আগের পর্বে আমরা ট্রায়াসিক যুগের ভৌগলিক অবস্থা, জলবায়ু, পরিবেশ, জীবজন্তু ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছি। এখন ট্রায়াসিক যুগের কিছু ডাইনোসর সম্বন্ধে জানা যাক-
নিয়াসাসরাস
বিচরণ: ২৪৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: মধ্য ট্রায়াসিক
স্থান: তানজানিয়া
খাদ্যাভ্যাস: অজানা
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এটিই সবচেয়ে প্রাচীন ডাইনোসর। এর ফসিল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পাওয়া গেলেও ২০১২ এর আগে তার ওপর গভীরভাবে গবেষণা করা হয়নি। ফসিলের পরিমাণও কম হওয়ায় এর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। প্রাপ্ত হাড়ের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে এর দৈর্ঘ্য ৬.৫ থেকে ১০ ফুট (২-৩ মিটার), যার মধ্যে লেজও রয়েছে। তাদের ধারণানুযায়ী নিয়াসাসরাস ছিল দ্বিপদী, খুলি আবিষ্কৃত না হওয়ায় খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। হাতের ওপরের দিকে অস্থিময় ঝুঁটি রয়েছে, যাকে বলে ডেলটোপেক্টোরাল ক্রেস্ট, যা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ করে যে এটি একটি ডাইনোসর। সকল ডাইনোসরেরই এই ক্রেস্ট রয়েছে।
শিন্ডেসরাস
বিচরণ: ২৩৫-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: দক্ষিণ-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্র
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
এটি হেরেরাসরিডস গোত্রের অন্তর্গত, যারা এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীনতম ডাইনোসর। অন্যান্য ডাইনোসরের তুলনায় এরা বেশ ছোট, লম্বায় সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে সাত ফুট (২-২.৩ মিটার) এবং দ্বিপদী। ১৯৮৪ সালে এর ফসিল আবিষ্কৃত হয়। শিন্ডেসরাস নামকরণটি ভারী অদ্ভূত, এর অর্থ ভৌতিক সরীসৃপ।
স্টরিকোসরাস
বিচরণ: ২৩৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: ব্রাজিল
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
এরা হেরেরাসরিডস গোত্রের আরেকটি উদাহরণ। দৈর্ঘ্যে কেবল সাড়ে সাত ফুট (২.২৫ মিটার), ৩১ ইঞ্চি লম্বা লেজ এবং ৩০ কেজি ওজন। বেশিরভাগ স্টরিকোসরাসের জীবাশ্ম অসম্পূর্ণ, শিরদাঁড়া, পা এবং নিম্ন চোয়ালবিশিষ্ট। এরা খুব দ্রুত দৌড়াতে পারত এবং ভাল শিকারী ছিল।
স্যাটার্নালিয়া টিউপিনিকিম
বিচরণ: ২৩৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: ব্রাজিল এবং জিম্বাবুয়ে
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
এরা ছিল সরোপড এবং থেরোপডদের মিশ্রণ। যার কারণে একে শ্রেণীভুক্ত করাটা মুশকিল। এরা দৈর্ঘ্যে ছিল পাঁচ ফুট (১.৫ মিটার) লম্বা গলাবিশিষ্ট দ্বিপদী। এদের বেশিরভাগ জীবাশ্ম সান্টা মারিয়াতে পাওয়া গেলেও কিছু উর্বস্থী জিম্বাবুয়েতে পাওয়া যায়। যার ফলে বোঝা যায়, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা এককালে সংযুক্ত ছিল।
হেরেরাসরাস
বিচরণ: ২৩১ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনা
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
