Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আইপিএল ২০২২: যেমন হলো দলগুলো | পর্ব ২

আইপিএল মানেই জমজমাট উন্মাদনা, আইপিএল মানেই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ক্রিকেট এবং বলিউডের মিলনমেলা। আবার অনেকে বলেন, ক্রিকেটের একেবারে ‘নষ্টের গোড়া’। সে যা-ই হোক না কেন, আইপিএলের আবেদন যে তাতে বিন্দুমাত্র কমে না, বরং বেড়ে যায় বহুগুণে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সে কারণেই ক্রিকেটার-কোচ থেকে শুরু করে চায়ের কাপে ঝড় তোলা দর্শকের সবাই এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকে।  

গত বছর কিয়ৎক্ষণের জন্য দেশান্তরী হয়েছিল আইপিএল। সেটা বোধহয় ক্রিকেটদেবী পছন্দ করেননি, তাই মাঝপথেই কোভিড হানা দেওয়ার কারণে বন্ধ করতে হয় সে দফায়। দ্বিতীয়ার্ধ আবার ফেরে ভারতবর্ষেই, আরো একবার আইপিএল জিতে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। দুই পর্বের আয়োজনে প্রথম পর্বের ধারাবাহিকতায় আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, দিল্লী ক্যাপিটালস, রাজস্থান রয়্যালস, আর লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টসের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার ফিরিস্তি।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স; Image Credit: twitter/Mumbai Indians

“আমাদের ফ্রাঞ্চাইজির সবসময়ই একটা ছোট সময়ের লক্ষ্য আর বড় সময়ের দর্শন থাকে।”

জোফরা আর্চারকে স্কোয়াডে নেওয়ার পর কথাগুলি বলছিলেন নিতা আম্বানি। আম্বানির কথা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আর্চার ইনজুরিগ্রস্থ, এই সিজনে হয়তো তিনি একদমই খেলতে পারবেন না। কিন্তু তা হলে কী হবে? পরের আসরের জন্যে এই পেসারকে স্কোয়াডে নিশ্চিত করে ফেলেছে মুম্বাই। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির মালিকানাধীন এই দলটা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বেশ সফল একটি দল। এখন অব্দি মোট সবচেয়ে বেশি মোট পাঁচবার আইপিএলের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে তারা। মহারাষ্ট্রের এই দলটা আইপিএলে খেলছে ২০০৮ সাল থেকেই। প্রথম আসর থেকেই আইপিএলে নিজেদের একটি অনন্য জায়গা তৈরি করেছে তারা। দলটিতে আছে শচীন টেন্ডুলকারের মতো খেলোয়াড়ের খেলার ইতিহাস।

স্কোয়াড

দেশী

রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব, তিলক ভার্মা, রমনদ্বীপ সিং, আনমোলপ্রিত সিং, রাহুল বুদ্ধি, হৃত্বিক শোকিন, অর্জুন টেন্ডুলকার, সঞ্জয় যাদব, আরিয়ান জুয়াল, ইশান কিষাণ, জসপ্রীত বুমরাহ, আরশাদ খান, জয়দেব উনাদকাত, মায়াঙ্ক মারকান্দে, মুরুগান অশ্বিন, বাসিল থাম্পি। 

বিদেশী

ডিওয়াইল্ড ব্রেভিস, কিয়েরন পোলার্ড, টিম ডেভিড, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, ড্যানিয়েল শামস, টাইমাল মিলস, রাইলি মেরেডিথ। 

শক্তিশালী ‘কোর গ্রুপ’

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সাফল্য নির্ভর করছে দলের ‘কোর গ্রুপ’-এর ওপর। রোহিত শর্মা, জসপ্রীত বুমরাহ, সূর্যকুমার যাদব, কিয়েরন পোলার্ডের মতো খেলোয়াড়েরা দীর্ঘদিন ধরে আছে দলটির সঙ্গে। প্রতি বছরের মতো এবারও মুম্বাই তাকিয়ে থাকবে এই গ্রুপটার ওপর। এছাড়াও ইশান কিষাণের ওপরও তাকিয়ে থাকবে মুম্বাই। বিশেষ করে টপ অর্ডারে রোহিতকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেন তিনি। তবে হার্দিক পান্ডিয়া চলে যাওয়ার পর লোয়ার অর্ডারে পাওয়ার-হিটিংয়ের দায়িত্বটা নিতে হবে টিম ডেভিড কিংবা ডিওয়াইল্ড ব্রেভিসকেই। কিন্তু এসবের পরও দলের মূল সাফল্য নির্ভর করবে ঐ ‘কোর গ্রুপ’টার ওপরই। তাদেরকে টুর্নামেন্টজুড়েই নিয়মিতভাবে পারফর্ম করে যেতে হবে, নিতে হবে অতিরিক্ত দায়িত্ব। আর দলের সাথে দীর্ঘদিন থাকায় এরা দলের পরিবেশ সম্বন্ধে যথেষ্ট অভিজ্ঞও বটে। সে হিসেবে এমন একটা ‘কোর গ্রুপ’ থাকা মুম্বাইয়ের জন্যে আশীর্বাদই।

