নানা দেশে নানা রীতি। দেশ কাল ধর্মভেদে রীতিনীতির ধরণ ধারণও আলাদা। বিভিন্ন ধর্মে ভক্তদের ভক্তি শ্রদ্ধার তীব্রতা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরণের কঠিন সব আচার অনুষ্ঠানের চালু রয়েছে। ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের দেবকুল বা স্রষ্টার প্রতি অকুন্ঠ ভক্তি জানাতে এই সব রীতি নীতি আজও কঠোর নিষ্ঠার সহিত পালন করেন। আজ আমরা এমন সব রীতিনীতি বা সংস্কার নিয়ে কথা বলবো যা শুনে আজকের এই আধুনিক জামানা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাব। হয়তো কেউ কেউ ভাববেন এমন হয় নাকি আজকাল?
ঠিক তাই। এমনও হয় নাকি আজকাল? উদ্ভট সব সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন।
মৃত্যু শোকে আঙ্গুল কর্তন
পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্ভট সংস্কৃতির একটি হল হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলা। ইন্দোনেশিয়ার দানি সম্প্রদায়ের লোকজন পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুতে হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলে। একজনের মৃত্যুতে আঙ্গুলের এক তৃতীয়াংশ। আঙ্গুল কাটার পর তার দিয়ে ভাল করে পেঁচিয়ে ফেলে যাতে ক্ষতটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। আঙ্গুল কেটে তারা মৃতের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান জানায় এবং জীবদ্দশায় তাদের কতটা ভালবাসত তা প্রকাশ করে থাকে।
হিন্দুদের থাইপাসাম উৎসব
ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া এবং মরিশাসের কিছু তামিল গোষ্ঠী থাইপাসাম নামক এক ধরণের ধর্মীয় উৎসব পালন করে। এই ধর্মীয় উৎসবে দেবী মুরুগানের প্রতি ভক্তি জানিয়ে ভক্তরা তাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ মোটা মোটা শিক দিয়ে গেঁথে ফেলে। দেবীর জন্মোৎসবে তারা জিহ্বা, বুক, হাত ইত্যাদি অঙ্গ শিক দিয়ে গেঁথে ফেলে এবং কিছু অতি মাত্রিক ভক্ত রয়েছেন যারা ভক্তি শ্রদ্ধার আবেগে অন্ধ হয়ে নিজের রক্তাক্ত শরীর দিয়ে ওয়াগন টানেন।
মৃতের হাড়চূর্ণ করে স্যুপ
ভেনেজুয়েলা এবং ব্রাজিলের সীমান্তে আমাজনের গহীন জঙ্গলে ইয়ানোমামি নামক আদিবাসী বাস করে। যারা গোত্রের কারো মৃত্যুর পর তার মৃতদেহকে পাতা দিয়ে ঢেকে ফেলে যাতে পোকা মাকড় মাংস খেয়ে ফেলতে পারে। এর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর পাতা সরিয়ে হাড়গুলো বের করে আনা হয় তারপর গুঁড়ো করে রেখে দেয়া হয়। মৃত্যুর এক বছর পর হাড়ের গুঁড়াগুলো কলার স্যুপের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। তাদের বিশ্বাস এতে মৃতের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।
মৃত্যুর পর গ্রামে ভ্রমণ
ইন্দোনেশিয়ায় তোরাজা সম্প্রদায়ের লোকজন মৃত আত্মীয়স্বজনকে কফিন থেকে তুলে এনে নতুন কাপড় পরায়। ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। নতুন জামা কাপড় পরিয়ে পুরো গ্রাম হাঁটিয়ে বেড়ায় মৃতদেহকে। কারো যদি গ্রামের বাইরে মৃত্যু হয় তাহলে তাকে নতুন জামা কাপড় পরিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়ে এনে আবার কফিনে সেঁধিয়ে দেয়া হয়। আজব মানবজাতি।
