গত পর্বে আমরা কামিকাযের ইতিহাস ও ট্রেনিং সম্পর্কে জেনেছিলাম। আজকের পর্বে আমরা বিভিন্ন যুদ্ধে এই আত্মঘাতী পাইলটদের ভূমিকাসহ যুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি ও তার পেছনের কাহিনী সম্পর্কে জানতে পারবো।
লেইতে গালফের মরণকামড়
পরবর্তীতে ১৫ অক্টোবর, ১৯৪৪ সালে রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসাফুমি আরিমা নামের একজন উচ্চপদস্থ জাপানি অফিসার ১০০টি D4Y Suisei ডাইভ বোম্বারের বহরকে নেতৃত্ব দিয়ে ইউএসএস ফ্রাংকলিন নামে একটি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের উপর প্রথাগত আক্রমণ করতে গিয়ে নিহত হন। ঘটনাক্রমে তার বিমানের ধ্বংসাবশেষ ফ্রাংকলিনে আঘাত করে। এতেই জাপানি প্রোপাগান্ডা মিডিয়া খবর ছড়ায় যে, তিনি কামিকাযে হামলা চালিয়ে মৃত্যুকে বরণ করেছেন। এমনকি তাকে মরণোত্তর ভাইস অ্যাডমিরাল র্যাংকে উত্তীর্ণ করা, প্রথম সফল কামিকাযে আক্রমণের ক্রেডিট দেয়া, এমনকি ক্যাপ্টেন ওকামুরার বদলে তাকেই এই কৌশলের আবিস্কারক বানিয়ে দেয়া হয়!
পরবর্তীতে পৃথিবীর ইতিহাসের বৃহত্তম নৌযুদ্ধ বলে খ্যাত লেইতে গালফ যুদ্ধের সময় প্রথম অপারেশনাল কামিকাযে ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়। এর চারটি সাব-ইউনিট বা স্কোয়াড্রন ছিল। উক্ত যুদ্ধে ৩৮টি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের বিরুদ্ধে ৫টি বিমানবাহী রণতরী নিয়ে যুদ্ধে নামা জাপানের আসলে আত্মঘাতী হামলা ছাড়া বিকল্প আর কোনো উপায় ছিল না। এই ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস অ্যাডমিরাল তাকিজুরো উনাশি যত বেশি সম্ভব এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলোকে আঘাত করে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য অচল করে দেয়ার জন্য পাইলটদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। উক্ত যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছিল এইচএমএএস অস্ট্রেলিয়া নামক জাহাজে। একটি জাপানি যুদ্ধবিমান ক্রুজারটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিধ্বস্ত হলে ক্যাপ্টেন এমিলি, অস্ট্রেলিয়ান নৌবহরের প্রধান কমোডর জন কলিন্সসহ ৩০ জন মারা যায় এবং ৬৪ জন আহত হয়। জাপানিরা একে কামিকাযে ইউনিটের প্রথম হামলা বললেও মিত্রবাহিনীর নথিপত্র বলছে ভিন্ন কথা। জাপানি সোর্স অনুযায়ী মিতসুবিশি কেআই-৫১ বিমান এই হামলা করেছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান ওয়্যার আর্কাইভ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আইচি ডি-৩ মডেলের ডাইভ বোম্বার তাদের ফ্ল্যাগশিপে হামলা করেছিল।
এ ঘটনার তিন দিন পর ইউএসএস সোনোমা নামের একটি টাগশিপ (অচল হয়ে যাওয়া জাহাজকে টেনে নেয়ার কাজ করে যে জাহাজ) মিতসুবিশি জি-৪এম বোমারু বিমানের আঘাতে ডুবে যায় যাকে কামিকাযে হামলার প্রথম বড় সাফল্য হিসেবে প্রচার করা হয়। কিন্তু যে চারটি স্পেশাল অ্যাটাক স্কোয়াড্রন ছিল সেখানে উক্ত দুটি মডেলের বিমান ছিল না। এই ঘটনা দুটো প্রমাণ করে যে, কামিকাযে স্কোয়াড্রনের বাইরের একাধিক পাইলট তাদের বিমান ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও স্বেচ্ছায় আত্মঘাতী হামলা করেছেন!
