২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গাজা ভূখণ্ডে সক্রিয় সকল রাজনৈতিক গ্রুপের সামরিক সংস্থাগুলো একটি যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছে। ২০০৫ সালে গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি পশ্চাৎপসরণের পর ভূখণ্ডটিতে অনুষ্ঠিত সামরিক মহড়াগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম, যেটিতে গাজায় সক্রিয় সকল ফিলিস্তিনি গ্রুপ অংশ নিয়েছে। অভূতপূর্ব এই যৌথ সামরিক মহড়ার নামকরণ করা হয়েছে ‘আর–রুকন আস–শাদিদ’, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘শক্তিশালী ভিত্তি’।
‘গাজা ভূখণ্ড’ (Gaza Strip) পূর্ব ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ৩৬৫ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল। ১৯৪৮–৪৯ সালের আরব–ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় ভূখণ্ডটি মিসরের হস্তগত হয়, এবং ১৯৬৭ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ভূখণ্ডটি মিসরের কাছ থেকে দখল করে নেয়। ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও ‘ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা’র (Palestine Liberation Organization, ‘PLO’) মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘অসলো চুক্তি’ অনুযায়ী ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ডকে ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষে’র (Palestinian National Authority, ‘PNA’) হস্তান্তর করতে সম্মত হয়, এবং নানা সঙ্কটের পর ২০০৫ সালে ইসরায়েল এককভাবে গাজা ভূখণ্ড থেকে পশ্চাৎপসরণ করে।
২০০৬ সালের ফিলিস্তিনি আইনসভা নির্বাচনে ‘হামাস’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং ক্ষমতাসীন ‘ফাতাহ’–এর সঙ্গে একটি ‘জাতীয় ঐক্য’ সরকার গঠন করে, কিন্তু তাদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, এবং একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর ২০০৭ সালে হামাস গাজা ভূখণ্ড থেকে ফাতাহকে বিতাড়িত করে। তখন থেকে আইনত গাজা ভূখণ্ড ফাতাহ–নিয়ন্ত্রিত ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষে’র অধীনস্থ, কিন্তু কার্যত হামাস গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে, এবং ফাতাহ–এর নিয়ন্ত্রণ পশ্চিম তীরের অংশবিশেষে সীমাবদ্ধ।
ইসরায়েল গাজা থেকে পশ্চাৎপসরণ করেছে, কিন্তু গাজার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। গাজার উত্তর ও পূর্বে ইসরায়েল এবং দক্ষিণ–পশ্চিমে মিসর অবস্থিত। কিন্তু ৫১ কি.মি. দীর্ঘ গাজা–ইসরায়েলি সীমান্ত এবং ১১ কি.মি. দীর্ঘ গাজা–মিসরীয় সীমান্ত উভয়ই বন্ধ রয়েছে, এবং গাজার আকাশসীমা ও সমুদ্রসীমা উভয়ই ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইসরায়েল যেকোনো মুহূর্তে গাজায় সৈন্য প্রেরণ করতে পারে; গাজার অভ্যন্তরে ইসরায়েলের একটি বৃহৎ ‘বাফার জোন’ রয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ; এবং গাজার পানি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও অন্যান্য সেবা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন। এজন্য অনেক বিশ্লেষক গাজাকে ‘পরোক্ষভাবে ইসরায়েলি দখলকৃত ভূমি’ হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু অন্যদিকে, গাজার অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের ওপর ইসরায়েলের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, এবং হামাস স্বাধীন অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে থাকে।
হামাস ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না, অন্যদিকে ইসরায়েল হামাসকে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। স্বভাবতই তাদের মধ্যে সাপে–নেউলে সম্পর্ক। এ পর্যন্ত ইসরায়েল ও হামাস বহুবার সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে, এবং কার্যত এখনো তাদের এই সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য সংখ্যাগত ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইসরায়েল যেহেতু হামাসের চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী, সেহেতু এই সংঘর্ষে ইসরায়েলের তুলনায় হামাসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
গাজা ভূখণ্ডের কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক বাহিনী নেই, কিন্তু হামাসের সামরিক শাখা ‘ইজ্জাদ্দিন আল–কাসসাম ব্রিগেডস’ গাজার সশস্ত্রবাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। অবশ্য গাজা ভূখণ্ডে হামাস ছাড়া আরো বহু গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে, এবং তাদেরও নিজস্ব সামরিক শাখা রয়েছে। হামাসের পর গাজায় সক্রিয় দ্বিতীয় বৃহত্তম সংগঠন হচ্ছে ‘ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ’, এবং এর সামরিক শাখা ‘আল–কুদস ব্রিগেড’ নামে পরিচিত। গাজায় সক্রিয় তৃতীয় বৃহত্তম সংগঠনটি হচ্ছে ‘জনপ্রতিরোধ সমিতিসমূহ’ (Popular Resistance Committees), এবং এর সামরিক শাখা হচ্ছে ‘আল–নাসির সালাহ আদ–দিন ব্রিগেড’। অনুরূপভাবে, গাজায় সক্রিয় অন্য দলগুলোরও সামরিক শাখা রয়েছে।