দুর্বলতা ডেথ ওভার বোলিং

মুম্বাই দলের বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় ভরসা জসপ্রীত বুমরাহ। কিন্তু আর্চারের অনুপস্থিতি বুমরাহকে অনেক বেশি চাপে ফেলে দিতে পারে। বিশেষত ডেথ ওভার বোলিংয়ের ক্ষেত্রে বুমরাহর সঙ্গী কে হবেন, এটি একটি বড় প্রশ্ন হয়েই দাঁড়াবে রোহিতের কাছে। যেহেতু আর্চারকে পাচ্ছে না মুম্বাই, সেক্ষেত্রে হয়তো টাইমাল মিলস কিংবা রাইলি মেরেডিথকেই ডেথ ওভারের দায়িত্বটা নিতে হবে। কিন্তু এরা দু’জনের কেউই কি ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট? কিংবা যদি কোনো একদিন বুমরাহর ‘দুর্লভ’ বাজে দিন যায়, সেক্ষেত্রে ঐ ফ্রন্টলাইন বোলারের দায়িত্বটাই বা কে নেবে? আবার বুমরাহ যদি শুরুতে আর মাঝের দিকে ওভার খরচ করে ফেলেন, তাহলে ডেথ ওভারে বুমরাহর পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাবে না মুম্বাই। আর ডেথ ওভার যেকোনো সময়েই যে ম্যাচের গতি বদলে দিতে পারে, তা কে না জানে! সব মিলিয়ে তাই ডেথ ওভার ভোগাতে পারে মুম্বাইকে। আবার চাহারের মতো স্পিনারকে ছেড়ে দেওয়ার পর তার যথেষ্ট বিকল্প আনতে পারেনি দলটি। দলে মারকান্দে কিংবা মুরুগান অশ্বিন আছেন বটে, কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাব পোড়াতে পারে মুম্বাইকে।

সাহস যোগাচ্ছেন বিদেশী খেলোয়াড়েরা

তরুণ কিছু বিদেশী খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তি সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে মুম্বাইয়ের জন্যে। বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব-১৯ এর তারকা ডিওয়াইল্ড ব্রেভিসকে নিয়ে একটা বাজি ধরতেই পারে মুম্বাই। আবার টিম ডেভিডের শেষদিকে তেড়েফুঁড়ে খেলার সক্ষমতাও মুম্বাইয়ের জন্যে সহায়ক হতে পারে। মুম্বাইকে এমনকি সহায়তা করতে পারেন ফ্যাবিয়ান অ্যালেনও, সেক্ষেত্রে স্পিন বোলিংয়ে দেশী অপশনের ঘাটতিটাও মিটতে পারে তাদের। আবার টাইমাল মিলসের স্লোয়ারও কাজে আসতে পারে মুম্বাইয়ের, বিশেষত গত কয়েক আইপিএলেই বোলিংয়ের ভ্যারিয়েশন সাফল্যে ভাসিয়েছে দলকে। সব মিলিয়ে বিদেশী খেলোয়াড়েরা মুম্বাইয়ের জন্যে বয়ে আনতে পারে দারুণ কিছু সম্ভাবনা।

ঝুঁকির নাম ইনজুরি

মুম্বাইয়ের জন্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হতে পারে ইনজুরি। ইতোমধ্যেই ইনজুরির ছোবলে আর্চারকে পাবে না মুম্বাই, বুমরাহ হয়ে আছেন পেস বোলিংয়ে সবেধন নীলমণি। তিনি কোনোক্রমে ইনজুরি-আক্রান্ত হয়ে গেলে রীতিমতো জ্বলন্ত উনুনেই পড়বে মুম্বাই। আবার অধিনায়ক রোহিত শর্মা বিগত কয়েক আইপিএলের মাঝে যেভাবে ইনজুরিগ্রস্ত হয়েছেন, তাতে করে এবারও শঙ্কায় না থেকেই পারে না মুম্বাই। রোহিত কোনোক্রমে দল থেকে ছিটকে গেলে শুধু একজন ব্যাটার নয়, বরং ক্ষুরধার একজন অধিনায়কও হারাবে মুম্বাই। মুম্বাইয়ের জন্যে সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ এই ইনজুরি।  

কতদূর যাবে দলটা? 

ভারতীয় ব্যাটারদেরকে দিয়ে গড়া শক্তপোক্ত টপ অর্ডারের পর মিডল অর্ডারে বিদেশী খেলোয়াড়দের পাওয়ার হিটিং অপশন দলটিকে যোগাচ্ছে আশা। অন্যদিকে বোলিংয়ে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য অপশন না থাকাটা দিচ্ছে অশনি সংকেত। সেদিক থেকে প্লে-অফই হতে পারে মুম্বাইয়ের প্রাথমিক লক্ষ্য। কিন্তু যে দলের রয়েছে রোহিত শর্মার মতো চৌকষ অধিনায়ক, তাদেরকে বাতিল করেই বা দেবেন কেমন করে? মুম্বাই তাই এ আসরেও নিজেদেরকে ‘ফেভারিট’-এর আসনেই আসীন করতে পারে। 

কে হবেন মূল তারকা? 