অন্যান্য বহু ডাইনোসরের মতো এরাও হেরেরাসরিডস গোত্রের অন্তর্গত। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম এর জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নমুনা আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে একে শ্রেণীভুক্ত করা যায়নি। বর্তমানে একে থেরোপড শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে যারা আধুনিক পাখির সরাসরি পূর্বপুরুষ। প্রাথমিক ডাইনোসরদের তুলনায় এরা বেশ বড় ছিল। লম্বায় ২০ ফুট (৬ মিটার) এবং ওজন ৩৫০ কেজি ওজন। পরবর্তী ডাইনোসরদের তুলনায় এর নিতম্ব এবং পায়ের হাড়ের গঠনে বেশ পার্থক্য ছিল।
সানজুয়ানসরাস
বিচরণ: ২৩১ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনা
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
একে হেরেরাসরাসের নিকটাত্মীয় বলা যায়। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে এটি সান জুয়ানে আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত স্থানের নামানুসারে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ করেন অস্কার এলকোবার এবং রিকার্ডো মার্টিনেজ। সানজুয়ানসরাসের জীবাশ্মও অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই পাওয়া যায়। শারিরীক গড়ন প্রায় হেরেরাসরাসের মতো হলেও নিতম্বের হাড় এবং টিবিয়া হচ্ছে স্টরিকোসরাসের অনুরূপ।
প্যানফেগিয়া
বিচরণ: ২৩৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনা
খাদ্যাভ্যাস: অজানা, তবে সম্ভবত সর্বভূক
আর্জেন্টাইন জীবাশ্মবিদ রিকার্ডো মার্টিনেজ ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে এটি আবিষ্কার করেন। স্যাটার্নালিয়ার সাথে এর মিল রয়েছে। এর নামকরণ করা হয়েছে গ্রীক শব্দ ‘প্যান’ যার অর্থ সর্ব এবং ‘ফেগেইন’ যার অর্থ খাদক এর অনুসারে।
ইওড্রোমেস
বিচরণ: ২৩১-২২৯ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: আর্জেন্টিনা
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
যদিও এটি ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়। তবে এর নামকরণ এবং গবেষণা ২০১১ পর্যন্ত স্থগিত থাকে। প্রাথমিকভাবে একে ইওর্যাপ্টরদের প্রজাতি মনে করা হলেও পরবর্তীতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি একটি নতুন ডাইনোসর। এরা আকারে বেশ ছোট, ৩.৯ ফুট (১.২ মিটার), নাক থেকে লেজ পর্যন্ত এবং ওজন ৫ কেজি। এরা থেরোপডদের অন্যতম প্রথম সদস্য যারা বিখ্যাত ডাইনোসর টি-রেক্সের আদিপুরুষ।
ইওর্যাপ্টর
বিচরণ: ২৩১-২২৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনা
খাদ্যাভ্যাস: সর্বভূক
এর জীবাশ্ম প্রথম আবিষ্কার হয় ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে, যদিও সম্পূর্ণ জীবাশ্ম এখনও পাওয়া যায়নি। এদের মাংসাশী এবং তৃণভোজী দু’ধরনেরই দাঁত ছিল। খাদ্য ও শিকারের প্রাপ্যতার উপর একেক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল এদের।
অ্যালওয়াকেরিয়া
বিচরণ: ২২৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: ভারত
খাদ্যাভ্যাস: সর্বভূক
এরা প্রাক সরিসচিয়ান ডাইনোসর। লম্বায় কেবল দেড় ফুট (৫০ সে.মি.) এবং ওজন মাত্র দুই কেজি।
প্লেটিওসরাস
বিচরণ: ২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড
খাদ্যাভ্যাস: তৃণভোজী