পরদিন ২৫ অক্টোবর কামিকাযে ইউনিটগুলো একযোগে লেইতে গালফ যুদ্ধে অংশ নেয়া বিভিন্ন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে হামলা চালায়। এর মধ্যে পাঁচটি জিরো ফাইটার ফরমেশনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। প্রথম বিমানটি ইউএসএস কিটকুন বে তে হামলা করা বিমানটি ফ্লাইট ডেকে আছড়ে পড়লেও বড় ধরনের বিস্ফোরণ হওয়ার আগেই স্লাইড করে আরেক পাশ দিয়ে পানিতে পড়ে যায়। এতে জাহাজের সামান্য ক্ষতি হয়। তার পাশের ইউএসএস ফ্রান্সহাউ বে এন্টি এয়ারক্রাফট মেশিনগানের তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাকি দুটো কামিকাযে জিরো ফাইটারকে ভূপাতিত করে। তার ঠিক পাশেই ইউএসএস হোয়াইট প্লেইন্স দিকে ডাইভ দেয় শেষ দুটো বিমান। কিন্তু মেশিনগানের গুলিতে এরা তাল হারিয়ে পাশের ইউএসএস সেন্ট লুইসে আছড়ে পড়ে এবং তিন ডেক ভেদ করে অভ্যন্তরীণ অস্ত্র গুদামে আগুন লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। এই সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে পরদিন ২৬ অক্টোবর আরো বড় আকারে কামিকাযে হামলা চালায় জাপানিরা। ৫৫টি বিমান ৭টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে হামলা করে বেশ ক্ষয়ক্ষতি করে। তবে এদের কেউ ডুবে যায়নি। এই যুদ্ধে কামিকাযে হামলায় আক্রান্ত অন্য ৪০টি জাহাজের মধ্যে ৫টি ডুবে যায়, ১২টি সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ২৩টি খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
কামিকাযে ঠেকানোর কৌশল
এরই মধ্যে আত্মঘাতী হামলা ঠেকানোর কার্যকরী কৌশল কয়েক মাসের মধ্যেই শিখে ফেলে মিত্রবাহিনী। প্রথমত, কমব্যাট এয়ার পেট্রোল টিমের বিমানগুলোকে ছোট ছোট ফরমেশনে ভাগ করে অনেক দূরে দূরে ওড়ানো শুরু হয়। আবার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সঙ্গী ডেস্ট্রয়ারগুলো পরস্পরের সাথে ৮০ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখে। একে পিকেট কৌশল বলে। ফলে পিকেটার জাহাজগুলো তাদের স্বল্প রেঞ্জের রাডারের সঠিক ব্যবহার শুরু করে। কামিকাযে বিমানবহর শনাক্ত হওয়া মাত্রই কমব্যাট পেট্রোল টিম তাদের পিছু ধাওয়া শুরু করে। তারপরও যারা ফাঁকি দিয়ে বড় বড় জাহাজের কাছে চলে আসে তাদের ঠেকানোর জন্য ৪০ মিলিমিটার এন্টি এয়ারক্রাফট কামানের তুলনায় ২০ মিলিমিটার মেশিনগানের ব্যবহার বাড়ানো হয়। এগুলোর ফায়ার রেট তুলনামূলক বেশি হওয়ায় জাহাজে বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে জাপানি বিমানগুলো ধ্বংস হয়ে যেত। আবার নতুন আবিষ্কৃত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোলড প্রক্সিমিটি রাউন্ডগুলো টার্গেটের কাছাকাছি গেলে নিজে থেকেই বিস্ফোরিত হতো বিধায় নৌসেনাদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। ফলে সময় গড়াতেই কামিকাযে হামলার কার্যকারিতা কমে যায়।
ওকিনওয়ার কামিকাযে ঝড়
