Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আবারও কি ডর্টমুন্ডের ফিনিক্সের ন্যায় উত্থান সম্ভব?

ডর্টমুন্ড তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সময় কাটিয়েছে ইদুনা পার্কে ক্লপের অসাধারণ সাত বছর সময়কালে। ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার মাত্র দুই মৌসুম পরেই বুন্দেসলিগা শিরোপা জেতান এমন এক দলকে, খুব বেশি দিন হয়নি যারা লিগে রীতিমতো ধুঁকছিল। জাদুকরী মুহূর্তগুলো আরো মোহনীয় হয়ে ওঠে যখন ক্লপ পরের মৌসুমেও লিগ শিরোপা জিতে টানা দুটি শিরোপা এনে দেন ডর্টমুন্ড সমর্থকদের।

২০১২-১৩ মৌসুমে ওয়েম্বলিতে হৃদয় বিদারক ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হলে দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন অধরা থেকে যায় ক্লাবটির। হলুদ-কালো শিবিরে নিজের শেষ মৌসুম ছাড়া প্রত্যেকটি মৌসুমে ক্লপের ডর্টমুন্ড খেলেছে প্রতাপশালী এক দল হিসেবে, লিগ ও ইউরোপে যাদের ফুটবল খেলার ধরণকে যথেষ্ট সমীহ করে চলতো মহারথী ক্লাবগুলোও। 

ডর্টমুন্ডের প্রিয় মাস্টারমাইন্ড ইয়ুর্গেন ক্লপ; Image Source: buzz.eurosport.de

ক্লপ পরবর্তী সময়ে ডর্টমুন্ডের বলার মতো তেমন অর্জন নেই। এই মাস্টারমাইন্ডের বিদায়ের পর ক্লাব কর্তৃপক্ষ কোচ নিয়ে কতটা দ্বিধায় ভুগেছে তা সহজেই অনুমেয়, কেননা মাত্র তিন মৌসুম যেতে না যেতেই দলটিতে দেখা গেছে তিনজন ম্যানেজার। নতুন ২০১৮-১৯ মৌসুমে দলটি ক্লপ পরবর্তী সময়ে চতুর্থ কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে লুসিয়েন ফাভ্রেকে। 

আর্থিক সংকটের কারণে দলের সেরা খেলোয়াড়দের ধরে রাখতে না পারা, ইনজুরিতে জর্জরিত স্কোয়াড এবং প্রত্যাশার চাপ থেকে হোঁচট খাওয়া ডর্টমুন্ড তাদের মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে নতুন উদ্যমে। অপেক্ষাকৃত তরুণ দল নিয়ে কোচ ফাভ্রে এই মৌসুমে কিভাবে তাদের প্রত্যাশা পূরণের পথে হাঁটবেন সেদিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে সমর্থকেরা। কিন্তু ক্লপের হাত ধরে ঠিক যেভাবে ফিনিক্স পাখির মতো উত্থান হয়েছিল ডর্টমুন্ডের, ফাভ্রে কি পারবেন ডর্টমুন্ডকে আবারও সেরকম করে পুনরুজ্জীবিত করতে? 

ক্লপ পরবর্তী ডর্টমুন্ডের কোচেরা

বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে যোগ দেওয়ার পর দলটাকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছিলেন ক্লপ, সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজের ফুটবলীয় দর্শন ও কৌশল দিয়ে শক্তিশালী একটি দল তৈরি করেছিলেন। এই দলটি সুনির্দিষ্ট একধরনের আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতো, যেখানে তারা ছিল এক ও অনন্য। ক্লপের এই ফুটবলকে অনেকেই ‘হেভি মেটাল ফুটবল’ বলে থাকে, যেখানে শক্তিশালী ও গতিময় আক্রমণ এবং প্রতিপক্ষের কাছে বল থাকলে প্রেসিং ফুটবল খেলে তা নিজেদের দখলে নিয়ে আবার আক্রমণে যাওয়াই ছিল মূলমন্ত্র। ক্লপের ডর্টমুন্ডের আক্রমণ ছিল অনেকটা ‘ফ্লুইড’ ও ‘ফরোয়ার্ড’, যেখানে ‘ব্যাক পাস’ বা বল দখলে রেখে  সময়ক্ষেপণের সুযোগ তেমন একটা ছিল না। 

