Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গানের অর্ণব, অর্ণবের গান

“কষ্টগুলো শিকড় ছড়িয়ে,
ওই ভয়ানক একা চাঁদটার সাথে,
স্বপ্নের আলোতে যাব বলে-
যখন চোখ ভিজে যায় রাতে!”

পাতলা ফিনফিনে লম্বা চুলের এক ছেলে। কাঁধে তার গিটার। শায়ান চৌধুরী অর্ণব, বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী এবং সঙ্গীত নির্দেশক। অর্ণব নামেই যার দেশ জুড়ে পরিচিতি। ১৯৭৯ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সত্যিকার অর্থে তার বাবা-মার মতো অর্ণব নিজেও একজন চিত্রশিল্পী এবং নিজেকে একজন সঙ্গীতশিল্পীর চেয়ে চিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

সায়ান চৌধুরী অর্ণব; image source: thedailystar.net

পারিবারিক ঐতিহ্য

অর্ণবের বাবা-মা দুজনই চিত্রশিল্পী ছিলেন। তার বাবা চিত্রশিল্পী স্বপন চৌধুরী। তার চাচা একজন সঙ্গীতশিল্পী, সোলস ব্যান্ডের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী তপন চৌধুরী

ছোটবেলা ও শিক্ষাজীবন

অর্ণবের শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে। তবে কিছুদিনের মাঝেই ছোট্ট অর্ণবকে পড়াশোনার জন্য ভারতের কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তিনি সাউথ পয়েন্ট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। তার মা ছিলেন শান্তিনিকেতনের কলা ভবনের ছাত্রী। এক বছর পর তার মা একদিন অর্ণব এবং তার দিদিকে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে নিয়ে যান। সেখানকার পড়াশোনার পরিবেশ দেখে অর্ণব এর প্রেমে পড়ে যান। বিশেষ করে শান্তিনিকেতনের সবুজ-শ্যামল পরিবেশ এবং সেই সবুজ পরিবেশের সবুজ ঘাস তাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। তার দিদি এবং তিনি তার মায়ের কাছে বায়না ধরেন এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য। অর্ণব এবং তার দিদির জোরাজুরিতে অর্ণবের মা তাদেরকে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করিয়ে দেন। সায়ান চৌধুরী অর্ণব সেখানে চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানে তিনি ‘অর্ণব’-এর চেয়ে ‘সায়ান’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। এ জন্য অর্ণব বলে থাকেন তিনি কলকাতার সায়ান আর বাংলাদেশের অর্ণব।

শান্তিনিকেতনে ক্লাস চলছে; image source: bd-pratidin.com

অর্ণব যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন শান্তিনিকেতনেরই এক সহপাঠীকে তার ভালো লেগে যায়। তার নাম ছিল সাহানা বাজপেয়ী। অষ্টম-নবম শ্রেণীর দিকে তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই অর্ণব ক্ল্যাসিকাল এস্রাজ শেখা শুরু করেন। শান্তিনিকেতনে চিত্রকলা নিয়ে পড়লেও সেখানকার পরিবেশই তাকে গানের জগতে নিয়ে আসে।

বছরে তিনবার ছুটিতে দেশে আসতেন অর্ণব। তখন তার বন্ধুরা সবাই গিটার, কিবোর্ড নিয়ে ঘুরত। তাদের সংস্পর্শেই সঙ্গীতের ওয়েস্টার্ন দিকটাও তার কাছে উন্মোচিত হয়। বন্ধুদের কাছে এসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি মাত্র সাত দিনেই গিটার বাজানো শিখে গেলেন! শান্তিনিকেতনে বাউল গানের সংস্পর্শ মাঝেমাঝেই তার গানে ধরা পড়ে। সেখানকার মুক্ত বাতাসে অর্ণব কাটিয়েছেন তার জীবনের সতেরটি বছর। তিনি কলকাতার বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন থেকে ভিজুয়াল আর্টসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

সঙ্গীতজীবন

সঙ্গীতজীবনের প্রথমদিকে অর্ণব কিছুটা বিভ্রান্তিতে ভুগছিলেন। শান্তিনিকেতনে শান্তিদেব ঘোষের মতো গান গাইবেন, নাকি গিটার বাজিয়ে গান বাঁধবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তি থেকেই তিনি দুটোর মাঝে ফিউশন ঘটিয়ে ফেললেন। গান লিখলেন, সুরও করলেন। কিন্তু দেখলেন তার গান কেউ গাইছে না। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই নিজের গান গাওয়া শুরু করলেন।

image source: mahmudshakil.wordpress.com

শান্তিনিকেতনে বেড়ে উঠলেও তার প্রধান অনুপ্রেরণা ছিলেন গুরু আজম খান। মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের জীবনমুখী এবং রক ফর্মের গান অর্ণবকে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। পরবর্তী জীবনে কবীর সুমন এবং অঞ্জন দত্তর গান তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। তার ঠাকুরমা জিন্দুপ্রভা দেবীও লেখালেখি করতেন। এসবই গান বাঁধতে এবং গাইতে তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।

