Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চার কিংবদন্তীর কান্নায় জার্মানির চার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প

পুস্কাস, ক্রুইফ, ম্যারাডোনা, মেসি। ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা চার ফুটবলার। তবে তাদের মধ্যে উদ্ভট একটা মিল রয়েছে। চারজনই বিশ্বকাপের ফাইনাল হেরেছেন ডাই ম্যানশ্যাফট খ্যাত ইউরোপিয়ান ফুটবল পরাশক্তি জার্মানদের কাছে। ‘মিরাকল অফ বার্নে’ পুস্কাসের খালি হাতে ফেরা। জার্ড মুলারে ক্রুইফের স্বপ্নভঙ্গ কিংবা কোডেসালের হুইসেলে ম্যারাডোনার কান্না।

সর্বশেষ বিশ্বকাপের স্মৃতিটাও এখনো তরতাজা সব ফুটবলপ্রেমীর কাছে। মারিও গোটজের গোলে মেসির অসহায় আত্মসমর্পণ। ১১৩ মিনিটে দেওয়া সেই গোলের সুবাদে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে জার্মান বাহিনী। যাদের গায়ে বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দলের তকমাও সেঁটে আছে। ২০ বার অনুষ্ঠিত হওয়া এই ক্রীড়াযজ্ঞে ১৮ বার অংশগ্রহণ করে মোট ১৩ বারই শেষ চারে ছিলো জার্মানরা। সর্বোচ্চ আটবার ফাইনাল খেলার রেকর্ডটাও তাদের দখলে। যদিও চারটি ফাইনাল হেরেছে। তবে বাকি চারটি ফাইনালে কাঁদিয়েছে চার ফুটবল মহারথীদের। চলুন দেখে আসা যাক জার্মানির সেই চার ফাইনালের গল্প।

১৯৫৪ বিশ্বকাপ – ফেরেঙ্ক পুস্কাস

পশ্চিম জার্মানি ৩ – ২ হাঙ্গেরি

এই ফাইনালটি আখ্যায়িত হয়ে আছে ‘মিরাকল অফ দ্য বার্ন’ হিসেবে। সুইজারল্যান্ডের বার্নে অবস্থিত ওয়াংকডর্ফ স্টেডিয়ামে ৬০ হাজার দর্শক আক্ষরিক অর্থেই উপস্থিত হয়েছিলো হাঙ্গেরির জয়োৎসব দেখার জন্য। প্রথম রাউন্ডেও মুখোমুখি হয়েছিলো এই দুই দল। ধারে ভারে অনেক এগিয়ে থাকা হাঙ্গেরি সেই ম্যাচ জিতেছিলো ৮-৩ গোলে। ৩২ ম্যাচ ধরে অপরাজিত থেকে ফাইনাল খেলতে নামে হাঙ্গেরির সেই সোনালি প্রজন্ম।

১৯৫৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির লাইন আপ;  source: Squaka.com

তর্কাতীতভাবেই ফাইনালে ফেভারিট ছিলো ককসিস, পুস্কাসরা। ফাইনালের আগপর্যন্ত  ৪ ম্যাচে ২৫ গোল করা হাঙ্গেরি ম্যাচের ৮ মিনিটেই প্রত্যাশিতভাব ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। চোট নিয়ে খেলতে নেমে ছয় মিনিটেই দলের প্রথম গোলটি করেন অধিনায়ক ফেরেঙ্ক পুস্কাস। দুই মিনিট পর দলকে দুই শূন্য গোলে এগিয়ে নেন যোল্টান জিবর। কিন্তু এরপরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় পশ্চিম জার্মানি। ১০ মিনিটে ম্যাক্স মর্লকের গোলের পর ১৯ মিনিটে পশ্চিম জার্মানিকে সমতায় ফেরান হেলমুট রান। এদিকে একের পর এক আক্রমণ করেও প্রতিপক্ষের ডি বক্সে খেই হারিয়ে ফেলায় গোলের মুখ খুলতে পারেনি হাঙ্গেরি।

