১২ বছর আগে ফ্রান্সে প্রথম ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন সার্জনদের একটি দল। এরপর পৃথিবী জুড়ে একে একে প্রায় ৪০টি ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয় এবং সেগুলোর প্রত্যেকটিই সফল হয়। তবে দুই মাস আগে একজন রোগীর শরীর ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট নিতে সক্ষম না হওয়ায় চিকিৎসকেরা দ্বিতীয়বারের মতো সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নেন। ফ্রান্সের প্যারিসে সম্পন্ন হওয়া ৪০ বছর বয়স্ক মানুষটির উপরে করা এই চেষ্টা আদৌ সফল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও অবশেষে দ্বিতীয় ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফল হয়েছে। প্রথম সার্জারিতে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও পরবর্তী সার্জারি যে সফলভাবে করা সম্ভব তা নিয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলেন চিকিৎসকেরা। ফ্রেঞ্চ বায়োমেডিকাল এজেন্সি এবং ন্যাশনাল হসপিটালের মতে, “এই সংযোজনটি দেখাচ্ছে যে, শরীর না নিতে চাইলেও পুনঃফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা সম্ভব।”
তবে এ নিশ্চয়তা স্থায়ী নয়। এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণ সার্জারি করা সম্ভব হয়নি এবং ৪০টির কম ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্টের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল দেখতে অপেক্ষা করে আছেন চিকিৎসকেরা। সেক্ষেত্রে, একদম প্রাথমিক অবস্থায় পুনঃফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট কতদিন কাজ করবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। কয়েক সপ্তাহ যাওয়ার আগে সার্জারি পুরোপুরি সফল হয়েছে সেটাও বলা সম্ভব নয়। দাতার কাছ থেকে অঙ্গ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় গ্রহণকারীর শরীর সেটা নিতে চায় না। এছাড়াও বাড়তি সব সমস্যা এড়িয়ে চলতে নিয়মিত ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগস নিতে হয় গ্রহণকারীকে। বাকি জীবন এই ঔষধ নিতে হয়, যেটার বেশ স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে। ১২ বছর আগে ইসাবেল ডিনোয়া প্রথম ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন। ২০১৬ সালে ক্যান্সারে ভুগে মারা যান এই নারী। ইসাবেলের চিকিৎসকের মতে, এই ক্যান্সারের পেছনে কিছু ঔষধের হাত আছে। তিনি সেসব ঔষধের কথা উল্লেখ করেন যেগুলো ইসাবেল নিজের শরীরে ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্টকে বজায় রাখতে নিয়মিত গ্রহণ করতেন।
উটকো ঝামেলা, সংক্রমণ, সার্জারি এবং নিয়মিত ঔষধ গ্রহণের মতো হাজারটা ঝক্কি থাকলেও ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট অনেকের জীবনে নতুন আশার আলো হয়ে দেখা দেয়। শারীরিক ত্রুটি, দুর্ঘটনা বা যেকোনো সমস্যাকে খানিকটা হলেও দূর করে দিতে পারে এই প্রক্রিয়াটি। অনেক কিছু হারিয়েও এই সমস্যাপূর্ণ ব্যাপারটির মাঝেই সুখ খুঁজে পায় মানুষ, যেমনটা পেয়েছিলেন ইসাবেল।
ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্টের ব্যাপারটি ফ্রান্সে শুরু হলেও বর্তমানে প্রায় ৭টি দেশে এই প্রক্রিয়া চালু আছে। তবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের জন্য এখনো অনেক গবেষণার প্রয়োজন। চিকিৎসকেরা নিয়মিত নিত্যনতুন উপায় খুঁজছেন। এমন কোনো উপায় যাতে ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়, ঔষধ গ্রহণ করতে না হয়; আর করলেও সেটা যাতে পরবর্তীতে কোনো প্রভাব না ফেলে। আজ কিংবা কাল সফলতা আসবেই। এখন কেবল সেই সময়ের অপেক্ষা।