কারো কারো দৃষ্টিতে তিনি বিজ্ঞানের একজন ‘অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব’, আবার কারো কারো দৃষ্টিতে তিনি একজন ‘নীতিহীন দস্যু’! তার কারণে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য শিক্ষার্থী, বিশ্লেষক, গবেষক এবং বৈজ্ঞানিক উপকৃত হচ্ছে, অথচ আইনের চোখে তিনি একজন পলাতক আসামী! ব্রিটিশ জার্নাল ‘ন্যাচার’–এর মতে, তিনি বিজ্ঞানের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ ১০ জন ব্যক্তির একজন। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উন্মুখ। বলছিলাম আলেকজান্দ্রা এলবাকিয়ানের কথা, যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্যাডো লাইব্রেরি ওয়েবসাইট ‘সাই–হাব’ (Sci–Hub)।
‘আধুনিক বিজ্ঞানের রবিনহুড’ নামে পরিচিত এলবাকিয়ানের পুরো নাম আলেকজান্দ্রা আসানোভনা এলবাকিয়ান। ১৯৮৮ সালের ৬ নভেম্বর প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী আলমা–আতা (বর্তমান আলমাতি) শহরে তার জন্ম। জাতিগতভাবে তার পরিবারটি মিশ্র, এবং কিছু কিছু প্রচারমাধ্যম তাকে জাতিগত আর্মেনীয় হিসেবে আখ্যায়িত করলেও তিনি এটিকে ‘রাজনীতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এলবাকিয়ানের মতে, তার পরিবারটি আর্মেনীয়, স্লাভিক ও মধ্য এশীয় মিশ্র বংশোদ্ভূত।
ছোটবেলা থেকেই এলবাকিয়ানের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ গড়ে উঠেছিল। তার বাসায় বিজ্ঞান সংক্রান্ত কয়েকটি বিশ্বকোষ এবং প্রচুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই ছিল, যেগুলো পড়ে তার প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তিনি স্কুলছাত্রী থাকাকালে এক শিক্ষক তাকে সোভিয়েত শিশু সাহিত্যিক নিকোলাই নোসোভের লেখা ‘দুন্নোর অভিযানসমগ্র’ নামক একটি শিশুতোষ সিরিজ উপহার দিয়েছিলেন, এবং এই বইটি পড়ে তার মধ্যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতি বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়, যেটি এখনো তার মধ্যে বিদ্যমান। স্কুলে থাকা অবস্থাতেই তিনি ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেন।
এলবাকিয়ানের পরিবার সচ্ছল ছিল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের বাসায় একটি ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত বই ছিল, যেটি ছিল ১৯৯০–এর দশকে কাজাখস্তানে একটি বিরল ঘটনা। অবশ্য তার বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না, এবং যখন তার মা তাকে সঙ্গে করে নিজের কর্মস্থলে নিয়ে যেতেন, তখনই কেবল এলবাকিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেতেন।
২০০৫ সালে এলবাকিয়ান আলমাতিতে অবস্থিত ‘কে. আই. সাতবায়েভ কাজাখ ন্যাশনাল রিসার্চ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’তে ভর্তি হন এবং তথ্য নিরাপত্তা (Information security) বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। এসময় তিনি একটি নিউরোকম্পিউটার ইন্টারফেস তৈরিতে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তিনি ক্রমশ তার বিষয়টিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, কারণ তার ধারণা ছিল, তথ্য প্রযুক্তিকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা না করে একটি কারিগরি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে তিনি ‘বিজ্ঞানের ইতিহাস’ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এবং আদর্শবাদী, কিন্তু তাকে তেমন মেধাবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে এলবাকিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারে সমস্যার সম্মুখীন হন। সেখানে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ছিল অত্যন্ত সীমিত এবং ইন্টারনেট থেকে বই, সঙ্গীত বা চলচ্চিত্র সংগ্রহ করা ছিল খুবই ব্যয়বহুল। এ সময় থেকেই নিজস্ব প্রয়োজনের তাগিদে তিনি কম্পিউটার হ্যাকিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেন, এবং তার হ্যাকিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেটের বিভিন্ন কন্টেন্ট ডাউনলোডের ক্ষেত্রে যে পে-ওয়াল (paywall) থাকে, সেগুলোকে অতিক্রম করে বিনামূল্যে এসব কন্টেন্ট সংগ্রহ করা।
২০০৯ সালে তিনি রাশিয়ায় যান এবং মস্কোয় কম্পিউটার নিরাপত্তা বিষয়ে এক বছর কাজ করেন। এসময় তিনি রুশ শিক্ষাব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতির প্রভাব লক্ষ্য করেন, এবং একই সঙ্গে রুশ বিরোধী দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে রাষ্ট্রবিরোধী চিন্তাধারা লক্ষ্য করেন। উদাহরণস্বরূপ, তার একজন রুশ অধ্যাপক খোলাখুলিভাবে ককেশাসকে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলতেন। এলবাকিয়ান এ ধরনের চিন্তাধারার বিরোধী ছিলেন, এবং তার রাজনৈতিক মতামতের জন্য তাকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে দেয়া হয়। কিন্তু এরপরেও মস্কোয় থাকাকালে তিনি কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হন এবং ২০১০ সালে জার্মানিতে চলে যান।
জার্মানিতে তিনি ‘আলবার্ট–লুদভিগ ফ্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে’র একটি গবেষণাগারে মানব মস্তিষ্ক–কম্পিউটার ইন্টারফেস নিয়ে কাজ করেন এবং ট্রান্সহিউম্যানিজম নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। একই সময়ে তিনি নিজের ও সহকর্মীদের গবেষণার প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে পেমেন্ট ছাড়াই প্রচুর পরিমাণে বই ও অ্যাকাডেমিক আর্টিকেল ডাউনলোড করতে শুরু করেন, এবং তখন থেকেই মূলত তিনি গবেষকদের বিনামূল্যে অ্যাকাডেমিক সামগ্রী সরবরাহের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরির চিন্তাভাবনা করতে থাকেন।