হঠাৎ করে ধারার বিপরীতে ৮৪ মিনিটে হেলমুট রানের দ্বিতীয় গোলে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে পুস্কাসের একটি গোল অফসাইডে বাতিল হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে হাঙ্গেরির সেই সোনালি প্রজন্ম। এজন্য অবশ্য দুটি জিনিস ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছিলো। ম্যাচের আগে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মাঠের অবস্থাও ছিলো নাজেহাল। এই কন্ডিশনকে ‘ফ্রিটজ ওয়াল্টার আবহাওয়া’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিলো। কারণ জার্মান অধিনায়ক ফ্রিটজ ওয়াল্টারের ভাষ্যমতে জার্মানদের সেরাটা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত মাঠ নাকি ওটাই ছিলো। আরেকটি কারণ ছিলো জার্মান ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রেতা এডি ডেসলার। তিনিই বর্তমানের জনপ্রিয় ক্রীড়াসামগ্রী এডিডাসের প্রতিষ্ঠাতা। ফাইনাল ম্যাচের আগে জার্মানি থেকে কর্দমাক্ত মাঠে খেলার জন্য স্পেশাল ২২ জোড়া বুট পাঠান তিনি। জার্মানির জয়ে এডি ডেসলারও হয়ে ওঠেন বিখ্যাত। আর হাঙ্গেরিকে হারিয়ে প্রথমবারের মত তৎকালীন জুলেরিমে ট্রফি উঁচিয়ে ধরে ডাই ম্যানশ্যাফটরা। আর অন্যদিকে পুস্কাসকে ফিরতে হয় খালি হাতেই।

ফাইনালে করা পুস্কাসের সেই গোল; Source: Pinterest.com

১৯৭৪  বিশ্বকাপ – ইয়োহান ক্রুইফ

পশ্চিম জার্মানি ২ – ১ নেদারল্যান্ড

১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপটি অনুষ্ঠিত হয় পশ্চিম জার্মানিতে। এই আসরেই প্রথমবারের মতো সিলভিও গাজ্জানিগার ডিজাইনে তৈরী বর্তমান বিশ্বকাপ ট্রফিটি ব্যবহৃত হয়। টুর্নামেন্টে হট ফেভারিট ছিলো টোটাল ফুটবল খেলে সাড়া জাগানো নেদারল্যান্ড, যাদের ছিলো একজন ইয়োহান ক্রুইফ। অনেকে যাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবেও মানেন।

দুই দলই দাপটের সাথে খেলে ফাইনালে পৌঁছায়। তারপরও নেদারল্যান্ডই ছিলো ফাইনালের ফেভারিট। ক্রুইফের নেতৃত্বে টোটাল ফুটবল খেলা নেদারল্যান্ডকে সেইসময় আক্ষরিক অর্থেই আটকানো কষ্টসাধ্য ছিলো। ৭ জুলাই মিউনিখে মুখোমুখি হয় বেকেনবাওয়ারের পশ্চিম জার্মানি আর ক্রুইফের নেদারল্যান্ড। ২ মিনিটের মাথায় ক্রুইফের সলো রান থামাতে গিয়ে ডি বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন উলি হোয়েনেস। পেনাল্টি থেকে নেদারল্যান্ডকে এগিয়ে নেন নিস্কেন্স।

পশ্চিম জার্মানি শুরু থেকেই টোটাল ফুটবলের প্রেসিং এ হাসফাঁস করছিলো। ২৬ মিনিটে ইংলিশ রেফারি জ্যাক টেইলরের বিতর্কিত এক সিদ্ধ্বান্তে পেনাল্টি পেয়ে বসে জার্মানবাহিনী। পল ব্রিটনার স্পট কিক থেকে গোল করে পশ্চিম জার্মানিকে সমতায় ফেরান। ৪৩ মিনিটে আরেক জার্মান কিংবদন্তী জার্ড মুলারের গোলে লিড পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। যে গোলে সেইসময়ে ফন্টেইনের করা ১৩ গোলের রেকর্ড ভেঙে বিশ্বকাপের আসরে ১৪ গোল করে নতুন রেকর্ড করেন এই জার্মান গোলমেশিন।

দ্বিতীয়ার্ধে শত চেষ্টা করেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি ক্রুইফরা। টোটাল ফুটবল খেলে দর্শক আর বিশ্লেষকদের আনন্দ দিলেও শূন্য হাতে ফিরতে হয় ডাচদের। ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তী ইয়োহান ক্রুইফও আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নেন ফাইনালের মঞ্চ থেকে। পরের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ড ফাইনাল খেললেও, সেই আসরে খেলেননি ক্রুইফ। বিশ্বকাপ ছুঁয়ে না দেখার আক্ষেপ নিয়েই থাকতে হয় ফুটবলের এই বরপুত্রকে।

ডি বক্সে ক্রুইফকে উলি হোয়েনেসের ফাউল করার মুহূর্ত; source: Pinterest

১৯৯০ বিশ্বকাপ – ডিয়েগো ম্যারাডোনা

আর্জেন্টিনা  ০ – ১ পশ্চিম জার্মানি

১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের পুনরাবৃত্তি দেখা যায় ‘৯০ এর বিশ্বকাপে। ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা আর ম্যাথাউসের জার্মানি টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের মুখোমুখি হয়। তবে এবার আর ম্যারাডোনা পারেননি। ফুটবলের এই কিংবদন্তীকে কাঁদিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় পশ্চিম জার্মানি।