১৯৯৭ সাল, অর্ণব আঠারো বছর বয়সের টগবগে এক যুবক। নিজের কিছু ভারতীয় বন্ধুকে নিয়ে তিনি গঠন করে ফেললেন নিজেদের ব্যান্ড। ব্যান্ডের নাম দিলেন ‘বাংলা’। বাংলার পল্লীর গান তুলে আনাই ছিল এই ব্যান্ডের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। বাংলা ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অর্ণব। পরবর্তীতে বুনো এবং আনুশেহ অনাদিল এই ব্যান্ডে যোগ দেন। দেখতে দেখতে অর্ণবের শান্তিনিকেতনের জীবন শেষ হয়ে গেল। অর্ণব ফিরে এলেন নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশে।  বাংলা হয়ে গেল পরিপূর্ণ বাংলাদেশীদের নিয়ে গঠিত একটি ব্যান্ড। অর্ণবের স্বপ্নও ছিল এই ব্যান্ডটিকে বাংলাদেশী ব্যান্ড হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করার।

২০০২ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেসের এক স্টার সার্চ প্রতিযোগীতায় নাম লেখায় বাংলা ব্যান্ড। অর্ণব সেখানে এস্রাজ বাজিয়ে সেরা সঙ্গীতযন্ত্রীর পুরস্কার জেতেন। এই বছরেই ‘কিংকর্তব্যবিমূড়’ নামে বাংলা বান্ডের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হল। অর্ণবের দুটি গান ছিল এই অ্যাালবামে। আনুশেহর সাথে করলেন পল্লী সঙ্গীত ‘মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে’, আর একটি গান করলেন সম্পূর্ণ মৌলিক- ‘তুই গান গা’। অ্যালবাম আর অর্ণবের গান- দুটোই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করল।

এরপর অর্ণব তার নিজের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম বের করলেন। ২০০৫ সালের মে মাসে ‘একতার মিউজিক’ থেকে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। নাম ‘চাইনা ভাবিস‘। এই অ্যালবামের ‘সে যে বসে আছে একা একা’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। গানটি অফ বিট নামে এক নাটকে আগেও অর্ণব একবার ব্যবহার করেছিলেন। এই অ্যালবামের গানগুলো তিনি শান্তিনিকেতনের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থাতেই লিখেছিলেন।

২০০৬ সালে অর্ণবের দ্বিতীয় একক অ্যালবাম প্রকাশিত হল, নাম ‘হোক কলরব‘। এই অ্যালবামও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে বের হল তার পরবর্তী একক অ্যালবাম ‘ডুব‘। এই অ্যালবামে নিজের গন্ডির বাইরে গিয়ে অর্ণব একটা হার্ডরকধর্মী গানও গেয়েছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষার শুরুও এই অ্যালবাম থেকেই। অর্ণবের গানের ভাষা হয় অসাধারণ কাব্যিক। গানে থাকে সুরের অসাধারণ মূর্ছনা, যা তাকে শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে। মিডিয়াবিমুখ হয়েও গগনচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অর্ণব।

image source: arnobdrishtipat.wordpress.com

তার চতুর্থ অ্যালবাম ছিল ‘রোদ বলেছে হবে‘। অ্যালবামটি তার নিজের কোম্পানি আধখানা মিউজিক থেকে ২০১০ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামটিকে তার সকল অ্যালবামের মাঝে সবচেয়ে পরীক্ষামূলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার পঞ্চম অ্যালবামের নাম ‘আধেক ঘুমে’, প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের জুন মাসে। এটি মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীতধর্মী অ্যালবাম। শান্তিনিকেতনের জীবনের ছাপ এই অ্যালবামে ভালোভাবেই বোঝা যায়। শ্রোতা এবং সঙ্গীতবোদ্ধা সবাই অ্যালবামটিকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিলেন।

তার ষষ্ঠ অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে, নাম ‘খুব ডুব’। এই অ্যালবামটি মূলত ছিল বান্দরবনের কিছু ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য। তাদের স্কুল ঘর বুনো হাতির পাল ভেঙ্গে দিয়েছিল। সেই স্কুল পুনরায় গড়ার জন্য টাকা তুলতেই অর্ণব এই অ্যালবাম নিজের হাতে বিক্রি করেছিলেন। এই অ্যালবামের কভার ছবিগুলো অর্ণব এবং সেই স্কুলের ছেলে মেয়েরা নিজ হাতে এঁকেছিলেন।