ক্লপ পরবর্তী কোচদের নিয়ে আলোচনা শুরু করার আগে স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে, তারা অবশ্যই যথেষ্ট সময় পাননি। মাত্র দুই বছর বা ছয় মাস সময় দিয়ে একজন কোচ কিংবা দলে তার প্রভাব বা নির্দিষ্ট দর্শনের প্রতিফলন বুঝতে পারা যথেষ্ট কঠিন। ক্লপের মতো একজন কোচ বিদায় নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব হাতে নিয়েছিলেন থমাস টুখেল। ক্লপ পরবর্তী কোচদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তিনিই ছিলেন। দলটির হয়ে তার একমাত্র শিরোপা ডিএফবি কাপ এবং নিজের মতো করে দল গড়ে তোলার মোটামুটি সময় পেয়েছিলেন। ক্লপের মতো ‘হাই-প্রেসিং’ ফুটবল থেকে সরে এসে টুখেল খানিকটা বলের দখল রেখে খেলতে অভ্যস্ত করিয়েছিলেন দলকে। তার সময়ে ক্লাবটি লিগ শিরোপা না জিতলেও ইউরোপের আসরে নিয়মিত ছিল এবং তার হাত ধরে বেশ শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে ভবিষ্যৎ দলের অনেক তরুণ খেলোয়াড়ের। 

টুখেল, ক্লপের পর ডর্টমুন্ডের হাল ধরেছিলেন যিনি; Image Source: sportbible.com

টুখেলের পর কোচ হয়ে আসেন ডাচ কোচ পিটার বস, টিকেছিলেন মাত্র ছয় মাস। ইদুনা পার্কে আসার পূর্বে ডাচ লিগে তার অধীনে আয়াক্স ছিল দুর্দান্ত দল, মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে দলটি লিগে দ্বিতীয় হয়েছিল। তবে ডর্টমুন্ড কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ার কারণ ছিল বসের আক্রমণাত্মক ও হাই প্রেসিং ফুটবল। ইদুনা পার্কে তার শুরুটাও ছিল অসাধারণ। লিগের প্রথম পাঁচ ম্যাচে কোনো গোল হজম করেনি বসের ডর্টমুন্ড, যা বুন্দেসলিগার রেকর্ড। কিন্তু ধীরে ধীরে খেই হারিয়ে ফেলে রেকর্ড গড়া দলটি। এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে অন্যতম ছিল দলের মূল খেলোয়াড়দের ক্রমাগত ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়া এবং কোচের কোনো ‘প্ল্যান বি’ না থাকা। ম্যাচের পর ম্যাচ তিনি একই ফর্মেশনে খেলিয়েছেন দলকে এবং ততদিনে তার মূল প্ল্যান কিভাবে ব্যর্থ করতে হবে তা ধরে ফেলেছিল প্রতিপক্ষ। 

পিটার বসের পর নিয়োগ দেওয়া হয় অস্ট্রিয়ান কোচ পিটার স্টুগাকে, তার অধীনেও দল বস-যুগের থেকে খুব একটা আলাদা ছিল না। স্টুগা থেকে দায়িত্ব শেষপর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে সুইস ম্যানেজার লুসিয়েন ফাভ্রেকে। মনে করা হচ্ছে, ফাভ্রের অধীনে ডর্টমুন্ড তার পুরনো রূপ ফিরে পেতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনার ভিত্তি কী?

নতুন কোচ ফাভ্রে এবং তাঁর সফলতার সম্ভাবনা

ফুটবলের ‘ব্যাড বয়’ বালোতেল্লি তার ক্যারিয়ার সেরা সময় কাটিয়েছেন গত ২০১৭-১৮ মৌসুমে ফুটবল ক্লাব নিসের হয়ে। বালোতেল্লি মরিনহো, মানচিনি, রজার্সদের মতো কোচদের অধীনে খেললেও তারা এই প্রতিভাবান তারকার সেরাটা বের করতে পারেননি। যেখানে এই সেরা কোচেরা ব্যর্থ হয়েছিলেন, ঠিক সেখানেই সফল হয়েছেন ফাভ্রে। তার অধীনেই নিসের হয়ে ক্যারিয়ার সেরা ২৬ গোল করে চমকে দিয়েছেন মারিও বালোতেল্লি। ফাভ্রে জানেন কিভাবে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিতে হয়। ডর্টমুন্ডের মতো অপেক্ষাকৃত কম তারকা সমৃদ্ধ ও অনেকটা তরুণ খেলোয়াড়নির্ভর দলে ফাভ্রের মতো একজনকে দরকার।

এই সুইস কোচের অধীনেই ক্যারিয়ার সেরা সময় পার করেছে বালোতেল্লি; Image Source: bundesliga.com

