Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তাসমান সাগরের টম এন্ড জেরি: অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের রসময় বৈরিতা

প্রতিবেশী দুইটি রাষ্ট্রের মধ্যে বৈরিতা বা Sibling Rivalry মোটেও নতুন কিছু না। যুগে যুগে তা যত্নভরে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়ে রেখেছেন মানুষেরা। কূটনৈতিক রসায়নে এদিক-ওদিক বদল আসলেও তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠিকই জিয়ে থাকে। তাসমান সাগরের দুই প্রান্তের দুই দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে রয়েছে তেমনই বৈরি হাওয়া। ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক কারণে হাজার মিল থাকলেও অমিলেরও অভাব নেই। একে অপরকে খোঁচাতে পারলেই যেন তারা পায় অপার প্রশান্তি। ঠিক যেমন টম আর জেরি।

যুগ যুগ ধরে দুই পক্ষের বিবাদের মাঝে বিনোদন খোঁজা বাঙালির প্রিয় কাজ। আজ সেই কাজটিই করা হবে আবার। 

দুই দেশের ভাষা ইংরেজি হলেও উচ্চারণ নিয়েও অজি বনাম কিউই খোঁচাখুচি চলে। অজি ও কিউইদের মধ্যে উচ্চারণে আছে ভালোরকম বৈপরীত্য। অজিরা একটু আয়েশি ভঙ্গীতে মুখটা  যথাসম্ভব খুলে কথা বলে, অন্যদিকে কিউইরা মুখটা সঙ্কুচিত করে বলে। এ কারণে ‘ই’, ‘এ’-কে অজিরা উচ্চারণ করে যথাক্রমে ‘এ’, ‘আই’; আর কিউইরা ‘এ’, ‘অ্যা’-কে উচ্চারণ করে ‘ই’, ‘এ’! তাই অজিরা ‘সিক্স ডেইজ’কে বলে ‘সেক্স ডাইজ’ আর কিউইরা ‘সেক্স চ্যাট’কে বলে ‘সিক্স চেট’! এসব নিয়ে তারা আবার একে অন্যকে ক্ষেপায়।

অস্ট্রেলিয়ান কাউকে বলুন নিউজিল্যান্ডারদের মিমিক করতে। সে বলবে, “fush en chups” (Fish and chips)! ওদিকে নিউজিল্যান্ডার কাউকে বিপরীতটা করতে বললে সেও ব্যাঙ্গ ভরে স্টিভ আরউইনের ভঙ্গিতে টেনে টেনে ইংরেজি বলবে। (স্টিভ আরউইনকে না চিনে থাকলে দেখুন নিচের ভিডিওটি)।

 

কিউইরা নাকি কথা কম বলেন। এ নিয়ে আবার অজিরা কৌতুক করেন।

দুই জন অজি, দুই জন ওয়েলশম্যান, দুই জন আইরিশ ও দুই জন কিউই একটি মরুভূমিতে জড়ো হলেন।

দুইজন অজি সেখানে ব্যাংক খুলে বসবেন। দুইজন ওয়েলশম্যান খুলে বসবে গানের দল। দুইজন আইরিশ করবে মারামারি। আর কিউইরা কিছুই করবে না। কারণ তারা পরস্পরের সাথে পরিচিতই হবে না।

কিউইদের জনসংখ্যা অনেক কম। এ নিয়ে একটি কৌতুক করেন অজিরা।

কিউইরা নাকি প্রেমের সম্পর্কচ্ছেদের পর বেশিরভাগ সময় এটাই বলেন, “চলো, আজ থেকে আমরা শুধুই কাজিন!”