খুব ডুব‘ অ্যালবাম প্রকাশিত হওয়ার সময়ের একটি ছবি। image source: megainsane.com

সম্প্রতি ২০১৭ সালের জুন মাসে অর্ণব তার সর্বশেষ এবং ৭ম একক আ্যলবাম প্রকাশ করেছেন। আ্যলবামটির নাম “অন্ধ শহর”।

তিনি ‘প্রেয়ার হল’ নামে আরেকটি ব্যান্ডও গঠন করেছিলেন। এছাড়াও গঠন করেছিলেন অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস নামের একটি প্রজেক্ট ব্যান্ড। এ ব্যান্ড গঠনের বিষয়টিও মজার। অর্ণব এক বছর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার বেশ কয়েকটি শহরে কনসার্ট করেছিলেন। সেখানে স্টেজে গাইতে গাইতেই তার মনে হল তারা যেভাবে স্টেজে লাইভ গান করছেন সেটা তো তার অন্যান্য শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। সেই ভাবনা থেকেই বাংলাদেশে এসে লেগে গেলেন রেকর্ডিংয়ের কাজে। যেভাবে কনসার্টে গেয়েছেন, ঠিক সেভাবেই। কোনো প্লাগ ইন সফটওয়্যারই ব্যবহৃত হলো না। সেই অ্যালবামটিই ‘অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস‘ নামে বের হল। এছাড়াও সাহানা বাজপেয়ীর রবীন্দ্র সঙ্গীতের অ্যালবাম ‘নতুন করে পাবো বলে’ এবং কৃষ্ণকলির অ্যালবাম ‘সূর্যে বাঁধি বাসা’তেও অর্ণব সুরারোপ করেছেন।

image source: Biswarup Ganguly

নাটক এবং চলচ্চিত্রের গানে অর্ণব

একুশে টেলিভিশনের মেগা ধারাবাহিক ‘বন্ধন’ নাটকে শীর্ষ সঙ্গীত দিয়ে নাটকের গানে যাত্রা শুরু করেন অর্ণব। এরপর ‘অফবিট’ নাটকে ব্যবহার করেন তার ‘সে যে বসে আছে’ গানটি। গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়াও ‘ফ্ল্যাট নম্বর ফোরটি’ এবং ‘স্পর্শের বাইরে’ নাটকের শীর্ষ সঙ্গীতও তার সৃষ্টি করা। ‘স্পর্শের বাইরে’ নাটকের গানটি অবশ্য লিখেছিলেন এবং গেয়েছিলেন তার সাবেক স্ত্রী সাহানা। অর্ণব টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেও জিঙ্গেল করেছেন।

চলচ্চিত্রের গানেও কিন্তু বেশ সফল অর্ণব। ‘আহা!‘ সিনেমায় গান গাওয়া, পরবর্তিতে ‘জাগো’ এবং ‘মনপুরা‘ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা দিয়েই তার চলচ্চিত্রের গানে যাত্রা শুরু। মনপুরা আর জাগো সিনেমা দুটির গান এবং সুর একে অপরের থেকে বেশ আলাদা ছিল। মনপুরা ছিল ফোক ঘরানার আর জাগো সিনেমার গান অনেকটাই শহুরে। দুটি সিনেমার গানই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মনপুরা সিনেমার ‘সোনার ময়না পাখি’ এবং আহা! সিনেমার ‘দূর ইশারায়’ গানটিতে তিনি কণ্ঠও দিয়েছেন।

এগুলো বাদেও ‘কলকাতা কলিং‘, ‘দীপ নেভার আগে‘ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালকও ছিলেন অর্ণব। ‘পদ্ম পাতার জল’ ও ‘আইসক্রীম‘ সিনেমার গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

‘আয়নাবাজি’ সিনেমার পোস্টার; image source: nagorikkantha.com

এছাড়াও মাসখানেক আগে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আয়নাবাজি‘ সিনেমাটিরও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন অর্ণব। তিনি এই সিনেমার ‘এই শহর আমার‘ গানটি নিজেই গেয়েছেন। গানটি শ্রোতাদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও গানটির বেশ প্রশংসা করেছেন।

ক্যামেরার পেছনের অর্ণব

শুধু সঙ্গীত বা ছবি আঁকাতেই না, চলমান ছবি ধারণেও অর্ণবের দক্ষতা আছে। বাংলা ব্যান্ড এবং হাবীবের বেশ কিছু গানের ভিডিও চিত্র তার ধারণ করা। এর মাঝে হাবীবের ‘মায়া‘ অ্যালবামের ভিডিও চিত্র সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড-২০০৪ এ তিনটি ক্যাটাগরীতে মনোনয়ন পায় এবং সেরা  ভিডিও অ্যালবামের পুরস্কার জিতে নেয়।

