চৈতন্য-পরবর্তী যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব-পদকর্তা গোবিন্দদাস কবিরাজের জন্ম আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এবং দেহাবসান সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে। তিনি সাধক এবং ভক্তরূপে সুপ্রতিষ্ঠিত। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী নিয়ে অনেকগুলো বই লিখেছিলেন তিনি, যেগুলোকে সে সময় কৃষ্ণপদ বলা হতো। তিনি শ্রীনিবাস আচার্যের অন্যতম শিষ্য ছিলেন এবং কবিত্বগুনে খেতুরীর মহোৎসবে নিত্যানন্দ প্রভুর পুত্র বীরভদ্রের দ্বারা অভিনন্দিতও হয়েছিলেন। সুবৃহৎ বৈষ্ণব সংকলনগ্রন্থ ‘পদকল্পতরু’তে তার অজস্র পদ সংকলিত হয়েছে। পদ রচনা ছাড়াও তিনি ‘সঙ্গীতমাধব’ নামে একটি নাটক এবং ‘কর্ণামৃত’ নামক একটি কাব্য রচনা করেন। রূপদক্ষ শিল্পী গোবিন্দদাস কবিরাজ ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ নামে অভিহিত হয়েছেন।
ব্রজবুলিতে পদরচনার পারিপাট্যে, অলংকারের প্রয়োগ নৈপুণ্যে, ছন্দকুশলতায়, চিত্রসৃষ্টি ও সঙ্গীতময়তা, ভাষার মাধুর্য ও রহস্যময়তায় তিনি বিদ্যাপতির সার্থক উত্তরাধিকারী হয়ে উঠেছেন। শ্রীরাধার সখী বা মঞ্জরীভাবে অনুগত সাধনা শ্রীচৈতন্যদেব প্রবর্তিত যে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের বৈশিষ্ট্য, তার অনুসরণ গোবিন্দদাসের পদে লক্ষ করা যায়। এছাড়া রাধাকৃষ্ণের ‘অষ্টকালীয় লীলা’ বর্ণনার পরিকল্পনার পথিকৃৎ রূপে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। বৈষ্ণব পদাবলির বিবিধ রসপর্যায়, যেমন- গৌরচন্দ্রিকা, পূর্বরাগ, অভিসার, রসোদগার, প্রার্থনা প্রভৃতিতে তার সৃষ্টির অনন্য স্বাক্ষর রয়েছে।
বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যে বলরাম দাসের অবদান
বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যে বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাসের পরেই বলরামদাসের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ নামে একাধিক পদকর্তার সন্ধান পাওয়া গেলেও, এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও প্রাচীনতম হলেন নিত্যানন্দ-শিষ্য বলরাম দাস, তিনি ষোড়শ শতকের শেষদিকে কৃষ্ণনগরের কাছে দোগাছিয়া গ্রামে আবির্ভূত হন। বিবিধ বৈষ্ণব গ্রন্থে তিনি ‘সঙ্গীতকারক’, ‘সংগীতপ্রবীণ’ ইত্যাদি নামে পরিচায়িত হয়েছেন। ‘পদকল্পতরু’তে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রামচন্দ্র ও গোবিন্দদাস কবিরাজের বংশে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ভক্তিরত্নাকর’ অনুসারে তার উপাধি ‘কবিপতি’। সহজ, সরল ভাষায় ব্রজবুলি ও বাংলায় রসোদগার, রূপানুরাগ, বাৎসল্যরসের পদ রচনায় তিনি অতুলনীয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কৃষ্ণ ও মা যশোদার স্নেহব্যাকুল পদগুলোতে তার স্বতঃস্ফূর্ত হৃদয়ানুভূতির প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতক থেকে মুসলিম কবিরাও গৌরচন্দ্রিকা এবং রাধাকৃষ্ণলীলা বিষয়ক