নিউজিল্যান্ডে ভেড়ার সংখ্যাধিক্যের জন্য সমগ্র বিশ্বে এই চুটকি প্রচলিত যে, নিউজিল্যান্ডাররা আসলে ভেড়া পালে না, ভেড়াই তাদের পালে! আর অস্ট্রেলিয়ানরা নিউজিল্যান্ডারদের সরাসরি ‘ভেড়া’ বলতেও পিছপা হয় না।

বুঝুন অবস্থা, এটা নাকি কিউই নারী; Image Source: Frist Light Travel

ওদিকে কিউইরা মনে করে, অজিরা একটু গোঁয়ার, অলস ও মাথামোটা। কিউইরা বলেন-

“অজি কেউ আপনার দিকে গ্রেনেড ছুঁড়লে কী করবেন? প্রথমে গ্রেনেডটা ধরবেন, পিনটা টেনে খুলবেন, তারপর অজির দিকে ছুঁড়ে মারবেন।”

এই ‘মাথামোটা’ বা ‘আলাভোলা’ অজির ধারণা থেকেই নিউজিল্যান্ডের এক বিয়ার কোম্পানি অস্ট্রেলিয়ানদের ব্যাঙ্গ করে বানিয়ে ফেলে আস্ত বিজ্ঞাপনী পোস্টার!

Image Source: Frist Light Travel

কৌতুকটি আসলে বিয়ার প্রস্তুতকারক স্টেইনলেজারের বিজ্ঞাপন। অস্ট্রেলিয়ান কেউ কেউ আবার ফোড়ন কেটে বলেন, “স্টেইনলেজার খাওয়াটা আর যাই হোক, সফিস্টিকেশনের পরিচয় বহন করে না।”

অজিরা কিউইদের ডাকে ‘দক্ষিণ সাগরের পম’। POM মূলত ব্রিটেনে প্রচলিত একটা গালি, যা দিয়ে Prisoners of Her Majesty বা ইংল্যান্ডের কয়েদি বোঝানো হয়! অস্ট্রেলিয়ানদের আইকিউ লেভেল নিয়েও নেতিবাচক ধারণা নিউজিল্যান্ডারদের! তারা বলেন,

“জুতোর ফিতে বাঁধতে তো ৬০-৭০ এর বেশি আইকিউ লাগে না। তাও কেন অজিরা এত চটি-চপ্পল পায়ে দেয়?”

এমনকি ১৯৮০ সালে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী রবার্ট মালডুনও এ নিয়ে কৌতুক করে বসেছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এই যে দলে দলে নিউজিল্যান্ডাররা কাজের খোঁজে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে, একে কীভাবে দেখেন? উনি বললেন, “বেশ তো, উনারা অস্ট্রেলিয়ার গড়পরতা আইকিউ লেভেল বাড়াচ্ছেন!” 

অস্ট্রেলিয়ানদের নিয়ে এত খিল্লি করে দিনশেষে সেই অস্ট্রেলিয়াই যেন নিউজিল্যান্ডারদের প্রিয় গন্তব্য! নতুবা অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিবাসী নিউজিল্যান্ডাররা হবেন কেন? সমালোচকদের মতে নিউজিল্যান্ড হলো অস্ট্রেলিয়ার ‘মেক্সিকো’! (আরো কৌতুক পড়ুন লেখাটির শেষ অংশে)।

১৯০০ সালের ৯ জুলাই যখন অস্ট্রেলীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনে আইন পাস করে ব্রিটেন, তখন কুইন্সল্যান্ড, ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডকেও প্রস্তাব দেয়া হয়। সেদিন হ্যাঁ বলে দিলে অন্তত অস্ট্রেলিয়ার ৪৬ বছর পর নিউজিল্যান্ডকে স্বাধীন হতে হতো না। তখন নিউজিল্যান্ড হতো অস্ট্রেলিয়ার সপ্তম প্রদেশ। সেদিনকার নিউজিল্যান্ডের না বলাটাই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের চিরবৈরিতার একটি উপলক্ষ হয়ে আছে। যাহোক, নিউজিল্যান্ড কেন চায়নি অস্ট্রেলিয়ার অংশ হতে?

