Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মরুভূমির বুকে জেগে থাকা সবুজ পৃথিবী

মরুভূমি বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ধূসর বালিতে পরিপূর্ণ এক প্রান্তর। তার মাঝে হঠাৎ সবুজ বৃক্ষরাজি দেখলে তাজ্জব হতে হয়। মরুভূমিতে সবুজের আচ্ছাদন ঠিক কল্পনা করা যায় না। কিন্তু মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশে এমন কিছু গাছ নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে, যাদের রূপ বা গুণও কম নয়। মরুর গাছ মাত্রই কষ্টসহিষ্ণু। এরা যেমন কষ্ট করে প্রকৃতির সাথে যুঝতে পারে, তেমনি বেঁচেও থাকে দীর্ঘদিন। মরু অঞ্চল থেকে তুলে আনা হলো ব্যতিক্রমী গুণসম্পন্ন এমনই কয়েক ধরনের গাছ।

ওলেমি পাইন

ওলেমি পাইন; Source: eartharchives.org

অস্ট্রেলিয়ার মরু অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় এই ধরনের গাছ। মরুর রুক্ষ পরিবেশে বেড়ে ওঠা ওলেমি পাইন পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ গাছ। একে জীবন্ত জীবাশ্মও বলা হয়। কাণ্ডে থোকা-থোকা বুদবুদ আকারের বস্তু ঝুলে গাছটিকে এক অদ্ভুত গড়ন দিয়েছে। মরু অঞ্চলের অনেক গাছই দীর্ঘজীবী। এটি তাদের মধ্যে প্রথম সারির। ২০০ মিলিয়ন বছরের পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো গাছের মধ্যে পড়ে এই ওলেমি পাইন। এই গাছটি শূন্যের নিচে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও বেঁচে থাকতে পারে।

ড্রাগন ব্লাড ট্রি

ইয়েমেনের মরুরাজ্যের এক বিস্ময়কর গাছ ড্রাগন ব্লাড ট্রি । ইয়েমেনের সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জের বাইরে বিশ্বের অন্য কোথাও এই গাছ তেমন একটা দেখা যায় না। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাগৈতিহাসিক কালে যেসব গাছের বংশধররা এখনো পৃথিবীর বুকে টিকে রয়েছে, তাদের মধ্যে ড্রাগন ব্লাড ট্রি অন্যতম। প্রায় সাড়ে তিন কোটি বছর পূর্বে আরবের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ, যার ফলে বিবর্তনের প্রভাব গাছটির মধ্যে পড়েনি। সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জের চারটি দ্বীপে বৈশিষ্ট্যগত কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই এই প্রজাতির গাছগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম ড্র্যাকেইনা সিনাবারি।

ড্রাগন ব্লাড ট্রি; Source: thegypsythread.org

বর্ষাকালে সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই সময়টায় বাতাসের ভেসে থাকা জলকণা পাতার সাহায্যে শুষে নেয় ড্রাগন ব্লাড ট্রি। তারপর তা শেকড় ও শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে গাছের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে প্রকৃতি থেকে পানি সংগ্রহ করে বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। গাছের ওপরের অংশে থাকে তার পাতাগুলো। এমনভাবে পাতাগুলো পরস্পরের সাথে জমাট বেঁধে থাকে যে দূর থেকে দেখতে অনেকটা ছাতার মতো মনে হয়।

এই গাছে লাল রঙের ছোট ছোট ফল জন্মায়, যা অনেকটা কুলের মতো দেখতে। এ ফল গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছের গুঁড়ি থেকে একধরনের লাল আঠা জাতীয় পদার্থ বের হয়, যা বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং রং তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ১৯৬০ সালের দিকে এই আঠা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হতো। গাছের এই লাল আঠা বা রসের কারণে স্থানীয়দের মুখে মুখে গাছটির নাম ড্রাগন ব্লাড ট্রি হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। বর্তমানে নানা প্রাকৃতিক দূষণের কারণে গাছটির অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে। আগামী ২০৮০ সালের মধ্যে এই গাছ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

বেসবল গাছ

মরুর বুকে জন্মানো বেসবল আকৃতির গাছ; Source: gettingontravel.com

দক্ষিণ আফ্রিকার কারু মরুভূমিতে পাওয়া যায় এই গাছ। ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট গাছটি দেখতে যেন ঠিক সবুজ বেসবল। এমন অদ্ভুত দেখতে হওয়ায় অনেকেই এই গাছটি নিজের সংগ্রহে রাখতে চান। ফলে গাছটির আয়ুর উপর কোপ পড়েছে। মানুষের অধিক উৎসাহে এত সুন্দর গাছটি নাকি অচিরেই বিলুপ্ত হতে চলেছে পৃথিবী থেকে। ফুলও ফোটে বেসবল গাছে। নামটিও ভারি সুন্দর, সায়াথিয়া।

ডেজার্ট উইলো ট্রি

ডেজার্ট উইলো ট্রি; Source: plantsfordallas.com

এই গাছটি চিলোপসিস নামেও পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোতে এই উদ্ভিদটি দেখতে পাওয়া যায়। গাছটি ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ। বছরের মে মাসে ফুল ফুটতে শুরু করে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাছে ফুল থাকে। এর ফুল সাধারণত হালকা গোলাপি এবং ল্যাভেন্ডার রঙের হয়ে থাকে। ফুলের বোঁটা হলুদ আকৃতির এবং গোলাপি পাঁপড়ির মাঝ বরাবর হলুদ ও বেগুনি রঙের ছোপ দেখা যায়। মৌমাছির মাধ্যমে এই গাছের পরাগায়ন ঘটে।