জার্মানিতে তার কাজের জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অবস্থিত ‘জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’তে নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড কনশাসনেস বিষয়ে একটি অবৈতনিক ইন্টার্নশিপ লাভ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং বিশেষত আটলান্টা শহর, তার পছন্দ হয়নি। শহরটিতে তিনি প্রচুর গৃহহীন ও ভিক্ষুককে দেখেছিলেন, যেটি মার্কিন ব্যবস্থার প্রতি তার নেতিবাচক মনোভাবকে আরো জোরদার করেছিল। তার মতে, ‘আমেরিকান ড্রিম’–এ যেরকমভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল, দেশটি তার উল্টোভাবে গড়ে উঠেছে।
২০১১ সালে এলবাকিয়ান কাজাখস্তানে ফিরে আসেন এবং একই বছরের ১৬ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সাই–হাব’ ওয়েবসাইটটি চালু করেন। তখন থেকে সাই–হাবে লক্ষ লক্ষ অ্যাকাডেমিক ম্যাটেরিয়াল আপলোড করা হয়েছে এবং বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে অসংখ্য গবেষক, বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষার্থী বিনামূল্যে এসব ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে, যেটা সাই–হাব না থাকলে অনেকের পক্ষেই সম্ভব হতো না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাধারণত ইন্টারনেটে অ্যাকাডেমিক ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহের জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য (গড়ে ৩৫ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২,৮০০ বাংলাদেশি টাকা) প্রদান করতে হয়, এবং অনেক শিক্ষার্থী বা গবেষকই ব্যক্তিগতভাবে এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে অক্ষম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদেরকে এই অ্যাক্সেস প্রদান করে থাকে, কিন্তু এগুলোর পক্ষেও এই ক্রমবর্ধমান ব্যয় বহন করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। তদুপরি, ৬টি প্রকাশনা সংস্থা– রিড–এলসেভিয়ের, উইলি–ব্ল্যাকওয়েল, স্প্রিঙ্গার, টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস, আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি এবং সেইজ পাবলিশিং– মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট প্রকাশিত অ্যাকাডেমিক ম্যাটেরিয়ালের অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, এবং এরা ক্রমশ এই মূল্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সাই–হাব এই প্রতিষ্ঠানগুলোর একচ্ছত্র কর্তৃত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাই–হাবের কল্যাণে গবেষকরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সৃষ্ট পে-ওয়াল অতিক্রম করে বিনামূল্যে নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করতে পারছে। ফলে এই সংস্থাগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, এবং প্রকাশকদের অনেকেই এলবাকিয়ানকে সোজাসুজি ‘চোর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অবশ্য তাদের এই দাবির আইনগত ভিত্তি রয়েছে, কারণ সাই–হাবের কার্যক্রম স্পষ্টতই কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন।
অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক ও গবেষক শ্রেণির বড় একটি অংশ এলবাকিয়ানের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে। কিছু কিছু পত্রিকা এলবাকিয়ানকে ‘পাইরেট কুইন’ এবং ‘বিজ্ঞানের রবিনহুড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অবশ্য এলবাকিয়ান নিজে এই উপাধিগুলোকে তেমন পছন্দ করেন না। তার মতে, জলদস্যুরা বা রবিনহুড যেটা করত সেটা ছিল অপরাধ, কিন্তু বই বা নিবন্ধ শেয়ার করা অপরাধ হওয়া উচিত নয়। বস্তুত, এলবাকিয়ান একধরনের ‘বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদে’ বিশ্বাসী, এবং তিনি বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার থাকা উচিত।
২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এলবাকিয়ান মস্কোর ‘হায়ার স্কুল অফ ইকোনমিক্সে’র লোকপ্রশাসন অনুষদে ‘ম্যাজিস্ট্রেসি’ নিয়ে অধ্যয়ন করেন, কিন্তু এই বিষয়টিও শেষ পর্যন্ত তাকে আকৃষ্ট করেনি। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি’র ভাষাতত্ত্ব অনুষদে বাইবেলের ভাষাসমূহ নিয়ে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এলবাকিয়ান একজন পলাতক আসামী। ২০১৫ সালে মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ের তার নামে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে এবং একটি মার্কিন আদালত এলসেভিয়েরকে দেড় কোটি (বা ১৫ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য এলবাকিয়ানকে নির্দেশ দেয়। ২০১৭ সালে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি এলবাকিয়ানের নামে আরেকটি মামলা দায়ের করে, এবং মার্কিন আদালত তাদেরকে ৪৮ লক্ষ (বা ৪.৮ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য এলবাকিয়ানকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু এলবাকিয়ানের জন্মভূমি কাজাখস্তান বা কর্মক্ষেত্র রাশিয়া কেউই তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে আগ্রহী নয়, ফলে এই মামলাগুলোর রায় কার্যকর করা সম্ভব নয়। আর এলবাকিয়ানের মতে, তিনি চাইলেও এই ক্ষতিপূরণ দিতে পারবেন না, কারণ তার কাছে ঐ পরিমাণ অর্থই নেই!