তারা ভেবেছিলো বহির্শত্রু আক্রমণ করলে অস্ট্রেলিয়া হয়ত তাদের বিচ্ছিন্ন অংশটিকে বাঁচাতে আন্তরিক থাকবে না। সার্বভৌমত্বের ঠিকা তাই ব্রিটিশদের কাছেই সঁপে রাখা ভালো। আবার মেলবোর্ন বা সিডনি ভিত্তিক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় নিউজিল্যান্ড খুব একটা পাত্তা পাবে না বলেই তারা ভেবেছিল।

আরেকটি ভয় ছিল। অস্ট্রেলিয়ানরা কৃষ্ণাঙ্গ ও আদিবাসীদের ব্যাপারে সদয় ছিল না। নিউজিল্যান্ডাররা দুধে ধোয়া তুলসিপাতা না হলেও তাদের আদিবাসী তথা মাওরিদের প্রতি তারা অতটাও নির্দয় ছিলেন না। কিউই পার্লামেন্টেও ১৮৭৮ থেকে মাওরিদের জন্য ৪টি করে আসন সংরক্ষিত ছিল। অস্ট্রেলিয়ায় যোগ দিলে আদিবাসীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে, এই ভয়ও ছিলো নিউজিল্যান্ডারদের।

Image Source: Sasscer Blog

কিন্তু স্বাধীন হয়েই যেন প্রতিবেশির প্রভাব পড়লো অজিদের ওপর। ১৯০২ সালে আদিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গদেরও ভোটাধিকার দিয়ে দেয় তারা। তখন অজিরা সদর্পে ভেংচি কাটতে লাগল নিউজিল্যান্ডারদের প্রতি, “দেখলে তো, তোমাদের মাওরিদেরকে তোমাদের আগেই ভোটাধিকার দিয়ে দিলাম!”

শিল্প বা শিল্পী নিয়ে কি জাতীয়তাবাদী আস্ফালনের কিছু আছে? তা কি সার্বজনীন নয়?

প্রথম উত্তরে হয়ত আপনি ‘না’ আর পরের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রতিবেশিদের দ্বৈরথে এত সুশীলতা খাটে না! ক্রাউডেড হাউজ নামে এক বিখ্যাত ব্যান্ড আছে। তার দুই সদস্য নেইল ওবিইস ও টিম ফিন ছিলেন নিউজিল্যান্ডার, দুই সদস্য ছিলেন অজি এবং দুই সদস্য ছিলেন আমেরিকান। মেলবোর্নে প্রতিষ্ঠিত বলে এই ব্যান্ডটিকে অজিরা নিজেদের দাবি করত। অন্যদিকে রানি ভিক্টোরিয়ার কাছ থেকে ‘নিউজিল্যান্ডের সঙ্গীতাঙ্গনে অবদান রাখা’র জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন ব্যান্ডটির সদস্য নেইল ও টিম। তাই নিউজিল্যান্ডাররাও ব্যান্ডটিকে নিজেদের দাবি করত।

ক্রাইডেড হাউজের নেইল ও টিম (বাম থেকে); Image Source: The Guardian

সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে ঝগড়া বাধানো সঙ্গীতশিল্পী যদি হন এই দুজন, তবে এমন ঝগড়াবাজ ক্রিকেটার হলেন লুক রনকি। নিউজিল্যান্ডে জন্মে ২০০৮-০৯ মৌসুমে তিনি খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে। পরে ফিরেছেন নিজ জন্মভূমে। এখনো খেলছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে। দুই দেশের মূল ক্রীড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেখানে, সেই রাগবিতে এমন খেলোয়াড়ের অভাব নেই!

দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়েও জারি আছে অদ্ভুত প্রতিযোগিতা। ২০১৫ সালের মার্চে অদ্ভুত কারণে আলোচনায় এলেন অজি প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট। আস্ত পেঁয়াজ চিবিয়ে খাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলো তার। অনলাইনে হলো সমালোচনা, উন্নতে বিশ্বে প্রধানমন্ত্রীদের সমালোচনার উপলক্ষ পাওয়া বেশ দুর্লভ কিনা। এবার তো নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রীকেও কিছু করতে হয়। এপ্রিলে জন কি আলোচনায় এলেন এক পরিচারিকার চুলের বেনী টেনে। যেন কেহ কাহারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।

২০১৩ সালে দুই দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হলো আরেক লড়াই। নিউজিল্যান্ডে বিলিয়নিয়ার হিসেবে এমপি পদে দাঁড়িয়েছিলেন শখের গায়ক কিম ডটকোম। ওদিকে অজি বিলিয়নিয়ার এমপি পদে দাঁড়িয়েছিলেন ক্লাইভ পালমার। ক্লাইভ জিততে পেরেছিলেন কেবল। উদ্ভট এই ‘বিলিয়নিয়ার ব্যাটেল’-এ ১-০ ব্যবধানে জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া! 

