Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

২০২২ সালের সেরা পাঁচ স্ট্রিমিং সিরিজ

স্ট্রিমিং নিঃসন্দেহে বিনোদন জগতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করে আছে। এককালে ক্যাবল টিভি আর নেটওয়ার্ক টিভি ছিল টিভি সিরিজের প্রধান উৎস। তবে তাদের প্রভাব আজকের সিরিজ জগতে একেবারেই নিষ্প্রভ। শুধুমাত্র এইচবিও এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে স্ট্রিমিং যে আকার ধারণ করেছে, তার যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে নেটফ্লিক্সের ‘হাউজ অভ কার্ডস’ সিরিজের মধ্য দিয়ে। নেটফ্লিক্সই বর্তমান স্ট্রিমিং জগতের রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছে। বহুদিন নেটফ্লিক্স নিজের তৈরি করা এই জগতে একাধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল। এরপর একে একে অন্যদের আগমন ঘটতে থাকে বিনোদনের এই জগতে। সব নেটওয়ার্ক নিজের স্ট্রিমিং সার্ভিস আনার দিকে মনোযোগ দিতে থাকে।

আজ নেটফ্লিক্সের পাশাপাশি হুলু, ডিজনি+, এইচবিও ম্যাক্স, অ্যাপল টিভি+, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওসহ হাজারও স্ট্রিমিং সার্ভিসে বিনোদন জগত সয়লাব। এত এত সার্ভিস মানে দর্শকদের সময়ের জন্য সার্ভিসগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা। পালাক্রমে যার মানে কন্টেন্টের ছড়াছড়ি। তবে সেই কন্টেন্টের প্রকৃতি বা অগ্রাধিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোয়ান্টিটি বা পরিমাণভিত্তিক হয়ে পড়ে, কোয়ালিটি বা গুণমানভিত্তিক নয়। সেই পরিমাণভিত্তিক মার্কেটেও কিছু সিরিজ অন্যদের চেয়ে আলাদা প্রমাণ করে নিজেদের। গুণমান ঠিক রেখে এসব সিরিজ দর্শকদের মনে আলাদা জায়গা করে নেয়। ২০২২ সাল এদিক থেকে প্রচন্ড রকমের শুভ এক বছর সিরিজপ্রেমীদের জন্য। বছরের অর্ধেক যেতে না যেতেই প্রচুর ভালো, মানসম্পন্ন টিভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। আজ সেরকম পাঁচটি নতুন স্ট্রিমিং সিরিজ নিয়ে কথা বলব, যা দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।     

১) Severance (সেভারেন্স)

কমেডি অভিনেতা হিসেবে সুপরিচিত বেন স্টিলার আবারও বসলেন পরিচালকের চেয়ারে। এবার অ্যাপল টিভির সায়েন্স ফিকশন সিরিজ ‘সেভারেন্স’ এর জন্য। লুমোন ইন্ডাস্ট্রিজের মাইক্রোডাটা রিফাইনমেন্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী মার্ক আমাদের প্রোটাগনিস্ট। এই অফিসের কাজ রহস্যঘেরা। লুমোন ইন্ডাস্ট্রিজ এমন এক বৈজ্ঞানিক উপায় বের করেছে, যার মাধ্যমে তারা কর্মচারীদের স্মৃতি বিভক্ত করে দিতে পারে। অফিস আর বাইরের পৃথিবীর স্মৃতি সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে। এক জায়গায় থাকলে অপর জায়গার স্মৃতি মনে করতে পারবে না কর্মচারীরা। তবে এছাড়াও আরো বেশ কিছু রহস্যে ঘেরা এই অফিসের কার্যকলাপ। মার্কের ডিপার্টমেন্টে যখন হেলি নামের নতুন এক কর্মচারী যোগদান করে, তখন থেকেই সিরিজের গল্প শুরু হয়। হেলি বদ্ধপরিকর লুমোনের সকল রহস্যের উদঘাটন করতে। হেলি, মার্কের পাশাপাশি এই ঘটনার জড়িয়ে পড়ে অফিসের বাকি দুই কর্মচারী- আর্ভিং ও ডিলান। প্রচুর আগ্রহোদ্দীপক চরিত্রগুলোর সাথে এই সাইফাই/থ্রিলার/ড্রামায় ডুবে যেতে একদমই সময় লাগে না। প্রথম এপিসোড থেকেই প্রচন্ড রকমের একটা আকর্ষণ কাজ করে গল্পের প্রতি। নয় এপিসোডের এই প্রথম সিজনে রয়েছে অবাক করে দেয়ার মতো দারুণ কিছু টুইস্ট, কিছু আবেগপূর্ণ মুহুর্ত, আর টান টান উত্তেজনা। একসাথে বসে বিঞ্জ দেয়ার মতোই একটা সিরিজ।   

