হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে ত্রিদেশীয় টি-টুয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড ফাইনালে নিজেদের জায়গা পাকাপোক্ত করার জন্য মাঠে নামে। দুই দলই অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুই ম্যাচে পরাজিত হয়েছিলো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার পর আজকে ইংল্যান্ডের সামনে ফাইনালে যাওয়ার জন্য শুধু জিতলেই হবে না। নেট রান রেটের কথাও মাথায় রাখতে হবে। নিউজিল্যান্ডের জিতলেই হতো।
লজ্জাজনকভাবে না হারলেও ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ ছিলো স্বাগতিকদের। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মকভাবে ব্যাট করেন জেসন রয়। বোল্টের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৩ বলে তিনটি চার এবং একটি ছয়ের মারে ২১ রান করেন। তার আউট হওয়ার আগেই সাউদির বলে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন অ্যালেক্স হেইলস। দলীয় ২৪ রানে দুই উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মরগান ও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ডেভিড মালান।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে এই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৯৩ রান যোগ করেন। টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৫ম ম্যাচে চতুর্থ অর্ধশতক হাঁকানো মালান ৩৬ বলে দুটি চার এবং পাঁচটি ছয়ের মারে ৫৩ রান করেন। তিনি ফিরে গেলেও শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলকে ১৯৪ রানের সংগ্রহ এনে দেন মরগান। তার ৪৬ বলে ৮০* রানের ইনিংসে চারটি চার এবং ছয়টি ছয়ের মার ছিলো। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ট্রেন্ট বোল্ট তিন উইকেট শিকার করলেও ৫০ রান খরচ করেন। চার ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে দুই শিকার করে ইংল্যান্ডকে দু’শ এর মধ্যে বেধে রাখেন সাউদি। নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। ফাইনালে জায়গা করে নিতে নিউজিল্যান্ডকে ১৭৪ রানে মধ্যে থামাতে হবে ইংল্যান্ডকে।
অন্যদিকে, ম্যাচ হেরে গেলেও ১৭৪ রানের বেশি করতে পারলেই ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে নিউজিল্যান্ড। ১৯৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডকে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কলিন মুনরো আবারও উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন। মাত্র ১৮ বলে অর্ধশতক হাঁকানোর পর ২১ বলে তিনটি চার এবং সাতটি ছয়ের সাহায্যে ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পর রাশিদের বলে উইলির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। আউট হওয়ার আগে নিজের কাজটুকু করে গিয়েছিলেন তিনি। গাপটিলের সাথে মাত্র ৬.৩ ওভারে ৭৮ রান যোগ করেছিলেন তিনি। মুনরো প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে টি-টুয়েন্টিতে ২০ বলের নিচে তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন।
মুনরো যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন তখন নীরব দর্শক হয়ে ছিলেন গত ম্যাচে শতক হাঁকানো গাপটিল। মুনরো আউট হওয়ার পর তিনি জ্বলে উঠেন। ৪৭ বলে তিনটি চার এবং চারটি ছয়ের মারে ৬২ রান করে আউট হওয়ার আগে নিউজিল্যান্ডের ফাইনালে খেলা একপ্রকার নিশ্চিত করে দিয়ে যান। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিলো ২৮ রান, হাতে ছিলো সাত উইকেট। টি-টুয়েন্টিতে যা খুব একটা কঠিন কোনো লক্ষ্য না। টম কুরান ১৮তম ওভারে মাত্র সাত রান দেওয়ার পাশাপাশি টেইলরের উইকেট শিকার করে ইংল্যান্ডের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে। পরের ওভার করতে আসেন ক্রিস জর্ডান। তার প্রথম বলে দৌড়ে এক রান নেন মার্ক চ্যাপম্যান। তখনি গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকরা করতালি দেওয়া শুরু করে।
হঠাৎ করে টিভি সেটের সামনে আসা কোনো দর্শক এমন ঘটনা দেখে হয়তো একটু চমকে উঠবেন। জয়ের জন্য যে এখনও ১১ বলে ২০ রান প্রয়োজন। চ্যাপম্যান সিঙ্গেল নেওয়ার সাথে সাথে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ক্রিস জর্ডান এবং টম কুরান দুর্দান্ত বল করে ইংল্যান্ডকে দুই রানের জয় এনে দিতে সক্ষম হলেও ফাইনালে ওঠাতে পারেননি। শেষপর্যন্ত জয়টি ইংল্যান্ডের কাছে সান্ত্বনার জয় হয়ে থাকলো। আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি বুধবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড।
ফিচার ইমেজ- Getty images