বুন্দেসলিগায় ফাভ্রে নতুন কোনো মুখ নয়, সুইস কাপ ও সুইস লিগ জয়ী এই কোচকে বুন্দেসলিগায় প্রথম নিয়ে আসে হেয়ঠা বার্লিন। হেয়ঠা বার্লিনে দুই বছর কাটানোর পর তিনি যোগ দিয়েছিলেন লিগে ধুঁকতে থাকা বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখে ২০১০-১১ মৌসুমে, তখন ক্লাবটি লিগের একেবারে তলানিতে। দায়িত্ব নিয়েই রেলিগেশনে থাকা ক্লাবটিকে নিয়ে বুন্দেসলিগায় টিকে থাকতে খেলতে হয়েছিল প্লে-অফ। পরের মৌসুমেই ফাভ্রের মনশেনগ্লাডবাখ সকলের প্রত্যাশা ছাপিয়ে চতুর্থ হয়ে বুন্দেসলিগা শেষ করে। ফাভ্রের শেষ মৌসুমে ক্লাবটি তৃতীয় স্থান অর্জন করলে সরাসরি চ্যাম্পিয়নস লীগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। বুন্দেসলিগার পরিচিত এই কোচ জার্মানির দারুণ সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্ব। বার্লিন ও মনশেনগ্লাডবাখে তার কোচিং ক্যারিয়ারে তিনবার লিগের সেরা কোচের খেতাব জিতে নিয়েছিলেন। 

নিসে যোগ দিয়েই অসাধারণ একটি মৌসুম কাটিয়েছিলেন এই সুইস কোচ। লিগ ওয়ানে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ক্লাবটি এবং অল্পের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়। একটি দলের সবাইকে একই সুতোয় গেঁথে দল হিসেবে সেরা ফলাফল বের করে আনতে ফাভ্রের জুড়ি নেই, আর এজন্যই ছোট ও দুর্বল স্কোয়াড নিয়েও নিয়েও তার সাফল্য যথেষ্ট ঈর্ষণীয়।

স্বভাবতই ছোট ক্লাবগুলো তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে, যেহেতু তারকা ও সেরা খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানো অর্থনৈতিকভাবে প্রায় অসম্ভব। তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে দারুণ সফলভাবে কাজ করতে পারেন ফাভ্রে। তার অধীনেই নিজেদের সেরাদের কাতারে নিয়ে এসেছেন অনেক প্রতিভাবান তরুণ। ঝাকা, মোহাম্মদ দাহোদ, ক্রেমার, স্টেগানদের মতো খেলোয়াড়েরা জ্বলে উঠেছিলেন এই সুইস কোচের অধীনে থাকাকালীন সময়ে। ফাভ্রের তরুণদের সুযোগ দেওয়ার দর্শনের সাথে দারুণ মিল রয়েছে ডর্টমুন্ডের। তাই ইদুনা পার্কে দু’পক্ষই বেশ লাভবান হবে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। 

ক্লপের যোগ্য উত্তরসূরী ভাবা হচ্ছে ফাভ্রেকে; Image Source: bundesliga.com

ক্লপের প্রেসিং ফুটবল থেকে বেশ খানিকটা সরে এসে টুখেল জোর দিয়েছিলেন বলের দখল রেখে ফুটবল খেলার উপরে। এরপর বস ও স্টুগার যে ফুটবল খেলিয়েছিলেন, সেখানে ডর্টমুন্ডের স্বভাবসুলভ গতিময় ও শক্তিশালী ফুটবলের অভাব লক্ষণীয় ছিল। সেই সাথে রক্ষণটাও ঠিক সেভাবে নিখুঁত ছিল না। ফাভ্রে শক্তিশালী আক্রমণাত্মক ফুটবলের সাথে রক্ষণের স্বাভাবিক ভারসাম্যে বিশ্বাসী, যা ডর্টমুন্ড ভক্তদের মন জয়ের পাশাপাশি সাফল্যও এনে দিতে পারে। ফাভ্রের ঝুলিতে বলার মতো শিরোপা না থাকলেও ডর্টমুন্ডে তার মতো একজন কৌশলী কোচই দরকার, যিনি সুনির্দিষ্ট ধ্যান-ধারণার সাথে দলে ইতিবাচক মনোভাব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। 

বর্তমান স্কোয়াড

গোলরক্ষক

বুরকি, হিটজ ও এরিক।

রক্ষণভাগ

আকাঞ্জি, দিয়ালো, টোপ্রাক, ড্যান-অ্যাক্সেল, গুরেইরো, স্মেলজার, হাকিমি, জেরেমি ও পিসচেক।

