দুই সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনীর প্রচারণার সাথে যুক্ত কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের এক ফার্মের বিরুদ্ধে ফেসবুক থেকে গোপনে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের তথ্য সংগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে, অথচ ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ একদম নিশ্চুপ। অবশেষে মুখ খুলেছেন তিনি।
একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, ‘আমি এখনো ব্যাপারটি বোঝার চেষ্টা করছি এবং সেই সাথে এমন যেন আর না হয় সে ব্যাপারেও কাজ করছি।‘ সোজা কথায় তিনি ভুল স্বীকার করেছেন এবং মেনে নিয়েছেন যে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের আরো অনেক কিছু করবার আছে। ভাইস নিউজের মাধ্যমে এই খবর জানা যায়।
ভবিষ্যতে এমন কোনো দুর্ঘটনা এড়াবার উদ্দেশ্য ফেসবুক কী ধরনের পদক্ষেপ নিবে তা-ও জাকারবার্গের পোস্টে বলা হয়েছে। তিনটি ধাপে তিনি ফেসবুকে পরিবর্তন আনতে চান:
১) ২০১৫ সাল থেকে ব্যবহারকারীদের তথ্যের ওপরে ফেসবুক কড়াকড়ি আরোপ করে। কাজেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের আগে যেসব অ্যাপ ফেসবুকের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল, তাদের তথ্যভান্ডার পরীক্ষা করে দেখবে কোনো আপত্তিকর তথ্য তাদের সংগ্রহে আছে কিনা। এই পদক্ষেপের সাথে ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা স্ক্যান্ডাল” নামে পরিচিত এই কেলেঙ্কারির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক গবেষক আলেক্সন্ডার কোগান একটি মামুলী পার্সোনালিটি কুইজের মাধ্যমে ২০১৫ এর আগে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। পরে বিপুল অর্থের বিনিময়ে তিনি সেগুলোকে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সাথে যুক্ত ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে বেচে দেন।
২) ব্যবহারকারীরা অন্তত তিন মাস কোনো অ্যাপ ব্যবহার করলে কেবল তখনই ডেভেলপাররা ব্যবহারকারী সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
৩) আগামী মাস থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সহজেই যেকোনো অ্যাপকে ব্যবহারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতে পারবেন। নিউজ ফিডের ওপরের দিকে একটি টুল বার সংযোজন করা হবে। ফলে ব্যবহারকারীরা সহজেই নির্ণয় করতে পারবেন কোন কোন অ্যাপ তাদের তথ্য সংগ্রহ করবার সুযোগ পাচ্ছে। এটা অবশ্য বর্তমানেই করা যায় তবে অ্যাপ বাদ দেওয়া সংক্রান্ত অপশনগুলো প্রাইভেসি সেটিংস এর মধ্যে থাকায় অনেক ব্যবহারকারীই এ বিষয়ে জ্ঞাত নন।
উল্লেখ্য, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের এই ফার্ম নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করে থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি আলেক্সান্ডার কোগানের কাছ থেকে তথ্য কিনে নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সাহায্য করেছিল।
জাকারবার্গের এই পোস্ট আবার শেয়ার দিয়েছেন ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ। সেই সাথে লিখেছেন যে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস ভঙ্গ করবার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
বুধবারে এই পোস্ট দেওয়ার আগপর্যন্ত জাকারবার্গ একদম নিশ্চুপ ছিলেন। যদিও ইতোমধ্যেই আগামী বৃহস্পতিবার ক্যাপিটল হিলে সরকারি অ্যাটর্নি জেনারেলদের সাথে ফেসবুক কর্মকর্তাদের বসার কথা ঠিক হয়ে গিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ফেডারেল সরকার এবং অঙ্গরাজ্যগুলোর আইন প্রণেতারা ফেসবুকের ওপরে ক্ষিপ্ত। কয়েকজন অ্যাটর্নি জেনারেল তো এরই মধ্যে ফেসবুক কোনো প্রাইভেসী বিষয়ক আইন ভেঙ্গেছে কিনা তা নিয়ে খোঁজ খবর করা শুরু করেছেন।
উইল ক্যাসেলবেরি নামক উচ্চপদস্থ এক ফেসবুক কর্মকর্তার বিবৃতি অনুসারে, হ্যালি (ম্যাসাচুসেটস) আর শ্নেইডারম্যান (নিউ ইয়র্ক) নামের দুই অ্যাটর্নি জেনারেল খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যু ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি অবিলম্বেই এই সংক্রান্ত বৈঠকে বসবেন বলে জানান।
ফিচার ইমেজ – time.com