শিয়া মুসল্লিদের আত্মত্যাগ
পবিত্র আশুরায় শিয়া মুসলিমদের মর্মান্তিক যন্ত্রণা কে না দেখেছেন। এই যন্ত্রণা তারা নিজেরা ইচ্ছাকৃত অনুভব করেন। অনেক শিয়াই ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর পৌত্র ইমাম হুসাইনের মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভব করতে চান। ইমাম হুসাইন (র) কারবালার যুদ্ধে এজিদের নিকট হেরে যান। মূলত ইমাম হুসাইনের প্রতি ভালবাসার আবেগ থেকেই শিয়া মুসলিমগণ পবিত্র আশুরার দিনে ছুরি দিয়ে পিঠে ও মাথায় আঘাত করেন।
দাঁত কাটন ছেদন
হিন্দু বালি সম্প্রদায়ে বিয়ের আগে কিংবা বয়ঃসন্ধির শুরুতে দাঁত কাটার একটা রীতি প্রচলিত আছে। কাটা না বলে সাইজ বলাই ভালো। বালি সম্প্রদায়ের মতে দাঁত হল মানুষের ষড়রিপুর প্রতীক। লোভ, কাম লালসা, তাড়না, রাগ, ঈর্ষা ইত্যাদি কু- রিপুর প্রতীক হল দাঁত। তাই বিবাহের আগে এই দাঁতের সুন্দর করে কেটে ফেলা হয় আসলে সাইজ করা হয়।
ভাল্লুক হত্যা এবং উপাসনা
জাপান এবং রাশিয়ার আইনু সম্প্রদায় ভাল্লুক জবাই করে স্রষ্টার প্রার্থনা করে। তাদের মতে ভাল্লুক হল ঈশ্বরের একটি রুপ যা মানুষের মাঝে বিদ্যমান। তাই ভাল্লুক জবাই মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। এর ভয়াবহতা এখানেই শেষ নয়। জবাইয়ের জন্য একটি মা ভাল্লুককে নির্ধারণ করা হয়। ২ বছর ধরে পালার পর মা ভাল্লুকটি যখন সন্তানের জন্ম দেয় তখন সন্তানসমেত মা ভাল্লুকের প্রয়াণ ঘটানো হয়। ধর্মীয় এই উৎসবের পর ভাল্লুকের রক্ত মাংস খাওয়া হয়। অতঃপর ভাল্লুকের চামড়াগুলো দিয়ে উপাসনা করা হয়।
কানামারা মাটসুরি
এটা মূলত একটি পেনিস উৎসব। প্রতি বছর মার্চের ১৫ তারিখ জাপানিরা এই উৎসব পালন করে থাকে। এ দিন তারা কাঠের তৈরি বিশাল পেনিস নিয়ে প্যারেডে বের হয়। এখানে পেনিস বা পুং জননেন্দ্রিয় মূলত উর্বরতার প্রতীক।
তিব্বতি আকাশ সমাধি
তিব্বতিদের একটি রীতি আছে। তা হল কারো মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ বিভিন্ন অংশে কেটে ফেলা হবে এবং বিভিন্ন পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে যাতে জীব জন্তুরা এসে খেয়ে নিতে পারে। এর পেছনে তাদের একটি মনস্তত্ত্ব রয়েছে। জীবদ্দশায় আমরা অনেক জীব জানোয়ার হত্যা করে উদরপূর্তি করি। সুতরাং মানুষের মৃত্যুর পর এই প্রাণীরাও তাদের খেয়ে প্রকৃতির লেন দেন শোধ করতে পারবে।
জ্বলন্ত কয়লার উপর গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটা
চীনে এই প্রথাটি চালু রয়েছে। গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে স্বামী জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে তবেই ঘরে প্রবেশ করবে। তাদের মতে এতে স্ত্রীর প্রসব বেদনা কমা হবার সম্ভাবনা আছে এবং পুরুষও গর্ভযন্ত্রণার কষ্ট বুঝতে পারবে।