Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গর্ডন গ্রিনিজ: পর্দার আড়ালের নায়ক

বাংলাদেশের তখন একটাই লক্ষ্য, উপমহাদেশের মাটিতে আসন্ন বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। সেজন্য ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে সেরা তিন দলের একদল হতে হবে বাংলাদেশকে। প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকালেও দ্বিতীয় রাউন্ডে এসে বাদ পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সাথে ১৯৯৬ সালে ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আসরে নিজেদের নাম লেখাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। পরের বছর একই দেশে আইসিসি ট্রফি জিততে পারলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে তারা। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কোচ হিসাবে নির্বাচিত করে কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান গর্ডন গ্রিনিজকে।

বাংলাদেশ তখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয়ের মুখ দেখেনি। নেদারল্যান্ড, কেনিয়ার মতো আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে ক্রিকেট খেলতো। তাই তার মতো একজন কিংবদন্তীর এ দেশে কোচ হিসেবে আসাটা ছিল অনেক গর্বের। গ্রিনিজ খুব সহজেই বাংলাদেশের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর আকরাম খান, মিনহাজুল, আতাহার, রফিক, খালেদদের নিয়ে বিকেএসপিতে আবাসিক ক্যাম্প করেছিলেন তিনি। প্রায় পাঁচ মাসের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শেষে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন শিষ্যদের নিয়ে। লক্ষ্য একটাই, আইসিসি ট্রফিতে ভালো খেলে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা।

জাতীয় পর্যায়ে খেলা কম-বেশি প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই প্রতিভা থাকে। চাপ সামলে পরিস্থিতি অনুযায়ী যারা খেলতে পারেন, তারাই দর্শকদের মনে দাগ কেটে যান। গর্ডন গ্রিনিজ তার শিষ্যদের শেখালেন কিভাবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে হয়।

সাতানব্বইয়ের আইসিসি ট্রফির প্রথম রাউন্ডে ডেনমার্ক, পশ্চিম আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, স্বাগতিক মালয়েশিয়া এবং গত আসরের চ্যাম্পিয়ন সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে বাংলাদেশ। গ্রিনিজের অধীনে বাংলাদেশ সহজেই প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকিয়ে যায়। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের বিরুদ্ধে সহজ জয় পায় বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যায়। বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। হেরে গেলে সেমিফাইনালে উঠতে হলে অনেক ‘যদি কিন্তু’র সম্মুখীন হতে হতো বাংলাদেশের।

নেদারল্যান্ডসকে ১৭১ রানে বেধে রেখে বোলাররা ব্যাটসম্যানদের কাজটা সহজ করে দিলো। তারপরেই বৃষ্টি আঘাত হানে। পুনরায় খেলা শুরু হলে বাংলাদেশের সামনে ৩৩ ওভারে ১৪১ রানের টার্গেট দাঁড়ায়। ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সেখান থেকে আকরাম খানের অপরাজিত ৬৮* রানের উপর ভর করে বাংলাদেশ ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সেই সাথে বিশ্বকাপ খেলার পথে আরেকধাপ এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৭২ রানের সহজ জয় তুলে নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। নিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপ খেলার প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর বাংলাদেশের সামনে আইসিসি ট্রফি জয়ের হাতছানি। ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্টিভ টিকোলোর কেনিয়া।

প্রথমে ব্যাট করে অধিনায়ক টিকোলোর ১৪৭ রানের অতিমানবীয় ইনিংসের কল্যাণে কেনিয়া ২৪১ রান সংগ্রহ করে। বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ ঐদিন আর ব্যাট করার সুযোগ পায়নি। রিজার্ভ ডে’তে বাংলাদেশকে ২৫ ওভারে ১৬৬ রান তাড়া করতে পাঠানো হয়। তখনকার হিসাবে ২৫ ওভারে ১৬৬ রান করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। কিন্তু গর্ডন গ্রিনিজের অধীনে ক্রিকেটাররা চাপের মুখে কিভাবে খেলতে হয়, স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচগুলোর ফলাফল নিজেদের অনুকূলে কি করে আনতে হয় সেটা শিখে গেছেন।

শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন মোহাম্মদ রফিক, আমিনুল ইসলামরা। শেষের দিকে খালেদ মাসুদ পাইলটের ৭ বলে ২ ছয়ের সাহায্যে ১৫* রানের ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশের শেষ বলে দরকার পড়ে মাত্র ১ রানের। হাসিবুল হাসান শান্ত শেষ বল থেকে ১ রান নিয়ে বাংলাদেশকে আইসিসি ট্রফি জয়ের আনন্দে ভাসান।

আইসিসি ট্রফি হাতে অধিনায়ক আকরাম খান © ক্রিকইনফো

আইসিসি ট্রফি জয়ের পর প্রত্যেক ক্রিকেটারকে পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি পর্দার আড়ালের নায়ক গর্ডন গ্রিনিজকেও সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন গ্রিনিজ।

পরের বছর তার অধীনে বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে জয় পায়। নিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপ তার অধীনেই খেলে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কোচ হিসাবে তার বিদায়টা ছিল দুঃখজনক এবং লজ্জার। চুক্তির মাত্র কয়েকদিন আগে তাকে বরখাস্ত করা হয়। গর্ডন গ্রিনিজের মতো ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের এমন বিদায়ে অবাক হয়েছিল গোটা জাতি।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আয়োজন করে। তখন থেকে তাড়াহুড়ো শুরু করে দিয়েছিল টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য। গর্ডন গ্রিনিজ এত দ্রুত টেস্ট খেলার বিপক্ষে ছিলেন। এতে করে বিসিবির কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অপ্রিয় পাত্রে পরিণত হন তিনি। তাকে অপদস্থ করার জন্য বিশ্বকাপের মাঝপথে বরখাস্ত করার পায়তারা চালাচ্ছিলেন তারা।

নিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপের আগে খালেদ মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে কিছু একটা বলছেন গ্রিনিজ, পাকিস্তানের বিপক্ষে খালেদ মাহমুদের হাত ধরেই জয় পায় বাংলাদেশ © ক্রিকইনফো

নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক জয় তুলে নেওয়ার সময়ও বাংলাদেশ দলের সাথে মাঠে এসেছিলেন গর্ডন গ্রিনিজ। ইনিংসের মাঝপথে শিষ্যদের কাছ থেকে বিদায় নেন গর্ডন গ্রিনিজ। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের কয়েক ঘন্টা আগে তাকে বিদায়ের চিঠি হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঐ সময়ের তারকা ক্রিকেটার আকরাম খান, ফারুক আহমেদ, খালেদ মাহমুদ, খালেদ মাসুদ সবার মুখেই এক কথা। তার মতো এমন ব্যক্তিত্বের এভাবে বিদায় দেওয়াটা ঠিক হয়নি। এই দলটার পিছনে তিনি অনেক শ্রম দিয়েছেন।

পাকিস্তানকে হারানোর মধ্য দিয়ে ঐদিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকলেও গর্ডন গ্রিনিজকে অপদস্থ করে বিদায় জানানোটা ছিল লজ্জাজনক।

ক্রিকেটে গর্ডন গ্রিনিজের আবির্ভাব

কুথবার্ট গর্ডন গ্রিনিজ পহেলা মে ১৯৫১ সালে বার্বাডোসে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় বার্বাডোসের ‘থ্রি ডব্লিউজ’ ক্রিকেট বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছিলেন। হয়তো তাদের অনুপ্রেরণায় গর্ডন গ্রিনিজের ক্রিকেটে হাতেখড়ি। সত্তরের দশকের শুরুতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে গর্ডন গ্রিনিজের। ১৯৭৪ সালে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তার। অভিষেক টেস্টেই নিজের জাত চেনান গ্রিনিজ। প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করে রান আউট হওয়ার পর পরের ইনিংসেই ১০৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি।

১৯৮৪ মৌসুমে বিখ্যাত ‘ব্লাকওয়াশ’ সিরিজে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান গর্ডন গ্রিনিজ। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অপরাজিত ২১৪* রানের ইনিংস খেলেন। তার এই ইনিংসের সুবাদে লর্ডস টেস্টের শেষ দিনে ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩৪২ রানের টার্গেট অতিক্রম করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, লর্ডসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এটি।

সিরিজের চতুর্থ টেস্টেও দুর্দান্ত এক ডাবল সেঞ্চুরি করেন গর্ডন গ্রিনিজ। ম্যানচেস্টারে তার ২২৩ রানের ইনিংসের সুবাদে ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

লর্ডস টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে গর্ডন গ্রিনিজের একটি শট © ক্রিকইনফো

ক্রিকেট বিশ্বে গর্ডন গ্রিনিজ এবং ডেসমন্ড হেইনসের উদ্বোধনী উইকেট জুটি সর্বকালের সেরা। এই দুই ব্যাটসম্যান একসাথে ভেঙেছেন অনেক রেকর্ড, গড়েছেন তারচেয়েও বেশি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যেকোনো জুটিতে তারা তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন। উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ধরাছোঁয়ার বাহিরে হেইনস এবং গ্রিনিজ। ১৪৮ ইনিংসে ৪৭.৩১ ব্যাটিং গড়ে ৬,৪৮২ রান যোগ করেছেন উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে। এর মধ্যে ১৬ বার শতরানের এবং ২৬ বার অর্ধশত রানের জুটি গড়েছেন।

সর্বকালের সেরা দুই ওপেনার ডেসমন্ড হেইনস এবং গর্ডন গ্রিনিজ

গর্ডন গ্রিনিজ টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষদিকে এসেও নিয়মিত রান পেয়েছেন। ব্রিজটাউনে নিজের বিদায়ী টেস্টের আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ২২৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তার ইনিংসের সুবাদে অ্যালান বোর্ডারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলকে ৩৪৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডেভিড বুন এবং ওয়াহ ব্রাদার্সদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়া দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি।

টেস্ট ক্রিকেটে ১০৮ ম্যাচে ৪৪.৭২ ব্যাটিং গড়ে ৭,৫৫৮ রান করেছেন গ্রিনিজ। ১৯টি শতক এবং ৩৪টি অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেছেন তার ক্যারিয়ারে। সেসময়ে নিজের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে হাঁকিয়েছেন ৬৭টি ছয়, যা বর্তমানে অনেক হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানও স্পর্শ করতে পারেননি।

গর্ডন গ্রিনিজের হুক শট

টেস্ট ক্রিকেটের মতো একদিনের ক্রিকেটেও দাপটের সাথে খেলেছিলেন বার্বাডোসের এই ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৯৭৫ এবং ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা গর্ডন গ্রিনিজ ১২৮টি একদিনের ম্যাচে ৪৫.০৩ ব্যাটিং গড়ে ৫,১৩৪ রান করেছেন। ১১টি শতক এবং ৩১টি অর্ধশতক আছে তার ঝুলিতে। গর্ডন গ্রিনিজ প্রথম শ্রেণি এবং লিস্ট-এ ক্রিকেটে ছিলেন অতিমানবীয়। ৫২৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৪৫.৮৮ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ৩৭,৩৫৪ রান। ক্যারিয়ারে ৯২টি শতক এবং ১৮৩টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৪৪০ ম্যাচে ৪০.৫৬ ব্যাটিং গড়ে ১৬,৩৪৯ রান করেছেন ৩৩টি শতক এবং ৯৪টি অর্ধশতকের সাহায্যে। তার বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের কোচ হিসাবে দায়িত্ব নেন। তিন বছর ছিলেন এই দেশে। ভিনদেশী হয়েও এই দেশের মানুষদের সাথে মিশে গিয়েছিলেন অল্প সময়ের মধ্যে। আইসিসি ট্রফি জিতিয়ে বনে গেলেন এই দেশের গর্বিত নাগরিক। হয়তো আক্ষেপ করতেই পারেন, এদেশে এতো ভালোবাসা পাওয়ার পরেও অপদস্থ হয়েই দেশে ফিরতে হলো।

তথ্যসূত্র

১. espncricinfo.com/ci/content/player/51901.html
২. en.wikipedia.org/wiki/1997_ICC_Trophy
৩. espncricinfo.com/ci/engine/match/63555.html
৪. somewhereinblog.net/mobile/blog/Eagle/29310287
৫. stats.espncricinfo.com/ci/content/records/283514.html
৬. en.m.wikipedia.org/wiki/Gordon_Greenidge

Related Articles