Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জীবন বাঁচাতে নরখাদক হয়ে ওঠার গল্প

একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে হঠাৎ করে নরখাদক হওয়া কি আসলেই সম্ভব? একজন মানুষ আরেকজন মানুষের মাংস খাচ্ছে, তা কল্পনা করলেই তো শরীর শিউরে ওঠে। কিন্তু অনেক সময় মানুষকে বাধ্য হয়েই নরখাদক হতে হয়। কখন? একেবারে শেষ মুহূর্তে, হয় সহযাত্রীকে মেরে খেয়ে ফেলতে হবে, নয়ত মরতে হবে! সেরকম কিছু বাস্তব ঘটনাই তুলে ধরা হলো।

এসেক্স ক্রু

ইতিহাসে জাহাজডুবি আর নরখাদক একইসাথে হওয়ার ঘটনা অনেকবারই হয়েছে। এদের মধ্যে তিমি-শিকারী জাহাজ “এসেক্স”-এর ঘটনা না বললেই নয়।

১৮২০ সালের কোনো এক দিনের ঘটনা, তিমি শিকার করতে গিয়ে উল্টো স্পার্ম তিমির লেজের ঝাপ্টায় এসেক্স জাহাজ ডুবে যেতে শুরু করে। জাহাজের ২০ জন ক্রু-ই বেঁচে যায় ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তিনটি নৌকায় উঠে জায়গাটি থেকে সরে যাওয়ার পর। বেঁচে গেলে কি হবে? সামনে যে মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ জিনিস অপেক্ষা করছে। রসদপত্র কম থাকায় ৩ জন ক্রু একটি ফাঁকা দ্বীপে নেমে যায়, রবিনসন ক্রুসোর মতো বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু তারা আদৌ পরে উদ্ধার হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি।

যা-ই হোক, খাবারদাবার আর পানির অভাবে বাকি ১৭ জনের একজন কাহিল হয়ে পড়ে। বাকিরা আর কি করবে? বাধ্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তাদের প্রাক্তন সহকর্মীর উপরেই। এভাবে একেকজন করে অন্যদের ক্রুদের পেটে যাওয়ার পর উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত মাত্র ৫ জন টিকে ছিল।

আঁকিয়ের কল্পনায় তিমির লেজ ও এসেক্স জাহাজ; Image Source: penbaypilot.com

সারাহ আইল্যান্ড ও একজন পিয়ার্স

সারাহ আইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে অথচ ওখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করেনি, এরকম ব্যক্তি হয়ত হাতেগোণা কয়েকজনই ছিল। যাই হোক, “নরকের দরজা” নামে পরিচিত সারাহ আইল্যান্ডের দুর্বিষহ অত্যাচার থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ছয় জোড়া জুতা চুরির অপরাধী আলেক্সান্ডার পিয়ার্স এবং আরও সাতজন অপরাধী।

১৮২২ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর আট অপরাধী দ্বীপের পূর্ব অঞ্চল থেকে পালিয়ে বনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। দ্বীপ থেকে পালানোর জন্য স্কুনার চুরি করার জন্য অভিযুক্ত গ্রিনহিলস নিজেকে দলের নেতা হিসেবে দাবী করে, কারণ তার হাতে রয়েছে বিশাল এক কুঠার। প্রায় ১৫ দিন ধরে বনের মধ্যে ঘুরেফিরে বেড়ানোর পর ক্ষুধার জ্বালায় টিকতে না পেরে গ্রিনহিলস বোডেনহ্যামের গলায় কোপ মেরে মাংস খাওয়া শুরু করে! এতে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় দলের তিনজন- ডাল্টন, কেনারলি এবং ব্রাউন। বাকি থাকে চারজন – গ্রিনহিলস, ট্রেভারস, পিয়ার্স এবং ম্যাথার্স। গ্রিনহিলস আর ট্রেভারস আরেকজনের বন্ধু হওয়ায় স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল এরপরে ম্যাথার্স অথবা পিয়ার্সের পালা।