 রোহিত শর্মা নিঃসন্দেহেই হতে চলেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মূল খেলোয়াড়। এর আগে আইপিএল শিরোপার স্বাদ যেমন পেয়েছেন, আবার ব্যাট হাতেও তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। সাথে টিম ডেভিডের দিকেও রাখতে পারেন নজর, ফিনিশিংয়ে তিনিও নজর কাড়তে পারেন এবার আলাদাভাবেই। 

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর; Image Credit: Deccan Herald

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলটা যাচ্ছে পালাবদলের মধ্যে দিয়ে। বিরাট কোহলি অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর এবার তারা খেলবে নতুন এক অধিনায়কের অধীনে। তবে অধিনায়ক পাল্টে গেলেও নিশ্চয়ই দলের লক্ষ্যে কোনো পরিবর্তন আনবে না ব্যাঙ্গালোর, এবারও তারা ম্যাচ খেলতে নামবে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যেই।

স্কোয়াড

দেশী

বিরাট কোহলি, সুয়াশ প্রভুদেশাই, মাহিপাল লমড়র, অনুস্বার গৌতম, শাহবাজ আহমেদ, দীনেশ কার্তিক, অনুজ রাওয়াত, লুভনিথ সিসোদিয়া, মোহাম্মদ সিরাজ, হার্শাল পাটেল, আকাশ দ্বীপ, চামা ভি মিলিন্দ, কর্ণ শর্মা, সিদ্ধার্থ কৌল।

বিদেশী

ফাফ ডু প্লেসি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, শেরফেইন রাদারফোর্ড,  ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ডেভিড উইলি, ফিন অ্যালেন, জশ হ্যাজলউড, জেসন বেহরেনডর্ফ। 

দারুণ শক্তিশালী পেস ডিপার্টমেন্ট

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের শক্তির জায়গা হতে পারে তাদের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট। মোহাম্মদ সিরাজ তো আছেনই, নতুন বলে তার সঙ্গী হতে পারেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার জশ হ্যাজলউড। এছাড়াও ব্যাঙ্গালোরের শিবিরে আছেন হার্শাল পাটেল, জেসন বেহরেনডর্ফ, সিদ্ধার্থ কৌল, আর ডেভিড উইলির মতো পেসাররা। সিদ্ধার্থ যদি হায়দরাবাদের হয়ে তার পুরনো পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেন, তাহলে সিরাজ কিংবা হ্যাজলউড মাঝের দিকে সহায়তা পেতে পারেন তার থেকে। আবার বিদেশী পেসারদের মধ্যেও যথেষ্ট বিকল্প আছে ব্যাঙ্গালোরের কাছে। বেহরেনডর্ফ কিংবা ইংলিশ বাঁহাতি পেসার উইলির মধ্যে যে কাউকেই যেকোনোদিন খেলাতে পারে ব্যাঙ্গালোর। সব মিলিয়ে তাদের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ।

বিরাট কোহলি এবার অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন, ব্যাঙ্গালোর এবারের আসরে খেলবে নতুন অধিনায়কের অধীনে। অধিনায়কত্বের এই পালাবদল শাপেবর হতে পারে ব্যাঙ্গালোরের জন্যে। অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড খুলে ফেলার পর ‘স্রেফ ব্যাটার’ রোলে নিঃসন্দেহেই রান পেতে মরিয়া হয়ে থাকবেন কোহলি। আর তিনি রানবন্যা বইয়ে দিতে পারলে যে ব্যাঙ্গালোরকে আটকানো যেকোনো দলের জন্যই কঠিন হয়ে যাবে, সেটা তো বলাই বাহুল্য।  

ব্যাটিং গভীরতা যখন ভ্রুকুঞ্চনের কারণ  

ব্যাঙ্গালোর বরাবরই বিখ্যাত দুর্ধর্ষ ব্যাটিং লাইনআপের জন্য। একটা সময় তো এমনও অবস্থা ছিল, ‘কাকে রেখে কাকে খেলাই’ ধরনের মধুর সমস্যাতেই পড়তে হতো তাদের। তবে এবার পরিস্থিতি বদলেছে। গত বছরের নভেম্বরেই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। সুতরাং, আইপিএলের এবারের আসরে ভিলিয়ার্সকে পাচ্ছে না ব্যাঙ্গালোর। সে হিসেবে মিডল অর্ডারে ও ডেথ ওভারগুলিতে অনায়াসে রান তুলতে পারেন, এমন একজন ব্যাটারের অভাব বোধ করতে পারে ব্যাঙ্গালোর। অবশ্য গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে দলে টেনেছে তারা; তবে ম্যাক্সওয়েল যদি ধারাবাহিক হতে পারেন, সেটা ভোগাতে পারে ব্যাঙ্গালোরকে।

কতদূর যাবে দলটা? 

ব্যাঙ্গালোরের জন্যে সবচেয়ে ঝুঁকির জায়গাটা এবার ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট, বলা হয়েছে আগেই। তাদের ব্যাটিং অর্ডার এবার অনেকাংশেই ডু প্লেসি, বিরাট কোহলি, আর ম্যাক্সওয়েলের ওপর নির্ভরশীল। আরো একটু মোটা দাগে বললে, ব্যাটিংয়ের সিংহভাগ দায়িত্ব নিতে হবে বিরাটকেই। বিরাট যদি কোনোভাবে ব্যর্থ হন, তাহলে ব্যাঙ্গালোর বিপদে পড়ে যেতে পারে। এছাড়াও দলে আছেন ৩৬ বছর বয়সী দীনেশ কার্তিক, যার উপরে বাজি ধরাটা হতে পারে অনেকটাই জুয়াখেলার মতো। তবে কোহলি-ম্যাক্সওয়েলের পাশাপাশি শক্তিশালী পেস ডিপার্টমেন্ট আর হার্শাল প্যাটেল-ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার মতো খেলোয়াড়রা যদি ঝলসে উঠতে পারেন, তাহলে প্লে-অফের স্বপ্ন দেখতে পারে ব্যাঙ্গালোর। 

কে হবেন সেরা খেলোয়াড়? 

