চন্দ্রবিজয়ী মার্কিন নভোযাত্রী জন ইয়ং ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র ১২ জন ব্যক্তি চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করেছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ৩ জন দুইবার করে চাঁদে গিয়েছিলেন। জন ছিলেন সেই তিনজনের একজন। গতকাল শনিবার নিউমোনিয়া সংক্রান্ত জটিলতায় তার মৃত্যু হয়। আজ রবিবার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তার মৃত্যুসংবাদ দেয়।
এক টুইট বার্তায় নাসা জানায়, তারা মহাকাশচারী জন ইয়ং এর মৃত্যুতে শোকাহত। নাসার পরিচালক রবার্ট লাইটফুট বলেন, নাসা এবং বিশ্ব এক অগ্রদূতকে হারিয়েছে। মহাশূণ্যযাত্রার তিন প্রজন্মব্যাপী জনের অবদানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমরা তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াব এবং অপেক্ষা করব পরবর্তী দিগ্বিজয়ীর জন্য।”
We’re saddened by the loss of astronaut John Young, who was 87. Young flew twice to the Moon, walked on its surface & flew the first Space Shuttle mission. He went to space six times in the Gemini, Apollo & Space Shuttle programs. pic.twitter.com/l4nSwUCMIq
— NASA (@NASA) January 6, 2018
We remember our most experienced astronaut, John Young.
“Today, NASA and the world have lost a pioneer.” Full statement from our Acting Administrator Robert Lightfoot on the passing of Young: https://t.co/WI6BDpbQ7e pic.twitter.com/WeRxkBGAZB
— NASA (@NASA) January 6, 2018
এক নজরে জন ইয়ং
- জন ওয়াটস ইয়ং ১৯৩০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক অর্জনের পর তিনি মার্কিন নৌ-বাহিনীতে যোগদান করেন।
- ১৯৬২ সালে তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাতে যোগদান করেন। তিন বছর আগে প্রথম একদল মহাকাশচারী নিয়োগের পর তিনি ছিলেন নাসার দ্বিতীয় দলের মহাকাশচারীদের মধ্যে প্রথম নিয়োগ পাওয়া প্রথম পাইলট।
- জন ইয়ং মোট দুই বার চাঁদে গিয়েছিলেন, তবে চাঁদের মাটিতে নেমেছিলেন একবার। ১৯৬৫ সালে তিনি সর্বপ্রথম ‘জেমিনি ৩’ নামক মহাকাশযানে করে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। ১৯৬৯ সালে, অ্যাপোলো ১১ এর চন্দ্র বিজয়ের মাত্র দুই মাস আগে তিনি ‘অ্যাপোলো ১০’ এর কমান্ডার হিসেবে চাঁদের চারদিকে প্রদক্ষিণ করেন।
- ১৯৭২ সালে ইয়ং ‘অ্যাপোলো ১৬’ অভিযানে নিজে চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করেন। তিনি তিন চান্দ্র রাত চাঁদের বুকে অবস্থান করেছিলেন এবং বিশেষ ধরনের গাড়িতে চড়ে চাঁদের মাটিতে সর্বমোট ২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিলেন। তিনি ছিলেন চাঁদের বুকে পদার্পণ করা নবম ব্যক্তি।
- ১৯৮১ সালে জন ইয়ং প্রথম স্পেস শাটল ফ্লাইটের কমান্ডার হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেছিলেন। দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে ২০০৪ সালে তিনি নাসা থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
- জন ইয়ং দীর্ঘ ৪২ বছর নাসায় চাকরি করেন। তিনিই ছিলেন মহাকাশচারীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘদিন কর্মরত ব্যক্তি। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি সর্বমোট ছয়বার মহাশূন্যে ভ্রমণ করেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি, যিনি এত বেশিবার মহাশূন্য ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া তিনিই একমাত্র নভোচারী, যিনি জেমিনি, অ্যাপোলো এবং স্পেস শাটল- এই তিনটি অভিযানেই অংশগ্রহণ করেছিলেন।
- ২০০৪ সালে যখন তিনি নাসা থেকে অবসর নিয়েছিলেন, তখন নাসার পরিচালক শন ওকীফ বলেছিলেন, “যখন আপনার কোনো কাজের দরকার হবে, এবং কাজটি সঠিকভাবে করার দরকার হবে, তখন আপনার যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন জন।”
- বিনয়ী স্বভাবের জন ইয়ং অবশ্য তার ভূমিকাকে বড় করে দেখতেন না। ওরল্যান্ডো সেন্টিনেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি সৌভাগ্যবান যে, আমি সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে ছিলাম এবং এটা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা অসাধারণ কোনো ব্যাপার না – আমি নিশ্চিত, যে কেউ এটা করতে পারত। তাকে শুধু চেষ্টা করে যেতে হবে।”
- জন ইয়ং এর প্রাক্তন সহকর্মীরা, অবসরপ্রাপ্ত মহাকাশচারীরা এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট (সিনিয়র) বুশ তার মৃত্যু উপলক্ষে শোকবার্তা জানিয়েছেন এবং টুইট করেছেন।
ফিচার ইমেজ- Wikimedia Commons