হামাসের মতো গাজায় সক্রিয় অন্যান্য দলও ইসরায়েলবিরোধী এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। ইতিপূর্বে গাজা–ইসরায়েল সংঘর্ষগুলোয় হামাসের পাশাপাশি এরাও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। কিন্তু এই দলগুলো সবসময় হামাসের কর্তৃত্ব মেনে চলে না এবং ক্ষেত্রবিশেষে হামাসের সঙ্গে এদের দ্বন্দ্বও দেখা দেয়। এর ফলে দলগুলো সাধারণত একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে নিজ নিজ সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করত। ইতিপূর্বে গাজায় সামরিক মহড়া আয়োজিত হয়েছে, কিন্তু তাতে শুধু হামাস অংশগ্রহণ করেছে।
২০১৮ সালে গাজায় সক্রিয় ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলোর সামরিক কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে একটি ‘যৌথ কমান্ড’ বা ‘যৌথ অপারেশন্স রুম’ গঠিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্ভাব্য ইসরায়েলি আক্রমণ সম্মিলিতভাবে ও কার্যকারিতার সঙ্গে প্রতিহত করা। এর দুই বছরের মধ্যে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর গাজার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে গাজার প্রতিটি গ্রুপ অংশগ্রহণ করে।
২৯ ডিসেম্বর ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের মুখপাত্র আবু হামজার প্রদত্ত ভাষণের মধ্য দিয়ে ‘আর–রুকন আস–শাদিদ’ যৌথ মহড়াটির সূচনা হয়। ভাষণে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ইসরায়েলকে গাজায় নতুন কোনো আক্রমণ পরিচালনা থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হয় এবং সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক স্থাপনের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। এরপর একদিনব্যাপী মহড়াটি আরম্ভ হয়।
গাজায় সক্রিয় বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের শত শত যোদ্ধা মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। মহড়ার প্রথমেই ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ভূমধ্যসাগরকে লক্ষ্য করে ৮টি রকেট নিক্ষেপ করে। এরপর তারা স্থল ও জলপথে আক্রমণ পরিচালনার চর্চা করে, সাঁজোয়া যান প্রদর্শন করে এবং নৌ কমান্ডোদের কার্যক্রম দেখায়। এর পাশাপাশি তারা তাদের নতুন ও উন্নত চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) বহরও প্রদর্শন করে। এসময় গাজার মূল উপকূলীয় সড়কে ইরানি কুদস ফোর্সের প্রাক্তন কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সুলেইমানির ছবিও প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি সুলেইমানি ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন।
হামাস এই মহড়াটি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে। ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বের বহুসংখ্যক সাংবাদিক মহড়াটি তাদের প্রচারমাধ্যমে প্রচার করেছেন, এবং ইসরায়েলি গণমাধ্যমেও মহড়াটি বেশ প্রচারণা পেয়েছে। বিশ্লেষকরা কেউ কেউ এই মহড়াটিকে গাজার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির অভিমুখে একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, আবার কেউ কেউ একে ‘পাবলিক রিলেশন্স স্টান্ট’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে, এই অভূতপূর্ব সামরিক মহড়ার গভীর তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করা যায়।
প্রথমত, গাজার নেতৃবৃন্দ এই মহড়াকে ‘জায়নবাদী শত্রুর প্রতি একটি বার্তা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বস্তুত ইসরায়েলের নিজস্ব হিসেব অনুসারেই, বিগত বছরে কোভিড–১৯ মহামারী প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই তারা গাজা ভূখণ্ডে প্রায় ৩০০টি আক্রমণ পরিচালনা করেছে, এবং এই দ্বন্দ্ব প্রশমিত হওয়ার বিশেষ কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং, এই যৌথ মহড়া বাস্তবিকই ইসরায়েলের জন্য একটি সতর্কবার্তা, এই অর্থে যে, ইসরায়েল নতুন করে গাজায় আক্রমণ আরম্ভ করলে তাদেরকে সেখামে সুদৃঢ় প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরায়েল হামাসের চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী। এমতাবস্থায় সম্ভাব্য যেকোনো সংঘাতে এককভাবে ইসরায়েলের মোকাবিলা করা হামাসের জন্য কঠিন। গাজায় জনবল ও সামরিক সরঞ্জাম সীমিত, এমতাবস্থায় বহুধাবিভক্ত হয়ে কার্যকরভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়, বরং প্রতিটি গ্রুপের স্বাধীনভাবে অভিযান পরিচালনার ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য যদি গাজার গ্রুপগুলো যদি তাদের সামরিক কার্যক্রম সমন্বিতভাবে পরিচালনা করে, সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা তাদের জন্য আংশিকভাবে হলেও সহজ হবে।