পদ রচনার জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠেন। চৈতন্য প্রচারিত প্রেমধর্মের আদর্শে উদ্বুদ্ধ কবিরা গোষ্ঠলীলা, পূর্বরাগ, অভিসার, বাসকসজ্জা, মিলন, বিরহ, খণ্ডিতা, দানলীলা, হোলিলীলা প্রভৃতি বিষয়ে পদ রচনা করেন। এছাড়াও সুফি সাধকেরা তাদের রচনায় জীবাত্মা-পরমাত্মার কথাপ্রসঙ্গে রাধাকৃষ্ণের অবতারণা করেছেন। বৈষ্ণব পদকর্তাদের মধ্যে বাংলার কয়েকজন মুসলিম কবি হলেন, অয়াহিদ, সৈয়দ আকবর আলি, সৈয়দ আলাওল, উন্মর আলি, কবীর শেখ, গরীব খাঁ, লালন ফকির, লাল মামুদ, সৈয়দ মর্তুজা প্রমুখ।
বাঙালির সমাজ ও সাহিত্যে চৈতন্যপ্রভাব
গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যদেব বাঙালির সমাজ ও সাহিত্যকে বিপুলভাবে প্রভাবান্বিত করেছিলেন। হিন্দু-অহিন্দু, পণ্ডিত-মূর্খ, উঁচুনিচু ভেদাভেদ না করে তিনি তার ‘ভক্তিধর্ম’ প্রচার করেছিলেন। জনসাধারণের জন্য যে শিক্ষা তিনি দিয়েছিলেন, তা চিরন্তন, সর্বজনীন আদর্শের অনুগত। তার ধর্ম প্রতিষ্ঠিত ছিল জীবে দয়া, ঈশ্বরে ভক্তি এবং নাম সংকীর্তনের উপর। আত্মমর্যাদাহীন বাংলার মানুষ তার দীক্ষায় আত্মমর্যাদা ফিরে পেয়েছিল। তিনিই ঘোষণা করে গিয়েছিলেন যে, সব মানুষই আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হতে পারে। সে বিশ্বাস থেকেই ধর্মে, দার্শনিক চিন্তায়, সাহিত্যে, সঙ্গীতে বাঙালি তার উৎকর্ষের পরিচয় দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
বৈষ্ণব পদাবলি ও বৈষ্ণব জীবনীসাহিত্য চৈতন্য আবির্ভাবের ফলে অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তারই প্রভাবে বৈষ্ণবধর্ম এক দৃঢ় দার্শনিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীকালের পদাবলি সাহিত্যের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছিল। তাকে অবলম্বন করেই প্রথম বাংলা সাহিত্যে জীবনী সাহিত্যের সূত্রপাত ঘটে। তার পুণ্যময় জীবনকে নিয়ে সংস্কৃত ও বাংলায় প্রচুর জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়। তার পরবর্তীকালের বৈষ্ণবসাহিত্য তো বটেই, অনুবাদ সাহিত্য, মঙ্গলকাব্য এবং লোকসাহিত্যও তার ভাবাদর্শের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। শাক্ত পদাবলি সাহিত্যের ও বাউলগানের ভক্তিধারাও বহুলাংশে চৈতন্য প্রভাবিত।
হিংসা-দ্বেষ-কলুষতাময় ক্লেদাক্ত সমাজে প্রেমের আদর্শের প্রভাবে মানুষ বেঁচে থাকার নতুন পথের সন্ধান খুঁজে নিয়েছিল। নানা বৈষম্য, বিভেদ, অনাচার, সংস্কার এবং মোহ ঘুচিয়ে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় তার অবিস্মরণীয় অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। বলা যায়, চৈতন্যদেব বাংলায় এক নবজাগরণের অগ্রপথিক। এ প্রসঙ্গে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত যথার্থই লিখেছেন, “বাঙালীর হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া”।