১৯৪৫ সালের এপ্রিল-জুন মাসে ওকিনওয়া যুদ্ধের সময় কামিকাযে হামলার মাত্রা সর্বাধিক বৃদ্ধি পায়। এই দ্বীপটি ছিল জাপানের শেষ প্রতিরক্ষা লাইন। এটি হাতছাড়া হলে মিত্রবাহিনী জাপানি মূল ভূখণ্ডে সহজেই অভিযান চালাতে পারবে। ফলে জাপানিরা ঝড়ের বেগে আত্মঘাতী হামলা চালানো শুরু করে। তারা যেসব রাডারবাহী ডেস্ট্রয়ার পিকেটিং (একাকী নজরদারির) এর দায়িত্ব পালন করত তাদেরকে প্রথমে টার্গেট করত। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৫২টি) কামিকাযে বিমানের মোকাবেলা করা ইউএসএস ল্যাফি The Ship That Would Not Die ডাকনাম আদায় করে নিয়েছিল। ডেস্ট্রয়ারগুলোর পরে মিত্রবাহিনীর ফ্লিটের বড় বড় যুদ্ধজাহাজকে টার্গেট করত জাপানিরা। এতে ৩০টি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, তিনটি বেসামরিক জাহাজ (রসদবাহী) মিত্রবাহিনীর বেশ কিছু জাহাজ ডুবিয়ে/ক্ষতিগ্রস্থ করে। এসব কাজে ১,৪৬৫ বিমান ও সমসংখ্যক কামিকাযে পাইলট হারায় জাপান। তবে কোনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ব্যাটলশিপ, ক্রুজার ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়ায় জাপানের তেমন কোনো লাভ হয়নি। এসব আক্রমণের মধ্যে ইউএসএস বাংকার হিলের আক্রমণ ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যেখানে ৩৮৯ জন মারা যায়। কাঠের ডেক হওয়ায় নতুন মার্কিন ফ্লিট ক্যারিয়ার ব্রিটিশ আর্মার্ড ক্যারিয়ারের তুলনায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হজম করেছিল। এছাড়া ওকিনওয়া দ্বীপের দখলকৃত মার্কিন পজিশনেও বেশ কিছু কামিকাযে হামলা হয়েছিল। ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৫ সালে জাপানের আত্মসমর্পণের পর পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে ভাইস অ্যাডমিরাল মাতোমে উকাগি সর্বশেষ কামিকাযে হামলাটি করেছিলেন।
নতুন কামিকাযে কৌশল
লেইতে গালফের যুদ্ধে সাতটি ছোট আকারের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ভাইস অ্যাডমিরাল তাকিজুরো উনাশির চাহিদার সামান্যই পূরণ হয়েছে। তবে জীবন দেয়ার বিনিময়ে হলেও আগের চেয়ে নিখুঁতভাবে হামলা করতে পেরেছে জাপানি পাইলটরা। তাদের বিমানগুলো ছিল আসলে একপ্রকার পাইলট গাইডেড মিসাইল। পুরোনো বিমানগুলোকে এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ঠেসে ভরা হতো যেন বিস্ফোরণে সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া আত্মঘাতী হামলার উদ্দেশ্যে কিছু বিশেষ বিমান বানানো হয়েছিল। ইউএসএস সেন্ট লুইস ডুবে যাওয়ার সাফল্যে এ ধরনের দুই হাজার কামিকাযে বিমান বানিয়েছিল জাপান। খরচ কমাতে স্রেফ কাঠ ও স্টিলের তৈরি ফ্রেম দিয়ে বানানো Nakajima Ki-115 বিমানটি টেকঅফের পর চাকা ফেলে দিত যেন তা অন্য বিমানে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া MXY-7 Ohka মডেলটি বোমারু বিমান থেকে লঞ্চ করা যেত। অর্থাৎ সেটি ছিল মানুষচালিত মিসাইল! মার্কিনীরা একে বলত Baka Bombs, যা জাপানি ভাষায় ‘নির্বোধ’ বোঝায়। তবে এভাবে আত্মহত্যা করা তাদের দৃষ্টিতে বোকামি হলেও প্রথমদিকের কামিকাযে হামলাগুলোতে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল। ফলে এ ধরনের বিমানের উৎপাদন বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক হারে জাপানি বিমান নির্মাণ কারখানাগুলোতে বোমা হামলা