মাঝমাঠ

ভাইগল, হুইটসেল, শাহীন, বুরনিক, দাহোদ, ডেলেনি, সেবাস্তিয়ান, মারিউস, গোৎজা, কাগাওয়া ও গোমেজ।

আক্রমণভাগ

রয়েস, সাঞ্চো, পুলিসিচ, লারসেন, ফিলিপ ও আইজ্যাক।

ফর্মেশন ও লাইন আপ

ফাভ্রে তার সর্বশেষ দল লিগ ওয়ানের নিসকে খেলিয়েছিলেন ৪-৩-৩ ফর্মেশনে এবং বুন্দেসলিগায় মনশেনগ্লাডবাখে তার নিয়মিত ফর্মেশন ছিল ৪-৪-১-১। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ডর্টমুন্ডে তিনি ঠিক কোন ফর্মেশন প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন?

নিসের ৪-৩-৩ ফর্মেশন যদি ডর্টমুন্ডেও প্রয়োগ করেন কোচ, তাহলে স্ট্রাইকার হিসেবে ফিলিপের দুই পাশের উইঙয়ে দেখা যেতে পারে রয়েস ও পুলিসিচকে। দুই উইঙয়ে ফাভ্রের হাতে দারুণ বিকল্পও রয়েছে, যা তিনি ব্যবহার করতে পারবেন খেলোয়াড়দের টানা খেলার ক্লান্তি দূর করতে। দুই উইঙয়ে বদলি হিসেবে নামতে পারেন সাঞ্চো, লারসেন এবং মারিউসের মতো তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা। ফ্রাঙ্কফুর্টে মারিউস গত মৌসুমে করেছেন ৯ অ্যাসিস্ট ও ৫ গোল, এই পরিসংখ্যান অবশ্যই কোচকে ভরসা যোগাবে। 

৪-৩-৩ ফর্মেশনে দেখা যেতে পারে ফাভ্রের ডর্টমুন্ডকে; Image Source: bundesliga.com

মাঝমাঠে খেলানোর জন্য ডর্টমুন্ডে অনেক পরীক্ষিত ও তরুণ প্রতিভা রয়েছে যারা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারবে। গোৎজা, ভাইগল, কাগাওয়া, সেবাস্তিয়ান, শাহীন ছাড়াও দলে নতুন যোগ দিয়েছেন বেলজিয়ামের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হুইটসেল। ডর্টমুন্ডের মাঝমাঠে হুইটসেলের মতো পরিশ্রমী খেলোয়াড় দারুণ কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন। মাঝমাঠের বাম পাশে ডেলানি বা কাগাওয়া ও ডানে নিয়মিত হিসেবে গোৎজাকে দেখা যেতে পারে এবং তাদের মাঝে থাকবেন হুইটসেল। তাছাড়া হুইটসেলের সাথে বদলি হিসেবে রয়েছেন অভিজ্ঞ সেবাস্তিয়ান ও তরুণ বুরনিক।

ফাভ্রের হাত ধরেই প্রথাগত রাইটব্যাকে পরিণত হন পিসচেক। ডর্টমুন্ডে পুরনো গুরুকে আবারও ফিরে পেয়েছে এই ফুলব্যাক। রাইটব্যাকে পিসচেকের সাথে আরেক ফুলব্যাক হিসেবে বামপাশে খেলবেন স্মেলজার। সক্রেতিসের বিদায়ের পর ক্লাবটিতে অভিজ্ঞ সেন্টারব্যাকের অভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেন্টারব্যাকে অসাধারণ কিছু প্রতিভা রয়েছে, যারা ফাভ্রের কৌশলের সাথে মানিয়ে নিয়ে নিখুঁত রক্ষণ দেয়াল তৈরি করতে পারবেন। 

মনশেনগ্লাথবাখের ৪-৪-১-১ ফরমেশন ডর্টমুন্ডেও ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে কি না ফাভ্রে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কেননা গ্লাথবাখে এই ফর্মেশনের অন্যতম কারণ ছিল সীমিত বাজেটের দল নিয়ে সেরা ফলাফল বের করে আনা। সেক্ষেত্রে চারজন মিডফিল্ডার নিয়ে মাঝমাঠে বলের দখল রাখা ও বল হারালেও দ্রুত তা ফিরে পাওয়া বেশ সহজ হয়। মাঝমাঠের কেন্দ্রে হুইটসেল ও ডেলানির দুই পাশে সাঞ্চো ও পুলিসিচ বা গোৎজাকে খেলাতে পারেন কোচ। 