মধ্যযুগের সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে শ্রীচৈতন্যদেবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষায় রচিত বৈষ্ণব পদাবলি ও জীবনীসাহিত্যে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ করা যায়। তার লীলাকথারই প্রকাশ বৈষ্ণব পদাবলির ‘গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ’গুলোতে। তার প্রভাবেই রাধাকৃষ্ণ লীলা বিষয়ক পদ রচনার বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি। তার জীবন-নির্ভর কাব্যগুলোর আগে বাংলায় কোনো জীবনীকাব্য ছিল না। সেক্ষেত্রে, জীবনীসাহিত্য রচনার উৎস হিসেবে তিনি রয়েছেন। পরবর্তীকালে অদ্বৈত আচার্য, তার স্ত্রী সীতাদেবী, চৈতন্য-অনুচর নিত্যানন্দ প্রমুখের জীবনীকাব্য রচিত হয়, যেগুলোতে তৎকালীন বৈষ্ণব সমাজের ইতিহাস আলোচিত হয়েছে।
চৈতন্য-পরবর্তী মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল কাব্যেও তার পুণ্য জীবনাদর্শের ছায়াপাত ঘটেছে। মুদ্রিত চৈতন্যজীবনী গ্রন্থগুলো পাঠের সুবাদে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতেও বহু লেখক শ্রীচৈতন্যকে বিষয় করে কাব্য-কাহিনী রচনা করেছেন, যার মধ্যে নবীনচন্দ্র সেনের ‘অমৃতাভ’ কাব্য, শিশিরকুমার ঘোষের গদ্যজীবনীগ্রন্থ ‘অমিয়-নিমাই চরিত’, গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘শ্রীচৈতন্যলীলা’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিভিন্ন বৈষ্ণবতত্ত্ব গ্রন্থে, যাত্রাগানে, পাঁচালিতে, কবিগানে তার প্রভাব লক্ষ করা যায়।
শ্রীচৈতন্য প্রচারিত গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক ও তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন সনাতন, রূপ ও শ্রীজীব গোস্বামী, তারই নির্দেশে, যা পরবর্তীকালের সাহিত্য ও সমাজকে পথ দেখিয়েছে। তার প্রচারিত মানবপ্রেমের সুউচ্চ আদর্শ, ‘চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠ হরিভক্তিপরায়ণ’; অর্থাৎ, “হরিভক্ত চণ্ডাল হরিভক্তিহীন দ্বিজের থেকে শ্রেষ্ঠ”-র মতো উদ্ধৃতি, আচারসর্বস্ব, জাত-পাতের কলুষতায় দীর্ণ জাতিকে নিজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলেছে।
সারা ভারতে কবীর, নানক, দাদূ, রজ্জব, নয়সি, মেহটা, মীরাবাঈ, শঙ্করদেব প্রমুখ বহু সন্তের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা সামাজিক অনাচার এবং শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে উদার মানবধর্মের বাণী প্রচার করেছিলেন। শ্রীচৈতন্যদেবও বাংলার সামাজিক জীবনে সেই সুমহান আদর্শের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচারক।
প্রাক-চৈতন্য, চৈতন্য সমসাময়িক ও চৈতন্যোত্তর পদাবলির তুলনা