পিয়ার্স বিপদ বুঝতে পেরে গ্রিনহিলসের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে এবং গ্রিনহিলসের খাড়ার ঘা ম্যাথার্সের জন্য নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপর পিয়ার্সের পালাই ছিল, কিন্তু ট্রেভার্সের খাওয়া সাপের কামড় শেষমেশ নির্ধারণ করে দেয় এরপর কে হবে নরখাদকের ভুক্তভোগী। এরপর গ্রিনহিলস আর পিয়ার্সের ইঁদুর-বিড়াল খেলার পালা, গ্রিনহিলসের ঘুমানোর সুযোগে পিয়ার্স কুঠার কেড়ে নিয়ে শেষ ব্যক্তিরও গলা ফাঁক করে দেয়! ১১৩ দিন পর পিয়ার্স যখন অবশেষে কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরে আসে, তখন তার অবস্থাও কাহিল।

নরখাদক হওয়ার কথা কর্তৃপক্ষের কেউই বিশ্বাস করেনি, পালানোর অপরাধে পিয়ার্সের জন্য অপেক্ষা করছিল আরও কঠিন শাস্তি। পিয়ার্স আবারও থমাস কক্স নামে আরেকজন নির্বাসনভোগীকে সাথে নিয়ে বনের দিকে ছুটে যায়। দশ দিন পর যখন পিয়ার্সকে ধরা হয়, তখন পিয়ার্সের পকেটে কক্সের দেহটুকরো পাওয়ার পর অবশেষে সবাই নরখাদকতার কথা বিশ্বাস করে। পিয়ার্সকে দড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়ার আগে পিয়ার্সের মুখ থেকে নিঃসৃত শেষ বাক্যটি ছিলো, “মানুষের মাংসের চেয়ে সুস্বাদু আর কিছুই নেই”!

ফাঁসির পর আলেক্সান্ডার পিয়ার্সের মাথার স্কেচ; Image Source: irishcentral.com

দ্য ফ্রান্সিস মেরি

১৮২৬ সালের ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ সম্ভবত ফ্রান্সিস মেরি জাহাজের ক্রুদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। সাগরের উথালপাথাল ঝড়ে জাহাজের দুইটি মাস্তুলই ভেঙে পড়ে, সাগরের ঢেউ জাহাজকে বহুদূর ভাসিয়ে নিয়ে যায়, কেননা জাহাজকে নিয়ন্ত্রণ করার আর কোনো উপায় নেই।

খাবারদাবারের পরিমাণ কম, কিছুদিন পরেই অনাহারে একজন মারা যায়। কিন্তু তখনও অন্যান্য ক্রুরা নরখাদক হওয়ার চিন্তা মাথায় আনেনি। জাহাজের রাঁধুনি ক্ষুধায় কাহিল হয়ে পড়লে রাঁধুনির স্ত্রী অ্যান সন্ডার্স তার স্বামীর মাংস দাবি করে বসে এবং শরীর থেকে বেশ বড় টুকরো করে মাংস কেটে নেয়! এরপর থেকে সে-ই জাহাজের রাঁধুনির দায়িত্ব নেয় এবং নরখাদকতা চালিয়ে যেতে থাকে। উদ্ধার হওয়ার সময় ২১ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জন অন্যের পেটে যাওয়া থেকে বেঁচে ফিরেছিল।

ঝড়ে কুপোকাত হওয়া “দ্য ফ্রান্সিস মেরি” জাহাজ; Iamge Source: thepandorasociety.com

একটি স্থানীয় ভোজন

১৮৬৬ সালের কোনো এক দিন, সংবাদপত্রিকার হেডলাইনে বড় বড় করে লেখা “নরখাদক”! ঘটনাটা কি? দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের নিউ ক্যালিডোনিয়া দ্বীপের কাছেই নোঙর করেছে এক ফ্রেঞ্চ যুদ্ধজাহাজ। দ্বীপের অবস্থা বোঝার জন্য বেশ কয়েকজনকে পাঠিয়েছিল জাহাজের ক্যাপ্টেন। সূর্য ডুবে গেল, তারপরেও তাদের খোঁজ নেই। অবশেষে জাহাজ নিয়েই দ্বীপের তীরে ভিড়তেই সবার চক্ষু চড়কগাছ। পুরো সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাড়গোড় আর পোড়া চামড়া-মাংস! তীরে নেমেই কয়েকজন স্থানীয়কে আটক করে নৌকার ক্রুদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো। তারা তো মাংস খাওয়া স্বীকার করলই, উল্টো অভিযোগ করে বসল,এক বয়স্ক লোকের চামড়া-মাংস এতটা শক্ত হয়ে গিয়েছিল যে সিদ্ধ করতে অনেকক্ষণ আগুনে পোড়াতে হয়েছিল!

