Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হ্যাকিং ছাড়াও কীভাবে চুরি হতে পারে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য?

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামক একটি ডাটা অ্যানালিটিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফেসবুকের কাছে থেকে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় নিয়ে পুরো বিশ্ব তোলপাড়। এরই মধ্যে আবার Delete Facebook নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। এর জের ধরে ফেসবুকের শেয়ার বাজার ইতিহাসের সর্বনিম্ন আয়ের সপ্তাহ পার করছে। ইতোমধ্যে স্পেস-এক্স এবং টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক Delete Facebook ক্যাম্পেইনে সাড়া দিয়ে নিজের এবং নিজের প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ অচল করে দিয়েছেন।

Delete Facebook ক্যাম্পেইন সকলকে ফেসবুক ডি-একটিভেট করে দিতে বলছে; Source: cliqz.com

কোটি কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুক মানুষের দৈনন্দিন কাজের একটি প্রধান অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করাবার জন্য ফেসবুককে বেছে নেয় প্রথম পছন্দ হিসেবে। ফেসবুকের প্রতি মানুষের প্রচুর বিশ্বাস। কিন্তু ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য যদি ফেসবুক রক্ষা করতে না পারে তাহলে ব্যপারটি মোটেও স্বাভাবিকভাবে নেয়ার মতো থাকে না। ফেসবুককে তার ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণ করার কথা, বিনা অনুমতিতে সেই তথ্যগুলো অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেবার কথা নয়। আর এমনটি যদি হয়ে থাকে তাহলে ব্যাপারটি সত্যিই খুব গর্হিত।

অনেক সময় নিজের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকাররা কম্পিউটার হ্যাক করেও নিয়ে যেতে পারে। বড় বড় ব্যাংকগুলোতে এরকমটি হতে দেখা যায়। তবে শুধু যে অনলাইনে বা কম্পিউটার থেকেই তথ্য চুরি হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় এগুলো ব্যবহার না করেও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে। ধরা যাক, একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারীর নিজের তথ্য কীভাবে গোপন এবং সংরক্ষণ করে রাখতে হয় তার সব উপায় জানেন। তিনি একই পাসওয়ার্ড দ্বিতীয়বার ব্যবহার করেন না। ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যান ভিপিএন ব্যবহার করে। কিন্তু এতসবের মধ্যেও কিন্তু তার তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। কীভাবে সেটা সম্ভব?

স্কিমিং

যারা কার্ড দিয়ে দৈনন্দিন লেনদেন করেন, তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন- পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (PIN) খুব সহজেই স্কিমিংয়ের মাধ্যমে চুরি করে নেয়া সম্ভব। এ ধরনের চুরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে মুদির দোকানগুলোতে কিংবা রাস্তার পাশে জিনিসপত্র বেচতে বসা দোকানগুলোতে। এ ধরনের জায়গাকে ইংরেজিতে বলে ব্রিক এন্ড মর্টার লোকেশন। বাইরের দেশে সাধারণ দোকানেও কার্ড সুইপ করে লেনদেন করা যায়।

স্কিমিং ভিডিও করেও তথ্য হাতিয়ে নেয়া যায়। ATM বুথগুলোতে এরকম ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে স্কিমার নামক একটি যন্ত্র, যা ব্যবহার করে চুরি করা হয়। এটি এমন একটি যন্ত্র যেটি বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা যায়। প্রতারকেরা ছোট একটি স্কিমার ব্যবহার করে, যেখানে কার্ড প্রবেশ করালে এর যাবতীয় তথ্য ম্যাগনেটিক স্ট্রিপের মাধ্যমে তারা হাতিয়ে নিতে পারে। ATM বুথগুলোতে খুব সহজেই ক্যামেরার সাথে স্কিমার বসানো যেতে পারে এবং এর সাথে টাচপ্যাডও বসানো যায় যা গ্রাহকের PIN হাতিয়ে নিতে পারে। এ বিষয়ে ব্যবহারকারীর চোখ-কান সজাগ রেখে সতর্ক থাকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে স্কিমার নামক একটি যন্ত্র যা ব্যবহার করে চুরি করা হয়; Source: texashillcountry.com

মেইল থেফট

নিজের আদান প্রদান করা মেইল বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা হচ্ছে এই মেইল থেফট। এর মাধ্যমে কী কী তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে শুধু সেটাই দেখা হয় না, বরং এর সাথে কী তথ্য ফেলে দেয়া হয়েছে হয়েছে (Trash) সেসব তথ্যও বের করা যায়। অনেক সময় অপরিচিত কোনো মেইল আসলে সেই মেইলে ঢুকলেই এই মেইল থেফট হয়ে যেতে পারে। তাই মেইল খোলার আগে সতর্ক হওয়া উচিত। যদি পরিচিত কারো মেইল হই কিংবা প্রত্যাশিত কোনো মেইল হয় তখনই সেই মেইলটি খোলা উচিত, অন্যথায় সন্দেহজনক কিছু এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। এ ধরনের চুরি বাসায় বাসায় যে মেইল বক্স আছে সেখান থেকেও হতে পারে। সেই মেইল বক্স খুলে তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে।  বাইরের দেশগুলোতে ঘরের বাইরে মেইল বয থাকে, সেখানে চিঠি এসে জমা হয়। এরকমটি হলে অবশ্যই স্থানীয় পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

এর আগে যে স্কিমারের কথা বলা হয়েছে সেটা শুধু কার্ডের নম্বরই চুরি করে না, মেইল থেফট করার জন্যও একে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে নিজের ব্যাঙ্কের স্টেটমেন্ট, কোথায় কোথায় কত টাকা বিল দেয়া হচ্ছে বা অন্যান্য গোপনীয় অফিসিয়াল কাগজপত্রও চুরি করে নেয়া যায়।

প্রি-টেক্সটিং

গোপনে কারোর অনিষ্ট করা এবং তথ্য হাতিয়ে নেয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর একটি উপায় হচ্ছে এই প্রি-টেক্সটিং। আগের দুটি উপায় ব্যবহার করে প্রতারক চক্রের কাছে ব্যবহারকারীর প্রায় পুরো তথ্যই চলে এসে যায়। যদি কোনো কারণে পিন নম্বর না পাওয়া যায় তখন এই প্রি-টেক্সটিং উপায় অবলম্বন করা হয়। প্রি-টেক্সটিং-এ প্রতারক চক্র ব্যবহারকারী সেজে ব্যাংকে কিংবা অন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে। যোগাযোগ করার পর তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় যে প্রশ্নগুলোর উত্তর শুধু কার্ডের ব্যবহারকারীর নিজের জানার কথা। কিন্তু যেহেতু তথ্য ইতোমধ্যে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে, তাই সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চোরকে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। সেই প্রশ্নগুলোর ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পারলেই পিন নম্বর থেকে শুরু করে অন্যান্য খুঁটিনাটি তথ্যও পাওয়া যায়। এজন্য ‘Identity Theft’ এর সবচেয়ে ক্ষতিকারক শ্রেণী হচ্ছে এই প্রি-টেক্সটিং।

আসলে এভাবে তথ্য চুরি হয়ে গেলে ব্যবহারকারীর আর কিছু করার থাকে না। সব তথ্য আবার নতুন করে সাজিয়ে নতুন করে সব শুরু করতে হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিজের ব্যক্তিগত তথ্য আরেকজনের হাতে চলে গিয়েছে এটা বুঝতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, টাকা-পয়সা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সম্পদও এমন অবস্থায় আর ফিরে পাওয়া যায় না।

IDShield তাদের গ্রাহকের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে; Source: insane products.com

 

অনেক সময় অনেকে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়ে থাকে যারা নিরাপত্তা দেখাশোনা করে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে IDShield। এই প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের শুধু নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কই করে না, নিরাপত্তা আরও জোরদার কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করে এবং যদি তাদের কোনো মক্কেল প্রতারক চক্রের চক্রান্তের মধ্যে পড়েও যায়, তারা নিজেদের গোয়েন্দা লাগিয়ে সেখান থেকে সব তথ্য ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করে থাকে। যদি প্রতিষ্ঠানটি আগে আগে চুরির সংকেত পায় তাহলে চুরি করে যারা তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে তাদেরকেও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করে।

আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিগুলো খুব ভালো কাজ করে; Source: youtube.com

সব কিছু অনলাইন ভিত্তিক এবং ডিজিটাল ভিত্তিক হওয়াতে অনেকগুলো সুবিধার মধ্যে যে অসুবিধাগুলো হয়ে থাকে সেগুলোর সমাধান এখনো পুরোপুরি করা যায়নি। ব্যাংকিং সিস্টেম, টাকা-পয়সা লেনদেনের ব্যাপারগুলোতে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি সাইবার ক্রাইমগুলোকে আরো কড়া আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

এসব নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিগুলো খুব ভালো কাজ করে। যেমন- কারো চোখ স্ক্যান বা আঙ্গুলের ছাপ, ইমেজ রিকগনিশন ব্যবহার করে নিজের মুখমণ্ডল স্ক্যান করা ইত্যাদি দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফিচার ইমেজ সোর্স: GOBangkingRates.com

Related Articles