কালের দিক থেকে বৈষ্ণব পদাবলির ধারাকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে; প্রাকচৈতন্য, চৈতন্য সমসাময়িক ও চৈতন্যোত্তর যুগের পদাবলি। বাংলার বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের আত্মপ্রকাশ প্রধানত পঞ্চদশ শতকে এবং তার বিস্তার প্রায় সপ্তদশ শতক পর্যন্ত। বাংলায় বৈষ্ণব ধর্মের নানান উত্থান-পতনের মতোই বৈষ্ণব সাহিত্য এবং ইতিহাসও বিবর্তনের পথরেখা ধরে এগিয়েছে। দশম-দ্বাদশ শতকে বিকশিত পুরাণ-নির্ভর বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব জয়দেব, বড়ু চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস প্রমুখের রচনায় লক্ষ করা যায়। আবার, চৈতন্য আবির্ভাবের পর গৌরবঙ্গে বৈষ্ণবধর্ম যে নতুনত্ব লাভ করে, তার আবেশে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণবপদাবলি বিচিত্রমুখী ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আর সে কারণেই, কালের পার্থক্যই শুধু নয়, প্রাকচৈতন্য, চৈতন্য সমসাময়িক ও চৈতন্যোত্তর যুগের পদাবলি সাহিত্যের মধ্যে আদর্শগত ও মর্জিগত পার্থক্যও লক্ষণীয়। পার্থক্যগুলো এক নজরে দেখে নেয়া যাক-
(১) চৈতন্যপূর্ব যুগে চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি প্রমুখের রচনায় বিশেষ সাম্প্রদায়িক আদর্শগত প্রেরণা ছিল না। কিন্তু চৈতন্যোত্তর যুগের কবিদের রচনায় চৈতন্যপ্রভাবে বিশেষ ধর্মকেন্দ্রিক পটভূমিকায় রাধাকৃষ্ণলীলা রূপায়িত ও আস্বাদিত হতে শুরু করে।
(২) চৈতন্য বিষয়ক পদাবলি ‘গৌরচন্দ্রিকা’ ও ‘গৌরাঙ্গ বিষয়কপদ’ চৈতন্যোত্তর যুগের পদাবলিতেই দৃষ্টিগোচর হয়।
(৩) বৈষ্ণবধর্ম সুনির্দিষ্ট তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বৈষ্ণবতত্ত্ব সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা ছাড়া চৈতন্যোত্তর যুগের পদাবলির পরিপূর্ণ রসাস্বাদন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
(৪) প্রাক-চৈতন্য যুগের পদাবলিতে ভক্ত কবির ‘মুক্তিবাঞ্ছা’ই যেখানে প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছিল, সেখানে চৈতন্যোত্তর যুগের পদাবলিতে ঈশ্বরের প্রতি অহৈতুকী ভক্তি এবং গোপীদের অনুগত হয়ে রাধাকৃষ্ণের কুঞ্জসেবার সুযোগলাভ প্রার্থনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠল। কবিরা আর লীলাশুক নন, গোপীভাবে ভাবিত।
(৫) প্রাক্-চৈতন্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যে কৃষ্ণ-বিষ্ণু-বাসুদেব প্রায় অভিন্ন ছিলেন। বৈষ্ণব সমাজে উৎস হিসেবে শ্রীমদ্ভাগত, বিষ্ণুপুরাণ, হরিবংশ, কৃষ্ণকথামৃত, ব্রহ্মসংহিতা আদৃত ও স্বীকৃত হয়েছিল। প্রাক্-চৈতন্য যুগের বৈষ্ণব ধর্মে যে ভক্তিবাদ তা ‘বৈধী ভক্তি’। বিধিবিধান ও শাস্ত্রগ্রন্থের নির্দেশে যে ভক্তির জাগরণ, তা-ই বৈধীভক্তি। কিন্তু গৌড়ীয় বৈষ্ণবতত্ত্বের ভক্তিবাদ হল ‘রাগানুগা’ ভক্তিবাদ। প্রাক্-চৈতন্য যুগে কৃষ্ণের মাধুর্যভাবের সঙ্গে যে ঐশ্বর্যভাবের মিশ্রণ ছিল, চৈতন্যোত্তর যুগে সেই ঐশ্বর্যভাব তিরোহিত হয়ে কৃষ্ণপ্রেমই পরম পুরুষার্থে পরিণত হল।
(৬) প্রাক্-চৈতন্য যুগে রাধা ও চন্দ্রাবলী ছিলেন অভিন্না। কিন্তু চৈতন্যোত্তর যুগে রাধা নায়িকা এবং চন্দ্রাবলী প্রতিনায়িকা হয়ে উঠলেন। রাধা এখানে শুধু নায়িকা নন, তিনি ‘মহাভাবস্বরূপিনী’।
(৭) চৈতন্যোত্তর যুগের পদাবলিতে চৈতন্যের ভগবদসত্ত্বার রূপায়ণ লক্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছিল।