সর্বসম্মতিক্রমে সিরিয়াতে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ নিরাপত্তা পরিষদে

  • সিরিয়াতে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
  • প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার ভেটো প্রদানের আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত পাশ হয়েছে।
  • নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক স্বীকৃত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো যুদ্ধবিরতির আওতার বাইরে থাকবে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতক্রমে সিরিয়াতে ৩০ দিনের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পাশ করেছে। গতকাল শনিবার পাশ হওয়া এ প্রস্তাবের ফলে সিরিয়ার অবরুদ্ধ পূর্ব ঘুতায় মানবিক সাহায্য প্রেরণ এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিরিয়াতে ‘অনতিবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা। তবে লন্ডন ভিত্তিক সিরিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা “সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস” (SOHR) জানিয়েছে, প্রস্তাব পাশ হওয়ার কয়েক মিনিট পরেও সিরিয়ার পূর্ব ঘুতায় সিরিয়ার সরকারী যুদ্ধ বিমান থেকে আক্রমণ করা হয়েছে।

পূর্ব ঘুতা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী একটি এলাকা, যা এখনও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন। ২০১৩ সাল থেকেই এলাকাটি সরকারী বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। গত রবিবার থেকে সিরিয়ার সরকারী বাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এলাকাটির উপর তীব্র বিমান হামলা এবং রকেট ও মর্টার নিক্ষেপ শুরু করে।

গত ছয়দিনের হামলায় এখন পর্যন্ত পূর্ব ঘুতায় অন্তত ৫১৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১২৭টি শিশু আছে। শুধুমাত্র গতকাল শনিবারেই ৮টি শিশুসহ ৪১ জন নিহত হয়েছে।  জাতিসংঘ পূর্ব ঘুতার অবস্থাকে “পৃথিবীতে অবস্থিত নরক” বলে অভিহিত করেছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি পাশ হওয়ার কথা ছিল প্রথমে বৃহস্পতিবার, এবং এরপর শুক্রবার। কিন্তু খসড়া প্রস্তাবের কিছু শব্দের ব্যাপারে রাশিয়া আপত্তি তোলায় তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে গতকাল শনিবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৩০ মিনিটে (আন্তর্জাতিক সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট) প্রস্তাবটি পাশ হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি স্থায়ী সদস্যের সকলে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদান করে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি রাশিয়ার সমালোচনা করে বলেন, রাশিয়ার আপত্তির কারণে কয়েকটি শব্দ আর কমা ছাড়া আর কিছুরই পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু রাশিয়ার কারণে নিরাপত্তা পরিষদের অপেক্ষা করা প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের দুর্দশা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যাত করে বলেছেন, সমঝোতাকে কার্যকর করার জন্য আলোচনার প্রয়োজন ছিল।

রাশিয়ার আপত্তির মুখে খসড়া প্রস্তাবের যে শব্দগুলোর পরিবর্তন ঘটেছে, তার একটি হলো, “তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির” পরিবর্তে “অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি” ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া মানবিক সাহায্য পাঠানোর ক্ষেত্রেও তাৎক্ষণিকভাবে শব্দটি বাদ দিয়ে অনতিবিলম্বে ব্যবহার করা হয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, জঙ্গী সংগঠনগুলোর সহায়কদেরকে যুদ্ধবিরতির আওতার বাইরে রাখা। প্রথম খসড়াতেই আল-কায়েদা, আইএস এবং নুসরাকে যুদ্ধবিরতির আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার আপত্তির মুখে এরা ছাড়াও এদের সহযোগীদেরকেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আল-নুসরা ফ্রন্ট, যারা পূর্বে আল-কায়েদার সিরীয় শাখা হিসেবে পরিচিত ছিল, তারা পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে হাইআত তাহরির শাম গঠন করেছিল, যারা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্য একটি এলাকা ইদলিবে সক্রিয়। বিদ্রোহীদের অন্যান্য অনেকগুলো দলও তাহরির শামের সাথে সম্পর্কিত। পাশ করা প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক স্বীকৃত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সহযোগীদেরকেও যুদ্ধবিরতির আওতায় রাখার কারণে তাই বাশার আল-আসাদের এবং রাশিয়ার বিমান বাহিনীর পক্ষে ইদলিবে হামলা চালিয়ে যেতে তেমন বাধা থাকবে না।

ফিচার ইমেজ- AFP

Related Articles

Exit mobile version