‘সেভারেন্স’-এ বাম থেকে ডানে যথাক্রমে মার্ক, আরভিং, ডিলান আর হেলি; Image Source: Apple TV+ 

 

সিরিজে লিড হিসেবে আছেন ‘পার্কস এন্ড রেক্রিয়েশন’ খ্যাত এডাম স্কট; সাথে জন তরতুরো, প্যাট্রিশিয়া আর্কেটের মতো বড় মাপের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। 

২) Under the Banner of Heaven (আন্ডার দ্য ব্যানার অভ হেভেন) 

সাত বছর পরে স্পাইডারম্যান হিসেবে বড় পর্দায় আসা, সাথে দ্বিতীয় অস্কার নমিনেশনের পরে অ্যান্ড্রু গারফিল্ডের পরবর্তী প্রজেক্ট এক ট্রু-ক্রাইম লিমিটেড সিরিজ ‘আন্ডার দ্য ব্যানার অভ হেভেন’। ২০০৩ সালে প্রকাশিত সত্য ঘটনা অবলম্বনে জন ক্র্যাকোয়ার একই নামের বইয়ের টিভি অ্যাডাপ্টেশন এই সিরিজ। সিরিজে দর্শকদের ভয়ানক এক খুনের তদন্তের একেবারে গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে ধর্মীয় চরমপন্থার প্রতি কঠিন, অবিচল দৃষ্টিপাত করা হয়। মনুষ্যত্ব কত সহজে হেরে যায় অন্ধ বিশ্বাসের কাছে, তা-ই উপস্থাপন করা হয়েছে মর্মন চার্চের কিছু ফ্যানাটিক সদস্যের মাধ্যমে।

‘আন্ডার দ্য ব্যানার অভ হেভেন’-এ ডিটেক্টিভ পাইরি চরিত্রে অ্যান্ড্রু গারফিল্ড; Image Source: FX on Hulu

 

তবে এই সিরিজের আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে গল্পের প্রোটাগনিস্ট, গারফিল্ডের ‘ডিটেকটিভ পাইরি’ মর্মন চার্চের একজন নিবেদিত ধার্মিক লোক। এরকম একজন ধার্মিক মানুষের নিজের ধর্মের চরমপন্থার মুখোমুখি হওয়ার মতো উভয়সংকট, অন্তর্দ্বন্দ্ব ইত্যাদি বিষলো গারফিল্ড একজন দক্ষ অভিনেতার মতো তুলে ধরেছেন। আসছে এমি সিজনে লিমিটেড সিরিজে লিড অ্যাক্টর ক্যাটাগরিতে শক্ত প্রতিযোগী হিসেবেই দেখা যাবে অ্যান্ড্রু গারফিল্ডকে।      

৩) Pachinko (পাচিংকো) 

এক কোরীয় পরিবারের চার প্রজন্মের টিকে থাকার লড়াইয়ের গল্প অ্যাপল টিভির ‘পাচিংকো’। ১৯২০ সালের জাপান-অধ্যুষিত কোরিয়ায় সানজায়ার ছোটবেলা থেকে ১৯৮৯ সালে সলোমনের ক্যারিয়ার ধরে রাখার প্রচেষ্টা- সত্তর বছরের ব্যাপ্তিতে এই কোরিয়ান পরিবারের উত্থান-পতন দেখা যায় এই সিরিজে। ‘পাচিংকো’ হচ্ছে জাপানী একপ্রকার জুয়া খেলার যন্ত্র, সিরিজের এই নামের মতোই আমরা সানজায়ার পরিবারকে বিভিন্ন পর্যায়ে জীবনের সাথে বাজি ধরে বেঁচে থাকতে দেখি।

‘পাচিংকো’ তে ইউন ইয়াহ-জাং; Image Source: Apple TV+ 

 