শুরু করে। এসব আক্রমণকারী বি-২৯ বোমারু বিমান ঠেকাতেও কামিকাযে কৌশল বেছে নেয় জাপানিরা! তারা শত্রু বিমানের সাথে সরাসরি সংঘর্ষ ঘটিয়ে আত্মাহুতি দিত! কিন্তু এই কৌশল যুদ্ধজাহাজের হামলার মতো তেমন কার্যকর ছিল না। কারণ বি-২৯-গুলোর গতি এবং ম্যানুভার সক্ষমতা ছাড়াও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (১০টি মেশিনগান) বেশ শক্তিশালী ছিল। আবার অনেক কামিকাযে পাইলট শত্রুবিমানের সাথে সংঘর্ষের ঠিক আগ মুহূর্তে বেইল আউট (প্যারাশুট জাম্প) করতেন বিধায় এটি তেমন কার্যকর ছিল না।
এছাড়া বিমানবাহিনীর ন্যায় নৌবাহিনীতেও কামিকাযে যুদ্ধ কৌশলের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। যেমন:
Kaiten Human Torpedo: তখনকার যুগের টর্পেডো ছিল আনগাইডেড অস্ত্র। শত্রু জাহাজের গতিপথ হিসাব করে ফায়ার করা হতো। কিন্তু শত্রু টের পেয়ে গেলে এ ধরনের হামলা ম্যানুভার করে ফাঁকি দিতে পারতো। ফলে জাপানিরা তৈরি করে মানুষচালিত টর্পেডো! এর কার্যপ্রণালী অনেকটাই সাবমেরিনের মতো। যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন বা কোস্টাল বাংকার থেকে এ ধরনের টর্পেডো ফায়ার করা যেত। পাইলট সেটিকে চালিয়ে টার্গেটের দিকে নিয়ে যেত। মানুষচালিত হওয়ায় এগুলো ম্যানুভার করে ফাঁকি দেয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে রেঞ্জ কম হওয়ায় এদের সাফল্যের হার মার্কিন সোর্স অনুযায়ী খুবই কম। তবে জাপানি সোর্স অনুযায়ী এটি ছিল ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র। তা সত্ত্বেও মিত্রবাহিনীর মাত্র দুটি জাহাজ ডুবে ১৮৭ জন মারা গিয়েছিল। অন্যদিকে ১০৬টি টর্পেডো ফায়ারিং এর ঘটনায় সমসংখ্যক কামিকাযে পাইলট মারা যায়। এছাড়া এ ধরনের টর্পেডো বহনকারী ৮টি সাবমেরিন মার্কিন হামলায় ডুবে গিয়ে মোট ৮৪৬ জন মারা যাওয়ায় আনুমানিক ৬৪ জন কামিকাযে টর্পেডো পাইলট মারা গিয়েছিল।
Kairyu Mini Submarine: মিত্রবাহিনী এত দুর্বার গতিতে জাপানকে একের পর এক যুদ্ধে পরাজিত করছিল যে জাপানিরা মনে করেছিল তাদের হোম আইল্যান্ডেও তারা অভিযান চালাবে। সেটি যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে বেশ কিছু কামিকাযে কৌশল তারা বেছে নিয়েছিল, যার একটি ছিল এই বামন সাবমেরিন। এগুলোকে Midget বা বামন সাবমেরিনও বলা হয়। মাত্র দুজন লোক চালাতে সক্ষম এই সাবমেরিনটি উপকূলীয় অগভীর পানিতে চলতে সক্ষম ছিল। মোট ৭৬০টি সাবমেরিন বানানোর পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ২১৩টি বানানো হয়। এটি দুটি টর্পেডো ছাড়াও ৬০০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ বহন করত, যেন মানুষচালিত টর্পেডোর ন্যায় কামিকাযে হামলা করা যায়।
Shinyo Speedboat: মিনি সাবমেরিনের স্পিডবোট সংস্করণ এই নৌযান। এতে দুটি এন্টি শিপ রকেট ছাড়াও ২৭০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ বোটের সামনে লাগানো থাকত যেন কামিকাযে স্টাইলে সংঘর্ষ করে শত্রু জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি করা যায়। সাড়ে ১১ হাজার বানানোর পরিকল্পনা থাকলেও মোট ৬,১৯৭টি বোট বানানো হয়েছিল।
