটি কান রয়েছে এবং প্রতিস্থাপনের পরে বিগত আড়াই বছরে সে গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়নি।
সে সহ বাকি চারজন শিশু মাইক্রোশিয়া নিয়ে জন্মেছিল। এর ফলে কানের বাইরের অংশ সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয় না এবং শুনতে সমস্যা হয়। এই সমস্যার বর্তমান চিকিৎসার একটি উপায় হচ্ছে কোনো রোগীর পাঁজর থেকে তরুণাস্থি নিয়ে সেটিকে কানের আকার দান করা।
ইবায়োমাডিসিন জার্নালে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের কাজ অনুযায়ী, এ পদ্ধতিটি অবধারিতভাবে দাতার ক্ষতি করে এবং সার্জনের মাধ্যমে জটিল ত্রিমাত্রিক কানের আকার তৈরি করাও খুব কঠিন।
শুরুতে বিজ্ঞানীরা রোগীর সুস্থ্য কানের সিটিস্ক্যান করে নেন। এরপর তারা সফটওয়ারের সাহায্যে সেগুলোর প্রতিবিম্বের মতো ছবি নিয়ে এর মুদ্রিত ত্রিমাত্রিক গড়ন তৈরি করেন। তারপরে এই গড়নগুলোকে জীবাণুবিয়োজ্য ছিদ্রযুক্ত পিজিএ নামক পদার্থের মাঝে রাখা হয়।
রোগীর বিকলাঙ্গ কানের টিস্যু থেকে তরুণাস্থি উৎপাদনকারী কন্ড্রোসাইট কোষ আলাদা করে ফেলা হয়। সংখ্যায় পর্যাপ্তভাবে বৃদ্ধির পরে সেগুলোকে সেই গড়নের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেগুলোর পুষ্টির জন্য বৃদ্ধিতে সহায়ক উপাদানের মাঝে পরীক্ষাগারে রেখে দেওয়া হয়। ১২ সপ্তাহের এ প্রক্রিয়ায় কন্ড্রোসাইট কোষগুলো কোলাজেন ও ইলাস্টিন তন্তু তৈরি করতে থাকে। অবশেষে সেগুলো রোগীর দেহে প্রতিস্থাপনের উপযোগী হয়ে ওঠে।
এরপর আড়াই বছর ধরে প্রথম রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এসময় তার বেশ কিছু কসমেটিক সার্জারি করা হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালে কিছু কলার নমুনা নেওয়া হয়, যা প্রমাণ করে কন্ড্রোসাইট কোষগুলো সুস্থ ছিল এবং স্বাভাবিক কানের তুলনায় তরুণাস্থি উৎপন্ন করে চলছিল।
দুঃখজনকভাবে, বাকি চারজন রোগীর ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। একজন রোগীর নতুন কান তরুণাস্থি উৎপন্নে ব্যর্থ হয়। অন্যা রোগীদের কানগুলো স্বাভাবিক কানের মতো সুন্দর আকার ধারণ করেনি। সকল রোগীই কান প্রতিস্থাপনের পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যবেক্ষণে থাকবে।
ফিচার ইমেজ: The Verge