৮ জুলাই রোমে খেলতে নামার আগে শিরোপার দাবিদার ছিলো পশ্চিম জার্মানিই। তবুও একজন ম্যারাডোনায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন শত শত আর্জেন্টাইন। শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচে প্রথমবারের মতো ফাইনালে লাল কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনার পেদ্রো মনজন। ম্যাচের শেষ দিকে আরেকটি লাল কার্ড দেখায় পরবর্তীতে নয়জন নিয়েই লড়াই চালিয়ে যান ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে মেক্সিকান রেফারি এডগার্ডো কোডেসালের বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে পেনাল্টি পায় পশ্চিম জার্মানি। পেনাল্টি থেকে ব্রাহিমির গোলে শেষ পর্যন্ত ন্যূনতম ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জার্মানরা।

পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার এক শটের বিপরীতে জার্মানরা নেয় ১৬টি শট। আর্জেন্টিনার পরিকল্পনা ছিলো যেকোনো মূল্যে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়া। আগের দুই নকআউট ম্যাচে আর্জেন্টাইন গোলকিপার সার্জিও গয়োকোচিয়ার বীরত্বে টাইব্রেকার বাধা পার হয়েই ফাইনালে আসে ম্যারাডোনা বাহিনী। গয়োকোচিয়ার পেনাল্টি সেভের অসাধারণ দক্ষতার কথা চিন্তা করেই নিয়মিত পেনাল্টি টেকার ম্যাথাউস পেনাল্টি না নিয়ে জার্মানদের পক্ষে পেনাল্টি শটটি নেয় ব্রাহিমি। তবে ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কোডেসালের সেই সিদ্ধান্ত। ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন ম্যারাডোনা আর ম্যাচের ফলাফলের জন্য দোষারোপ করেন রেফারিকে। রেফারির প্রতি ক্ষোভ থেকে আর্জেন্টিনায় এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপের মৌসুমে কোডেসালের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।

‘৯০ এর ফাইনালে দিয়েগো ম্যারাডোনা source ; thesefootballtimes.co

২০১৪ বিশ্বকাপ – লিওনেল মেসি

জার্মানি ১ – ০ আর্জেন্টিনা

অমরত্ব অর্জনের জন্য শুধু একটি বিশ্বকাপেরই দরকার ছিলো সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির। সেই পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলো লা আলবিসেলেস্তেরা। মারাকানায় জার্মান বাধা পার হতে পারলেই কাঙ্ক্ষিত ট্রফিটি উঠতো মেসির হাতে।

১১৩ মিনিটে করা মারিও গোটজের সেই জয়সূচক গোল; source: youtube

কিন্তু মেসি পারেননি, পারেননি কোনো আর্জেন্টাইনই। তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি হওয়া ফাইনালে আবারো জেতে ডাই ম্যানশ্যাফটরা। হিগুয়াইন, আগুয়েরো, মেসি, প্যালাসিওদের একের পর এক ব্যর্থতায় ম্যাচের নায়ক বনে যান ২২ বছর বয়সী তরুণ মারিও গোটজে। ১১৩ মিনিটের গোলে জার্মানির জয় নিশ্চিত করেন তিনি। দুই জার্মানির এক হওয়ার পর এটিই জার্মানির প্রথম বিশ্বকাপ জয়। প্রথমবারের মত আমেরিকান কোনো দেশ থেকে বিশ্বকাপ জয় করে কোনো ইউরোপিয়ান টিম। হাতছোঁয়া দূরত্বে গিয়েও অমরত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলেন লিওনেল মেসি। যার পেছনে রয়েছে আরেকটি জার্মান অতিমানবীয় পারফরমেন্স।

ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজার পর বিমর্ষ মেসি; source: the sun

ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জিতলেও, জিততে পারেননি অন্য তিন ফুটবলের বরপুত্র। ক্রুইফ আর পুস্কাস তো চলে গেছেন না ফেরার দেশেই। তাদের বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপ এখনো পোড়ায় ফুটবলপ্রেমীদের। লিওনেল মেসির হয়তো এটাই সর্বশেষ সুযোগ। তার আগে অবশ্য পার করতে হবে কঠিন সব বাধা। আর সর্বোপরি আরেকটি সম্ভাব্য জার্মান ধাঁধা। পারবেন তো মেসি?

This Bangla article is about the four world cup final where Germans won. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Fifa Wallpaper.com

Related Articles