সিরিজে অভিনেতাদের সকলেই তাদের অন্যতম সেরা অভিনয় উপহার দিয়েছেন। ঔপনিবেশিক শক্তির কবলে থাকা থেকে শুরু করে অভিবাসী হয়ে ভালো জীবন খুঁজে পাওয়া একটা পরিবারের আশা, ভরসা, সুখ-দুঃখ, বিষাদ, ভালোবাসার সকল মাত্রা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে একগাদা অসাধারণ পারফর্মেন্সের মাধ্যমে। বিশেষ করে বয়স্ক সানজায়ার চরিত্রে অস্কারজয়ী কোরীয় অভিনেত্রী ইউন ইয়াহ-জাং-এর অভিনয় মনে রাখার মতো। 

৪) Tokyo Vice (টোকিও ভাইস)

কোরিয়া থেকে এবার যাওয়া যাক জাপানে। টোকিওর কুখ্যাত ক্রাইম সিন্ডিকেট ইয়াকুজার জগতে আমেরিকা থেকে আগত জেইক অ্যাডেলস্টিনের সাংবাদিকতার গল্প নিয়ে এইচবিও ম্যাক্সের সিরিজ ‘টোকিও ভাইস’। এনসেল এলগোর্ট অভিনীত জেইক আমেরিকা থেকে জাপানে চলে আসে বিখ্যাত অপরাধ বিষয়ক সংবাদপত্র মেইচো শিনবানে কাজ করতে। টোকিওর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, পুলিশ বাহিনী আর ইয়াকুজা- এই তিনের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে নোয়ার থ্রিলারের স্বাদযুক্ত এক ক্রাইম-ড্রামা।

‘টোকিও ভাইস’-এ এনসেল এলগোর্ট এবং কেন ওয়াতানাবিImage Source: HBO Max

 

এই সিরিজে দর্শকদের পরিচয় করানো হয় একটু ভিন্ন চরিত্রের টোকিওর সাথে। কঠোর, দুর্নীতিগ্রস্ত আর বাস্তবিক ত্রিমাত্রিক এক শহর হিসেবেই দেখানো হয়েছে এখানে টোকিওকে। সিরিজের গল্প এবং চরিত্রদের বাস্তবায়নে যথেষ্ট সময় দিতে টান টান উত্তেজনার বদলে এই সিরিজ পেসিং হিসেবে অনেকটাই ধীরগতি বেছে নিয়েছে। একটি আদর্শ ক্রাইম-ড্রামার সকল উপাদানের সাথে বিশেষ একটা আবহ পাওয়া যায় এখানে, যা দর্শকদের সহজেই আকৃষ্ট করে এই জগতের প্রতি।

৫) Our flag means death (আওয়ার ফ্ল্যাগ মিন্স ডেথ) 

ডেভিড জেনকিন্সের পাইরেট কমেডি শো ‘আওয়ার ফ্ল্যাগ মিন্স ডেথ’ বর্তমানে টিভির সবচেয়ে উদ্ভট ও উপভোগ্য সিরিজগুলোর মধ্যে অন্যতম। সিরিজের প্রোটাগনিস্ট, স্টিড বনেট ইংল্যান্ডের অতিশয় ধনাঢ্য এক ব্যক্তি। তবে ধনসম্পদ, সংসার কিছুতেই মন না বসায় একদিন রাতের আঁধারে তিনি বেরিয়ে পড়েন অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে। নিজেকে জলদস্যু ঘোষণা করে সমুদ্রে অভিযানে নেমে পড়েন। এরপর ঘটতে থাকে পাগলাটে, অদ্ভুত ও চরম মজাদার সব কাহিনী।

‘আওয়ার ফ্ল্যাগ মিন্স ডেথ’- এর সম্পূর্ণ কাস্ট;  Image Source: HBO Max

 

সবার প্রিয় রাইটার/ডিরেক্টর টাইকা ওয়াইটিটি একপর্যায়ে যোগদান করেন খুবই উপভোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রে। কমেডিতে সৃজনশীলতার উপযুক্ত উদাহরণ এই সিরিজ। গল্পে বেশ বড় সড় টুইস্ট আছে, যা এই সিরিজের সবচেয়ে অসাধারণ দিক। আধা ঘন্টা করে প্রথম সিজনের দশটি এপিসোডই উপভোগ্য কমেডিতে ভরপুর।

টিভির স্বর্ণযুগ চলছে এখন। এ পাঁচটির বাইরেও বেশ কিছু উচ্চমানের সিরিজ প্রতি সপ্তাহেই মুক্তি পাচ্ছে। হ্যাপি ওয়াচিং!

Related Articles