দলে আছেন কোহলি-ডু প্লেসি-ম্যাক্সওয়েলের মতো বড় তারকা। কিন্তু তাদেরকে ছাপিয়ে নিঃসন্দেহে এবার নজর থাকবে শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উপরে। তিনি দুর্দান্ত ছন্দে আছেন, আর গত বছরের দুর্দান্ত ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পর নিঃসন্দেহেই হতে চলেছেন ব্যাঙ্গালোরের অন্যতম মূল স্তম্ভ। এছাড়াও নিজেকে আরো একবার প্রমাণ করতে পারেন মোহাম্মদ সিরাজ, নিজের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স সেই আশাই দেখাচ্ছে বৈকি। 

দিল্লী ক্যাপিটালস

দিল্লী ক্যাপিটালস; Image Credit: pixlok.com

আইপিএলের সূচনালগ্ন থেকেই যেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নাম ফেভারিটের কাতারে উচ্চারিত হয়, তাদেরই একটি দিল্লী। গত তিন আসরের তিনটিতেই দিল্লী ক্যাপিটালস প্লে-অফ খেলেছে, সে কারণে এ আসরে দিল্লীর স্বপ্ন আরেকটু বড় পরিসরেই ডানা মেলেছে। আইপিএল মেগা অকশনের আগে অবশ্য তারা বেশিরভাগ ভারতীয় ক্রিকেটারকেই দলে রেখে দিয়েছে।

স্কোয়াড

দেশী

পৃথ্বী শ, অশ্বিন হেবার, সরফরাজ খান, যশ ঢুল, মনদ্বীপ সিং, ললিত যাদব, রিপল প্যাটেল, অক্ষর প্যাটেল, ঋষভ পান্ত, শ্রীকর ভারত, ভিকি ওস্তল, শার্দুল ঠাকুর, কমলেশ নাগোরকোটি, খলিল আহমেদ, চেতন সাকারিয়া, প্রবীণ দুবে, কূলদ্বীপ যাদব। 

বিদেশী

ডেভিড ওয়ার্নার, রভম্যান পাওয়েল, মিচেল মার্শ, টিম সাইফার্ট, আনরিখ নরকিয়া, মুস্তাফিজুর রহমান, লুঙ্গি এনগিডি।

বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইনআপ

আইপিএলের এবারের আসরের সবচেয়ে বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইনআপের তকমাটা বোধহয় তর্কসাপেক্ষে দিল্লী ক্যাপিটালসের উপরেই দিয়ে দেওয়া যায়। আইপিএল নিলামে তাদের পরিকল্পনা ছিল সম্ভবত যত বেশি সম্ভব পাওয়ার হিটারকে দলে টেনে নেওয়া। সে পরিকল্পনাটা মাঠে কাজে দিলে প্রতিপক্ষ বোলারদের ঘাম ছুটে যেতে বাধ্য।

ওপেনিংয়ের কথা চিন্তা করলে পৃথ্বী শ আর ডেভিড ওয়ার্নার মিলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই দারুণ শুরু এনে দিতে পারেন দিল্লীকে। এছাড়াও এই দুজনের ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনও দিল্লীকে অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। তবে এই দু’জনের বাইরেও দিল্লীর ব্যাটিং লাইনআপে আছে একের পর এক পাওয়ার হিটার। বিশেষ করে অধিনায়ক ঋষভ পান্তকে একদমই হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। শেষের দিকে নেমে একা হাতেই যেকোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন তিনি। এছাড়াও তাদের দলে আছেন মিচেল মার্শের মতো ব্যাটার, যিনি টপ অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডার যেকোনো জায়গাতেই নিজের জাত চেনাতে সক্ষম। এছাড়াও ভারতের সাথে সাম্প্রতিক সিরিজে রভম্যান পাওয়েল বুঝিয়েছেন, একা হাতে ব্যাট হাতে তিনি হয়ে উঠতে পারেন ধ্বংসাত্মক। এমনকি লোয়ার অর্ডারে শার্দুল ঠাকুর কিংবা অক্ষর প্যাটেলরাও জানান দিচ্ছেন ব্যাটিং গভীরতার। সব মিলিয়ে দিল্লীর ব্যাটিং লাইনআপ সর্বাত্মকভাবেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা, আর এটাই দিল্লীর সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা।

শক্তিশালী পেস ডিপার্টমেন্ট

ফাস্ট বোলিং অপশনও রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ করে দিতে পারে। ভারতীয় ফাস্ট বোলারদের মধ্যে শার্দুল ঠাকুর, কমলেশ নাগোরকোটি, খলিল আহমেদ, আর চেতন সাকারিয়া তো আছেনই, সাথে বিদেশীদের মধ্যে রয়েছেন আনরিখ নরকিয়া-লুঙ্গি এনগিডির মতো এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলার, আছেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান। দুর্দান্ত এই ফাস্ট বোলিং অপশনই বুঝিয়ে দিচ্ছে, দিল্লী এবার অনেকাংশেই নির্ভর করবে তাদের ফাস্ট বোলারদের উপরেই।

অলরাউন্ড অপশন প্রচুর

জেনুইন অলরাউন্ডার থাকা যেকোনো দলের জন্যই আশীর্বাদস্বরূপ। আর ফরম্যাট যদি হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, তাহলে যেকোনো দলই নিজেদের দলে অলরাউন্ডারদের আধিক্য দেখতে চাইবে। দিল্লীর পরিকল্পনাও অন্য পথে পা বাড়ায়নি, দলে তারা ভিড়িয়েছে বেশ কিছু অলরাউন্ডার। মিচেল মার্শ, রভম্যান পাওয়েল, ললিত যাদবের সাথে আছেন অক্ষর প্যাটেলের মতো অলরাউন্ডারও। মার্শ অবশ্য মূলত একজন ব্যাটার রোলই প্লে করবেন যিনি বল হাতে মিডিয়াম ফাস্ট অপশন বাড়াবেন। একই কথা প্রযোজ্য হতে পারে পাওয়েলের জন্যেও। আর বল হাতে দিল্লীকে যেকোনো দিন রক্ষা করার মতো সামর্থ্য যে তাদের আছে, সেটা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে, অক্ষর প্যাটেল মূলত একজন বোলিং অলরাউন্ডার। স্পিন বোলিংয়ে তার নিজেকে আর প্রমাণের কিছু নেই। তবে লোয়ার অর্ডারে অক্ষরের ব্যাটিং কাজে লাগতে পারে দিল্লীর। বিশেষ রান বাড়িয়ে নেওয়ার কাজে তিনি হতে পারেন দারুণ অস্ত্র। এমন একঝাঁক অলরাউন্ডার থাকাটা দিল্লী দলের জন্যে বড় সুযোগ বয়ে আনতে পারে।  

দুর্বলতা স্পিন বোলিং অপশনের অভাব

গত কয়েক আসরে দিল্লীর সবচেয়ে শক্তির জায়গা ছিল স্পিন বোলিং আক্রমণ। কিন্তু অশ্বিন আর অমিত মিশ্রর চলে যাওয়া এই ডিপার্টমেন্ট এবার দিল্লীকে কিছুটা ব্যাকফুটেই ফেলে দিয়েছে। তারা দলে ভিড়িয়েছে অক্ষর প্যাটেলকে, যিনি কিপ্টে বোলিংয়ের মাধ্যমে ব্যাটারদেরকে হাঁসফাঁস করাতে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু এছাড়াও দিল্লীর গেমচেঞ্জিং একজন স্পিনারের প্রয়োজন ছিল। অনেকে হয়তো কূলদ্বীপ যাদবের কথা বলতে পারেন, কিন্তু আইপিএলের গেল কয়েক আসরে কূলদ্বীপের পারফরম্যান্স ঠিক সেই আশা দিতে পারছে না। এই অভাব ম্যাচের মাঝের ওভারগুলোতে বেশ ভোগাতে পারে দিল্লীকে।

দিল্লীর ব্যাটিং লাইনআপ সাজানো হয়েছে বিস্ফোরক সব ব্যাটার দিয়ে। এই ধরনের ব্যাটারদের সবাই স্ট্রাইকরেট বাড়িয়ে খেলতে পছন্দ করেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দর্শকেরা অবশ্য এটাই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু কখনও কখনও এমন ব্যাটসম্যানও দলের লাগতে পারে, যিনি কি না ইনিংসের শুরু থেকে শেষ অব্দি দিল্লীকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। রান তাড়া করার ক্ষেত্রে কিংবা ব্যাটিং বিপর্যয়ে শান্ত ও স্থিতধী হয়ে দিল্লীর হয়ে রান আগানোর মতো ব্যাটারের অভাব রয়েছে দিল্লীর স্কোয়াডে। এই অভাব দিল্লীর জন্যে ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

কতদূর যেতে পারে তারা? 

দুর্দান্ত ফাস্ট বোলিং অ্যাটাক, মোটামুটি উৎরে যাওয়ার মতো স্পিন বোলিং অপশন, আর দারুণ ব্যাটিং অর্ডার – বেশ আশাজাগানিয়া এক স্কোয়াডই বলতে হবে দিল্লীর। প্রমাণিত সব ম্যাচ উইনাররা যদি ক্লিক করে যান, প্লে-অফটা অনায়াসেই মিলে যাওয়ার কথা তাদের।

কে হতে পারেন মূল তারকা? 

চেতন সাকারিয়া এবারও বল হাতে চলে আসতে পারেন স্পটলাইটে। অক্ষর প্যাটেলও ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন নিশ্চিতভাবেই। সুযোগ পেলে প্রতিশ্রুতিশীল একজন হিসেবে ব্যাটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে মুখিয়ে থাকবেন হয়তো সরফরাজ খানও। তবে অন্য যে কারো থেকেই লাইমলাইটে বেশি থাকবেন নিঃসন্দেহেই অধিনায়ক ঋষভ পান্ত। তিনিই হয়ে উঠতে পারেন ‘এক্স ফ্যাক্টর’।  

রাজস্থান রয়্যালস

রাজস্থান রয়্যালস; Image Credit: ANI News

আইপিএলের একদম প্রথম আসরে ‘ওয়ার্ন ম্যাজিকে’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস। ওয়ার্ন এখন নেই, সেই প্রথমবারের পর আর চ্যাম্পিয়নশিপের দেখাও পায়নি দলটি। তবে প্রতি বছরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে দারুণ সব খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়ে থাকে তারা। এবারও নিলামের শুরুতেই সঞ্জু স্যামসন, জস বাটলার, যশস্বী জয়সওয়ালকে দলে ভিড়িয়েছে তারা।

স্কোয়াড

দেশী

করুণ নায়ার, দেবদূত পাড্ডিকাল, যশস্বী জয়সওয়াল, রিয়ান পরাগ, অনুনয় সিং, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ধ্রুব জুড়েল, সঞ্জু স্যামসন, শুভম ঘরোয়াল, কুলদীপ সেন, নবদ্বীপ সাইনি, তেজাস বারোকা, কেসি ক্যারিয়াপ্পা, প্রসিধ কৃষ্ণা, যুযবেন্দ্র চাহাল। 

বিদেশী

রাসি ভ্যান ডার ডাসেন, শিমরন হেটমায়ার, জেমস নিশাম, ড্যারেল মিচেল, জস বাটলার, নাথান কোল্টার-নাইল, ওবেড ম্যাকয়, ট্রেন্ট বোল্ট।

দুর্দান্ত ব্যাটিং অর্ডার

দেবদূত পাড্ডিকাল তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আইপিএলে দারুণ ধারাবাহিক। সাথে জস বাটলার, সঞ্জু স্যামসন, শিমরন হেটমায়ার, আর যশস্বী জয়সওয়াল – সব মিলিয়ে রাজস্থানের ব্যাটিং অর্ডার বেশ শক্তিশালী। ইংল্যান্ডের সাদা বলের সহ-অধিনায়ক জস বাটলার বর্তমান সময়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা একজন ব্যাটার। উইকেটের চারপাশেই তিনি শট খেলতে পারেন, ঝুলিতে আছে নানা ধরনের স্ট্রোক খেলার সক্ষমতা। শুধু পেস বোলিংই নয়, স্পিনের বিপক্ষেও বাটলার সমানভাবে পারদর্শী।

অন্যদিকে সঞ্জু স্যামসন আর রাজস্থান রয়্যালস যেম সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছেন। বরাবরই নির্ভরযোগ্য মিডল অর্ডার হিসেবে প্রায় সব আসরেই সঞ্জু রাজস্থান দলেই ছিলেন। সঞ্জু স্যামসনের সব থেকে বড় শক্তির জায়গা টাইমিং। নিজের দিনে তিনি যেকোনো প্রতিপক্ষের ঘাম ঝরিয়ে দিতে পারেন। তার স্থিরতার সঙ্গে শিমরন হেটমায়ারের ছয় মারার সক্ষমতা রাজস্থান দলকে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। 

যথেষ্ট বোলিং অপশনের অভাব

টি-টোয়েন্টি দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ অলরাউন্ড অপশন। দলের বিপদে, নিয়মিত ব্যাটারদের আসা-যাওয়ায় তারা যেমন দলকে বাঁচাতে পারেন, তেমনি নিয়মিত বোলারের বাজে দিনে বল হাতে এগিয়েও আসতে পারেন দলের প্রয়োজনে। রাজস্থান দলে পাওয়ার হিটার থাকলেও এমন খেলোয়াড়ের অভাব রয়েছে যে কি না ব্যাট-বল দুই দিকেই নিজের জাত চেনাতে সক্ষম। রাজস্থান দলে বলার মতো অলরাউন্ডার আছেন কেবল কিউই জিমি নিশাম আর ড্যারিল মিচেল। দুই কিউই অলরাউন্ডারই যেমন বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেন, তেমনি মিডিয়াম পেসে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন বোলিংয়েও। কিন্তু রাজস্থানের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে পারে তাদের আইপিএল অভিজ্ঞতা। এখন অব্দি কোনো আসরেই বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি নিশাম। মিচেলও ঠিক ‘নির্ভরযোগ্য’ অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে পারেননি। পরাগ বা অশ্বিনের কথা বলা যায় বটে, কিন্তু এই দু’জনের কেউই আসলে ঠিক ‘নির্ভরযোগ্য’ অলরাউন্ডার নন। রিয়ান পরাগ ফিনিশিংয়ে হয়তো কিছুটা সাহায্য করবেন, আর অশ্বিনের বোলিং নিয়ে নতুন করে বলার আর কিছুই নেই। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে দু’জনের কেউই ঠিক ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডার নন। আর এই ষষ্ঠ বোলিং অপশন-এর অভাবটা ভোগাতে পারে রাজস্থানকে।

যদিও দলে ট্রেন্ট বোল্টের মতো অভিজ্ঞ পেসার আছে, তবুও তিনি ছাড়া রাজস্থানে আর তেমন বলার মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পেসার নেই। প্রসিধ কৃষ্ণা কিংবা ওবেড ম্যাকয় – রাজস্থানের দলে সম্ভাবনার অভাব নেই। কিন্তু অপার এই সম্ভাবনার ভিড়ে যার অভাব রয়েছে, তা হলো অভিজ্ঞতা। দলে নবদ্বীপ সাইনি গত কয়েক বছরে আইপিএলে ছিলেন বেশ খরুচে। আবার নাথান কোল্টার-নাইল এতটাই ইনজুরিপ্রবণ যে তিনি কয় ম্যাচে দলে থাকবেন, সেটাই একটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। আর সে কারণেই বোল্টকেই হয়তো অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হতে পারে। শুধু উইকেট নেওয়াই নয়, পেস বোলিংয়ের অভিজ্ঞতার সবটুকু চাহিদা হয়তো পূরণ করতে হতে পারে বোল্টকেই। আর এতে চাপে পড়ে যেতে পারেন বোল্ট। ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে রাজস্থানের জন্যে।

কতদূর যাবে তারা? 

