- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে।
- গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হানিয়াকে ‘স্পেশালি ডেসিগনেটেড গ্লোবাল টেরোরিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে, যা সাধারণত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
- যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে আগে থেকেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করত। নতুন এ তালিকায় হানিয়া ছাড়াও মিসর এবং ফিলিস্তিন ভিত্তিক আরও তিনটি সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
.@StateDept has designated Ismail Haniyeh, Harakat al-Sabireen, Liwa al Thawra, and Harakat Sawa’d Misr (HASM) as Specially Designated Global Terrorists (SDGTs) under Section 1(b) of Executive Order (E.O.) 13224. Full details: https://t.co/6rmZD6rogE
— State Dept CT Bureau (@StateDeptCT) January 31, 2018
প্রেস রিলিজে জানানো হয়, ইসমাইল হানিয়াকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, কারণ তিনি “বেসামরিক জনগণের উপর আক্রমণ সহ সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষপাতী” এবং তার সাথে হামাসের সামরিক শাখার “ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে”। উল্লেখ্য, হামাসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল ছাড়াও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ১৭ সৈন্যকে হত্যার জন্য হামাসের ‘সন্ত্রাসী হামলা’কে দায়ী করে থাকে।
সন্ত্রাসী তালিকায় স্থান দেওয়ার ফলে ইসমাইল হানিয়ার উপর ভ্রমণের ব্যাপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাংকে অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে যদি তার কোনো অর্থ বা সম্পত্তি থাকে, সেগুলো বাজেয়াপ্ত হতে পারে। এছাড়াও এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান তার সাথে কোনো ধরনের ব্যবসা বা আর্থিক লেনদেন করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, গত রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি জেসন গ্রিনব্ল্যাট ইসরায়েল সফরে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গগুলো পরিদরশন করেন। পরবর্তীতে তিনি মন্তব্য করেন, হামাস তাদের অর্থ দ্বারা গাজার জনগণকে সাহায্য করার পরিবর্তে টানেল খুঁড়ে ইসরায়েলের উপর রকেট আক্রমণ করেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। তার ভ্রমণের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হানিয়াকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা হলো।
Hamas wastes resources on tunnels & rockets to attack Israel, instead of helping the people of Gaza by getting the lights on, the water flowing & the economy growing. Hamas spews hateful rhetoric & foments a vicious cycle of violence. Gaza deserves better! pic.twitter.com/nQGvqwo9gb
— Jason D. Greenblatt (@jdgreenblatt45) January 28, 2018
হামাস যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তকে ‘মূল্যহীন” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর উপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া একটা ব্যর্থ পদক্ষেপ। হামাসের উপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
বুধবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত “আন্তর্জাতিক আইনের খেলাপ”, কারণ আন্তর্জাতিক আইনে ফিলিস্তিনি জনগণের ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার এবং নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নেতা নির্বাচন করার অধিকার আছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতি আমেরিকার সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ পেয়েছে এবং এটি ফিলিস্তিনি জনগণের উপর ইসরায়েলি অন্যায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, হামাস তথা ইসলামি প্রতিরোধ সংগঠন ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন, যারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর নীতিতে বিশ্বাসী। হামাসের সামরিক শাখার নাম আইজউদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড, যারা বিভিন্ন সময় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। হামাস ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গত বছরের মে মাসে খালেদ মিশালকে প্রতিস্থাপিত করে দলটির প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইসমাইল হানিয়া।
হানিয়া ছাড়াও আরও যে সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তারা হলো ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনি সংগঠন হারাকাত আল-সাবিরীন এবং মিসর ভিত্তিক দুটি সংগঠন লিওয়া আল-থাওরা ও হাসাম মুভমেন্ট। শেষোক্ত দুটি সংগঠনের বিরুদ্ধে মিসরীয় সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ এবং সেনা সদস্যদেরকে হত্যার অভিযোগ আছে।
ফিচার ইমেজ- Reuters