এরা সরোপড গোত্রের অন্তর্গত। লম্বায় ৭ মিটার। চার পায়ে হাঁটত। এদের পাঁচ আঙুল বিশিষ্ট হাত পা এবং বড় বৃদ্ধাঙ্গুল বিশিষ্ট ছিল, যা দিয়ে এরা আত্মরক্ষা এবং খাদ্য সংগ্রহ করত। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে যোহান ফ্রিয়েডরিখ এঙ্গেলহার্ট এর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন এবং তিন বছর বাদে, হারমান ভন মেয়ার এটি ব্যাখ্যা করেন এবং নামকরণ করেন। জার্মানি থেকে প্রাপ্ত জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায় এরা খুব সম্ভবত দল বেঁধে বাস করত।
সেলোফাইসিস
বিচরণ: ২২৫-১৯০ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, জিম্বাবুয়ে
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
শিকার ধরায় এদের মূল অস্ত্র ছিল দ্রুততা এবং তৎপরতা। ধারালো দাঁত এবং থাবা শিকার ধরে রাখতে এবং মেরে ফেলতে সাহায্য করত। লম্বায় ছিল ৩ মিটার এবং ওজন ১৫ কেজি। মাথার দৈর্ঘ্য ছিল বেশ বড়, প্রায় ২৭ সেন্টিমিটার।
লিলিয়েন্সটেরনাস
বিচরণ: ২০৫-২০২ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: ফ্রান্স, জার্মানি
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
এরা থেরোপড গোত্রের অন্তর্গত, লম্বায় ৫ মিটার, ওজন ১৩০-২০০ কেজী, দ্বিপদী। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে হিউয়েন এর নামকরণ করেন।
থেকডোন্টোসরাস
বিচরণ: ২২৭-২০৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: যুক্তরাজ্য
খাদ্যাভ্যাস: সর্বভূক
সরোপড গোত্রভুক্ত, লম্বায় ২.৫ মিটার।
রিওজাসরাস
বিচরণ: ২২১-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: আর্জেন্টিনা
খাদ্যাভ্যাস: তৃণভোজী/সর্বভূক
এরা সরোপড গোত্রভুক্ত, লম্বায় ৫.১৫ মিটার। এখন পর্যন্ত এদের প্রায় বিশ রকমের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বোনাপার্ট এর নামকরণ করেন।
মেলানোসরাস
বিচরণ: ২২৭-২২১ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: দক্ষিণ আফ্রিকা
খাদ্যাভ্যাস: সর্বভূক
এরা সরোপড গোত্রের অন্তর্গত, লম্বায় ১২ মিটার। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে সিডনী এইচ হাটন এর নামকরণ করেন।
মুসরাস
বিচরণ: ২২১-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: আর্জেন্টিনা
খাদ্যাভ্যাস: তৃণভোজী
এরা সরোপড গোত্রভুক্ত, লম্বায় ৩ মিটার। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি এটি আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে হোসে বোনাপার্ট এবং মার্টিন ভিন্স এর নামকরণ করেন।
কলোরাডিসরাস
বিচরণ: ২২১-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: আর্জেন্টিনা
খাদ্যাভ্যাস: সর্বভূক
সরোপড গোত্রের অন্তর্গত এ ডাইনোসর লম্বায় ৪ মিটার। এর প্রজাতির নাম ব্রেভিস। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বোনাপার্ট এর নামকরণ করেন।
অ্যাসাইলোসরাস
বিচরণ: ২০৮-২০১ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: ইংল্যান্ড
খাদ্যাভ্যাস: তৃণভোজী
২০০৭ খ্রিস্টাব্দে পিটার গালটন এর নামকরণ করেন। সরিসচিয়া গোত্রভুক্ত এ ডাইনোসর লম্বায় ২ মিটার এবং ওজন ২৫ কেজি।
প্রোকম্পোসোগন্যাথাস
বিচরণ: ২২১-২১০ মিলিয়ন বছর পূর্বে
সময়: শেষ ট্রায়াসিক
স্থান: জার্মানি
খাদ্যাভ্যাস: মাংসাশী
এরা ক্ষুদ্র থেরোপড গোত্রের অন্তর্গত। লম্বায় মাত্র ১ মিটার। ওর্নিথোলেস্টেসের সঙ্গে এর বেশ মিল পাওয়া যায়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাস এর নামকরণ করেন।
এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্ব: