Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চার্চ বনাম বিজ্ঞান: গ্যালিলিওর ঘটনাবহুল জীবন

গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪- ১৬৪২); ছবিসূত্রঃ www.time-loops.net

পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৫৬৪ সালে ইতালীর পিসা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বৃহস্পতির উপগ্রহ আবিষ্কার থেকে চার্চের প্রভাবশালী পোপদের সাথে বিবাদ, তার জীবন ছিল ব্যাপক বৈচিত্রময়। তাই তো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ তার গুণের চর্চা করছে আর সাথে পাচ্ছে অফুরন্ত প্রেরণা।

বিজ্ঞান আর ধর্মের বিরোধপূর্ণ এক সমাজে জন্মে অসম সাহসিকতায় তিনি বিজ্ঞানকেই বেছে নিয়েছিলেন। তিনি যখন বিজ্ঞান চর্চা শুরু করেন, তখন সমাজে তিনটি বিষয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। প্রথমত, সমাজের একটি শ্রেণী সবকিছুকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিন্তা করতো। আরেক শ্রেণী ছিল যারা অ্যারিস্টটলের ভুল তত্ত্বগুলোতে বিশ্বাস করতো। কিন্তু তৃতীয় আরেকটি শ্রেণী ছিল, যারা ছিল সংখ্যায় সবচেয়ে বড় এবং একই সাথে অত্যন্ত প্রভাবশালী। আমি বলছি চার্চের কথা, যাদের অনুসারীই ছিল সবচেয়ে বেশী।

ক্যাথলিক চার্চের পোপরা সরাসরিই বিজ্ঞানের বিরোধিতা করতেন। বিজ্ঞানীদের কোনো কথা বাইবেলের বিপরীতে গেলেই তাদের জীবনে নেমে আসতো অকল্পনীয় অত্যাচার। ব্যতিক্রম হয়নি গ্যালিলিওর ক্ষেত্রেও। তাকে অনেকবারই প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। জীবনের শেষ আটটি বছর তিনি কাটিয়েছিলেন গৃহবন্দী হয়ে। নিষিদ্ধ করা হয় তার লেখা বইও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় হয় সত্যের।

প্রথম জীবন ও শিক্ষা

গ্যালিলিও তার বাবা মায়ের ছয় সন্তানের প্রথম সন্তান ছিলেন। তার বাবা ভিনসেনজো গ্যালিলি ছিলেন একজন প্রখ্যাত সুরকার, সঙ্গীতবিদ, মা গিউলিয়া আমানাতি। ১৫৭৪ সালে তার পুরো পরিবার ইতালীর ফ্লোরেন্স শহরে চলে আসে। সেখানেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন গ্যালিলিও গ্যালিলি। ক্যামালডোলেজ নামক এক আশ্রমে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। বাবার মতো তিনিও বেশ ভাল ‘লিউট’ (ষোড়শ শতকে ব্যবহৃত একপ্রকার তারের বাদ্যযন্ত্র) বাজাতে পারতেন। তবে সমস্যার সৃষ্টি হয় তার ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে। প্রথমে তাকে ক্যাথলিক চার্চের যাজক বানানোর ইচ্ছা ছিল তার বাবার। কিন্তু পরে তিনি ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন বলে মনস্থির করেন।

ইতালীর পিসা বিশ্ববিদ্যালয়; ছবিসূত্রঃ incomingpartners.it

১৫৮৩ সালে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন পড়ার জন্য আসেন। প্রচন্ড মেধাবী গ্যালিলিওর খুব দ্রুতই পিসার পড়ালেখা ভাল লাগতে শুরু করে। বিশেষ করে গণিত তাকে অধিক আকৃষ্ট করে। কোনো এক অধ্যাপকের গণিতের লেকচার তাকে এতোটাই আকৃষ্ট করে যে, তা তার জীবন তথা বিজ্ঞানের গতিপথ বদলে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি অ্যারিস্টটলীয় জ্ঞানের সাথে পরিচিত হন যা প্রাথমিকভাবে তিনিও তখনকার আর সবার মতো সর্বময় সঠিক মনে করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার অভিপ্রায়েই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সমস্যা বাধে অন্য জায়গায়। আর্থিক সমস্যার কারণে ১৫৮৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জনের পূর্বেই তাকে পড়ালেখার জীবনের ইতি টানতে হয়। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মেডিসিনের চেয়ে গণিত আর পদার্থই বেশি ভাল লেগেছিল। ডাক্তারি পড়া যে তাকে দিয়ে হবে না, তা তিনি ভালোভাবেই বুঝতে পারেন।

শিক্ষকতা

বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিলেও গ্যালিলিও তার গণিত শিক্ষা চালিয়ে যান। তিনি এ সময় তার একটি গবেষণা ‘দ্য লিটল ব্যাল্যান্স’ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে তিনি ছোট ছোট বস্তু পরিমাপের হাইড্রোস্ট্যাটিক নীতি বর্ণনা করেন। তার এই গবেষণা জনপ্রিয়তা পায় এবং পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময়ই তিনি তার বিখ্যাত পড়ন্ত বস্তু নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

এ সময় তিনি পেন্ডুলামের দোলন দেখে বিস্মিত হন। তিনি দেখেন যে, ঝুলন্ত পেন্ডুলামের তারের দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত রাখলে একে যত জোরেই নাড়া দেয়া হোক না কেন, পেন্ডুলাম সবসময় একটি নির্দিষ্ট গতিতেই চলে। তিনি জানতেন যে, পেন্ডুলামের তারের এবং দোলনের সম্পর্ক গাণিতিক। এই বিষয়টি তার দুই হাজার বছর আগে পীথাগোরাস আবিষ্কার করেছিলেন!

পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সুসময় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কেননা গবেষণা করে তিনি যেসব তথ্য প্রকাশ করেন, অ্যারিস্টটলের সাথে তার কোনো মিল ছিল না। তথাপি তিনি ছিলেন অ্যারিস্টটলের সমালোচনায় মুখর। কিন্তু তৎকালীন বিজ্ঞানী এবং জ্ঞানীগুণী সমাজ অ্যারিস্টটলের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতেন। তাই তারা গ্যালিলিওর বিরুদ্ধে চলে যান। ১৫৯২ সালে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার শিক্ষকতার পদ হারান।

বেশিদিন তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি। দ্রুতই তিনি পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পান, যেখানে তিনি বলবিদ্যা, জ্যামিতি এবং জোতির্বিদ্যা পড়াতেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ১৮ বছর শিক্ষকতা করেন গ্যালিলিও। এখানেই তিনি তার প্রধান প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও কাজগুলো করেন। তার চমৎকার জ্ঞানগর্ভ লেকচার এবং আকর্ষণীয় গবেষণা তাকে পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ খ্যাতি এনে দেয়।

গ্যালিলিও এবং ম্যারিনা; ছবিসূত্রঃ emaze.com

১৬০০ সালে গ্যালিলিওর জীবনে আসেন ম্যারিনা গাম্বা নাম্নী এক নারী, যার গর্ভে গ্যালিলিওর তিন সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে আর্থিক সমস্যার কথা ভেবে গ্যালিলিও ম্যারিনাকে বিয়ে করেননি! তবে অনেকে বলে থাকেন- কেবল আর্থিক সমস্যাই এর মূল কারণ নয়, গ্যালিলিও ভাবতেন তার বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সন্তানরা তার সামাজিক সম্মানের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে ছিল। মেয়ের নাম রাখেন ভার্জিনিয়া ও লিভিয়া এবং ছেলের নাম রাখেন ভিনসেনজো। মেয়েদেরকে ভাল বংশে বিয়ে দিতে পারবেন না, এই ভয়ে গ্যালিলিও তাদেরকে মঠের আওতায় আনার চেষ্টা করেন। ১৬১৬ সালে তার দুই মেয়ে স্যান ম্যাটিও নামক এক মঠে সন্ন্যাসীনি হিসেবে যোগ দেয়। ভার্জিনিয়া নাম পরিবর্তন করে রাখেন মারিয়া সেলেস্ত এবং লিভিয়া তার নাম রাখেন আরকেঞ্জেলা। অন্যদিকে ঘটনাক্রমে তার ছেলের জন্ম বৈধকরণ হয় এবং তিনি ভবিষ্যতে একজন সফল সঙ্গীতবিদ হন।

বিজ্ঞানী গ্যালিলিও এবং তার কাজ সমূহ

পিসার হেলানো মিনার থেকে একই সময়ে দুটি ভিন্ন ওজনের বস্তু নিক্ষেপ করছেন গ্যালিলিও; ছবিসূত্রঃ wherearesueandmike.com

  • গ্যালিলিও প্রতিসরক টেলিস্কোপের আধুনিকায়ন করেন এবং টেলিস্কোপকে প্রথম জোতির্বিজ্ঞানের কাজে ব্যবহার করেন।
  • লো, গ্যানিমেড, ইউরোপা, ক্যালিস্টো; বৃহস্পতির এই চারটি উপগ্রহ গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন যেগুলোকে তার সম্মানে ‘গ্যালিলিয়ান উপগ্রহ’ বলা হয়।
  • ছায়াপথ তারকাদের নিয়ে গঠিত- এ তথ্য দেন।
  • চাঁদে পাহাড় আছে আবিষ্কার করেন।
  • শনির উপগ্রহ আবিষ্কার করেন।
  • তিনি আবিষ্কার করেন পড়ন্ত বস্তুর গতি এর ওজনের উপর নির্ভরশীল না। সকল বস্তু সমান গতিতে নিচে পড়ে এবং সমান ত্বরণ সৃষ্টি করে।
  • পড়ন্ত বস্তুর সূত্র আবিষ্কার করেন।
  • প্রাসের গতিপথ নির্ণয় করেন।
  • জড়তার সূত্র আবিষ্কার করেন। তিনি বলেন- সমতলে চলমান বস্তু বাধাপ্রাপ্ত না হলে তা একই পথে একই গতিতে চলতে থাকবে, যা পড়ে নিউটনের গতির প্রথম সূত্র হয়।
  • পদার্থের সূত্রগুলো সকল জড় কাঠামোতে এক হবে বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
  • সরল দোলকের সূত্র আবিষ্কার করেন।
  • আলোর দ্রুতি নির্ণয় করার চেষ্টা করেন (প্রযুক্তিগত অনগ্রসরতার কারণে ব্যর্থ হন)।

চার্চের সাথে দ্বন্দ্ব

গ্যালিলিওর সময়কার ক্যাথলিক চার্চের পোপ এবং ধর্মযাজকগণ ছিলেন খুবই ক্ষমতাধর। তারা বাইবেলের নিজেদের দেয়া ব্যাখ্যা দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতেন। বাইবেলের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব তখন প্রকাশ করা নিষিদ্ধ ছিল। যদি কেউ করতো, তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি এমনকি মৃত্যদন্ডও দেয়া হতো। এ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গ্যালিলিওকেও।

১৬০৪ সালে গ্যালিলিও তার ‘অপারেশন অব দ্যা জিওম্যাট্রিকাল এন্ড মিলিটারি কম্পাস’ প্রকাশ করেন। এর কাছাকাছি সময়েই তিনি হাইড্রোস্ট্যাটিকের নীতি আবিষ্কার করেন। এতে তার খ্যাতি অনেক বেড়ে যায়। তিনি চার্চের নজরে আসেন। ১৬০৯ সালে তিনি উন্নত প্রতিসরক টেলিস্কোপ আবিষ্কার (টেলিস্কোপ তার আবিষ্কার নয়, তিনি কেবল এর উন্নয়ন ঘটান) করেন এবং টেলিস্কোপে স্বর্গ দেখার উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন! পরের বছর তিনি ‘দ্যা স্টারি মেসেঞ্জার’ নামক একটি ছোট পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি চাঁদকে সমতল নয় বরং পাহাড় পর্বত এবং গর্ত বিশিষ্ট একটি গোলক বলে দাবি করেন। তার এই আবিষ্কার ছিল যুগান্তকারী।

১৬১২ সালে  তিনি ‘ডিসকোর্স অন  বডিস ইন ওয়াটার’ প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি অ্যারিস্টটলের বস্তুর পানিতে ভাসার যুক্তি খন্ডন করেন। তিনি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন বস্তুর পানিতে ভাসার কারণ এর সমতল হওয়া নয়, বরং এর দ্বারা অপসারিত পানির পরিমাণ। পরের বছরই তিনি সৌরকলঙ্ক নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন। তিনি তার বই ‘লেটারস অব সানস্পট’এ দাবি করেন সূর্য নিখুঁত নয়, বরং এর গায়ে কালো দাগ আছে যাকে তিনি সৌরকলঙ্ক বলে অভিহিত করেন।

এখান থেকেই চার্চের সাথে বিপত্তির শুরু। সে বছরই তিনি তার এক ছাত্রের নিকট একটি চিঠি লেখেন যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, বাইবেলের কথার সাথে কোপারনিকাসের আবিষ্কারের মতবিরোধ নেই। বরং বাইবেলে যা বলা ছিল, তা ছিল পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে। এ সম্পর্কে তার একটি বিখ্যাত উক্তি না জানলেই নয়।

“ঈশ্বর আমাদেরকে অনুভূতি, যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু আমাদেরকে সেগুলোর ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন, এমন কথা আমি মানি না।”

দুর্ভাগ্যজনকভাবে চিঠিটি জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে যায়। চার্চ ১৬১৬ সালে কোপারনিকান তত্ত্বকে সরাসরি বাইবেল বিরোধী বলে ঘোষণা করে এবং গ্যালিলিওকে কোপারনিকাসের তত্ত্বের সমর্থন করতে নিষেধ করে। পরে অবশ্য ১৬২০ সালে চার্চ কোপারনিকাসের বই প্রকাশ করে, তবে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বকে বাদ দিয়ে। সে যা-ই হোক, প্রাথমিকভাবে গ্যালিলিও সাত বছর যাবত কোনোরকম ঝামেলা এড়াতে চার্চের আদেশ পালন করেন। তিনি তার আর কোনো পর্যবেক্ষণ ১৬২৩ সালের আগে প্রকাশ করেননি।

গ্যালিলিও ছিলেন একনিষ্ঠ ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী। মাফিও বার্বেরিনি নামক এক কার্ডিনাল তার বন্ধু ছিল, যিনি পরে পোপ ‘আরবান VIII’ নির্বাচিত হন। তখন তিনি গ্যালিলিওকে তার জোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় গবেষণা চালিয়ে যাবার অনুমতি দেন এবং সেগুলোতে কোনোরকম কোপারনিকাসের তত্ত্বের সমর্থন থাকবে না এই শর্তে প্রকাশেরও অনুমতি দেন।

গ্যালিলিওর অমর বই ডায়ালগ; ছবিসূত্রঃ en.wikipedia.org/wiki

১৬৩২ সালে গ্যালিলিও তার বিখ্যাত বই ‘ডায়ালগ’ প্রকাশ করেন। বইটি ছিল তিনজন ব্যক্তির কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে, যেখানে একজন ব্যক্তি কোপারনিকাসের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বকে সমর্থন করে কথা বলছিল, অন্যজন সে যুক্তি খন্ডন করার চেষ্টা করছিল। তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নিরপেক্ষ। বইটি প্রকাশের সাথে সাথে চার্চ এর প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং গ্যালিলিওকে রোমে ডেকে পাঠায়।

১৬৩২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৬৩৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত গ্যালিলিওর বিচার কাজ চলে। এ সময় গ্যালিলিওকে জেলে যেতে হয়নি। জেরায় গ্যালিলিও প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাকে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দিয়ে স্বীকার করানো হয় যে, তিনি ডায়ালগে কোপারনিকাসের তত্ত্বকে সমর্থন করেছেন। তাকে ধর্মবিরোধীতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তাকে গৃহবন্দী করা হয় এবং দুটি আদেশ দেয়া হয়- ক) বাইরের কোনো মানুষের সাথে দেখা করতে পারবেন না, খ) ইতালীর বাইরে তার কোনো গবেষণা কাজ প্রকাশ করা যাবে না। বলা বাহুল্য তিনি একটিও পালন করেননি।

গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় তার ডায়লগের একটি কপি হল্যান্ডে ১৬৩৪ সালে প্রকাশিত হয়। এ সময় তিনি গতিবিজ্ঞানের ওপর তার সারাজীবনের কাজ নিয়ে ‘টু নিউ সায়েন্সেস’ বইটি লেখেন, যা হল্যান্ড থেকে ১৬৩৮ সালে প্রকাশিত হয়। ততদিনে গ্যালিলিও অন্ধ এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে জীবনের অন্তিমকালে চলে এসেছেন।

মৃত্যু

গৃহবন্দীর আট বছরের মাথায় ৭৭ বছর বয়সে ইতালীর ফ্লোরেন্সের নিকটে আর্সেট্রি নামক স্থানে ১৬৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন এই মহান বিজ্ঞানী। যদিও তিনি মারা যাওয়া পর্যন্ত তার অধিকাংশ কাজের উপর চার্চের নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু কালের পরিক্রমায় সত্য থেকে বিমুখ থাকতে পারে নি চার্চ। ১৭৫৮ সালে চার্চ তার অধিকাংশ কাজের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ১৮৩৫ সালে চার্চ তার সকল কাজের উপর সকল ধরণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে জয় হয় বিজ্ঞানেরই। বিংশ শতকে অনেক পোপই তার কাজের গুরুত্ব অনুধাবনের কথা বলেন এবং বিজ্ঞানে ও পৃথিবীকে আরও ভালোভাবে চেনার পথপ্রদর্শক হিসেবে তার কাজের স্বীকৃতি দান করেন।

তথ্যসূত্র

১) en.wikipedia.org/wiki/Galileo_Galilei

২) biography.com/people/galileo-9305220

৩) famousscientists.org/galileo-galilei/

৪) blog.oup.com/2013/08/10-facts-galileo/

৫) discovermagazine.com/2007/jul/20-things-you-didn2019t-know-about-galileo

Related Articles