আইপিএলে প্রতি দলে ম্যাচে মাত্র চারজন বিদেশী খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পান। আর সে কারণেই দলগুলির সাফল্যের অনেকাংশ নির্ভর করে দেশী ক্রিকেটারদের ওপরে। আর এখানেই রাজস্থানের সামনে আছে বড় সুযোগ। দলটির নেতৃত্বে আছেন সঞ্জু স্যামসনের মতো ভারতীয় ক্রিকেটার। আর এছাড়াও যশস্বী জয়সওয়াল আর দেবদূত পাড্ডিকালের মতো তারুণ্যোচ্ছ্বল ব্যাটাররাও আছেন দলে। ব্যাটিং ছেড়ে যদি বোলিংয়ে দিকে তাকান, সেখানেও ঘন্টায় ১৫০ কিমি বল করতে পারে প্রসিধ কৃষ্ণার বোলার আছেন স্কোয়াডে। অভিজ্ঞতারও অভাব নেই রাজস্থানের দলে, অশ্বিন-চাহাল দু’জনই ঘূর্ণিজালে যেকোনো সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সব মিলিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের এই ‘কোর গ্রুপ’ই রাজস্থানের জন্যে বড় সুযোগ। সহজেই প্লে-অফ ছোঁয়ার কথা দলটির। 

কারা হতে পারেন মূল শক্তি? 

রাজস্থানের টপ অর্ডারে আছেন যশস্বী জয়সওয়াল আর দেবদূত পাড্ডিকালের মতো দুই ব্যাটার। এই দুই তরুণই হতে পারেন এবারের আসরে রাজস্থানের জন্যে ট্রাম্পকার্ড। সাথে রাসি ভ্যান ডার ডাসেনের মতো দুর্দান্ত একজন ব্যাটার রয়েছেন টপ অর্ডারে, যা ভরসা যোগাচ্ছে আরো। অবশ্য বাটলার-হেটমায়ারদের টপকে তিনি আদৌ কতগুলো ম্যাচে সুযোগ পাবেন, সেটাই প্রশ্ন। তবে সুযোগ পেলে সেটা দু’হাতে লুফে নিতে যে তিনি প্রস্তুত, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নজর রাখতে পারেন প্রসিধ কৃষ্ণার উপরেও। প্রতিশ্রুতিশীল এই ফাস্ট বোলার অনেকদিন ধরেই আছেন পাইপলাইনে, এই আইপিএল আসরটাকে তিনি করে নিতে পারেন নিজের লাইমলাইটে আসার উপলক্ষ।  

লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টস

লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টস; Image Credit: sportstime247.com

লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টসের জন্যে এটাই আইপিএলের প্রথম মৌসুম। তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রথম মৌসুম হলেও আইপিএল নিলামে লক্ষ্মৌই একমাত্র দল যারা কি না বরাদ্দকৃত পুরো টাকাটাই খরচ করে ফেলেছে। কেএল রাহুলকে সাইন করানোর পর দলটি মেগা অকশনে গিয়েছিল ৫৯.৯৮ কোটি রূপি নিয়ে, যার কোনো কিছুই শেষে অবশিষ্ট ছিল না।

স্কোয়াড

দেশী

মানান ভোহরা, মনীশ পান্ডে, করণ শর্মা, দীপক হুদা, ক্রুনাল পান্ডিয়া, কৃষ্ণাপ্পা গৌতম, আয়ুশ বাদোনী, লোকেশ রাহুল, রবি বিষ্ণোই, শাহবাজ নাদিম, মহসিন খান, মায়াঙ্ক যাদব, অঙ্কিত রাজপুত, আবেশ খান।

বিদেশী

এভিন লুইস, মার্কাস স্টোইনিস, কাইল মায়ার্স, জেসন হোল্ডার, কুইন্টন ডি কক, দুষ্মন্ত চামিরা, অ্যান্ড্রু টাই। 

শক্তিমত্তা বোলিং ডিপার্টমেন্ট

টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম আসরেই দারুণ এক বোলিং ডিপার্টমেন্ট তৈরি করেছে লক্ষ্মৌ। জেসন হোল্ডার আর আবেশ খান খুব সম্ভবত হতে পারেন ফ্রন্টলাইন পেসার, পাওয়ারপ্লের শুরুতেই লক্ষ্মৌকে উইকেট এনে দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন তারা। এই তিনজন ছাড়াও লক্ষ্মৌ দলে আছেন দুশমন্থ চামিরা, নিজের দিনে বোলিং ভ্যারিয়েশন দিয়ে তিনিও ব্যাটারদের জন্যে মূর্তিমান আতঙ্ক হতে পারেন। এরপর আকস্মিক এক সংযোজন হিসেবে আছেন অ্যান্ড্রু টাই, তিনিও হতে পারেন আরেকটি পেস বোলিং অপশন।

পেস বোলিং ছাড়াও লক্ষ্মৌর স্পিন বোলিং ডিপার্টমেন্টও বেশ শক্ত। পাঞ্জাবের হয়ে গত আসরে দুর্দান্ত পারফর্ম করা রবি বিষ্ণোই আছেন এবারের লক্ষ্মৌ দলে। এছাড়াও বৈচিত্র্য আনতে দলে আছে গৌতম আর ক্রুনাল পান্ডিয়ার মতো ফিংগার স্পিনাররা। মূলত এখন অধিনায়ক রাহুলের সামনেই অপেক্ষা করছে কঠিন পরিক্ষা – বৈচিত্র্যপূর্ণ এই বোলিং ডিপার্টমেন্টকে কীভাবে ব্যবহার করবেন তিনি।