সহযাত্রীদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে ফ্রেঞ্চরা গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং প্রায় দেড় শতাধিক স্থানীয় আদিবাসীদের গুলি করে মেরে ফেলে।

নিউ ক্যালিডোনিয়ার স্থানীয় আদিবাসী; Image Source: listverse.com

শীতল সাইবেরিয়া

সাইবেরিয়ার জেলখানাগুলো যে কতটা নারকীয় তা শুধু গল্প শুনে বোঝা যাবে না। এই নারকীয় জেলখানা থেকেই মুক্তি পেতে চার কয়েদী সাঘালিয়েন দ্বীপ থেকে পালালেন সাইবেরিয়ার শুভ্র শীতল বরফের দিকে। তবে সাইবেরিয়ার তীব্র শীতে দাঁড়াতে না পেরে দুই কয়েদী বাকি দুইজনকে মেরে তাদের উষ্ণ রক্ত পান করে শরীর গরম করে, মাংস কেটে টুকরো করে বরফের নিচে ফ্রিজ করে তা নিয়েই ঘুরে বেড়াতে থাকে। অবশেষে দুই কয়েদীকে আটক করার পর বাকি দুইজনের কথা জিজ্জাসা করলে তারা পকেট থেকে মাংসের টুকরোগুলো বের করে দেয়!

সাইবেরিয়ার তুষার শুভ্র জেলখানা; Image Source: historynet.com

লেনিনগ্রাদ

১৯৪১ সালের গ্রীষ্মের শুরু থেকেই জার্মান সেনারা লেনিনগ্রাদ অবরোধ করে রাখে, কয়েক মাস যেতে না যেতেই লেনিনগ্রাদে খাবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং শহরে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। প্রথমদিকে চিড়িয়াখানার খাঁচা ফাঁকা করার পর লোকজন নিজেদের পোষা বিড়াল-কুকুর খাওয়া শুরু করে! তারপর জুতাসহ অন্যান্য চামড়ার জিনিস গলিয়ে জেলির মতো খাওয়া শুরু করে। শেষমেশ বেঁচে থাকার জন্য বাধ্য হয়েই করতে হয় নরখাদকতার মতো ভয়াবহ জিনিস। সোভিয়েত সেনারা যখন লেনিনগ্রাদ মুক্ত করে, ততদিনে কম করে হলেও কয়েক হাজার মানুষ নরমাংসের স্বাদ নিয়ে ফেলেছে।

লেনিনগ্রাদের দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত এক ব্যক্তি; Image Courtesy: George Shuklin

বার্গেন-বেলসেন ক্যাম্প

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম বড় যুদ্ধবন্দী ক্যাম্প ছিল উত্তর জার্মানির বার্গেন-বেলসেন ক্যাম্প। সমাজের প্রায় সব ধরণের লোকজনকেই ক্যাম্পে আটকে রাখা হত। প্রথমদিকে খাবারের যোগান সীমিত থাকলেও যুদ্ধের শেষদিকে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। দিনের পর দিন অভুক্ত অবস্থায় থাকার পর যখন মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা তাদের উদ্ধার করতে আসে, তখন মৃতদেহগুলোর দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যায়। একটা মৃতদেহেও লিভার, কিডনি কিংবা হৃৎপিণ্ড দূরে থাক, এক টুকরো মাংসও লেগে নেই!

বার্গেন-বেলসেন ক্যাম্পের মৃতদেহের স্তূপ! Image Courtesy: United Kingdom Armed Forces

This article is in Bangla language. It is about some peoples who had been the cannibal to save their lives. For references please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: tonysblog.info

Related Articles