এলবাকিয়ানের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কমিউনিজম দ্বারা প্রভাবিত, যদিও তিনি মার্ক্সবাদী নন। তিনি রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের নীতির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন, এবং সাধারণভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রের পক্ষপাতী। একই সঙ্গে তিনি প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে পশ্চিমা–সমর্থিত গণআন্দোলনের বিরোধী, কারণ তার মতে, কোনো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে কারা সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে সেটি বোঝা জরুরি। এলবাকিয়ান রাশিয়ায় উচ্চ প্রযুক্তির বিস্তারকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির অনুকরণে রাশিয়ায় ‘স্কোলকোভো ইনোভেশন সেন্টার’ গড়ে তোলার প্রকল্পের ব্যাপারে খুবই উৎসাহী ছিলেন।
অবশ্য রুশ সরকারের প্রতি তার সমর্থন তাকে রুশ বিরোধী দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে অজনপ্রিয় করে তুলেছে। বস্তুত রুশ বিরোধীদলীয় কর্মীরা এলবাকিয়ানের বিরুদ্ধে এত বেশি নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছিল যে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৭ সালে রাশিয়ায় সাই–হাবের অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রুশ অ্যাকাডেমিকদের বিশেষ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শেষ পর্যন্ত তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই রুশ ব্যবহারকারীদের জন্য সাই–হাব উন্মুক্ত করে দেন।
মজার ব্যাপার হলো, এলবাকিয়ান রুশ নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনি রুশ নাগরিকত্ব অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় রুশ ভাষার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন। পরবর্তী বছর তিনি রুশ ভাষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ঠিকই, কিন্তু রুশ সংবিধানের সকল আইন মেনে চলার ব্যাপারে শপথ করতে অস্বীকৃতি জানান। কারণ, রুশ কপিরাইট আইনের সঙ্গে সাই–হাবের অস্তিত্ব সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি রুশ নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন কিনা, সেটি জানা যায়নি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন বিচার বিভাগ ঘোষণা দেয় যে, এলবাকিয়ানের সঙ্গে রুশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ রয়েছে, এবং রুশ গোয়েন্দারা ‘সাই–হাবে’র অর্থায়ন করে থাকে। এলবাকিয়ান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন, রুশ বা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার বা সাই–হাবের কোনো সংশ্রব নেই। রুশ গোয়েন্দাদের অনুদানের ব্যাপারেও তিনি অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যদিও তিনি জানিয়েছেন যে, সাই–হাবকে অনুদান প্রদানকারীদের পরিচয় অজ্ঞাত থাকে, সুতরাং রুশ গোয়েন্দারা যদি সত্যিই সাই–হাবকে অনুদান দিয়েও থাকে, সেই ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। অবশ্য নিরাপত্তার খাতিরে এলবাকিয়ান তার বর্তমান অবস্থান অজ্ঞাত রেখেছেন।
বিশ্ব রাজনীতি ও বিজ্ঞান জগতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা সম্পর্কে এলবাকিয়ানের মনোভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি এমন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের পক্ষপাতী যেটি পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে এবং নিজস্ব উন্নয়নের পথ স্বাধীনভাবে অনুসরণ করবে। তিনি আরো বলেছেন, তিনি চান না যে, রাশিয়া এবং তার মাতৃভূমি কাজাখস্তানের বিজ্ঞানীরা ইরাক, লিবিয়া বা সিরিয়ার বিজ্ঞানীদের অনুরূপ পরিণতি বরণ করুক, যে রাষ্ট্রগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘গণতান্ত্রিক’ হতে ‘সাহায্য’ করেছে।
মার্কিন প্রকাশনা সংস্থাগুলো আর বিচার বিভাগ যাই মনে করুক, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৪ লক্ষ মানুষ সাই–হাব ব্যবহার করে এবং ২০২০ সালের এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, সাই–হাবে ৮ কোটি ১০ লক্ষের বেশি অ্যাকাডেমিক ম্যাটেরিয়াল রয়েছে। উভয় সংখ্যাই সময়ের সঙ্গে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং নৈতিক বা অনৈতিক যেমনই হোক, জ্ঞানচর্চার বিস্তারে বর্তমান বিশ্বে সাই–হাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, এবং এক্ষেত্রে সাই–হাবের প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্দ্রা এলবাকিয়ানের ভূমিকা অনস্বীকার্য।