ইন্ট্রোসপেকশান’ হলো অর্ণবের প্রথম ভিডিও ডকুমেন্টারির নাম। ডকুমেন্টারিটি মূলত তার বাবাকে নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা-মা বিভিন্ন ক্যাম্পে যেতেন। সেই উদ্দীপ্ত ইতিহাস ক্যামেরায় ধরার চেষ্টা করেছেন অর্ণব। এছাড়াও মুভি বানানোর ইচ্ছাও তার প্রচুর। তিনি নিজে একটি মুভির জন্য স্ক্রিপ্ট লিখছেন। পুরান ঢাকা নিয়ে ছবি। ছবির নামও মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছেন অর্ণব- ‘ঢাকা পুরান’। পানাম নগরেরে প্রেক্ষাপটে ছবিটি খুব দ্রুতই তৈরি করার ইচ্ছা আছে তার।

অন্য অর্ণব

২০১০ সাল থেকে অর্ণব ‘আধখানা মিউজিক‘ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এখানে তিনি মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন এবং প্রামাণ্য চিত্রের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

image source: gaanshala.com

এছাড়াও তিনি বেঙ্গল মিউজিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বাংলা সঙ্গীতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই অর্ণব এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত আছেন। পোষা প্রাণী খুবই পছন্দ করেন তিনি। তাদের একটি পোষা কুকুর আছে, নাম ‘ডুব্বা’। ফুটবল খেলতেও বেশ পছন্দ করেন অর্ণব। তিনি মূলত একজন বাম পায়ের ফুটবলার।

বিবাহিত জীবন

২০০১ সালে শান্তিনিকেতনের সহপাঠী সঙ্গীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ীকে বিয়ে করেন অর্ণব। বিয়ের সাত বছর পর ২০০৮ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এর ১২ বছর পর ২০২০ সালে সুনিধি নায়েককে বিয়ে করেছেন তিনি। 

সাহানা বাজপেয়ী; image source: soundcloud.com

“হোক কলরব”

হোক কলরব‘ অর্ণবের দ্বিতীয় একক অ্যালবামের নাম ছিল। কিন্তু অ্যালবামের ‘হোক কলরব‘ শিরোনামের গানটি পরবর্তীতে একটি বিশাল আন্দোলনের মূল স্লোগান হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর সঠিক তদন্ত না করায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যে আন্দোলন শুরু করে সেই আন্দোলনই ‘হোক কলরব‘ আন্দোলন নামে পরিচিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হোক কলরব‘ হ্যাশট্যাগটি খুব দ্রুতই ট্রেন্ডিং হয়ে ওঠে।

হোক কলরব‘ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের একাংশ। image courtesy: Kashyap Mitra

বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশ নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করে ৪০ জনকে জখম ও ৩৭ জনকে গ্রেফতার করে। ফলে কলকাতার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আন্দোলন সংক্রমিত হয়ে যায়। আন্দোলনে ধীরে ধীরে যোগ দেয় দিল্লী, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালুরুসহ আরো বেশ কিছু জায়গার শিক্ষার্থীরা। ভারতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। ছাত্রদের বাইরেও সকল বয়সের মানুষ যোগ দেয় আন্দোলনে। সারা কলকাতা উত্তাল হয়ে ওঠে। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যমের মতে ২০ সেপ্টেম্বর এ আন্দোলনের মহা মিছিলে বৃষ্টির মাঝেই ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ লোক যোগ দিয়েছিল। গোটা আন্দোলনের সময় অর্ণবের হোক কলরব গানটি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং আন্দোলনের নামই হয়ে গিয়েছিল ‘হোক কলরব’ আন্দোলন। এই গানের কথা রাজীব আশরাফের লেখা।

মহা মিছিলের দিনে বৃষ্টির মাঝে হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ; image source: anirbansaha.com

সায়ান চৌধুরী অর্ণব বয়সে এখনো বেশ তরুণ। মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়স তার। এরই মাঝে বাংলা সঙ্গীতের জাগরণে তিনি বেশ বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছেন এবং রাখছেন। এই প্রতিভাধর সঙ্গীতশিল্পী তার গিটার, রঙ তুলি আর ক্যামেরার মাধ্যমে আমাদের আরো বহুদিন মুগ্ধ করে রাখবেন- এমন প্রত্যাশাই তার কোটি ভক্তের।

Related Articles