প্রকৃতি আর প্রযুক্তির অপার মেলবন্ধন সিডনি; Image Source: Bright Side

উন্নত জীবনধারণের সুবিধাদি হিসেব করলে অস্ট্রেলিয়া তার প্রতিবেশির চেয়ে এগিয়ে থাকবে যোজন যোজন দূর। সেখানে আয় যেমন বেশি ব্যয়ও তেমন বেশি। নিউজিল্যান্ডে ঠিক উলটো। অস্ট্রেলিয়ার যদি থাকে জাঁকজমকপূর্ণ শহুরে নৈশজীবন, নিউজিল্যান্ডের আছে পাগল করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে এক্সট্রিম স্পোর্টস (প্যারাগ্লাইডিং, বাঞ্জি জাম্প, মাঙ্কি সুইং, জিপ লাইনিং ইত্যাদি)। অস্ট্রেলিয়ার আছে অভিজাত পানশালা, আর নিউজিল্যান্ডের আছে বিশ্বের সেরা মাংস আর দুধ! অস্ট্রেলিয়ার আছে বিশ্বসেরা সব সৈকত। আর আগ্নেয়গিরি সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় নিউজিল্যান্ডের আছে দারুণ সব লেক আর বিস্তীর্ণ চোখ ধাঁধানো সবুজ তৃণভূমি। মা প্রকৃতির আশীর্বাদের সঙ্গে দুটি দেশ সমানভাবে পেয়েছে অভিশাপও, অজিদের সমস্যা দাবানল আর কিউইদের ভূমিকম্প।

দক্ষিণী মেরুপ্রভার দেখা মিলবে নিউজিল্যান্ডের প্রায় দ্বীপেই; Image Source: Radio NZ

অস্ট্রেলিয়াতে এক আজব ব্যাপার আছে। তারা ভাবে, হোল্ডারে লাইট-বাল্ব ঢোকানো মেয়েদের কাজ। এ নিয়ে আছে কৌতুক

অস্ট্রেলিয়ায় হোল্ডারে লাইট-বাল্ব ঢোকাতে কয়জন লাগবে? উত্তর- দুইজন। প্রথমজন বলবে, “মেয়েটা এখনই আসবে। অপেক্ষা করো।” দ্বিতীয়জন বিয়ারের ছিপি খুলবে।

অস্ট্রেলিয়ার বল-টেম্পারিং এর ঘটনায় তাদের খিল্লি করবার সুযোগ কি হেলায় হারায় কিউইরা? ব্যস, বানিয়ে ফেলল আস্ত এক বিজ্ঞাপন। নিজেই দেখে নিন।

এটি সম্ভবত কিউইদের উদ্দেশ্যে অজিদের সবচেয়ে শ্লেষাত্মক কৌতুক!

নাইটক্লাবে এক কিউই চুইংগাম চিবোচ্ছিলেন। হঠাৎ এক অজি এলেন। কিউই তাকে জিজ্ঞেস করলেন,

-“আচ্ছা, আপনারা অজিরা কি ব্রেড খান?” অজি বললেন, “ভেতরেরটুকু খাই, বাকিটুকু ফেলে দিই, ওটা রিসাইকেল হয়ে কিউইদের সেরেলাক হয়।” 

– “আচ্ছা, আপনারা অজিরা কি কলা খান?” অজি বললেন, “ভেতরেরটুকু খাই, খোসাটুকু ফেলে দিই, ওটা রিসাইকেল হয়ে কিউইদের স্মুদি হয়।” 

– “আচ্ছা, আপনারা অজিরা কি সঙ্গম করেন?” অজি বললেন, “করি, এরপর কন্ডোম ফেলে দিই, ওটা রিসাইকেল হয়ে কিউইদের চুইংগাম হয়।” 

অস্ট্রেলিয়ার কোন ব্যাপারটি সবচেয়ে খারাপ লাগে কিউইদের? উত্তরটা স্পষ্ট,

“এটা সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে অবস্থিত!”  

নাহ, এই টম-জেরি কোনোদিন কাহিল হবে না!

Featured Image from: Daviantart.com

Related Articles