অভিজ্ঞ ভারতীয় ব্যাটারের অভাব

যদিও দলে কেএল রাহুল আর কুইন্টন ডি ককের মতো বিস্ফোরক ব্যাটাররা আছেন, তবুও দলে আরেকজন অভিজ্ঞ ভারতীয় ব্যাটারের অভাব ভোগাতে পারে দলকে। খুব সম্ভবত মনীশ পান্ডেকে তারা দলে নিয়েছে তিন নম্বর জায়গাটি শক্ত করার জন্য। কিন্তু আইপিএলের গত আসরে মনীশের পারফরম্যান্স ঠিক সুবিধাজনক ছিল না। এছাড়াও দলে আছেন হুদা, স্টোইনিস, গৌতম আর ক্রুনালের মতো পাওয়ার হিটাররা। কিন্তু লক্ষ্মৌ দলের যেটা অভাব রয়েছে সেটা হলো এমন একজন ভারতীয় ব্যাটার, যিনি কি না লক্ষ্মৌর হয়ে ‘ক্যারি থ্রু দ্য ইনিংস’-এর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এছাড়া মূল দলটার বাইরে তেমন কোনো ব্যাকআপের অভাবও বেশ ভোগাতে পারে তাদেরকে। 

অলরাউন্ড অপশনের প্রাচুর্য

লক্ষ্মৌ দলে আছেন মোট পাঁচজন সুযোগ্য অলরাউন্ডার – ক্রুনাল পান্ডিয়া, মার্কাস স্টোইনিস, জেসন হোল্ডার, দীপক হুদা, আর কৃষ্ণাপ্পা গৌতম। এই পাঁচজনই দারুণ ফিনিশিং দিতে তারা সিদ্ধহস্ত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রাক্কালে নিজেদেরকে চেনাতে এই অলরাউন্ডারদের জন্যে একটা বড় সুযোগ হতে পারে আইপিএল। এছাড়াও ভারতীয় দলের টিম-সেটআপে নিচের দিকে একজন পাওয়ার হিটারের অভাব রয়েছে; ক্রুনাল কিংবা হুদা-গৌতমেরা যদি চান ভারতীয় দলে নিজেদের জায়গা তৈরি করতে, তাহলে এই আইপিএলের সুযোগটা তারা কাজে লাগাতে চাইবেন নিঃসন্দেহেই। আর সেরকম হলে আখেরে সুযোগটা আসবে লক্ষ্মৌরই।

বিদেশীদের আধিক্য

অধিনায়ক রাহুল আর মেন্টর গৌতম গম্ভীরের জন্যে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জটা অপেক্ষা করছে, সেটি হলো চারজন বিদেশী খেলোয়াড় নির্বাচন করা। খুব সম্ভবত অলরাউন্ডার স্টোইনিস আর উইকেটরক্ষক ডি কক দলে থাকবেন, এটুকু নিশ্চিত। তার মানে লক্ষ্মৌকে আর দু’জন খেলোয়াড়কে দলে সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এই দুই জায়গার জন্যে লক্ষ্মৌর হাতে আছে অনেক অনেক বিকল্প। বল হাতে শুরুতেই নাম লেখাতে পারেন জেসন হোল্ডার, তবে পেসারদের মধ্যে দুষ্মন্ত চামিরা আর অ্যান্ড্রু টাই খুব একটা পিছিয়ে থাকবেন না দৌড়ে। কাইল মায়ার্স আর এভিন লুইসের থেকে কাউকে বাদ দেওয়াটাও কঠিন হবে লক্ষ্মৌর জন্যে। সব মিলিয়ে একাদশে চার বিদেশী বাছাইয়ে মুন্সিয়ানাই দেখাতে হবে লক্ষ্মৌকে। আবার এমন সব বিদেশী থাকার জন্যে যদি বিদেশী খেলোয়াড়দের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা তৈরি হয় দলের, সেটাও মোটেও ভালো কোনো ব্যাপার হবে না।

মিডল ওভারে উইকেট টেকিং অপশন কম

দলে বোলিং অপশন থাকলেও মিডল ওভারে রবি বিষ্ণোই ছাড়া উইকেট টেকিং বিকল্প তেমন নেই। ফলে প্রতিপক্ষের জুটি ভাঙতে কোনো কোনো ম্যাচে বেগ পেতে হতে পারে তাদেরকে। 

কতদূর যাবে তারা? 

দারুণ কিছু অলরাউন্ডার আর অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য একটি ওপেনিং জুটি রয়েছে তাদের। সাথে বৈচিত্র্যময় একটা বোলিং ডিপার্টমেন্ট সাহস দেখাচ্ছে স্বপ্ন দেখার। ব্যালান্সড এই দলটির প্লে-অফ খেলার সুযোগ রয়েছে যথেষ্টই। তবে অধিনায়ক রাহুল আর মেন্টর গৌতম গম্ভীর কতটুকু স্থিতধী হাতে হাল ধরবেন, সেটার উপর নির্ভর করছে অনেকটাই। 

কে হতে পারেন মূল তারকা?

অধিনায়ক লোকেশ রাহুল বরাবরই ধারাবাহিকতার পরাকাষ্ঠা, সাথে পার্টনার হিসেবে এবার থাকছেন দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার কুইন্টন ডি কক। দু’জনের জুটি প্রতিপক্ষকে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ভোগাতে সক্ষম। তবে তাদের পাশাপাশি জেসন হোল্ডার-ক্রুনাল পান্ডিয়ার অলরাউন্ড নৈপূন্য আর রবি বিষ্ণোইয়ের লেগ স্পিনের দিকে নজর না রাখলে হয়তো ভুলই করবেন আপনি।  

Related Articles