আয়রনউড

উত্তর আমেরিকার সোনোরান মরু অঞ্চলে গাছটির দেখা মেলে। প্রকৃতির খুব কঠিন অবস্থায়ও এ গাছ বেঁচে থাকতে পারে। এর আয়ু বেশ দীর্ঘ। এক একটি গাছ ১,৫০০ বছরও বেঁচে থাকতে পারে। এরা খুব ধীরে ধীরে বাড়ে। গাছে হালকা নীল ও ধূসর পাতা হয়। এপ্রিল মাসে ফুল ফোটে। খুব শুকনো সময়ে গাছের পাতা ঝরে পড়ে, কিন্তু মরে যায় না।

মরুভূমির গাছ আয়রনউড; Source: Pinterest

এই গাছের এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। আশেপাশের পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এই গাছ। প্রায় ১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলার অসাধারণ এক ক্ষমতা রয়েছে গাছটিতে।

এলিফ্যান্ট ট্রি

বিরল প্রজাতির এই উদ্ভিদ শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের আনজা-বোরিওগো মরুভূমি, সোনারোরা মরুভূমি এবং সান্তা রোজা পর্বতমালা এবং অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের এক বিস্তৃত অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। মরুভূমির জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য এই গাছের গুঁড়িতে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই গাছের গুঁড়ি বেশ পুরু হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে গাছটিতে। গাছটি আকারে ছোট, এর শাখা-প্রশাখাও খুব একটা বড় হয় না।

বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ এলিফ্যান্ট ট্রি; Source: drystonegarden.com

প্রধান কাণ্ডের তুলনায় এর শাখা-প্রশাখা আকারে বেশ ছোটই বলা যায়। জল সংরক্ষণের জন্য গাছের শেকড় এবং মূল কাণ্ডের গুঁড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাছের পাতাগুলো বেশ পাতলা, সমতল এবং লম্বা হয়ে থাকে। গাছ থেকে লম্বা শিম আকৃতির রোয়া বের হয়। এই গাছের প্রধান আকর্ষণ গাছটিতে ছোট, তারকা আকৃতির সাদা বা ক্রিমযুক্ত ফুল ফোটে। খরা, শুকনো ও শীত মৌসুমে গাছটির পাতা ঝরে পড়ার মধ্য দিয়ে গাছটি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।

ব্যারেল ক্যাকটাস

ব্যারেল ক্যাকটাস; Source: wearefound.com

উটেরা কি কাঁটা বেছে খায়? উট যদি মরুভূমির এক নম্বর প্রতিনিধি হয়, দ্বিতীয়তে আছে নির্ঘাত কাঁটা গাছ। মরুতে অনেকরকম কাঁটাগাছ আছে। দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার মরু অঞ্চলে দেখা মেলে এই কাঁটা ক্যাকটাসের। এটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ক্যাকটাস। ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কাঁটাগুলো প্রায় ৪ ইঞ্চি লম্বা। গাছের মূল খুবই ছোট। তবে এদের ক্ষমতা বেশ সাংঘাতিক। যদি এই গাছ মাটি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও বাড়িতে এরা ছয় বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ১৫০ বছর পর্যন্ত আয়ু হলুদ-কমলা ফুলের ক্যাকটাস গাছটির।

ডেজার্ট লিলি

ডেজার্ট লিলি; Source: scpr.org

হেসপারোকয়ালিস নামেও পরিচিত উদ্ভিদটি তার ফুলের জন্য বিখ্যাত। গুল্ম শ্রেণীর এই ফুলের গাছটি উত্তর আমেরিকা, মেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আরিজোনা মরুভূমি এলাকায় পাওয়া যায়। এর ফুলগুলো ফানেল আকৃতির, ক্রিম-বর্ণের হয়ে থাকে। মার্চ থেকে শুরু করে মে পর্যন্ত ফুল ফুটতে থাকে। গাছের পাতা এক ইঞ্চি থেকে ৮-১০ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। এই গাছের মূল বেশ মোটা হয়। খাদ্য হিসেবে এই গাছের মূল স্থানীয়দের বেশ পছন্দ।

সিলভার টর্চ ক্যাকটাস

সিলভার টর্চ ক্যাকটাস; Source: plantsrescue.com

বলিভিয়া, আর্জেন্টিনার এই ক্যাকটাসকে উলি টর্চও বলে। তিন মিটারের মতো লম্বা গাছটির আশ্চর্য চোখকাড়া ব্যাপার হলো এর ফুল। মরুভূমির গাছটিতে যখন ফুল আসে, তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে যায় চারপাশ। শূন্যের নিচে ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়ও এই ফুল ফুটতে পারে। সারা গায়ে দুই ইঞ্চি লম্বা কাঁটার ছড়াছড়ি। গরমকালের শেষে গাছটিতে ফুল ধরে। তবে সেগুলো যে আমাদের সাদা চোখে দেখা ফুলের মতো নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ফুল বলে বোঝাই যায় না।

ফিচার ইমেজ- NatBG.com

Related Articles