তৃতীয়ত, গাজায় সক্রিয় দলগুলোর নিজ নিজ সামরিক সংস্থা থাকলেও কার্যত গাজায় কোনো নিয়মিত সামরিক বাহিনী নেই। এই মহড়াকে অনেক বিশ্লেষক গাজায় একটি নিয়মিত সশস্ত্রবাহিনী গঠনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। একটি নিয়মিত বাহিনী গঠন নির্বিচার ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে গাজার জন্য একটি সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে, যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি মানসম্মত নিয়মিত বাহিনী গঠন করা গাজার জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে।
চতুর্থত, কিছু কিছু ইসরায়েলি বিশ্লেষক এই মহড়াকে ইসরায়েলের প্রতি ইরানের সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচনা করছেন। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ইসরায়েল কর্তৃক ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদের খুনের প্রেক্ষাপটে ইরানি–ইসরায়েলি সম্পর্কে নতুন একটি সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে, এবং ইসরায়েল ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে আগ্রহী বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, গাজায় একটি বড়মাত্রার ও বহুল প্রচারিত সামরিক মহড়া আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইরান ইসরায়েলকে দেখাতে চাচ্ছে যে, যুদ্ধ শুরু হলে ইরান একাধিক ফ্রন্ট থেকে ইসরায়েলকে আক্রমণ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় ইরানের ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি রয়েছে এবং লেবাননের প্রভাবশালী দল হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। উভয় রাষ্ট্রই ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এবং সম্ভাব্য ইরানি–ইসরায়েলি যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইরান সিরিয়া ও লেবানন থেকে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করবে বলে ধারণা করা হয়। অনুরূপভাবে, হামাসের সঙ্গেও ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এবং ইরান গাজাকে সম্ভাব্য যুদ্ধের ক্ষেত্রে অনুরূপ একটি ইসরায়েলবিরোধী ‘ফ্রন্টে’ পরিণত করতে ইচ্ছুক বলা মনে করা হয়।
সর্বোপরি, ২০২০ সালে ইসরায়েল নিজেও বেশ কয়েকটি সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে, এবং হিজবুল্লাহ ও হামাসের বিরুদ্ধে ‘কৃত্রিম’ যুদ্ধ পরিচালনা এসব মহড়ার অংশ ছিল। তদুপরি, সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ২০২০ সালে চারটি আরব রাষ্ট্র (ইমারাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো) ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে, এবং আরো কতিপয় আরব রাষ্ট্র (সৌদি আরব, ওমান প্রভৃতি) ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ফিলিস্তিনি জনসাধারণ এই প্রক্রিয়াটিকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অন্যান্য আরবদের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচনা করে। এই পরিস্থিতিতে গাজায় আয়োজিত যৌথ মহড়াকে ইসরায়েলি মহড়াগুলো এবং সাম্প্রতিক আরব–ইসরায়েলি সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রতি গাজার প্রত্যুত্তর হিসেবে দেখা যেতে পারে।
একটি বিষয় উল্লেখ্য, হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ফাতাহ’ এই যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করেনি। এর মধ্য দিয়ে হামাস ও ফাতাহের মধ্যেকার চলমান শত্রুতামূলক সম্পর্কই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যদিও বা হামাসের নেতৃত্বে গাজার ফিলিস্তিনি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হয়, সামগ্রিকভাবে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা যে সহসা হচ্ছে না, এটি সম্ভবত তারই নির্দেশক। ফিলিস্তিনের জন্য এটি দুর্ভাগ্যজনক, কারণ যখন আরব বিশ্ব ক্রমশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, সেই সঙ্কটময় মুহূর্তেও তারা পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না।
সামগ্রিক দৃষ্টিতে, গাজায় অনুষ্ঠিত ‘আর–রুকন আস–শাদিদ’ যৌথ সামরিক মহড়াটি গাজায় সক্রিয় ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলোর মধ্যে অধিকতর সহযোগিতার একটি সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। অবশ্য ফিলিস্তিনিরা যদি গাজায় একটি নিয়মিত সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হয়ও, সেক্ষেত্রেও তাদের পক্ষে নিকট ভবিষ্যতে মাত্রাতিরিক্তভাবে শক্তিশালী ইসরায়েলকে পরাস্ত করার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও নির্লিপ্ত আন্তর্জাতিক ভূমিকার প্রেক্ষাপটে এই মহড়াটি ফিলিস্তিনিদের (কিংবা আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, গাজার অধিবাসীদের) প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের নির্দেশক।