Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানুষের কারণে বিলুপ্তির পথে পৃথিবীর অতিকায় প্রাণীরা

ডানার জন্য হাঙর শিকার, দাঁতের জন্য আফ্রিকান হাতি বা শিঙের জন্য গণ্ডার শিকার; মানুষের আগ্রাসন এত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, ‘মেগাফনা (Megafauna)’ বা বিশালদেহী প্রাণী হলেও এদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। পরিস্থিতি কতটা প্রকট, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে, উদাহরণস্বরূপ নর্দার্ন সাদা গণ্ডারের কথাই ধরা যাক। মানুষের হাতে ক্রমাগত হত্যার শিকার হওয়ার পর, বর্তমানে মাত্র দুটি এই প্রজাতির গণ্ডার অবশিষ্ট রয়েছে এবং এই দুটিই মেয়ে গণ্ডার। সুতরাং বলা যায়, প্রাকৃতিক উপায়ে এই প্রজাতির বংশ বিস্তার করে টিকে থাকার আর কোনো আশা অবশিষ্ট নেই।

পৃথিবীর সর্বশেষ দুই নর্দার্ন সাদা গণ্ডার; Image Source: fortune.com

অতিকায় প্রাণীদের ‘মেগাফনা’ বলে ডাকা হয় এবং বাস্তুতন্ত্রের সাম্যাবস্থার জন্য এরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদতে সাধারণ দৃষ্টিতে অনুধাবন না করা গেলেও, ম্যামথ প্রজাতির এই প্রাণীরা অবশ্য দারুণ হুমকির মুখে। সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ মেগফনার অস্তিত্ব আজকে হুমকির মুখে এবং এর জন্য দায়ী একমাত্র আমরা।

জীববিজ্ঞানে মেগাফনার পরিধি অত্যন্ত সুবিশাল, যার অন্তর্গত বড় আকারের অনেক প্রাণী। এই পরিধিতে অস্ট্রেলিয়ান কডফিশ থেকে শুরু করে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া T. rex ডাইনোসরও রয়েছে। তাই এই সংক্রান্ত গবেষণার খাতিরে, রিপল ও তার সহকর্মীরা একটি নির্দিষ্ট ছকের আওতায় তাদের অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি করেছেন। তাদের গবেষণায় শুধুমাত্র বর্তমানে টিকে থাকা মেগাফনাদের বিবেচনা করা হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে ওজনের ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করে নেওয়া হয়েছে।

যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণী, রে-ফিনড (Ray-finned) মাছ ও কার্টিলাজিনাস মাছের জন্য (হাঙ্গর, তিমি) ২০০ পাউন্ড বা ১০০ কেজির উপরের প্রাণীগুলোকে মেগফনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং উভচর, পাখি ও সরীসৃপদের জন্য মেগাফনা ধরা হয়েছে ৮৮ পাউন্ডের (৪০ কেজি) বেশি ওজনের প্রাণীদের। এমন ৩৬২টি মেগাফনা প্রজাতি নিয়ে করা গবেষণার ফলাফল খুবই আশঙ্কাজনক এবং এই প্রাণীগুলোর ভবিষ্যৎ হয়তো খুব একটা সুখকর হবে না, যদি না প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সমুদ্রের মেগাফনা, নীল তিমি; Image Source: nationalgeographic.com

রিপল ও তার সহকর্মীদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৩০০টি মেগাফনার মধ্যে, ৭০% মেগাফনার সংখ্যা ক্রমেই কমছে এবং ৫৯% মেগফনা একরকম বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর জন্য দায়ী মেগাফনাদের মাংস বা শরীরের অংশের জন্য মানুষের নিয়মিত চাহিদা পূরণের জন্য শিকার এবং সরাসরি হত্যা। শুধুমাত্র সরীসৃপ ব্যতীত মাংস বা মেগাফনাদের শরীরের নির্দিষ্ট অংশের জন্য হত্যা করায় এই প্রাণীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং ক্রমেই বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে রয়েছে গবেষণা, অনিচ্ছাকৃত মাছ ধরা ও ফাঁদে মৃত্যু, চামড়া, শিঙ বা পাখার অবৈধ বাণিজ্য ইত্যাদি। সরাসরি হত্যা ছাড়াও রয়েছে জলবায়ুর দূষণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন, আবাসস্থল ধ্বংস ও ব্যাপক মাত্রায় নগরায়ন। তবে, কারণ যা-ই হোক না কেন, সবকিছুর জন্যই দায়ী মানুষ।

বিশালাকৃতির উটপাখি; Image Source: themysteriousworld.com

বিলুপ্তির আশঙ্কায় থাকা প্রায় ৬০,০০০ প্রজাতির প্রাণীদের নিয়ে আইইউসিএন (IUCN) দ্বারা তৈরিকৃত তালিকার সাথে মিলিয়ে দেখা যায় যে, গবেষণার অন্তর্গত অন্তত ২৯২টি মেগাফনা প্রায় একই হুমকির মুখে রয়েছে। গবেষকদের মতে, মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমে যাওয়ার হার ও বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি এই মেগাফনাদের!