৪-৪-১-১ ফর্মেশনে ডর্টমুন্ডের সম্ভাব্য একাদশ; Image Source: bundesliga.com

চারজন মিডফিল্ডারের উপরে আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে একজন খেলোয়াড়, যিনি অনেকটা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার বা সেন্টার ফরোয়ার্ডের ভূমিকা পালন করবে। এই ভূমিকায় গ্লাথবাখে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করেছিলেন রয়েস। ডর্টমুন্ডকে আবারও পুরনো রূপে দেখতে চাইতে পারেন এই জার্মান তারকাও। এই ফর্মেশনে রয়েসের সামনে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে পারেন ফিলিপ। 

উল্লেখ্য, প্রাক-মৌসুমে ডর্টমুন্ড ম্যানেজার এই দুই ফর্মেশনের কোনোটিই ব্যবহার করেনি। ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে তিনটি ম্যাচ খেলেছে দলটি, যেখানে লিভারপুলকে ৩-১, সিটিকে ১-০ ও বেনফিকার সাথে ২-২ গোলে ড্র করেছে তারা। চারজন ডিফেন্ডারের সামনে একজন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার এবং তার উপরে চারজন মিডফিল্ডারের সামনে একজন স্ট্রাইকার। এই ফর্মেশন অবশ্য ৪-৩-৩ ফর্মেশনের পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রুপ, যেখানে চারজন মিডফিল্ডারের দুজন উইঙয়ে উঠে গেলে তাদের মাঝের দুজন মিডফিল্ডার মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করবে এবং তাদের নিচে থাকছে একজন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার। প্রাক-মৌসুমের সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, ৪-৩-৩ ফর্মেশন ব্যবহার করার সম্ভাবনাই প্রবল। 

দুর্বলতা ও সম্ভাবনা

স্ট্রাইকার হিসেবে ফিলিপ যথেষ্ট প্রতিভাবান হলেও অভিজ্ঞ ও ওবামেয়াং এর মতো অসাধারণ ফিনিশার তিনি নন। তাছাড়া এই পজিশনে ডর্টমুন্ডের বলার মতো অন্য কোনো খেলোয়াড়ও নেই, যদিও দল-বদলের সময় এখনও শেষ হয়নি বুন্দেসলিগায়। বিগত কয়েক মৌসুম ধরে রক্ষণে, বিশেষ করে সেন্টারব্যাক পজিশনে ভুগতে হয়েছে দলটিকে। এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে অভিজ্ঞ সক্রেতিসের বিদায়ের পর। বর্তমানেও তাদের দলে অভিজ্ঞ সেন্টারব্যাকের অভাব এবং বলা বাহুল্য, তাদের চারজন সেন্টারব্যাকের মধ্যে তিনজনের বয়স যথাক্রমে ২৩, ২২ ও ১৯! বুন্দেসলিগা, ডিএফবি কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো আসরের চাপ এই তরুণেরা ঠিক কতটা সামাল দিতে পারবে তা সময়ই বলে দিবে।

তারুণ্যই শক্তি ডর্টমুন্ডের; Image Source: soccerbible.com

ডর্টমুন্ডের এবারে সবচেয়ে বড় আশা-ভরসার জায়গা হয়তো তাদের নতুন কোচ ফাভ্রে। কেননা দলটিতে ভীষণ রকমের ইনজুরি প্রবণতা ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তাদের স্কোয়াডের প্রায় ১৫ জন খেলোয়াড়ের বয়স ১৮-২৪ বছরের মধ্যে। যেহেতু সম্ভাবনাময় তরুণদের নিয়ে কাজ করায় বেশ সিদ্ধহস্ত ফাভ্রে, সেহেতু এই দুর্বলতাই হয়তো শক্তিতে পরিণত হবে। নিজের প্রথম মৌসুমেই যে জাদুকরী কিছু করে দেখাবেন তিনি, অতটা আশা করা বোকামি হবে। তবে সুইস এই ম্যানেজারকে সময় দিলে তার ছোঁয়াতেই ফিনিক্স পাখির মতো পুনরুজ্জীবিত এক ডর্টমুন্ডকে দেখা যেতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। কিন্তু সবার মধ্যে ক্লপের ছায়া খুঁজতে থাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষ কি সেই সময় দেবে?

ফিচার ইমেজ- bvb.de

Related Articles