Fukuryu Divers: স্পিডবোট, মিনি সাবমেরিন ছাড়াও জাপানের মূলভূমিতে মিত্রবাহিনীর সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য ছয় হাজার Kamikaze Frogman তথা নৌকমান্ডোকে বিশেষ স্যুট প্রদান করা হয়েছিল। এটি পরে ৫-৭ মিটার গভীরতায় টানা ১০ ঘণ্টা অবস্থান করা সম্ভব। মূলত সেনা পরিবহনকারী জাহাজ ধ্বংসের জন্য লিমপেট মাইন লাগানোর জন্য এই স্যুটের ডিজাইন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইনভেশন অপারেশন না হওয়ায় এসব কামিকাযে অস্ত্রের তেমন একটা ব্যবহার হয়নি।
সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি
উপর্যুক্ত কারণে কামিকাযে পাইলটদের সাফল্যের হার খুব কম ছিল। তবে কামিকাযে হামলায় কতটি জাহাজ ডুবেছে সেটি নিয়ে পরিষ্কার তথ্য কোথাও নেই। জাপানি রেকর্ড অনুযায়ী এসব আক্রমণে শত্রুপক্ষের ৮১টি জাহাজ ডুবেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৯৫টি যুদ্ধজাহাজ। প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফাইনাল ফেজে তারা ৮০% মার্কিন ক্ষয়ক্ষতির ক্রেডিট কামিকাযে হামলাকে দেয়। ইতিহাসবিদ চার্লস মেসেঞ্জার, এইচপি উইলমট এবং রবিন ক্রস তাদের বইয়ে লিখেছেন যে, প্রায় ৭০টির মতো মার্কিন জাহাজ এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত/মেরামতের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে ইউএস হিস্টোরিক্যাল রিসার্চের গবেষক ডক্টর রিচার্ড হ্যালিয়নের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ২,৮০০ কামিকাযে বিমান ৩৪টি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ৩৬৮টি জাহাজের কম-বেশি ক্ষতি করেছিল। এতে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই ৪,৯০০ জন নিহত হয়েছিল। মিত্রবাহিনীর হিসাব তিনি দেননি। এসব হামলার ১৪% বিমান যুদ্ধজাহাজে আঘাত হানতে সক্ষম হয়, এবং আঘাতপ্রাপ্ত জাহাজের ৮.৫% জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক ডেনিশ এবং পেগি ওয়ার্নার এবং মার্কিন সাংবাদিক বিল গর্ডন তাদের বইয়ে যথাক্রমে ৫৭ ও ৪৭টি জাহাজ ডুবে যাওয়ার কথা বলেছেন। চলুন দেখে নেয়া যাক কামিকাযে হামলার আরো কিছু ছবি।
সব মিলিয়ে পুরো যুদ্ধে প্রায় ৩,৮০০ কামিকাযে পাইলট প্রাণ হারায়। এসব আক্রমণের মাত্র ১৯% সফল হয়েছিল। তাতেই মিত্রবাহিনীর সব মিলিয়ে সাত হাজারের বেশি নৌসেনা মারা গিয়েছিল। এভাবে পরাজয় ঠেকাতে মরিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদী জাপানি সমরনায়কেরা দেশপ্রেমিক সহজ-সরল জাপানি যুবকদের দেশ ও সম্রাটের নামে উৎসর্গ করে দিয়েছিল। এজন্য ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারউইশের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায়,
যুদ্ধ একদিন শেষ হবে।
হাত মেলাবেন নেতারা।
বৃদ্ধা তাঁর শহীদ সন্তানের পথের দিকে তাকিয়ে থাকবেন।
প্রিয়তম স্বামীর জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনবে তরুণী।
আর শিশুরা তাদের বীর বাবার অপেক্ষায় থাকবে।
আমাদের প্রিয় স্বদেশকে বিকিয়ে দিয়েছে কে, তা আমি জানি না।
তবে মূল্যটা কাকে দিতে হয়েছিল, সেটা আমি দেখেছিলাম।