সংখ্যার হিসাবে বললে, গোটা বিষয়টি দাঁড়াবে অনেকটা এরকম – সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে ২১% বিলুপ্তির হুমকির মুখে এবং ৪৬% সংখ্যায় কমে যাচ্ছে। তুলনা করলে চমকে উঠতে বাধ্য যে কেউ। কারণ মেগাফনাদের জন্য বিলুপ্তির হুমকি ও কমে যাওয়ার হার যথাক্রমে ৫৯% ও ৭০%! অর্থাৎ কমপক্ষে ২০০টি অতিকায় প্রাণীর সংখ্যা ক্রমেই কমছে এবং সংখ্যায় কমে গিয়ে ১৫০টির মতো প্রজাতি রয়েছে পৃথিবী থেকে একেবারে হারিয়ে যাওয়ার হুমকিতে। তাছাড়া, উভচর (৪০%), স্তন্যপায়ী (২৫%), পাখি (১৪%), শার্ক ও রে (৩১%), এদের অস্তিত্বের হুমকির সাথে শুধুমাত্র মেগাফনাদের তুলনামূলক পার্থক্য স্পষ্ট। তাই গবেষকরা মনে করছেন, বিশালদেহী এই প্রাণীদের প্রতি হয়তো যতটা আমাদের নজর দেওয়ার কথা ছিল, ঠিক ততটা আমরা দিইনি।

বিশালদেহী কচ্ছপ; Image Source: Tui de roy/NPL

দূর থেকে শিকার করার ব্যাপারে মানুষ সিদ্ধহস্ত শত-সহস্র বছর ধরে। শিকার করা একসময় সাহস ও বীরত্বের প্রতীক হিসেবেও বিবেচনা করা হতো। যত বড় প্রাণী, তত বেশি বীরত্ব, এমন ধারণাও প্রচলিত ছিল। সবকিছুর সাথে যোগ হয়েছে, কালোবাজারে বিশালাকার প্রাণীদের দাঁত, শিঙ, হাড়, পাখা ও মাংস ইত্যাদির অমানুষিক চাহিদা। তাছাড়া, আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে অতিকায় প্রাণী শিকার করাও আগের চেয়ে অনেকটা সহজ হয়ে উঠেছিল।

উল্লেখ্য, ১৫০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২% মেগাফনা বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বিপরীতে সমগ্র মেরুদণ্ডী প্রাণী একেবারে হারিয়ে যাওয়ার হার মাত্র ০.৮%! গবেষকরা আশঙ্কা করছেন যে, নিকট ভবিষ্যতে অতিকায় এই প্রাণীদের ১০টির মধ্যে ৭টির সংখ্যা কমতে থাকবে এবং কমপক্ষে ৫টির মধ্যে ৩টি বিলুপ্ত হয়ে হয়ে যাবে।

মানুষ দ্বারা সরাসরি হত্যাই মূলত মেগাফনাদের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ; Image Source: skyrimnexus

যে পৃথিবীতে মানুষের বসবাস, সেখানে অতিকায় প্রাণীদেরও বিলুপ্তির পথে থাকা স্বাভাবিক। মানুষের কারণে যাদের জীবন বিপন্ন, সেই মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই প্রাণীদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে। যদিও অস্তিত্ব সংকটে থাকা মেগাফনাদের সংরক্ষণ বেশ জটিল ও কঠিন একটি কাজ। কারণ প্রায় প্রতিটি মেগাফনা বৈশিষ্ট্যে ও আবাসস্থলের নিমিত্তে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

একটি প্রকল্পের আওতায় মেগাফনাদের অস্তিত্ব রক্ষার কাজটি সহজ হবে না। এসব প্রাণীদের রক্ষার জন্য প্রয়োজন সংরক্ষিত অঞ্চল, যেখানে নিরাপদে থাকতে পারবে অস্তিত্বের সংকটে থাকা প্রাণীরা। তবে সাম্প্রতিক এই গবেষণার ভিত্তিতে বলা যায়, মেগাফনাদের সংখ্যা কমে যাওয়া রোধ করতে ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে প্রথমেই সরাসরি হত্যা রোধ করা হওয়া উচিত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যেমন- ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিক হোয়েলিং কমিশনের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তিমি নিধন বন্ধ করার ফলে সামুদ্রিক এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটির সংখ্যা কমে যাওয়ার হার অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে বন্ধ হয়েছিল।

বিশালদেহী তিমি রক্ষার খাতিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছিল দারুণ প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। অন্যান্য মেগাফনাদের রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন সময়ের দাবী। মেগাফনারা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা জীব বৈচিত্র্যের কোনো সাধারণ মাধ্যম নয়। এদের সাথে জড়িয়ে রয়েছে পরিবেশের ভারসাম্য, খাদ্য শৃঙ্খলার সাম্যাবস্থা, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ।

মেগাফনাদের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রয়োজন দ্রুত সময়োপযোগী উদ্যোগ; Image Source: Shutterlock

উন্নত দেশগুলো তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, কঠোরভাবে মেগাফনাদের মাংস, ঔষধ, গবেষণার ও বিলাসবহুল সামগ্রীর উৎস হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি হুমকির মুখে থাকা মেগাফনাদের সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন জরুরী এবং আমাদের পরিবেশের জন্য মেগাফনাদের গুরুত্বও তুলে ধরার উপরেও জোর দিয়েছেন গবেষকরা।

মৃত মেগাফনার চেয়ে যে, জীবিত মেগাফনা অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উভয় দিক দিয়েই আমাদের পৃথিবীর জন্য অধিক জরুরী, এটি অনুধাবন আমরা যত দ্রুত করতে পারবো ততই মঙ্গল। তা না হলে, কম বেশি প্রত্যেকটি মেগাফনার অদূর ভবিষ্যৎ হয়তো নর্দার্ন সাদা গণ্ডারের মতো হতে পারে; শুরুতেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছিল, পুরো পৃথিবীতে মাত্র দুটি নর্দার্ন সাদা গণ্ডার টিকে আছে। 

This article is in Bangla language. It is earth's largest animals are in threat of extinction and human are responsible for that. Necessary references have been hyperlinked.

Feature Image:lifegate.com

Related Articles